Wednesday, December 10, 2025
HomeScrollFourth Pillar | মোদিজির সেই কালো-টাকা? জানা গেল, সেটাও এক বিশাল মিথ্যে
Fourth Pillar

Fourth Pillar | মোদিজির সেই কালো-টাকা? জানা গেল, সেটাও এক বিশাল মিথ্যে

দেশের সাড়ে চার কোটি পরিবারের মাথায় ছাদ নেই, তাঁদের বাড়ি নেই

Written By
অনিকেত চট্টোপাধ্যায়

সংসদ এক আকর্ষণীয় সার্কাস। তো সেই সংসদে বাংলার সাংসদ মালা রায় জানতে চেয়েছিলেন, আচ্ছা কালো-টাকা কত আছে? কালো-টাকা কত উদ্ধার হয়েছে? কতটা উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে? আর কতটাই বা দেশের বাইরে গিয়েছে? সেই প্রশ্নের উত্তরে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রক লিখিত ভাবে জানিয়েছে, ‘আসলে কালো-টাকা বলে কিছু নেই!’ এর অবশ্য একটা ব্যাখ্যাও দিয়েছেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী পঙ্কজ চৌধরী, ‘১৯৬১ সালে আয়কর আইন কিংবা ২০১৫ সালের কালো-টাকা, লুকোনো বিদেশি আয় ও সম্পদ আর আয়কর আরোপ আইনে ‘কালো-টাকা’ বলে কোনও কথা নেই।’ বোঝো কান্ড! আমাদের কিন্তু স্পষ্ট মনে আছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সেই ‘প্রতিশ্রুতি’ — বিদেশ থেকে সব কালো টাকা ফিরিয়ে আনতে পারলে প্রতি ভারতীয়ের অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা করে জমা করবে সরকার! ‘ইউঁ হি পন্দ্রহ পন্দ্রহ লাখ আ জায়েঙ্গে’! তাই স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, মোদিজি তাহলে কোন টাকার কথা বলেছিলেন? তাঁর সরকারই তো ১১ বছরের মাথায় এসে সংসদে জানাচ্ছে, ‘কালো-টাকা বলে কিছু নেই। গত ১০ বছরের এমন কোনও হিসেবও নেই সরকারের কাছে!’ ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনে ক্ষমতায় আসার আগে তো প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী মোদি বিদেশে সঞ্চিত বিশেষ করে সুইশ ব্যাঙ্কে রাখা ভারতীয়দের ‘কালো টাকা’ ফিরিয়ে আনা গেলে প্রত্যেকের অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা করে দেওয়া যাবে বলে বারবার জনগণকে আশ্বস্ত করেছেন। সেই টাকা উদ্ধারের জন্য ২০১৫-তে আইনও আনা হয়েছে। তা হলে? ২০১৫, ২ সেপ্টেম্বর এক সাক্ষাৎকারে মোদি বলেছিলেন, “দেশের মধ্যে কালো টাকা যাতে আটকানো যায় সেজন্য আমরা আইনে পরিবর্তন এনেছি। ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সকলকে সুযোগ দেওয়া হচ্ছে, নিজেদের কালো টাকা ঘোষণা করে শান্তিতে যাতে রাতে ঘুমোতে পারেন… এই সব টাকা দেশের গরিব মানুষের। কারও তা লুট করার অধিকার নেই। এটাই আমার প্রতিজ্ঞা। আমি পুরো শক্তি নিয়ে কাজ করছি ও তা চালিয়ে যাব।” এখন সংসদে দাঁড়িয়ে অর্থ দফতরের মন্ত্রী বলছেন, “কই কালো টাকা বলে আমরা তো কিছু জানি না”।

বলতে বলতে ক্লান্ত, আপনারাও শুনতে শুনতে ক্লান্ত, সপ্তাহে পাঁচ দিনের চতুর্থ স্তম্ভে অন্তত একটা দিন তো বরাদ্দই থাকে আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রীর মিথ্যে ভাষণের জন্য। বিভিন্ন ধরণের মিথ্যে, পুকুর থেকে কুমির ধরা থেকে শুরু করে তেনার একলার এন্টায়ার পলিটিক্যাল সায়েন্স পড়াশুনো, ১৫ লক্ষ টাকা অ্যাকাউন্টে ঢুকে যাবে থেকে জিমেল আসার আগে ছবি অ্যাট্যাচ করে পাঠানো, সেই স্টেশন যা ছিলই না সেখানে চা বিক্রি থেকে শুরু করে কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করে দেওয়ার গুল গল্প। উনিও থামবেন না, আমরাই বা তাহলে থামি কী করে? আমি, আপনি তো আর অতীত বা বর্তমান বা ভবিষ্যতে নেই, আমরা আছি ‘অমৃতকাল’-এ, ‘আজাদি কা অমৃত মহোৎসব’ পার করে চলছি আমরা, কোন জাহান্নমের দিকে কে জানে? কিন্তু সেই ‘আজাদি কা মহোৎসব’-এ মোদিজি নেমেছিলেন কাছা খুলে। প্লিজ জিজ্ঞেস করবেন না যে, কেন স্বাধীনতা সংগ্রামে বিশ্বাসঘাতকতা করা আরএসএস–বিজেপি হঠাৎ ‘আজাদি কা জস্ন মনানে কে লিয়ে ইতনা বেকরার কিঁউ?’ সে কথায় পরে আসছি, কিন্তু সেই আজাদির বিভিন্ন অনুষ্ঠান হচ্ছিল, তার এক জায়গায় দেখেছিলাম আমাদের নরেন্দ্রভাই দামোদরদাস মোদিজি বলেছেন, “আজ যে বীজ পুঁতে দিলাম, তার ফল ভোগ করবেন আরও ২০ বছর পরে, মানে ২০৪২ এ”। কোন বীজ? কোন ফল? – এসব নিয়ে আলোচনা করার কোনও মানেই হয় না। কারণ উনি যখনই প্রতিশ্রুতি দেন, তখনই তা পূরণ হবে আরও পাঁচ, সাত, নয় কি ২০ বছর পরে, এরকমই বলে থাকেন। ওনার ধারণা, ততদিনে গঙ্গা, যমুনা, কাবেরী, নর্মদা, ব্রহ্মপুত্র দিয়ে কিউসেক কিউসেক জল বয়ে যাবে, মানুষের মেমোরি সেই জলেই ভেসে যাবে। সিম্পল। অতএব যা খুশি প্রতিশ্রুতি দাও, ক’দিন পরে দেশের সব কল থেকে জল নয় ‘গায় কা দুধ নিকলে গা’, বলে দিতেই পারেন, ‘মিত্রোঁ, ইসকা কাম চালু হো গয়া, ব্যস ১৫ সাল বাদ’। আপনার বাচ্চা, খিদে পেলেই কলের কাছে যাবে, কল খুলবে, কপিলা গাভীর দুধ ঝরে ঝরে পড়বে, কেবল বাচ্চাকে বলে দেবেন, দুধ খেয়ে কলটা বন্ধ করতে, আমার বাচ্চা বেলায় আমার মা আমাকে শিখিয়েছিল। বলতেই পারেন এসব কথা, কারণ উনি জানেন ১৫ বছর পর এ নিয়ে কেউ প্রশ্ন করবে না। কারণ প্রশ্নকর্তা খাম পায়, আম পায়, নাম পায়, সে তখনও প্রশ্ন করবে। রাহুল গান্ধী, প্লিজ অ্যানসার, দ্য নেশন ওয়ান্টস টু নো।

আরও পড়ুন: Fourth Pillar | বিজেপির থাবায় ছারখার NDA

সেরকমই এক কথা বলেছিলেন ২০১৪ নির্বাচনী প্রচারে, বলেছিলেন কালো টাকার কথা, আজ ভুলে মেরে দিয়েছেন। আসুন কিছু মণি মাণিক্য তুলে ধরা যাক, ২০১৮-র ৩ ডিসেম্বরে, তেলেঙ্গানা রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে প্রচারে গিয়ে মোদিজি কী কী বলেছিলেন? ২০২২-এর মধ্যে সবকা পক্কা ঘর হোগা, কেবল কী ঘর? ঘরে নল থাকবে, নলে জল থাকবে, এলইডি বাল্ব থাকবে, গ্যাস কানেকশন থাকবে। ডাইনিং টেবলে হায়দ্রাবাদী বিরিয়ানি থাকবে – এই কথাটাই যা বলেননি। নাটকীয় সুরে, গলা কাঁপিয়ে বলেছেন ওই কংগ্রেসের মতো প্রতিশ্রুতি নয়, কেবল চারটে দেওয়াল নয়, খাওয়া দাওয়ার পরে পাকা শৌচালয়ও থাকবে সেই ঘরে, কতদিনের মধ্যে? ২০২২-এর মধ্যে। কেন ভাই ২০২২ কেন? কারণ ‘আজাদী কা ৭৫ সাল’ পুরা হোগা, আমরা অমৃতকালে ঢুকে পড়ব, দেশের প্রত্যেক গৃহহীন মানুষ ঘর পাবে। এখন গজনী সিনেমার আমির খান, তফাত হল এখানে শর্ট-টার্ম, লং-টার্ম দুটো মেমোরিই লস হয়ে গিয়েছে। মিথ্যে বলেছিলেন, ভুলে মেরে দিয়েছেন! আজ আবার আরেকটা বীজ পোঁতার কথা বলছেন, সে গাছ নাকি ২০৪২-এ ফল দেবে। তো আসুন একটু বাস্তব ছবির দিকে নজর রাখা যাক। আমাদের দেশে গৃহহীনদের সমস্যা কোন পর্যায়ে, তা আলোচনা করতে গিয়েই থমকে যাবেন। আমার দেশের সরকার কোন জঙ্গলের তলায়, কোন পাহাড় খুঁড়লে কত তামা, লোহা, বক্সাইট পাওয়া যাবে, তার হিসেব করে রেখেছে; কোন জাহাজ বন্দর, কোন উড়োজাহাজ বন্দর বেচে দিলে, কাকে বেচা হবে, কত টাকায় বেচা হবে, তা আগাম ঠিক করে রেখেছে; কোন প্রান্তে কত টাকার ফ্লাইওভার হবে, কত টাকার মূর্তি হবে, কত টাকার মন্দির হবে, তা ঠিক করে ফেলেছে। কিন্তু দেশের গৃহহীনদের সংখ্যা ঠিক কত? মানে রাস্তা, ফুটপাথ, ডাস্টবিনের পাশে, রাস্তার ধারে রাখা পাইপের ভেতরে যে মানুষজন আছেন, তাঁদের সংখ্যা কত? গ্রামেও যারা খোলা আকাশের নীচেই শুতে বাধ্য হয়, তাঁদেরই বা সংখ্যা কত, তা জানার কোনও চেষ্টাই করেনি। গৃহহীন মানুষদের ঘর দিতে গেলে প্রথমে তো জানতে হবে, কত মানুষের মাথার তলায় ছাদ নেই। না সরকার-বাহাদুর সেরকম কোনও হিসেব করেনি। তাহলে? তাহলে ভরসা বিভিন্ন এনজিও প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তিগত কিছু সার্ভে। তো সেখান থেকে খুব কনজারভেটিভ, খুব কম করে ধরলেও যে সংখ্যা পাওয়া যাচ্ছে তা হল, সাড়ে চার কোটি পরিবারের মাথায় ছাদ নেই, তাঁদের বাড়ি নেই। অর্থাৎ পরিবারের সংখ্যা পাঁচ জন ধরলে, দেশের ২২ থেকে ২৩ কোটি মানুষের ঘর নেই। এটা আজকের হিসেব। প্রধানমন্ত্রীর কথা মতো এদের ঘর, কল, জল, শৌচালয় সব পাওয়ার কথা ছিল সেই অগাস্ট মাসে, যেদিন স্বাধীনতা ৭৫ বয়সে পা দেবে। এবং মাথায় রাখুন এই সংখ্যাটা হল কেবল তাদের যাদের ঘর বলতে কিছুই নেই। এরপর হল জুগগি ঝোপড়ি, কোনওভাবে মাথা গুঁজে বেঁচে থাকা, কীভাবে? কেন অস্কার পাওয়া ছবি ‘স্লাম ডগ মিলিওনিয়ার’ দেখে নিন, চলে যান মানিকতলা, ঢাকুরিয়া খালপাড় বস্তিতে। ‘সবকা ঘর, ঘর মে কল, কল মে জল’, এসব বাওয়ালি দিতে গেলে একটা মারও নিচে পড়বে না। এই মূহুর্তে দেশের ৪৫ কোটি মানুষের কাছে পানীয় জল পৌঁছায়নি, জল বলে যেটা খান, সেটা কোনও সাহেবকে নয়, মোদিজিকেই খাওয়ালে দিন দশেক হাসপাতালেই থাকতে হবে। কতটা নির্লজ্জ হলে এরকম মিথ্যে বলে দেওয়া যায়, এবং বলার সময়ে চোখে মুখে মিথ্যে বলার চিহ্ন মাত্র নেই! একেই মনোবিদরা প্যাথোলজিকাল লায়ার বলে। সেই আজাদির অমৃতকাল কেটে কবেই সময় জুড়িগাড়ি হাঁকিয়ে হুউউস করে চলে গিয়েছে, এখনও সবার মাথায় ছাদ এসেছে? আসেনি, ওনার নকড়া-ছকড়া নেতা কর্মীরা এই বাংলাতে সবার মাথার উপর ছাদের নতুন প্রতিশ্রুতি নিয়ে হাজির, আবার সবার ঘর হবে, ঘরে কল হবে, কলে জল হবে।

পার্থ চট্টোপাধায় চুরি করেছেন? অনুব্রত চোর? চটি ছুঁড়বেন? ইচ্ছে হলে বেশক ছুঁড়ুন, কিন্তু এখানে কী ছুঁড়বেন? সেটাও তো ঠিক করতে হবে। দেশের প্রতি সাত জনের একজন রাতে যখন শুতে যান, তখন মাথার উপর থাকে খোলা আকাশ, বৃষ্টি পড়লে, জন্তু জানোয়ারের মতো মাথা বাঁচাতে অন্য কোথাও, অন্য কোনওখানে। দেশের প্রতি ছয় জনের একজনের বাড়িতে স্যানেটারি টয়লেট, শৌচালয় নেই। মহিলারা ভোর তিনটেয় ওঠেন, অন্ধকার লজ্জা ঢাকে, কৃষ্ণ নয়। দেশের প্রতি তিন জনের একজন পরিশ্রুত পানীয় জল পায় না, প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী, আমলা দামলা, বিচারক, সাংবাদিকদের টেবিলে মিনারেল ওয়াটার থাকে। শুনিনি কোনও বিচারককে এ নিয়ে আগ বাড়িয়ে কোনও কথা বলতে। দেশ স্বাধীন, আমার একটা ভোট, আপনারও একটা। কেউ ১৫০০ টাকা দামের মিনারেল ওয়াটার খাবে, কেউ নোংরা নর্দমার জল, এ কোথাকার ন্যায়? কোনও ঘোষ, গাঙ্গুলী, ভট্টাচার্য কালো সামলা পরে দেশের নেতাদের বিচারের কাঠগড়ায় এনে তো দাঁড় করানোর কথা বলেন না, শিক্ষক নিয়োগে দূর্নীতি? কতজনের? ১০ হাজার, ১৫ হাজার, ৫০ হাজার, দু লক্ষ, ৬ লক্ষ? সে দুর্নীতি ধরুন, জেলে পুরুন মন্ত্রী আমলা দামলাদের। ২০ কোটি মানুষের ঘর নেই, আম্বানির আন্টিলায় প্রত্যেকটা কুকুরের আলাদা ঘর আছে, ২০ হাজার ৬৭২ কোটি টাকায় তৈরি সেই বাড়ি! হ্যাঁ, ২০,৬৭২ কোটি টাকায় তৈরি ২৭ তলা বাড়ি, যাতে গাড়ি রাখার গ্যারাজ আছে ১৬৮ খানা, সিনেমা হল আছে, সুইমিং পুল আছে, ৫০ জন বেদজ্ঞ পন্ডিতকে দিয়ে পুজো করিয়ে গৃহপ্রবেশ হয়েছিল। এসব ধর্মাবতারের চোখে পড়ে না, ধর্মাবতারের কাছে খবর নেই বা ধর্মাবতারের সাহসে কুলোয় না এ নিয়ে আগ বাড়িয়ে কিছু বলার, যে লোকটা কিছুদিন আগেই সর্বসমক্ষে মিথ্যে কথা বলেছে তাঁকে ডেকে নিয়ে এসে জেলে পোরার। এদিকে দেশের প্রধানমন্ত্রী মিথ্যে বলেই চলেছেন, বলেই চলেছেন, বলেই চলেছেন।

দেখুন ভিডিও:

Read More

Latest News