Thursday, June 26, 2025
Homeচতুর্থ স্তম্ভচতুর্থ স্তম্ভ: ফাঁকা কলসীর আওয়াজ বেশী

চতুর্থ স্তম্ভ: ফাঁকা কলসীর আওয়াজ বেশী

Follow Us :

দিল্লির সরকার, নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহ, বিজেপি নেতৃত্ব কী নিয়ে ব্যস্ত? কী নিয়ে চিন্তিত? ওনারা কি দেশজোড়া করোনার দ্বিতীয় ওয়েভ নিয়ে, তার ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে, বা আবার আসছে, তৃতীয় ওয়েভ, তাই নিয়ে ব্যস্ত? মানে যে কোনও সুসভ্য সরকারের তো তাই হওয়া উচিত, মৃত্যু সংখ্যা যে লুকোনও হয়েছে, তা তো সরকারের থেকে আর কেউ বেশি জানে না, তা যে ৩/৪ লক্ষ নয়, তা যে ৩৫/৪০ লক্ষের বেশি, তা সরকার জানে। সরকারের থেকে আর বেশি কেই বা জানবে আমাদের অর্থনীতির হাঁড়ির হাল? তারা তো জানে জিডিপির আসল হাল হকিকত, তারা তো জানে এমএসএমই সেক্টরের প্রকৃত চেহারা, তারা তো জানে মুল্যবৃদ্ধির হার, তারা তো জানে কনজামশন, কেনাবেচা, পণ্যের ব্যবহার কতটা কমেছে, তারা তো বিলক্ষণ জানে বেকারত্ব কোন চূড়োয় ঠেকেছে, তারা জানে কৃষিক্ষেত্রে কত বড় সর্বনাশ হতে চলেছে। তাই স্বাভাবিক কারণেই, পৃথিবীর যে কোনও সভ্য সরকারের মত আমাদের সরকারেরও উদ্বেগ থাকা উচিত, যে কোনও সভ্য দেশের প্রধানমন্ত্রীর মত, আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রীরও উদ্বিগ্ন হবার কথা, স্বাভাবিকভাবেই, তাদেরকে বিভিন্ন জনের সঙ্গে আলোচনা করে, বিভিন্ন জ্ঞানী গুণি মানুষজনদের সঙ্গে কথা বলে, এই বিরাট বিপর্যয় থেকে বার হবার রাস্তা খোঁজার চেষ্টা করা উচিত, কিন্তু সমস্যা হল বিজেপি তো তেমন দলই নয়, জ্যোতি বাবু এক কথায় এই দলটির উদ্দেশ্যে, ঠিকঠাক এক বিশেষণ ব্যবহার করেছিলেন, তিনি বলেছিলেন ‘বর্বর, বর্বরদের দল’। একটা দল যাদের এতটুকু মানবিকতা বোধ নেই, একটা দল যারা হিংসা লাগাতে পারলে, হিন্দু মুসলিম মেরুকরণ ঘটাতে পারলে খুশি হয়, কেবল ভোটের জন্য এরা যা খুশি করতে পারে, কেবল সরকার বানানোর জন্য এরা গোরু ভেড়ার মত এমএলএ কিনে দেখিয়ে দিয়েছে, ঠিক তাই অতিমারীর এই সঙ্কটে যদি ভেবে থাকেন এই সরকার, মোদি – শাহ, বিজেপি নেতৃত্ব দেশ নিয়ে, দেশের মানুষের ওপর নেমে আসা বিপর্যয় নিয়ে উদ্বিগ্ন, তাহলে আপনি ভুল ভাবছেন, বিলকুল গলত।

এই বাংলায় চূড়ান্ত হারের পর, বিজেপিকে একটু ছন্নছাড়া মনে হচ্ছিল, হাত থেকে একের পর এক রাজ্য খসে যাচ্ছে, ২০০ আসন পাবো বলার পর, ৭৫টি আসন জুটছে, হিন্দি হার্ট ল্যান্ডে করোনার থাবা তীব্র, লাশ ভাসছে নদীর জলে, নদীর চরে শয়ে শয়ে লাশ, বেনামী লাশ, অক্সিজেনের অভাবে মানুষ মারা যাচ্ছে, রোজ ফ্রন্ট পেজ ছবি। তাল বুঝে আদালতের সুর একটু অন্য রকম, কাশ্মীর নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে বিরুপ প্রতিক্রিয়া, এদিকে পিকে শরদ পাওয়ারের সঙ্গে বৈঠকে বসে পড়লেন, ওদিকে আদিত্য যোগীকে বাগে আনা যাচ্ছে না, সব মিলিয়ে বেশ কি জানি কী হয় গোছের মাহোল, ছন্নছাড়া অবস্থা। কিন্তু দলের নাম বিজেপি, নেতার নাম নরেন্দ্রভাই দামোদরদাস মোদি, সাকরেদের নাম অমিত শাহ, পেছনে আরএসএস। খুব দ্রুত এই অবস্থা কাটিয়ে নেবার প্রক্রিয়াও শুরু হয়ে গেলো, না তারা চিন্তিত নয় অতিমারী নিয়ে, তারা অর্থনৈতিক বিপর্যয় নিয়েও চিন্তিত নয়, তারা চিন্তিত আগামী বছর ৫ রাজ্যের চুনাও নিয়ে, বিলক্ষণ জানেন যে ওই পাঁচ রাজ্যের ফলাফল, আগামী সাধারণ লোকসভা নির্বাচন ২০২৪ এর ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে, উত্তরপ্রদেশে হার মানে ২০২৪ এ ওঁ গঙ্গা, সেটা ওনারা জানেন তাই আপাতত পাখির চোখ হল নির্বাচন, এবং বিজেপি’র চেয়ে ভালো কে জানে যে নির্বাচনে জেতার জন্য লাগে পারসেপশন, ডেভেলপমেন্টের পারসেপশন, উন্নতি আসলে হওয়াটা জরুরি নয়, উন্নতি হচ্ছে, এটা মনে করানোটা হল ওই ইমেজ বিল্ডিংয়ের অংশ, সরকার সত্যি করে কতটা কাজ করলো সেটা জরুরি নয়, সরকার কাজ করছে, এই ধারণাটা প্রতিষ্ঠিত করাই হল লক্ষ্য, তার মানে একটা মেসেজ, একটা খবর মানুষের কাছে পাঠিয়ে দাও, যে খবর বলে দেবে এই যে দেখুন, সরকার কাজ করছে, তার জন্য দুটো জিনিষ দরকার, এক হল, পরিকল্পনা, কোন খবরটা কি ভাবে ছড়ানো যায়, কোন খবর ছড়ালে লাভ হবে, তার পরিকল্পনা। দুই হল, প্রচার যন্ত্র। সে তো আছেই, গদি মিডিয়া আছে, কোনও প্রশ্ন না করেই ছড়িয়ে দেবে রাজার বার্তা, আর আছে বিজেপির আইটি সেল, এবং অবশ্যই আরএসএসের প্রচারক, প্রতিদিন যারা বিষ ছড়ান। লক্ষ্য করে দেখুন, বিজেপির বৈঠক হচ্ছে, প্রায় প্রতিদিন, দিনে দুটো তিনটে বৈঠক, কোথাও সভাপতি নাড্ডা, অমিত শাহ, রাজনাথ সিং হাজির, কোথাও অমিত শাহের সঙ্গে এক গুচ্ছ মন্ত্রী, রাজধানী দিল্লি, লক্ষ্ণৌ, আহমেদাবাদ, বেঙ্গালুরু, পানাজি, সিমলা বৈঠকের পর বৈঠক। এখন থেকেই মাঠে নেমেছে বিজেপি, লক্ষ্য ২০২২ এ পাঁচ রাজ্যের নির্বাচন। প্রথম নির্দেশ গেছে প্রত্যেক বিজেপি শাসিত রাজ্যে, ডাইরেক্ট বেনিফিসিয়ারি বাড়াও, ইউনিয়ন সরকারের মন্ত্রীদের ফান্ড খরচ করতে বলা হচ্ছে এই পাঁচ রাজ্যে, রাজ্যে আপাতত আইনশৃঙ্খলা বাগে আনতে হবে দ্বিতীয় নির্দেশ, সেই মত প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। তিন নম্বর নির্দেশ, কোন্দল থামাও, আদিত্য যোগী গত চার বছরে একবারও যাননি তাঁর বাসভবন লাগোয়া কেশব মৌর্যের বাড়ি, চলে গেলেন। গুজরাটে রূপানি বসছেন তাঁর বিরোধীদের সঙ্গে, কর্ণাটকেও তাই। কিন্তু শেষমেষ বিজেপি জানে লড়াই হবে, নরেন্দ্র মোদির ইমেজকে হাতিয়ার করে, তাই সেই ইমেজে পালিশ লাগাও, ইমেজ বিল্ডিং শুরু করো। প্রধানমন্ত্রী এলেন মন কি বাত বলতে, প্রধানমন্ত্রী এলেন টিভির পর্দায়, কী বলছেন? কোভিডের পর উল্লাস ছিল, এখন বুঝেছেন ওসব উল্লাস মানুষ নেবে না, থালা, দিয়ার গল্প শেষ, আগে কি বলা হচ্ছিল? মোদির নেতৃত্বে আমরা অতিমারীকে জয় করেছি, তারপর সেকেন্ড ওয়েভ, মানুষ বুঝে গেছে, তাই ভ্যাক্সিনের গল্প শুরু, আমি ভ্যাক্সিন নিয়েছি, আমার মা ভ্যাক্সিন নিয়েছে, আপনিও ভ্যাক্সিন নিন, মানে ওহে পাবলিক আমি তোমাদেরই একজন। দূরত্ব অনেক বেড়ে গেছে, প্রধানমন্ত্রীর প্রথম মেসেজ আমি তোমাদেরই লোক, যে মেসেজ তিনি ২০১৪ তে দিয়েছিলেন, তারপর ভুলে গিয়েছিলেন, আজ হঠাৎ মনে পড়েছে। এরপরে বিজেপি থিঙ্ক ট্যাঙ্ক এক রিপোর্টের উল্লেখ করলো, যা নাকি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তৈরি হয়েছে, অক্সিজেন অডিট কমিটি, কেন? তৈরি হল কারণ এটা জানতে যে একটা সময়ে হঠাৎ অক্সিজেনের সংকট কেন দেখা দিল? তো সেই কমিটির মাথায় এইমসের কর্তা ডঃ গুলেরিয়া, তিনি একটা ইন্টারিম রিপোর্ট দিয়েছেন, সেটা ফাঁস হল, তাতে বলা হয়েছে দিল্লির সরকার, হঠাৎ কৃত্তিম চাহিদা তৈরি করে বিরাট অক্সিজেন ভান্ডার নিজেদের রাজ্যে নিয়ে যান, যার ফলেই নাকি ১২ টা রাজ্যে এই অক্সিজেন সংকট তৈরি হয়, মানুষ মারা যায়, তার মানে ওই যে ছবি দেখছিলেন, মানুষ রাস্তায়, অক্সিজেন নেই, মারা যাচ্ছে, সে সবের দোষ কারো নয় গো মা, দোষ ওই কেজরিওয়ালের, আপ সরকারের। প্রচার শুরু। ভ্যাক্সিন কেন নেই? প্রধানমন্ত্রী নিজেই জানাচ্ছেন এর আগে নাকি দেশে ভ্যাক্সিন তৈরির সংস্থাই ছিল না, ১৯৪৭ সাল থেকে নাকি এই কাজ হয়নি, ডাহা মিথ্যে, কিন্তু সত্যি হবার আগেই কোটি কোটি মানুষ পেয়ে গেছে এই খবর, মেসেজ পৌঁছে গেছে।  এরপর এল চমক, ২১ শে জুন ৮৬ লক্ষ মানুষকে ভ্যাক্সিন দেওয়া হল, বিশ্ব রেকর্ড, বললেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী, হর্ষবর্ধন, প্রতিধ্বনি শোনা গেলো প্রধানমন্ত্রী থেকে অমিত শাহ, নানান মন্ত্রী থেকে বিজেপি আইটি সেলে, অর্ণব গোস্বামী তো বসেই ছিল, চিল চিৎকার, কে বললো ভ্যাক্সিনেশন হচ্ছে না? ৮৬ লক্ষ, বিশ্ব রেকর্ড, ছড়িয়ে গেলো সেই বার্তা। দু দিনের মধ্যেই জানা গেলো সত্য, প্রথমত এটা বিশ্ব রেকর্ড নয়, চীন ২ কোটি ভ্যাক্সিন দিয়েছে গড়ে অন্তত দিন দশেক ধরে, দ্বিতীয়ত জানা গেলো এটা ছিল রীতিমত পরিকল্পিত, বিজেপি শাসিত রাজ্যে তার আগে দু তিন দিন ভ্যাক্সিনেশন কমিয়ে দেওয়া হয়েছিল, ২১ জুন হঠাৎ সংখ্যা বাড়ে, তার পর থেকে কমে আবার গড়ে ৩০/৩৫/৩৭ লক্ষ তে এসে দাঁড়িয়েছে, তাহলে হর্ষবর্ধনের ট্যুইট? প্রধানমন্ত্রীর রিট্যুইট? ওই যে ইমেজ বিল্ডিং তারই অঙ্গ, পরে সত্যি বেরিয়ে এল বটে কিন্তু তা জানলো কতজন? লোকে জানলো ভারত একদিনে বিশ্ব রেকর্ড করেছে, ৮৬ লক্ষ্য ভ্যাক্সিনেশন, শুধু তাই নয়, সেদিন বিজেপি শাহিত রাজ্যে হঠাৎ এই বৃদ্ধির সামনে অবিজেপি, কংগ্রেস শাসিত রাজ্যে সংখ্যা স্বাভাবিক ভাবেই কম, তারা তো এই ষড়যন্ত্রে ছিল না, তাদের সংখ্যা এবার তুলে আনা হল, স্মৃতি ইরানি বললেন, এই দেখুন, অবিজেপি রাজ্যের অবস্থা, দেখেছেন? এসব খবর ছড়ানো হচ্ছে, ইমেজ বিল্ডিং হচ্ছে, শায়র আকবর মালিহাবাদী

এক শায়রিতে বলেছিলেন, কাপ প্লেটের শব্দ শোনা যাচ্ছে, খাবার আসছে না, অবস্থাটা ঠিক সেই রকম সরকার কাজ করছে, এই প্রচার চতুর্দিকে, কিন্তু বাস্তবতা তার থেকে বহু দূরে, সরকার, বিজেপি কেবল ইমেজ বিল্ডিং এই ব্যস্ত, এই বিপর্যয়ে মানুষের জন্য নয়, তাঁরা ব্যস্ত ২০২২ এর নির্বাচন নিয়ে, ঠিক যেমন ব্যস্ত ছিলেন এই বাংলার নির্বাচন নিয়ে, যখন দ্বিতীয় ওয়েভ আছড়ে পড়ছিল দেশের বুকে। কেবল কাপ প্লেটের শব্দই শোনা যাচ্ছে, আসলে এই সরকার হল এক ফাঁকা কলসি, আর কে না জানে ফাঁকা কলসিতে শব্দ বেশী হয়।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Iran | মা/রের চোটে ছালচামড়া গুটিয়ে গেল ইজরায়েলের, পাশে নেই ট্রাম্প,মাথা খারাপ হয়ে গেল নেতানিয়াহুর?
03:59:35
Video thumbnail
Donald Trump | NATO বৈঠকে ট্রাম্পকে চাইছে ইউরোপ, বিশ্ব রাজনীতিতে এ কোন খেলা?
01:49:52
Video thumbnail
Donald Trump | রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তিতে আগ্রহ ট্রাম্পের, আবার কোন ফন্দি?
02:17:50
Video thumbnail
Weather Update | প্রবল দুর্যোগের পূর্বাভাস, ভাসবে কোন কোন জেলা? দেখুন বড় আপডেট
01:49:00
Video thumbnail
Good Morning Kolkata | সকালের গুরুত্বপূর্ণ খবর, দেখুন একনজরে সরাসরি
03:16:04
Video thumbnail
Stadium Bulletin | দ্বিতীয় টেস্টে ভারতের কী করা উচিত?
00:51
Video thumbnail
Iran-Israel | চুলোয় যাক যু/দ্ধবিরতি, ইরানে আরও ভ/য়ঙ্কর হা/মলার ছক ইজরায়েলের, ট্রাম্পের মুখ চুন
02:52:25
Video thumbnail
Stadium Bulletin | ঋষভকে নিয়ে কেন মন্তব্য নয় গম্ভীরের?
00:31
Video thumbnail
Stadium Bulletin | 83-বাস্তবের সঙ্গে কোথায় মিল?
00:26
Video thumbnail
Bangla Bolche | Avro Sen | কালীগঞ্জ কি তৃণমূল মডেল?
01:05

Deprecated: Automatic conversion of false to array is deprecated in /var/www/ktv/wp-content/themes/techinfer-child/functions.php on line 39