বসিরহাট: প্রিয় প্রধান শিক্ষকের (Teacher) বদলির (Transfer) নির্দেশ এসে গিয়েছে। বুধবারই স্কুলে শেষ কর্মদিবস ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুকুমার বিশ্বাসের। নতুন প্রধান শিক্ষককে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়েছেন। ঘর থেকে বেরতেই কচিকাঁচার দল ঝাঁপিয়ে পড়ল পায়ে। সকলের চোখেই জল। একটাই আকুতি, স্যার, আপনাকে যেতে দেব না। চলে এসেছেন অনেক অভিভাবকও। জল তাঁদের চোখেও। এমন ছাত্রবতসল শিক্ষককে ছাড়া যাবে না। পরিস্থিতি দেখে মহা সমস্যায় পড়েছেন সুকুমার। কিছুতেই শান্ত করা যাচ্ছে না পড়ুয়া এবং তাদের বাবা-মায়েদের।
মঙ্গলবার পর্যন্ত পড়ুয়াদের কাছে এমন কোনও খবর ছিল না। বুধবার স্কুলে এসে স্যার চলে যাবেন শুনেই মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে সকলের। স্বরূপনগর ব্লকের হঠাৎগঞ্জ বাংলানি অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুকুমার বিশ্বাস। ২০১০ সালে তিনি এই স্কুলে শিক্ষক হয়ে আসেন। তখন স্কুলে ছিল অ্যসবেসটসের চাল, প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণিতে মাত্র ৫০ জন ছাত্রী। তিনজন শিক্ষক ছিলেন তখন। বর্তমানে স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ৫১০। শিক্ষক-শিক্ষিকা ১২ জন।
গত ১২ বছরে স্কুলের হাল ফিরিয়ে দিয়েছেন সুকুমার। পড়ুয়ারা স্কুল কামাই করলেই নিজে ছুটে যেতেন বাড়িতে। কেন আসেনি, শরীর ঠিক আছে তো, এসব খবর নিতেন তিনি। দেখেশুনে অভিভাবকরাও অবাক। তাঁরাও সুকুমারের ফ্যান হয়ে ওঠেন। অভিভাবকরা জানান, স্যার আসার পরই স্কুলের ভোল বদলে গিয়েছে। খুঁটিনাটি সব দিকে তাঁর নজর। পড়ুয়ারা স্যার বলতে অজ্ঞান।
এবার সেই শিক্ষকেরই বদলির চিঠি এসেছে। পড়ুয়ারা তাঁকে ঘর থেকে বেরতে দেবে না। তাঁর চোখের কোণেও জল। অন্য শিক্ষক-শিক্ষিকাদেরও মুখ গম্ভীর। সুকুমার বলেন, সরকারি নিয়ম মেনে আমাকে বদলি হতেই হবে। যিনি আসবেন, তিনি আমার থেকেও ভালো হবেন। কিন্তু মানতে নারাজ পড়ুয়ারা, ছাড়তে নারাজ অভিভাবকরাও। স্কুলের আশপাশের দোকানদারদের ভালোবাসাও আদায় করে নিয়েছিলেন সুকুমার। তাঁদেরও প্রশ্ন, স্যার চলে গেলে স্কুলটা চলবে কী করে। বুধবার এসব নিয়েই ব্যস্ত থাকল স্কুল।
আরও দেখুন অন্য খবর: