Tuesday, July 1, 2025
Homeচতুর্থ স্তম্ভচতুর্থ স্তম্ভ: টাকা নামছে, কিন্তু বিজেপির থেকেও নীচে নামা কি সম্ভব?

চতুর্থ স্তম্ভ: টাকা নামছে, কিন্তু বিজেপির থেকেও নীচে নামা কি সম্ভব?

Follow Us :

টাকা নামছে, এর মানে কী? মানে হল এক ডলারে আগে যত টাকা পাওয়া যেত, এখন তার থেকে বেশি টাকা পাওয়া যাচ্ছে৷ উলটো দিক থেকে দেখুন, আগে এক ডলার কিনতে যত টাকা দিতে হত, এখন তার চেয়ে বেশি টাকা দিতে হচ্ছে। কতটা? স্বাধীনতার পরে এতটা নামেনি টাকার দাম। ২৭ মে, ২০১৪ র হিসেব৷ আচ্ছা, হঠাৎ ২৭ মে কেন? কারণ ২৬ মে, ২০১৪, নরেন্দ্রভাই দামোদরদাস মোদি ওরফে চায়েওয়ালা আমাদের প্রধানমন্ত্রী হলেন৷ রাত কেটে সকাল হল৷ ২৭ মে ১ টাকা দিলে ৫৯.০৪৫ ডলার পাওয়া যেত। ৩০ মে, ২০১৯, এবার মোদিজি চৌকিদার, আবার শপথ নিলেন৷ সেদিন এক ডলার দিলে পাওয়া যেত ৬৯.৮৬ টাকা৷ মানে পাঁচ বছরে টাকার দাম কমেছে ১০ টাকার বেশি৷ ভক্তদের জয়ধ্বনী শোনা যাচ্ছিল, মোদি হ্যায় তো মুমকিন হ্যায়। গত সোমবার, ৯ মে ২০২২ এ টাকার দাম দাঁড়ালো ৭৭.৪৪ টাকা৷ স্বাধীনতার পরে এত নীচে নামেনি টাকা৷

মোদী জমানায় বহু রেকর্ড ভাঙছে, ক্ষুধা সূচকের তালিকায় আমরা রেকর্ড করে ফেলেছি৷ সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, গণতন্ত্রের অবমূল্যায়নেও আমরা আগের সমস্ত স্তর ভেঙে নীচে নেমেছি৷ স্বাধীনতার পর থেকে এই পরিমাণ বেকারত্ব আমাদের কোনওদিনও ছিল না৷ সে সবের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে টাকা নামছে হু হু করে। আচ্ছা, টাকা নামা নিয়ে বিজেপির কোনও চিন্তা আছে? মানে টাকা নামলে কী হয়? কী কী হতে পারে তা নিয়ে কোনও ধারণা তাদের আছে? আছে বৈকি। আমাদের প্রধান সেবক কী বলছেন?

যখন তিনি গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী৷ বলছেন, আমি তো প্রশাসনে আছি৷ আমি জানি টাকা নামছে৷ কেবল প্রশাসনিক অক্ষমতার জন্যই নয়৷ এর সঙ্গে জড়িত দুর্নীতি, মানে কংগ্রেসের দুর্নীতির কারণেই লাগাতার টাকার দাম কমছে৷ গত সাড়ে সাত বছরে ১৭ টাকা, হ্যাঁ, ১৭ টাকা নীচে নেমেছে আমাদের রুপি মার্কিন ডলারের সাপেক্ষে৷ চায়েওয়ালা, চৌকিদার, প্রধান সেবক, এন্টায়ার সায়েন্স পাস করা আমাদের নরেন্দ্রভাই দামোদরদাস মোদির মুখে একটা শব্দও নেই৷ তাঁর মন্ত্রিসভার কারও মুখে একটা কথাও নেই, কেন?

আসলে বিজেপি টাকার চেয়েও দ্রুত গতিতে নীচে নামছে৷ এত নীচে নামা টাকার পক্ষেও সম্ভব নয়। টাকা নামলে কী হয়? প্রথম অসুবিধে হল, আন্তর্জাতিক বাজার থেকে আমদানি, যন্ত্রপাতি, তৈলবীজ, বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী, ওষুধপত্র, চিকিৎসার সরঞ্জাম, এসবের দাম তো ডলারেই চোকাতে হয়৷ স্বাভাবিকভাবেই টাকার দাম কমলে এগুলো কেনার জন্য বেশি টাকা খরচ হবে৷ বেশি দামে কিনলে সেইসব সামগ্রী বা পরিষেবার দামও হু হু করে বাড়বে৷ অপরিশোধিত তেল, পেট্রল, ডিজেল কিনতেও বেশি টাকা খরচ হবে৷ আরও দাম বাড়বে পেট্রল, ডিজেল গ্যাসের, জিনিসপত্রের দাম বাড়বে, মানুষের প্রকৃত আয় কমবে৷ আয় কমলে মানুষ খরচ কম করবে৷ খরচ কম করলে জিনিষ পত্রের বিক্রি কম হবে৷ সেই সব ছোট কারখানা, উৎপাদনকেন্দ্রে লাভ কম হবে৷ শ্রমিক ছাঁটাই হবে৷ এ এক চক্র, চক্করও বলা চলে৷ এই চক্করে অর্থনীতি ঢুকে পড়লে তাকে বের করা কঠিন৷ কিন্তু ভারতবর্ষ ক্রমশঃ সেই ভিসিয়াস সার্কলের মধ্যে ঢুকে পড়ছে৷

গত আট বছর ধরে এক নাগাড়ে ডলার সাপেক্ষে টাকার দাম কমছে, আমদানি মূল্য হু হু করে বাড়ছে৷ এরই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দেশের মাথা পিছু আয় কমছে, মোট জাতীয় সম্পদ, গ্রস ডোমেস্টিক প্রডাক্ট, জিডিপি কমছে৷ এই একই সময়ে বেকারত্ব বাড়ছে, নতুন কোনও চাকরি তৈরি হচ্ছে না৷ মাইক্রো, মিডিয়াম অ্যান্ড স্মল স্কেল এন্টারপ্রাইজ, এমএসএমই, একের পর এক বন্ধ হচ্ছে, ধুঁকছে। ব্যাঙ্কে অনাদায়ী ঋণ বেড়েই চলেছে, ব্যাঙ্কের আর্থিক অবস্থা খারাপ, মার্জার করে, অনাদায়ী ঋণ মুকুব করে খাতা তো সামলানো হচ্ছে৷ কিন্তু তাতে তো ব্যাঙ্কের অবস্থা শুধরোচ্ছে না৷ পেট্রল ডিজেল, গ্যাসের দাম রোজ বাড়ছে এবং এই প্রত্যেকটার ফলে হু হু করে বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম৷ যে দলের নেতা নেত্রীরা গ্যাস সিলিন্ডার মাথায় করে দিল্লির রাজপথে নেমেছিলেন, তাঁরা চুপ৷ এ নিয়ে কোনও কথাই নেই৷ যে বাবাজীরা পেট্রল ৪০ টাকায় পাওয়ার স্বপন দেখিয়েছিল মানুষকে, তাঁকে প্রশ্ন করলে বলছেন, বলেছিলাম তো কি? বেশি প্রশ্ন করলে খারাপ হয়ে যাবে কিন্তু৷ এবং গোদি মিডিয়া, যারা সেদিন মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে সন্ধ্যের পর সন্ধ্যে কলতলার আসর বসিয়েছিল, তাঁরা এখন যুক্তি দিচ্ছে, উন্নয়ন আর মূল্যবৃদ্ধি নাকি অবিচ্ছিন্ন এক ব্যবস্থা৷ তাঁরা এখন বলছেন ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, জার্মানি, আমেরিকাতেও মূল্যবৃদ্ধি হচ্ছে, এটাই নাকি স্বাভাবিক৷

এই যুক্তি নেমে এসেছে তলাতেও৷ মোদী ভক্তের দল বলছেন, মূল্য বৃদ্ধি তো হবেই, তেলের দাম তো বাড়বেই, সরকার ট্যাক্স না বসালে উন্নয়নের খরচ কেমন করে আসবে? এই যে দেশের কোটি কোটি মহিলা আগে কাঠ জ্বালিয়ে, কয়লার ধোঁওয়া সহ্য করে রান্না করতেন, তাঁরা উজ্জ্বলা যোজনায় গ্যাস সিলিন্ডার পেয়েছেন৷ ১৩ কোটি বিনামূল্যে সিলিন্ডার দেওয়া হয়েছে, তো সেখানেও ঘাপলা। ফ্রি তে দিয়েছিলেন, তাঁরাও নিয়েছেন, ফুরিয়ে গেছে, তারপর? তারপর সেটার ওপরে কাপড় শুকোচ্ছে৷ সেটার ওপরে সব্জির ঝুড়ি রাখা আছে৷ আরেকটা সিলিন্ডার কেনার সাধ্য নেই৷ সরকারি হিসেব বলছে, অর্ধেক ব্যবহারকারী আরেকটা সিলিন্ডার কেনেনি৷ বছরে কোনওমতে একটা কিনতে পারছেন, এমন ব্যবহারকারীরও সংখ্যা কম৷ মানে যে তিমিরে ছিল, অবস্থা সেই তিমিরেই আছে৷

আর থাকবেই না বা কেন? ১০২৬ টাকা দিয়ে গ্যাস সিলিন্ডার কে কিনবে? ফ্রি রেশন দিয়েছেন৷ হ্যাঁ দিয়েছেন, আবার ১০০ দিনের কাজের বরাদ্দ কমিয়েছেন৷ সেটাও তো সত্যি৷ এক পকেট থেকে টাকা বের করে, অন্য পকেটে খানিকটা ঢেলে দেবার চালাকি কে গভর্নেন্স বলা হচ্ছে৷ উন্নয়ন আর বিকাশ বলা হচ্ছে। এবং এসবের পরেও যেটা সবচেয়ে বড় সমস্যা হল, এগুলো নিয়ে এন্টায়ার পলিটিকিলাল সায়েন্স পাস করা মোদিজি, একটা কথাও বলতে রাজি নন৷ আলোচনাও করতে রাজি নন৷ টাকার অবমূল্যায়ন, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব, মাথা পিছু আয় কমতে থাকা, ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা তছনছ হতে থাকা যে সমস্যা, সেটা মানতেই রাজি নয় এই আরএসএস – বিজেপির সরকার৷

তারা নাই বা মানলেন, মানুষ তো বুঝবে, মানুষ তো ঠেকে শিখবে, বাজারে গিয়ে মানুষ কি মূল্যবৃদ্ধি টের পাবে না? ছেলেমেয়ে ঘরে বেকার বসে থাকলে মানুষ কি টের পাবে না? ছাঁটাই হওয়া শ্রমিক বুঝবে না অর্থনীতির কথা? সাধারণভাবে এর উত্তর, নিশ্চই বুঝবে৷ কিন্তু যদি তার সামনে বায়বীয় কিছু সমস্যাকে, বিরাট বড় করে দাঁড় করানো হয়? এমন কিছু সমস্যা যা তার দৈনন্দিন জীবনে কোনও কাজেই লাগে না৷ কিন্তু তার মনে হয় এটা বিরাট সমস্যা৷ তাকে যদি বোঝানো হয় মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে পরে ভাববেন৷ তাকিয়ে দেখুন, মুসলমানরা কিভাবে জনসংখ্যায় বাড়ছে৷ আর কদিন পরে দেশটা ইসলামিক রাষ্ট্র হয়ে যাবে, তাহলে? যদি বলা হয়, এই মুসলমানরা তাদের পরিচয় গোপন রাখার জন্য বোরখা পরে, হিজাব দিয়ে মুখ ঢাকে, এরা আসলে পরিচয় গোপন রেখে আপনার বাজারে বোমা রেখে যাবে, তাহলে? আপনার ঘরের ১৬ বছরের মেয়েটিকে ফুসলে নিয়ে চলে যাবে কোনও মুসলিম যুবক, আপনার কিচ্ছু করার থাকবে না, তাহলে? দেখুন আমরাই আছি যারা বুলডোজার দিয়ে জাহাঙ্গিরপুরী ভেঙে চুরমার করতে পারি, শাহীনবাগে বুলডোজার পাঠাতে পারি, এনকাউন্টার করতে পারি, জেলে পুরতে পারি, তাহলে? ওই যে পাকিস্তান, ওরা দখল করতে চায় আমাদের দেশ৷ আমরাই একমাত্র সীমান্ত সুরক্ষিত রাখতে পারি, তাহলে? এবং অনেক মানুষ এই ইস্যুগুলোর সামনে দাঁড়িয়ে অনায়াসে ভুলেই যাবে, তার ঘরে ছেলেটা বেকার৷ তার বাবার চাকরি চলে গেছে৷ গ্যাস, পেট্রল ডিজেলের দাম বাড়ছে৷ এসব তখন ইস্যুই নয়, আমরা হিন্দু, আমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ, সংখ্যালঘুরা আমাদের কথা মেনে চলবে না কেন?

বিজেপির রাজনীতি এতটাই নিম্নরুচির, এতটাই নিকৃষ্ট, এতটাই মধ্যযুগীয় অন্ধকারে ডুবে থাকা, আরএসএস – বিজেপি সেই মেজরেটেরিয়ানিজম, সংখ্যাগরিষ্ঠতাবাদের নামে এক স্বৈরতান্ত্রিক শাসনকে এনে দাঁড় করিয়েছে আমাদের সামনে, এতটা নিচুতে আমার স্বদেশের মুদ্রাও নামতে পারবে বলে আমার মনে হয় না, আর সংখ্যাগরিষ্ঠতাবাদ, বেশি দূর তো যেতে হবে না৷ শ্রীলঙ্কার দিকে তাকান, তামিল ভাষা, গোষ্ঠীকে শেষ করে এক সংখ্যাগরিষ্ঠতাবাদকে আশ্রয় করে রাজাপক্ষেদের শাসন চলছিল, বছরের পর বছর, তামিলরা এসে যাবে, তামিল মানেই উগ্রপন্থী, তামিল মানেই এলটিটিই৷ অতএব শ্রীলঙ্কার বাসিন্দারা সমসর্থন করেছে রাজাপক্ষে ভাইদের৷ শাসন চলেছে, কিন্তু তারও তো এক সীমা আছে৷ তাকিয়ে দেখুন প্রধানমন্ত্রীর বাড়ি জ্বলছে, রাজাপক্ষেরা পালিয়েছেন৷ মানুষ রাস্তায়, মানুষ মিছিলে, মানুষ পুলিশ তো দূরের কথা, সেনাবাহিনীকেও পাত্তা দিচ্ছে না৷ হ্যাঁ পেটের টান মানুষকে এখানেই এনে দাঁড় করায়৷ পারির বাস্তিল দূর্গ ভেঙেছিল এভাবেই, জারের শীত প্রাসাদ ভেঙেছিল এভাবেই৷ কুইং ডায়েনেস্টির, কুয়োমিংটানের ইতিহাস মুছে দিয়েছিল লাল ফৌজ, অত্যাচারী বাতিস্তা হাভানা ছেড়ে পালিয়েছিল৷ স্বৈরাচার, অত্যাচার মানুষ মেনে নেয়নি৷ ইতিহাস সেই কথাই বলে। কাজেই টাকা নামছে, নামছে দ্রুতগতিতে, কিন্তু এই সরকারের পতনও তারচেয়ে দ্রুতগতিতেই হবে, হবেই।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Weather Update | প্রবল দুর্যোগ, ভারী বৃষ্টির সতর্কতা কোন কোন জেলায়? কবে মুক্তি?
03:46:35
Video thumbnail
Kolkata Metro | অফিস টাইমে ফের মেট্রো বিভ্রা/ট, প্রবল বৃষ্টিতে লাইনে জল, ব্যাহত আংশিক পরিষেবা
03:28:35
Video thumbnail
Devendra Fadnavis | হিন্দি চাপানো থেকে বিরত ফড়নবীশ, কী কারণ? দেখুন ভিডিও
34:55
Video thumbnail
Kasba Incident | কসবা কাণ্ডে পুরো ঘটনার ভিডিও করা হয় দুটি ফোনে, একটি মনোজিৎ- র! অন্যটি কার?
01:45:10
Video thumbnail
Tamil Nadu Incident |পণ প্রথা চলছেই, প্রা/ণ গেল আরও এক তরুণীর, এর শেষ কোথায়? আরও কতজনের প্রা/ণ যাবে?
50:00
Video thumbnail
Air India | এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানে যান্ত্রিক ত্রুটি, তারপর কী হল? দেখুন চাঞ্চল্যকর ভিডিও
03:16:20
Video thumbnail
Politics | পুলিশেরই জন্য শেষমেশ ভারত 'উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ দেশ'
05:09
Video thumbnail
Politics | চিন-পাকিস্তানের নয়া ঘোঁট ভারত কি মানবে এই জোট?
04:07
Video thumbnail
Politics | রিপোর্ট ঠিক কী বলছে? ভারতে ঘৃণার ভাষণ বাড়ছে
03:59
Video thumbnail
Politics | জল্পনা চলছে চারদিকে শশীর পছন্দ বিজেপিকে?
04:41

Deprecated: Automatic conversion of false to array is deprecated in /var/www/ktv/wp-content/themes/techinfer-child/functions.php on line 39