স্বরূপনগর: চাকরি হারানোর তালিকায় এবার সিপিএম নেতার মেয়ের নাম। এর জেরে অস্বস্তিতে সিপিএম নেতৃত্ব। উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাটের স্বরূপনগর ব্লকের গোবিন্দপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের পোলতা গ্রামের সিপিএমের প্রাক্তন সদস্য ও জোনাল কমিটির সদস্য বিশ্বনাথ মণ্ডলের মেয়ে স্বর্ণালি মণ্ডল ২০১৮ সালে মসলন্দপুরের রাজবল্লভপুর হাইস্কুলে ক্লার্ক পদে চাকরি পান। দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে তিনি ওখানে কর্মরত। বর্তমানে বিবাহ সূত্রে স্বরূপনগরের বাংলানি গ্রাম পঞ্চায়েতের হরিশপুরের শ্বশুরবাড়িতে থাকেন। স্বামী নিরুপম গাইন তিনি তেতুলিয়া শহীদ নুরুল ইসলাম মহাবিদ্যালয়ে ক্লার্ক পদে চাকরিতে কর্মরত।
সম্প্রতি আদালতের নির্দেশে গ্রুপ সি পদের ৮৪২ জনের যে নামের তালিকা বেরিয়েছে। ওই তালিকায় ৭৩২ নম্বরে স্বর্ণালির নাম রয়েছে। এই নিয়ে রীতিমতো চাঞ্চল্য ছড়িয়ে স্বরূপনগর জুড়ে। ফের বিরোধীদের চাকরি বাতিলের তালিকায় নাম থাকায় অস্বস্তিতে পড়েছে সিপিএম নেতৃত্ব। এই নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি শাসকদল। বারবার সিপিএম, কংগ্রেস, বিজেপি তৃণমূলকে কালিমালিপ্ত করতে চাইছে, আসলে নিজেরাই মোটা টাকা দিয়ে অবৈধ পথ অবলম্বন করে চাকরি পেয়েছেন। সময় যত যাচ্ছে শাসকবিরোধী তালিকা লম্বা হচ্ছে। এরপরে বিরোধীরা আর কী বলবে। স্বর্ণালির মা বাসন্তী মণ্ডল জানান, ছোটবেলা থেকে ও পড়াশোনায় খুব ভালো। যোগ্যতা অর্জন করে ভালো নম্বর পেয়ে তারপর চাকরি পেয়েছে। আমরা কোথা থেকে ঘুষ দিয়ে চাকরি নেব, আমরা গরিব মানুষ।
আরও পড়ুন: Calcutta High Court | মুকুলের দলবদল নিয়ে ফের হাইকোর্টে শুভেন্দু
এদিকে, দেগঙ্গায় এক সিপিএম নেতার ছেলের নাম জড়াল ওই তালিকায়। দেগঙ্গার চৌরাশি হাই স্কুলের এক ক্লার্কের নাম জড়িয়েছে ওএমআর শিট বিকৃতি কেলেঙ্কারিতে। অভিযুক্তের নাম আমানুর হোসেন। তাঁর বাড়ি দেগঙ্গার চৌরাশি গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসুদেবপুরে। এসএসসির তরফে যে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে আমানুরের নাম ২০ নম্বরে রয়েছে।বিজেপির অভিযোগ, আমানুরের বাবা সিপিআইএম নেতা। তৃণমূল ও সিপিআইএম দুর্নীতিতে টাকার এপিঠ আর ওপিঠ। এ বিষয়ে সিপিআইএমের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সিপিআইএম কোনও নেতা টাকার বিনিময়ে চাকরি নেয়নি। তারা আমাদের সমর্থক।তবুও বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছে সিপিআইএম নেতৃত্ব। বাড়িতে গেলেও দেখা পাওয়া যায়নি আমানুরের। একাধিকবার ফোন করলেও ফোন ধরেননি।
চৌরাশি হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক ডঃ শাহরিয়ার ইসলাম বলেন, বিষয়টি আদালতের বিচারাধীন। তাছাড়া এখনও পর্যন্ত কোনও নির্দেশিকা পাইনি। তাই এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে পারব না। তবে শুক্রবার স্কুলে এলেও তারপর থেকে আসেননি আমানুর। কোন ছুটিও নেননি বলে জানিয়েছেন প্রধান শিক্ষক শাহারিয়ার।
এদিকে শুক্রবারও চাকরি বাতিলের তালিকায় নাম ওঠে প্রাক্তন বিধায়ক ও বর্তমান বিজেপি (BJP) নেতার মেয়ের নাম। বৃহস্পতিবারই গ্রুপ সি (Group C) নিয়োগ বাতিলের তালিকা প্রকাশিত হয়েছে৷ তাতে নাম রয়েছে বাগদার একাধিক ব্যক্তির৷ সেই তালিকায় বাগদার প্রাক্তন বিধায়ক তথা বিজেপি নেতা দুলাল বরের মেয়ে বৈশাখী বরের নাম থাকায় তা নিয়ে তৃণমূল (TMC) প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে৷ তৃণমূল নেতা সঞ্জিত সর্দার বলেন, নিয়োগ দুর্নীতিতে দুলাল বর মিডলম্যান হিসেবে কাজ করেছেন। ধৃত চন্দন মণ্ডলের (Chandan Mondal) সঙ্গে হাত মিলিয়ে তিনি অনেককে চাকরি দিয়েছেন। নিজের মেয়েকেও যে বেআইনিভাবে চাকরি পাইয়ে দিয়েছিলেন, তা আজ প্রমাণিত হল। তিনি আরও বলেন, চন্দন সিপিএম করতেন। আর দুলাল বর ছিলেন কংগ্রেস সিপিএম জোটের বিধায়ক৷ দুলালকে সিবিআই এবং ইডি জিজ্ঞাসাবাদ করলে কংগ্রেস ও সিপিএমের অনেক নেতার নাম উঠে আসবে৷
প্রসঙ্গত, যাঁদের নামের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে, তাঁদের সবারই যে নম্বর বাড়ানো হয়েছে, এমনটা নয়। অনেকের ক্ষেত্রে নম্বর কমানোও হয়েছে। ওএমআর শিটে (OMR Sheet)বেশি নম্বর থাকলেও সার্ভারে কম নম্বর দেওয়া হয়েছে। এই নম্বর কারচুপির বিষয়টি স্কুল সার্ভিস কমিশনই আদালতে হলফনামা দিয়ে জানিয়েছিল। সেই রিপোর্ট দেখে অবাক হয়ে যান হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় (Justice Abhijit Gangopadhyay)। এরপরই তিনি তালিকা প্রকাশ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। সিবিআই ও এসএসসি এই ওএমআর কারচুপি সংক্রান্ত রিপোর্ট দিয়েছিল আদালতে। সেখানে গাজিয়াবাদ থেকে ৩ হাজার ৪৭৮ টি ওএমআর উদ্ধার হয়। এর মধ্যে ৩০০ টি ওএমআর বিকৃত করা হয়নি বলে জানানো হয়। বাকি ওএমআর ৯ মার্চ প্রকাশ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। সেইমতো বৃহস্পতিবার তালিকা প্রকাশ হয়।