কলকাতা: তৃণমূল, বিজেপি, বাম, কংগ্রেস-সব দলের শীর্ষ নেতৃত্বই বলছেন, পঞ্চায়েতে কোনও রামধনু জোট বরদাস্ত করা হবে না। বুধবারই ঝাড়গ্রামে এক অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাম, কংগ্রেস, বিজেপিকে এক বন্ধনীকে রেখে মন্তব্য করেন, দিল্লিতে ইন্ডিয়া, বাংলায় বিজেন্ডিয়া। সিপিএম, কংগ্রেস এখানে বিজেপির কোলে বসে আছে। লজ্জা করে না ?
ভোটের আগে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছিলেন, কোনও নির্দল প্রার্থী জিতলে তৃণমূলে নেওয়া হবে না। কিন্তু বোর্ড গঠনের প্রক্রিয়ায় দেখা যাচ্ছে, অনেক জায়গাতেই তৃণমূলের বিক্ষুব্ধ জয়ী নির্দল সদস্যরা তৃণমূলেই ফিরে যাচ্ছেন। সব দলের শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশ, হুমকি উপেক্ষা করে অনেক পঞ্চায়েতেই রামধনু জোট হচ্ছে। কোথাও তৃণমূলকে ঠেকাতে বাম, কংগ্রেস, বিজেপি এক হয়ে বোর্ড গড়ছে। আবার কোথাও বিজেপিকে রুখতে তৃণমূল, বাম, কংগ্রেস হাত মেলাচ্ছে। কোথাও আবার বিক্ষুব্ধ তৃণমূল বা নির্দলদের সঙ্গে নিয়ে বিরোধীরা তৃণমূলকে দূরে রাখতে জোট বাঁধছে। নিচুতলায় কোন দল কাকে সমর্থন করছে, তার খবর হয়তো অনেক সময় রাজনৈতিক দলগুলির রাজ্য দফতরে ঠিকমতো এসে পৌঁছচ্ছে না। পাশাপাশি শীর্ষ নেতাদের হুমকি উপেক্ষা করেই তৃণমূল স্তরে অনৈতিক বোঝাপড়ায় চলছে বোর্ড গড়ার কাজ।
আরও পড়ুন: মৃত্যুর আগে কেমন ছিল স্বপ্নদীপ, পুলিশকে বিস্ফোরক তথ্য় সহপাঠীদের
বৃহস্পতিবার জলপাইগুড়ির ধূপগুড়িতে সিপিএমের সমর্থনে সাঁকোয়াঝোড়া ২ গ্রাম পঞ্চায়েত দখল করল বিজেপি। মাত্র একটি আসন পাওয়া সিপিএমের প্রধান হলেন প্রফুল্ল রায়। উপপ্রধান হয়েছেন বিজেপির শম্পা রায়। এই পঞ্চায়েতে মোট ১৯টি আসনের মধ্যে তৃণমূল এবং বিজেপি ৯টি করে আসন পেয়েছে। একটি পেয়েছে সিপিএম। ম্যাজিক ফিগার ছিল ১০। ভোটের ফল প্রকাশের পর সিপিএমের জয়ী প্রার্থীকে নিয়ে অনেক টানাপড়েন চলে। শেষ পর্যন্ত তিনি বিজেপিকে সমর্থন করায় পঞ্চায়েতের দখল নিল লাল এবং গেরুয়া শিবির। বোর্ড দখল করার পর ধুপগুড়িতে একসঙ্গে উড়ল লাল এবং গেরুয়া ঝান্ডা। চলল গেরুয়া আর লাল আবিরের খেলা। সেখানে দেখা মিলল না কোনও তৃণমূল নেতা-কর্মীর।
আবার উল্টো ছবি মুর্শিদাবাদের লালবাগে। সেখানকার প্রসাদপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে ৩০টির মধ্যে ১৯টি পেয়েছে তৃণমূল, সাতটি বিজেপি, পাঁচটি সিপিএম, একটি পেয়েছে কংগ্রেস। বিজেপির সমর্থন নিয়ে সেখানে উপপ্রধান হয়েছেন তৃণমূলের জালালউদ্দিন শেখ। মুর্শিদাবাদের নওদায় তৃণমূলকে ঠেকাতে বাম, বিজেপি, কংগ্রেস হাত মিলিয়ে বোর্ড গঠন করেছে। এখানেও সিপিএম মাত্র একটি আসন পেয়েছে। তাদের প্রার্থী তহিরউদ্দিন মণ্ডল প্রধান এবং উপপ্রধান হয়েছেন কংগ্রেসের সেলিনা বিবি।
এদিকে মালদহের মানিকচকে কংগ্রেস এবং সিপিএমকে নিয়ে পঞ্চায়েত গঠন করল তৃণমূল। ২৬ আসনের এই পঞ্চায়েতে তৃণমূল এবং বিজেপি ১১টি করে আসন পেয়েছে। কংগ্রেস দুটি, সিপিএম একটি এবং নির্দল একটি আসন পেয়েছে। কিছুদিন আগে কংগ্রেসের একজন এবং নির্দল সদস্য তৃণমূলে যোগ দেন। মোট ১৫ জনের ভোট নিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় তৃণমূল।