skip to content
Tuesday, April 29, 2025
HomeScrollFourth Pillar | বিজেপি না তৃণমূল, কে বড় শত্রু?
Fourth Pillar

Fourth Pillar | বিজেপি না তৃণমূল, কে বড় শত্রু?

এটা একটা অন্যতম কারণ যার ফলে সিপিএম ক্রমশ তার প্রাসঙ্গিকতা হারাচ্ছে

Follow Us :

মঙ্গলবারের গণশক্তির প্রথম পাতা, বক্তব্য দলের পলিটব্যুরো সদস্য সূর্যকান্ত মিশ্রের, ‘‘গত পার্টি কংগ্রেসে আমাদের রাজনৈতিক কৌশলগত অবস্থানে বলা হয়েছিল, বিজেপি-কে বিচ্ছিন্ন করো, পরাস্ত করো। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রেও এটা প্রাসঙ্গিক। এই শক্তি একটা বড় বিপদ। অনেকে মনে করেন, তৃণমূল এবং বিজেপি সমান। বিশ্বজুড়ে নয়া ফ্যাসিবাদের উত্থান, মোদি সরকারের অবস্থান আমরা চোখের সামনে দেখছি। সেখানে একটা রাজ্যের একটা আঞ্চলিক দলকে এক করে দেখা ঠিক নয়।’’ তিনি বলছেন,  ‘‘এই একটা সময়, যে সময়ের মোকাবিলা করছি, তখন অদ্ভুত সব ঘটনা ঘটবে। এই একটা সময়, যখন অনেক কিছু ঘটতে পারে। অনেক কিছু বদলে যেতে পারে। কিন্তু এই সময় শুধু সমস্যা ডেকে আনে না। এই সময় শুধুই আক্রমণ ডেকে আনে না। এই সময় প্রতিরোধেরও সময়। দুনিয়া বদলানোর দিকে একধাপ এগিয়ে যাওয়ার সময় এটাই। তাই এক মহাসংগ্রাম আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। আমাদের দরকার আত্মবিশ্বাস। আর সেই আত্মবিশ্বাস কোনও ভিত্তি ছাড়া হয় না।’’ মানে দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের একজন হিসেবে তিনি খুউউব সাফ করে বলে দিচ্ছেন যে না বিজেপি আর তৃণমূল এক নয়, বিজেমুল তত্ত্বের কথা বলছেন না, তিনি বলছেন এক অঞ্চলিক দলকে বিশ্বজোড়া ফ্যাসিবাদের উত্থানের সাপেক্ষেই মোদি সরকার বা বিজেপিকে দেখতে হবে।

আসলে সিপিএমের শত্রু বাছাই পর্বে কখন যে কে কী বলছেন, বলেছেন তার খেই রাখা ভারি কঠিন। এবং এটা একটা অন্যতম কারণ যার ফলে সিপিএম ক্রমশ তার প্রাসঙ্গিকতা হারাচ্ছে। কারণ এই সূর্যকান্ত মিশ্র ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে এক জায়গাতে বক্তৃতা দিতে গিয়ে বলেছিলেন যে তৃণমূল আর বিজেপি হল একই দল, বাইরে লড়ছে, আসলে বন্ধু, যাত্রাদলের ভীম আর দুর্যোধনের মতো মঞ্চে লড়াই করছে, কিন্তু যাত্রার শেষে একটা বিড়ি ভাগ করে খাচ্ছে। দর্শকরা খুব আমোদ পেয়েছিল সেদিন। সামনেই পার্টি কংগ্রেস, তার আগে জেলা সম্মেলন হয়েছে, হচ্ছে রাজ্য সম্মেলন, এখনও লক্ষ করলেই বোঝা যাবে যে দলের মধ্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এক ফোঁটাও কমেনি। ঠিক যে যে জেলাতে ক্ষমতায় থাকাকালীন গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব চূড়ান্ত এক আকার নিয়েছিল, এখনও সেই উত্তর আর দক্ষিণ ২৪ পরগনাতে তেমনই হাল বজায় আছে। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের চেহারা কোথাও কোথাও এমনও যেখানে মুখ দেখাদেখিও বন্ধ। এবং মূল যে প্রশ্ন তা হল যদি সংসদীয় রাজনীতিই এক এবং একমাত্র পথ হয়ে থাকে, তাহলে নির্বাচন, জোট রাজনীতি, মূল শত্রু, অন্যান্য দলের সঙ্গে সম্পর্ক ইত্যাদি বিষয়ে তো একটা পরিষ্কার ধারণা থাকতে হবে। এইখানেই এসে একটা জট সিপিএম কোনওদিনও ছাড়াতে পারে না। যদি আজকের সূর্যকান্ত মিশ্রের কথাটাই দলের বক্তব্য হিসেবে ধরি তাহলে তৃণমূলের চেয়ে বিজেপি-আরএসএস অনেক বড় বিপদ। সেই বিপদকে সামলানোর জন্যই তাঁরা তামিলনাড়ুতে ডিএমকের হাত ধরেছেন, যাঁরা এক সময়ে বিজেপির জোটসঙ্গী ছিল, বিজেপির মন্ত্রিসভাতে ছিল, যাঁদের নেতারা বিভিন্ন বিশাল চুরি আর দুর্নীতির দায়ে এখনও অভিযুক্ত, জেলেও গেছে।

সেই বড় বিপদকে আটকাতে তাঁরা মহারাষ্ট্রে এমনকী শিবসেনার সরকারকে সমর্থন করতে অস্বীকার করেননি, যদিও সেই সরকারে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত এনসিপি নেতা অজিত পওয়ার ছিলেন বা সেই শিবসেনা যাঁরা সাভারকরের গুণগান এখনও করেন, যাঁদের নেতা গর্ব করে বলেছিলেন যে তাঁরাই ভেঙেছেন বাবরি মসজিদ। সেই একই কারণে সিপিএম কাশ্মীরে ন্যাশন্যাল কনফারেন্সকে সমর্থন করে যে ন্যাশন্যাল কনফারেন্সের নেতা ওমর আবদুল্লা অটল মন্ত্রিসভার মন্ত্রী ছিলেন, ন্যাশন্যাল কনফারেন্স ছিল এনডিএ-র শরিক। বিজেপি এক প্রবল বিপদ, তাকে হটানোর জন্য লালুপ্রসাদের দল আরজেডির সঙ্গে বিহারে আঁতাঁত করতেই পারে, যদিও সেই লালু যাদব, ছেলে তেজস্বী যাদব, মেয়ে মিসা যাদব প্রত্যেকের নামে দুর্নীতির বহু অভিযোগ আছে, লালু যাদবের সময়ে পুর্ণিয়ার সিপিএম নেতা অজিত সরকার বলেছিলেন এ এক জঙ্গলের রাজত্ব চলছে। ওনারা এই রাজ্যেই সেই একই কারণে কংগ্রেসের হাত ধরতে পারেন যদিও কেরালাতে এই দলকে তাঁরা বিজেপির বি টিম বলে কেবল মনেই করেন না, প্রকাশ্যে সেটাই বলেও থাকেন। তাহলে কেসটা কী? কোন যুক্তিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা তৃণমূলের সঙ্গে তাঁদের জোট হবে না? দুর্নীতির অভিযোগ আছে? এনসিপি, আরজেডি, এসপি, ডিএমকে, কোন দলের নেতাদের জেলে পোরা হয়নি? কাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নেই? তৃণমূল বিজেপির সঙ্গে মন্ত্রিসভাতে ছিল? ওমর আবদুল্লা ছিলেন না? উদ্ধব ঠাকরে ছিলেন না? এমকে স্তালিন ছিলেন না? কে ছিলেন না? কারা ছিলেন না? তাহলে?

আরও পড়ুন: Fourth Pillar | ট্রাম্পের টাকা মোদির পকেটে

এবং যদি বিজেপি-আরএসএস অনেক বড় শত্রু হয় এবং তাদের বিরুদ্ধেই লড়াটা প্রথম কাজ হয় তাহলে বাকিদের সঙ্গে জোট বাঁধতে হবে এই সহজ সরল সত্যটা জানার জন্য তিনদিন ধরে পাত্রাধারে তৈল না তৈলাধারের পাত্র এই আলোচনা না করে একটা সাফ কথা অন্তত বলাই যেতে পারত যে এই রাজ্যে আমাদের বিরোধী তৃণমূলের সঙ্গে আমাদের লড়াই জারি থাকবে কিন্তু আপাতত আমাদের প্রথম কাজ হল বিজেপিকে হারানো। কিন্তু বাস্তব অবস্থাটা কী? ৮০ শতাংশ কমিটেড সিপিএম কর্মীর ফেসবুক, সমাজ মাধ্যমের পাতাগুলো দেখুন, ৮০ শতাংশ বিরোধিতা তৃণমূল নেতা, তৃণমূল নেত্রী আর দলকে নিয়ে। কেবল তাই নয়, কোনও একটা লেখায় এই তৃণমূল সরকার বা দলের প্রতি সামান্যতম সমর্থন থাকলেও সেই পাতায় গিয়ে সেখানে অশ্রাব্য গালিগালাজ করে আসাটাই যাদের প্রথম কাজ তাঁদের দলের সর্বোচ্চ স্তরের নেতা রাজ্য সম্মেলনে দাঁড়িয়ে বলছেন, তৃণমূলের চেয়ে ঢের বড় শত্রু হল বিজেপি। মানেটা খুব পরিষ্কার, উনি যা বলছেন তা দলের কর্মী নেতারা মানেন না, মানতে চান না, তাঁদের কাছে প্রথম এবং একমাত্র শত্রু হল তৃণমূল আর মমতা ব্যানার্জি। এখন হতেই পারে, এতেই বা অসুবিধেটা কী? একটা রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা যে কোনও কারণেই মনে করতেই পারেন যে এই দলটাই আমাদের মূল শত্রু। অসুবিধেটা কোথায়? এইজন্যও সেটা মনে করতেই পারেন, কারণ এই তৃণমূল দল এক ৩৪ বছরের নিরবচ্ছিন্ন শাসনের অবসান এনেছে। এরকমটা ভাবাতেও অসুবিধে তো থাকার কথা নয়।

কিন্তু আছে, অসুবিধে আছে। অসুবিধেটা হল, রাজনীতির মাঠে যদি দুটো বড় দল থাকে, বাকিরা যদি ছোট্ট দল হয়, তাহলে এক ধরনের বাইনারি তৈরি হয়, সেই বাইনারি কেউ তৈরি করে না, ওই সংখ্যার জন্যই তা তৈরি হয়, তৃণমূলের ভোট ৪৬ শতাংশ, বিজেপির ভোট ৪০ শতাংশ, বামেদের ভোট ৬ শতাংশ, কংগ্রেসের ভোট ৫ শতাংশ। এবার যে কেউ, রাজ্যের যে কোনও আম আদমি সহজেই বলে দেবে যে কেউ যদি তৃণমূলকে হারাতে পারে তাহলে সে দল হল বিজেপি, বিজেপিকে যদি কোনও দল রুখতে পারে তাহলে তা হল তৃণমূল। আর এরকম একটা পরিস্থিতিতে, একটা বিরাট অংশ, রাজ্যের সংখ্যালঘু মানুষজন যাঁরা যে কোনও মূল্যে বিজেপিকে আটকাতে চান তাঁরা তৃণমূলকে ভোট দেবেন, যাঁরা তৃণমূলকে হারাতে চান তাঁরা বিজেপিকে ভোট দেবেন। এই বাইনারির বাইরে ছোট দলের প্রতিটা প্রচার, প্রতিটা বিজেপি বিরোধী প্রচার আদতে তৃণমূলের কিছুটা হলেও ভোট বাড়াবে আর তৃণমূল বিরোধী তীব্র প্রচার বিজেপির একটা হলেও ভোট বৃদ্ধির কারণ হবে। এবং এই বাইনারি ভাঙবে না, হয় তৃণমূল, নয় বিজেপির মধ্যেই ঘুরবে রাজনীতি। তাহলে? ওই ছোট রাজনৈতিক দলের, কংগ্রেস বা বামেদের তীব্র বিজেপি বিরোধী প্রচার এ রাজ্যে বিজেপিকে ক্রমাগত কোণঠাসা করবে, এক, দুই, তিন শতাংশ করে ছোট বিরোধীদের ভোট বাড়বে, বামেদের যে ভোট বিজেপির দিকে চলে গেছে তা ফিরে আসতে শুরু করবে, এবং একটা সময়ে বামেরা আবার অন্তত মুখরক্ষার লড়াই করতে শুরু করতে পারবেন। তাঁদের তীব্র মমতা-বিরোধিতা আদতে তাঁদের দলের ভোটারদেরও বিজেপির দিকেই নিয়ে চলে যাচ্ছে, কারণ তাঁদের দলের এক্কেবারে নীচের সারির কর্মী সমর্থকদের কাছে মেসেজ যাচ্ছে সবচেয়ে বড় শত্রু মমতা আর তৃণমূল, এই সিদ্ধান্তে আসার পরে তাঁরাই ঠিক করে নিচ্ছেন যে তাহলে তৃণমূলকে হারাতে হলে আপাতত বিজেপিকে ভোট দেওয়া যাক, বিজেপির ভোট বাড়ছে, সিপিএম এর ভোট কমছে।

সংখ্যালঘু মানুষদের ভোট আরও মেরুকরণ হচ্ছে, আর সেই কারণেই একদা ৪৭-৪৮ শতাংশ ভোট পাওয়া বামেরা এখন ছয়, সাড়ে ছয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। এই সহজ অঙ্কের জন্য মার্কস পড়ার দরকার নেই, ওই চিংড়ি মাছের মালাইকারি খেতে খেতে খানিক ভাবলেই বিলকুল সাফ হয়ে যাবে যে, এ রাজ্যে আবার ঘুরে দাঁড়াতে গেলে, আগামিকাল থেকে বামেদের তীব্রতম বিজেপি বিরোধী প্রচারে নামতে হবে, তলার সারির সমর্থক আর কর্মীদের কাছে সূর্যকান্ত মিশ্রের ওই কথাগুলো নিয়ে যেতে হবে ‘‘গত পার্টি কংগ্রেসে আমাদের রাজনৈতিক কৌশলগত অবস্থানে বলা হয়েছিল, বিজেপি-কে বিচ্ছিন্ন করো, পরাস্ত করো। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রেও এটা প্রাসঙ্গিক। এই শক্তি একটা বড় বিপদ। অনেকে মনে করেন, তৃণমূল এবং বিজেপি সমান। বিশ্বজুড়ে নয়া ফ্যাসিবাদের উত্থান, মোদি সরকারের অবস্থান আমরা চোখের সামনে দেখছি। সেখানে একটা রাজ্যের একটা আঞ্চলিক দলকে এক করে দেখা ঠিক নয়।’’ একমাত্র তাহলেই এই শূন্যগহ্বর থেকে মুক্তি পাবে, পেতে পারে বামেরা।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
বাংলা বলছে (Bangla Bolche) | সন্ত্রাস দমনে বদ্ধপরিকর সরকার
00:00
Video thumbnail
Weather Update | ধেয়ে আসছে প্রবল ঝড়, ভাসবে কোন কোন জেলা? দেখুন আবহাওয়ার আপডেট
00:00
Video thumbnail
Narendra Modi | প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক, রয়েছেন ৩ সেনাপ্রধান, দেখুন বড় আপডেট
00:00
Video thumbnail
SSC | জেলে যাবেন SSC চেয়ারম্যান? বিরাট নির্দেশ হাইকোর্টের
00:00
Video thumbnail
Pahelgam | পহেলগাম হা/ম লায় পাকযোগ স্পষ্ট! হা/ম/লাকারী জ/ঙ্গি প্রাক্তন পাক ফৌজি মুসা
00:00
Video thumbnail
India-Pakistan|ফের সীমান্তে পাকিস্তানের উসকানি,ভারতীয় সেনার জবাবে ল্যাজ গুটিয়ে পালাল পাকিস্তানি সেনা
00:00
Video thumbnail
Mamata Banerjee | দিঘায় জগন্নাথ মন্দির থেকে বক্তব্য রাখছেন মুখ্যমন্ত্রী, দেখুন সরাসরি
00:00
Video thumbnail
Mark Carney | Canada | ফের কানাডার মসনদে মার্ক কারনি
00:00
Video thumbnail
Colour Bar | যকের ধনের খোঁজে সোনার কেল্লায় পরমব্রত - কোয়েল
06:05
Video thumbnail
Narod Narod (নারদ নারদ) | আসানসোলে তীব্র জল সঙ্কট, সমস্যা সমাধানের আশ্বাস মেয়রের
22:13