আবার প্রশ্ন উঠছে, আবার দফায় দফায় প্রশ্ন, অবশ্য ওই দফা এক দাবি এক ইত্যাদি তো কবেই উবে গেছে। এমনকী মেদিনীপুর কাণ্ডের পরে এক লপ্তে ১২ জনকে সাসপেন্ড করার পরেও বিপ্লবী ডাক্তারদের সংগঠন কর্মবিরতির ডাক দিয়েও কর্ম বিরতিতে গেলেন না, কারণ সেখানকার জুনিয়র ডাক্তারেরা রাজি ছিলেন না। সেখানকার জুনিয়র ডাক্তারদের এক অংশ নাকি বৈঠকের মাঝখানে, মানে ওই যে যেটাকে ওনারা জিবি বলেন, ১০ হাজার জনের সংগঠনের ১৫০ জনের জেনারেল বডি মিটিং, তেমন এক জিবি মিটিং থেকে কিছু ডাক্তার বেরিয়ে গেছেন, শুনেছি তাঁরা বলেছেন আপনাদের এই হঠকারী সিদ্ধান্তের সঙ্গে আমরা নেই। এও জানা গেল যে ওই সাসপেন্ডেড জুনিয়র ডাক্তারেরা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে এই সাসপেনশন নিয়ে পুনরায় বিবেচনা করার জন্য আবেদন, হ্যাঁ ঠিকই শুনেছেন, দাবি নয়, আবেদন জানিয়েছেন। কিন্তু তেনাদের বিপ্লবী অংশ এবং তাঁদের ধোঁয়া জোগানোর জন্য চুক্তিবদ্ধ সংবাদমাধ্যম আপাতত প্রশ্নের পর প্রশ্ন তুলেই যাচ্ছে। এবং সর্বহারা দলের মুখপত্র গণশক্তিতে তা ধারাবাহিকভাবে ছাপানো হচ্ছে। তো আমরা এই মামলার রায় নিয়ে আলোচনা করছিলাম, কিছু বাকি ছিল আসুন সেগুলো নিয়ে আমরা আলোচনা করি আর এই যে ধোঁয়াশা তৈরির এক প্রবল চেষ্টা সেটা নিয়েও দুটো কথা বলি। বিচারক তাঁর রায়ের ১১ নম্বর অধ্যায়ে জানাচ্ছেন, এই যে জঘন্য খুন এবং ধর্ষণ সেটা করল কে? মানে এর আগেই জানিয়েছিলেন একজনই করেছে এই কাজ, তার বিস্তৃত বিবরণ দিয়েছেন, এবারে বলছেন যে সেই একজনটা কে? সেটা বলতে গিয়ে তিনি বলছেন প্রথম তথ্য আমরা পাচ্ছি সিসিটিভির ফুটেজ থেকে যা ফরেনসিক ল্যাবরেটরি থেকে জানানো হয়েছে নট ট্যাম্পার্ড, মানে সেই ফুটেজকে বদলানোর কোনও চেষ্টা হয়নি। সেই ফুটেজে নিজের ছবি তাঁর বলেই স্বীকার করেছেন ওই অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়। তাঁকে আগে চেস্ট ডিপার্টমেন্টে দেখা গেছে, শোভাবাজার রেড লাইট এলাকাতে দেখা গেছে, চেতলা রেড লাইট এলাকাতেও দেখা গেছে, তাঁকে আরজি করে ফিরে আসতে দেখা গেছে, এবং ঠিক ওই ৪টে থেকে ৫টার সময়ে ওই চেস্ট ডিপার্টমেন্টে ঢুকতে দেখা গেছে, প্রায় আধঘণ্টা পরে বেরিয়ে আসতে দেখা গেছে। যাওয়ার সময়ে তার কাঁধে একটা ব্লু টুথ ডিভাইস ছিল যা বেরিয়ে আসার সময়ে ছিল না, যা ওই ঘটনাস্থলে পাওয়া গেছে।
ঠিক এই জায়গাতেই বেশ কিছু লোকের প্রশ্ন হচ্ছে কেবল সারকামস্টান্সিয়াল এভিডেন্সের উপর নির্ভর করে একজনকে দোষী প্রমাণ করা কি যায়? হ্যাঁ যায়, বিশেষ করে এই ধর্ষণ আর খুনের ঘটনার ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষদর্শী বহু ক্ষেত্রেই থাকে না। কাজেই বিচারকও বলছেন আমাদের সারকামস্ট্যান্সিয়াল এভিডেন্স আর মেডিক্যাল মানে বায়োলজিক্যাল এভিডেন্স-এর উপরে জোর দিতে হয়েছিল। তিনি বলছেন এইসব ক্ষেত্রে ৫টা গোল্ডেন রুল ফলো করার কথা। (1) the circumstances from which the conclusion of guilt is to be drawn, should be fully established. (2) the facts so established, should be consistent only with the hypothesis of the guilt of the accused, that is to say, they should not be explainable on any other hypothesis except that the accused is guilty, (3) the circumstances should be of a conclusive nature and tendency, (4) they should exclude every possible hypothesis except the one to be proved, and (5) there must be a chain of evidence so complete as not to leave any reasonable ground for the conclusion consistent with the innocence of the accused and must show that in all human probability the act must have been done by the accused. মানে একটা ঘটনার ক্ষেত্রে সম্ভাব্য আর সবক’টা সন্দেহকে দূর করেই অপরাধীকে চিহ্নিত করা যায়, কাজেই এক্ষেত্রেও তিনি আর বাকি প্রত্যেক সম্ভাবনার কথা ভেবেছেন, তারপর যুক্তিবোধ্য কারণ আর ওই সারকামস্ট্যান্সিয়াল এভিডেন্স দিয়ে তাকে নাকচ করেছেন তারপরে একটা সিদ্ধান্তে এসেছেন। মানে উনি তো বিচারক, জানিস তো সেদিন না আমি সোমা বলছি রে… সেটা করতে বসেননি। বা ওই চুক্তিবদ্ধ সংবাদমাধ্যমের কর্মী নন যিনি আগে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন তাঁর কাছে আসা নির্দেশ মতো।
তারপরে ওই চেন অফ ইনসিডেন্ট নয়, একটা কোনও তথ্যকে নিয়েই জানিস তো… জানেন তো… আমাদের সূত্র বলেছে ইত্যাদি নিয়ে নেমে পড়েছে। একটা উদাহরণ দিই, ধরুন সত্যিই এক সিএফএসএল রিপোর্টে বলা হয়েছে যে ওই চেস্ট ডিপার্টমেন্টের ওয়ার্ডের মাঝখান দিয়ে, নার্সিং স্টেশনের পাশ দিয়ে কারও নজরে না পড়ে একজনের সটান চলে আসা প্রায় অসম্ভব। ব্যস। হাতির ল্যাজ ধরে ফেলে এক চুক্তিবদ্ধ সংবাদমাধ্যম কর্মী চিৎকার শুরু করে দিলেন, হাতি দড়ির মতো, হাতিকে আসলে দড়ির মতো দেখতে। বলতে শুরু করলেন তার মানে আসলে প্লেস অফ অকারেন্স ওটা নয়, তাকে অন্য কোথায় ধর্ষণ করে মেরে ওখানে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। এবারে বিচারক এইখানেই এসে বলছেন যে এটাকেই সবটার সঙ্গে মিলিয়ে দেখতে হবে। আমরা যদি এটা মনে করি তার আসা বা যাওয়া নজরে পড়া উচিত ছিল, তাহলে একজনের আসা ছেড়ে দিন, এক ডেড বডি নিয়ে কম সে কম দুজনের আসা কি চোখ এড়িয়ে যাবে? সেই অভয়াকে রাত ২.৩০ পর্যন্ত জীবিত অবস্থাতে ওই সেমিনার রুমেই দেখা গেছে, তিনি বের হলেন সেটাও তো চোখে পড়বে, যদি চোখে নাও পড়ে, ওই সিসিটিভি ফুটেজে তো সেই অভয়ার বের হওয়ার ছবি থাকবে। মানে এইভাবেই উনি এক নেগেশনের থিওরি মেনেই একে একে সমস্ত সম্ভাবনাগুলোকে বাদ দেওয়ার পরেই আসল অপরাধী সম্পর্কে নিশ্চিন্ত হয়েই রায়দান করেছেন। এক সিএফএসএল-এ বলা হয়েছে যে ওই ডিএনএ টেস্টের সময়ে কিছু কন্টামিনেশন লক্ষ করা গেছে, কন্টামিনেশন মানে? অন্য ডিএনএর উপস্থিতি। সাংঘাতিক ব্যাপার, আর যাঁরা ওই সরকার ফেলে দিয়ে ৬০০ কোটি টাকার সম্পত্তি বাগানোর জন্য চুক্তিবদ্ধ সংবাদমাধ্যমের মালিকের নির্দেশেই মাঠে নেমেছেন তিনি তো উদ্বাহু নাচছেন, দেখো দেখো অন্য আরও অনেক ডিএনএ আছে, মানে একাধিক মানুষ এই ধর্ষণ খুনে জড়িত ছিল, বছর শেষে ইনক্রিমেন্টেরও তাড়া আছে, এক দিনের নোটসে চাকরি খেয়ে ফেলার প্রচুর উদাহরণ আছে কাজেই তাঁর যুক্তি তাঁর বোধবুদ্ধিকে তো গ্রাস করবেই কিন্তু বিচারক তো ওই মালিকের ইনক্রিমেন্ট বা চাকরি ছাঁটাইয়ের ধমকি শুনে কাজে নামেননি। তিনি বলছেন In the post-mortem video it was found that other female dead bodies were lying on the floor and it also came out that the tray where the post mortem of this victim was done, was not sterilized prior to the examination. It also appears that the concerned assistant (Dom) did not change the gloves or dress/ apron prior to taking of the swab or vulvar mop. তিনি বলছেন যে, মর্গে পোস্ট মর্টেমের ব্যবস্থায় অনেক গলতি ছিল, সেখানে ডিএনএ কন্টামিনেশন হওয়ার সম্ভাবনা থেকে গিয়েছিল।
আরও পড়ুন: Fourth Pillar | একজনই দায়ী: বিচারক, মানব না: বিপ্লবী ডাক্তারবাবুরা
কিন্তু তারপরেই খুব পরিষ্কার করেই বিচারক বলছেন অভিযুক্তের ডিএনএ ১০০ শতাংশ মিলেছে, সব ক্ষেত্রে মিলেছে আর সামান্য কিছু ডিএনএ-র হদিশ পাওয়া গেছে যাকে সিএফেএস এল রিপোর্টে কন্টামিনেশন বলেই বলা হচ্ছে। জেরাতে এক্সপার্ট লোকজন এটাকে কন্টামিনেশন বলেছেন, বলেননি যে আরও একজন কারও ফুল ডিএনএ প্রতিটা ক্ষেত্রে ম্যাচ করেছে, বলেছেন যে কিছু কন্টামিনেশন হয়েছে তাই তিনি আবার এই কন্টামিনেশনের সোর্স খুঁজে বের করতে ওই পোস্ট মর্টেমের ভিডিও দেখেছেন। দেখেছেন যে সেখানে কীভাবে অন্য মহিলা দেহ পড়ে আছে, দেখেছেন নিয়ম মেনে যন্ত্রপাতি স্যানিটাইজ করা হয়নি এবং সেসব দেখেই তিনি তাকে কন্টামিনেশন-এর সোর্স বলে চিহ্নিত করছেন এবং সঞ্জয় রায়কে দোষী হিসেবে চিহ্নিত করছেন। তিনি এটাও বলেছেন যে এই কাজ ইচ্ছাকৃতও নয়, যাঁরা স্যাম্পল কালেকশন করছিলেন তাঁরা কি এগুলো রায়কে প্রভাবিত করার জন্য করেছেন? তাঁর উত্তর শুনুন, In my view, the doctors are bound to do their duty knowing it fully well that there was lack of infrastructure. Before raising fingers to them, it must be considered. On these grounds I am not inclined to accept the argument of the Ld. Counsel of the Complainant on the point that the autopsy surgeons intentionally sent contaminated sample for DNA analysis or the accused was not at all involved.
এখন এই পোস্ট মর্টেমের অবস্থা, এই ধরনের অব্যবস্থা কি কাম্য? কখনওই নয়, বিচারক সে কথাও বলেছেন, কিন্তু তার সঙ্গে আবার বলেছেন যে এর ফলে রায় বদলে যাওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই। উনি বলছেন যে ঘটনাস্থলে যে শর্ট হেয়ার বা পিউবিক হেয়ার পাওয়া গিয়েছিল তার ডিএনএ ১০০ শতাংশ ম্যাচ হয়েছে ওই সঞ্জয় রায়ের সঙ্গে, তার জিনসে যে রক্ত লেগেছিল তা ম্যাচ হয়েছে, Getting of hairs of the accused at the place where the body of the victim was found, leads us to hold his presence. The burden was shifted to the accused to state anything against it. The accused failed to discharge his burden. Matching of the DNA profile of the accused in the hair strands recovered from the spot proved the presence of the accused with the body of the victim. বলা হচ্ছে যে কেন মেয়েটির নখে ওই অপরাধীর ডিএনএ নেই, সে তো তার হাত দিয়েই যতটা সম্ভব তাকে আটকানোর চেষ্টা করেছিল, তার নখে তো সেই অবশেষ থাকার কথা, থাকলে তার ডিএনএ ম্যাচ করার কথা। এরপরে তিনি সেই কথাগুলো বলেছেন যা নিয়ে নতুন করে বিপ্লবী নন্দ হালদার মাহাতো বা তাঁদের পিছনে থাকা চুক্তিবদ্ধ মালিকের নির্দেশে সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিকেরা এক নতুন ধোঁয়াশার জন্ম দেওয়ার চেষ্টা করছেন। এক্কেবারে শেষ পর্যায়ে এসে বিচারক অনির্বাণ দাস বলছেন, পুলিশ এবং আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ অথরিটির গাফিলতির কথা, একেবারে যা যা আমরা বাংলা বাজারে বার বার বলেছি, কেন একজন লম্পট মাতাল হাসপাতালে ঢুকে পড়তে পারল? কেন এরকম একজন সিভিক ভলান্টিয়ার হতে পারল? কেন পুলিশের কাজে এত ধরনের টেকনিক্যাল ভুলভ্রান্তি, নাম করে করে তিনি সেই সব গাফিলতির কথা বলেছেন।
কিন্তু তিনি সেটা বলার পরেই আবার বলছেন যে I am of the view that the prosecution correctly discharged the burden and placed sufficient evidence to establish the guilt of this accused. Accordingly, I am of the view that non production of the said investigation report or the latches on the part of Police Administration, and the authority of R.G Kar Hospital, did not affect the case of prosecution in any manner. কিন্তু বিপ্লবী পত্রিকা আর বিপ্লবী সংগঠনের কমরেড নন্দ হালদার মাহাতোরা এবং ওই চুক্তিবদ্ধ সংবাদমাধ্যম কেবল আগের কথাটা তুলে ধরেছেন যে দেখেছেন বিচারকও বুঝে উঠতে পারেননি, কী কাণ্ড, প্রকাণ্ড ধোঁয়াশা। তিনি বলছেন যে এই সঞ্জয় রায়ের বিরুদ্ধে অকাট্য প্রমাণ পাওয়ার পরেই তিনি এই রায় তাঁর রায়ের প্রায় শেষের দিকে এসে তিনি এই সবটার এক শৃঙ্খলাবদ্ধ প্রমাণ আর তথ্যের কথা বলেছেন ১) সিসিটিভি, ২) ইনকোয়েস্ট রিপোর্ট, পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট, ৩) ডিএনএ রিপোর্ট, ৪) মোবাইল টাওয়ার লোকেশনের রিপোর্ট ৫) ওই সিসিটিভির ফুটেজের ব্যাপারে অপরাধীর নিজের স্বীকারোক্তি ৬) আদালতে জেরার সময়ে অভিযুক্তের বিশ্বাসযোগ্য কোনও বক্তব্য না থাকা। এই ছ’টা বিষয়ের উপর ভিত্তি করেই তিনি অপরাধীকে চিহ্নিত করেছেন, রায় দিয়েছেন। এবং বলছেন এই তদন্তকারী দল যে তদন্ত করেছে, যে সাক্ষ্যপ্রমাণ দিয়েছে এবং যাকে এই ঘটনার মূল এবং একমাত্র অভিযুক্ত হিসেবে এনে হাজির করেছে, তিনিই দোষী। I have no hesitation to hold that the prosecution could establish that this accused was involved in the incident of offence of rape and murder of the victim at R.G Kar Medical College & Hospital on 09.08.2024. এরপরেও ধোঁয়াশা? আসলে এই অপরাধীকে জেল থেকে বাইরে আনার জন্য এক চক্র কাজে নেমেছে, তাদের বুদ্ধিতেই সঞ্জয় রায় এবং তাঁর নব নিযুক্ত উকিল নতুন নতুন যুক্তি নিয়ে হাজির হচ্ছেন। কিন্তু আমরা এটাও জানি এই ১৭২ পাতার রায় বলে দিচ্ছে এই সাজা আগামী আবেদনে বাড়তেই পারে, কমার কোনও সুযোগ নেই, শাস্তি পেতেই হবে এই অপরাধীকে।