Sunday, June 22, 2025
Homeচতুর্থ স্তম্ভFourth Pillar: মিথ্যেবাদী রাজা, মিথ্যেবাদী প্রধানমন্ত্রী

Fourth Pillar: মিথ্যেবাদী রাজা, মিথ্যেবাদী প্রধানমন্ত্রী

Follow Us :

রাজা মিথ্যেবাদী, প্রধানমন্ত্রী মিথ্যেবাদী। ২০১৪ নির্বাচনের আগে জনসভায়, চুটকি বাজিয়ে বলেছিলেন, ইঁয়ুহি হর এককে পকেট মে পন্দরহ পন্দরহ লাখ মুফত মে আ যায়েঙ্গে। কী করে আ যায়েঙ্গে? তারও ব্যাখ্যা তিনি দিয়েছিলেন, দেশ থেকে কালাধন নিয়ে যারা বিদেশের ব্যাঙ্কে জমিয়েছে, সেই সব উদ্ধার হবে, সেই টাকা গরিবদের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়া হবে। শুনে মনে হচ্ছিল রবিন হুড। জিতলেন, প্রধানমন্ত্রী হলেন, এ নিয়ে কোনও উচ্চবাচ্য নেই, এই প্রথম এক প্রধানমন্ত্রী যিনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি বসেন না, তিনি অক্ষয় কুমার বা তিহার জেলে রাত কাটানো দালালদের প্রশ্নের উত্তর দেন। তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, আপনি আম চুষে খান না, চেটে খান না, কামড়ে খান? উনি একটা স্ট্রিট স্মার্ট হাসি দিয়ে ওনার ছোটবেলার দারিদ্রের গল্প শোনান। প্রতিদিন ৪/৫/৬ বার পোশাক পরিবর্তন করেন যিনি, যিনি বিদেশি চশমা বা রোদ চশমা পরেন, যাঁর পকেটে থাকে মঁ ব্লাঁ পেন, তিনি নিজেকে ফকির বলেন, তিহার জেলখাটা অসাংবাদিক আপ্লুত হন। তো আমরা ভেবেছিলাম মসনদে বসার জন্য এরকম প্রতিশ্রুতি তো অনেকেই দিয়ে থাকেন, বেনিফিট অফ ডাউট। ছাড় দিয়েছিলাম। কিছুদিনের মধ্যেই এক অর্বাচীন ঘোষণা নিয়ে হাজির, নোটবন্দি, সেই অরাজকতার শিকার আমরা প্রত্যেকে। উনি তখন সভায় তালি বাজিয়ে বলছেন, ঘর মে শাদি, পয়সা গায়ব। এটা ওনার কাছে মজা, মজা কারণ বিবাহ বস্তুটা তাঁর কাছে নিছক তামাশা। বিধায়ক হয়েছেন, নিজের স্ত্রীর নাম জানাননি, বিবাহিত, তাও জানাননি। ২০০২, ২০০৭, ২০১২ তিনটে বিধানসভা নির্বাচনে তিনি দাঁড়িয়েছেন, তিনি বিবাহিত কিনা, সেই কলম ফাঁকা রেখেছেন, স্ত্রীর অ্যাকাউন্টে কত টাকা, সম্পত্তি কত, রোজগার কত? সব কলামে লেখা আছে ‘নিল’। ওদিকে তাঁর স্ত্রী যশোদাবেন মোদি, একটি স্কুলে পড়ান, প্যান কার্ড আছে, মাইনে পান, বেঁচে আছেন। মোদিজি তাঁকে স্বীকার করেননি, কার্টিয়ের গগলস, মঁ ব্লাঁ চশমা, পশমিনা শাল পরা প্রধানমন্ত্রী ২০১২ গুজরাত বিধানসভা নির্বাচন পর্যন্ত বিবাহিত স্ত্রীর কথা চেপে গিয়েছিলেন, উল্লেখও করেননি। ৬৩ বছর বয়সে তিনি জানালেন, তিনি বিবাহিত, গুজরাটে যা চেপে যাওয়া সম্ভব ছিল, দেশের সাংবাদিকদের চোখে তা ধরা পড়ত, কাজেই স্বীকার করলেন, তিনি বিবাহিত, কিন্তু ডিভোর্সি নন, অথচ স্ত্রীর সঙ্গে থাকেন না। এরপরের মিথ্যে, হিমালয়ান ব্লান্ডার, নোটবন্দি। মনে আছে সবার, মুঝে ৫০ দিন সময় চাহিয়ে……… ম্যায় তো ফকির হুঁ, ঝোলা লেকর চল পড়েঙ্গে। কালো টাকা উদ্ধার, জাল টাকা বন্ধ, উগ্রপন্থার বিনাশ। যা হয়েছে আমরা তা জানি, পুরনো টাকা ৯৯.৯৮% ফেরত এসেছে, জাল টাকা, ফেক নোট বন্ধ হয়নি, আর কালো টাকা? সে তো মোদিজির বন্ধু মেহুলভাই, নীরবভাইরা বেশি ভালো বলতে পারবেন। আজকে নোটবন্দি নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট থেকে যে রায়ই আসুক না কেন, এই ২০১৬ থেকেই দেশের অর্থনীতি নীচে নামতে শুরু করেছে, এই নোটবন্দি দেশের অর্থনীতিতে প্রবল ধাক্কা দিয়েছে, তা তো অস্বীকার করা যাবে না। কিন্তু সেদিন এক উদ্ধত মুখ জানিয়েছিল, রাত ১২টার পর থেকে ৫০০/১০০০ টাকার নোট বাতিল করে কালো টাকা উদ্ধার করা হবে, বহু মানুষ সেই মিথ্যে কথা বিশ্বাসও করেছিলেন, আজ ফলাফল সামনেই আছে, ফকির ঝোলা নিয়ে কোথাও চলে যায়নি। এবার ২০২২ নিয়ে মোদিজির তিনটে ঘোষণার কথা বলবো, এমনিতে উনি প্রায় প্রতিদিনই প্রচুর কথা বলেন এবং সমস্যা হল, মিথ্যে বলার প্রবণতা আর বেশি বলার প্রবণতা দু’টোই থাকলে প্রচুর মিথ্যে বেরিয়ে আসে, মোদিজি, আমাদের প্রধানমন্ত্রীর ক্ষেত্রেও ঠিক তাই। আগে বলে নিই কেন ২০২২? ২০২২ কারণ, এই বছর আমাদের স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তির বছর, মোদিজীর ভাষায় অমৃত মহোৎসব, নির্মলা সীতারামন যাঁকে বলেছেন অমৃতকাল। তো এই অমৃতকালে কী কী হবে, সেটা জানাচ্ছেন কবে? কোনওটা ২০১৬, কোনওটা ২০১৭, কোনওটা বা ২০১৮-র ঘোষণা। মনে মনে নয়, সর্বসমক্ষে। প্রথমে বললেন ঘরের কথা, আপনাদের নিশ্চই মনে আছে, ঘর হোগা, ঘর মে নল হোগা, নল মে পানি হোগা, বিজলি হোগা, শৌচালয় হোগা, ডাইনিং টেবলে হায়দ্রাবাদি বিরিয়ানি হোগা, একথাটাই যা বলেননি। অনেক কিছু হোগা, তো কবের মধ্যে এইসব হোগা? তিনিই জানালেন ২০২২, স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসবের বছরে সবকা ঘর হোগা, ৪৭ সাল থেকে মানুষ ভেবেই চলেছে কব অপনা কোই ঘর হোগা! মোদিজি জানালেন, অপেক্ষা শেষ, ঘর হবে ২০২২-এ। ২২ কেটে গিয়েছে, ২৩-এর শুরুতেই হালদোয়ানিতে ৫০০০০ মানুষের ঘর ভাঙার জন্য বুলডোজার হাজির। মোদিজি এখন অন্য বাওয়াল দিতে ব্যস্ত। এরপরের মিথ্যের শুরু ওনার মন কি বাত-এ। উনি হলেন ওয়ান ওয়ে ট্রাফিক, উনি বলেই যাবেন, ওনাকে কেউ প্রশ্ন করবেন না, পৃথিবীতে এমন রাষ্ট্রনেতা এই প্রথম, দ্বিতীয়টি নেই। ওনার বন্ধু ট্রাম্প সাংবাদিকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছেন বটে, কিন্তু সাংবাদিক সম্মেলনে হাজির হননি, এমন নয়। তো সেই ওয়ান ওয়ে ট্রাফিক মন কি বাতে-তে তিনি জানালেন, কৃষকের আয় দ্বিগুণ হয়ে যাবে, কাড়া বাজিল, নাকাড়া বাজিল, ভেঁপু সমেত গোদি মিডিয়ার ঢাক ঢোল কাঁসর-ঘণ্টা একসঙ্গে বাজিয়া উঠিল, ব্যস, আর কি চাই? অন্নদাতাদের আয় দ্বিগুণ। প্রশ্ন করা হল কংগ্রেসকে, আপনারা পারেননি কেন? আরে ভাই এটা তো ঘোষণা, কে শোনে কার কথা, জহরলাল, ইন্দিরা, রাজীব রাহুল পারেননি, মোদিজি বলেছেন কিসানোঁ কা আমদানি দুগনি হো জায়গি। নাও, বোঝো। কবে হবে? কেন? অমৃতকালে, ২০২২-এ। দ্বিগুণ হওয়া তো বাদই দিলাম, সরকারি তথ্য বলছে, ২০১৯ থেকে ২০২২-এ কৃষকের আয় প্রায় ২% কমেছে। তার ওপর ক্রমাগত বাড়তে থাকা সার, বীজ আর সেচের খরচ জুড়লে আজ কৃষক চাষ করে, তার আর কিছু করার নেই বলেই এবং ২০১৯-এ এই প্রধানমন্ত্রী, নরেন্দ্রভাই দামোদরদাস মোদি বলেছেন, হর দিশা মে বুলেট ট্রেন চলেগা ২০২২-কে অন্ত তক। কী হয়েছে? হর দিশা তো বাদই দিলাম, ওই মুম্বই-আহমেদাবাদ ট্রেন চলার কথাও বাদ দিন, লাইন পাতাও শেষ হয়নি, এখন বন্দে ভারত বলে এক নতুন ন্যাকামি শুরু হয়েছে, ৮ ঘণ্টা ৩০ মিনিটের জার্নি ৭ ঘণ্টা ৪৫ মিনিটে করার কথা বলে আকাশ ফাটিয়ে চিল্লাচ্ছে চিল্লানেসরাসরা, সে ট্রেন আম আদমির জন্য নয়, তার ভাড়া বেশি, ভোটের জন্য স্টপেজ বাড়িয়ে জার্নি টাইম বেড়েছে, তার টিকিট বিক্রি হচ্ছে না বলে উত্তরবঙ্গের রেগুলার ট্রেনগুলো বাতিল করে এই ট্রেন চালানো হচ্ছে, আর ক’বছর পরে ওই বুলেট ট্রেন ইতিহাসের পাতায় ঢুকে পড়বে। যা নাকি দেশের চার দিশায় চলার কথা এই অমৃতকালে। একটা দল, যাদের বিরাট সংখ্যগরিষ্ঠতা আছে, যাদের বিরাট সংগঠন আছে, তাদের কাজ সরকার চালানো, তাদের কাজ মানুষের জন্য কিছু করা, তাদের কাজ দেশের শিল্প, কৃষিকে এগিয়ে নিয়ে চলা, সেই কাজের নেতৃত্ব স্বাভাবিকভাবেই দেশের প্রধানমন্ত্রীকেই নিতে হবে, তিনি প্রতিদিন নিয়ম করে মিথ্যে বলেই যাচ্ছেন, এমনটা এর আগে কখনও হয়নি। আর দল? দেশে তাদের চাই এক বিরোধীমুক্ত ভারত, কংগ্রেসমুক্ত ভারত, ত্রিপুরায় সিপিএমমুক্ত ত্রিপুরা, বাংলায় তৃণমূলমুক্ত বাংলা, এই চলছে? দেশের সামনে সমস্যা দারিদ্র নয়, বেকারত্ব নয়, শিল্পে মন্দা নয়, জিডিপি কমে যাওয়া নয়, তাদের সমস্যা হল বিরোধী দল আর বিরোধিতা। সাধারণ মনস্তত্ব মানুষের মিথ্যাচারিতা নিয়ে কিছু কথা বলে, কেন মানুষ মিথ্যে বলে? মনোবিদরা জানাচ্ছেন, মানুষ প্রাণের ভয়ে মিথ্যে কথা বলতেই পারে, অত্যন্ত সৎ মানুষেরও ওরকম পরিস্থিতিতে মিথ্যে বলা সম্ভব। সেট বাদ দিলে দু’টো আরও কারণ আছে যখন মানুষ মিথ্যে বলে। প্রথমটা হল, ইনসিকিউরিটি, হারিয়ে যাবে, হেরে যাবো, আমি পারবো না, ওরা অনেক জানে আমি জানি না, এইরকম মনোভাব থেকে মানুষ অনর্গল মিথ্যে বলে আপাতত পরিস্থিতি সামাল দেয়। মানে এবারের ভোটে জেতা যাক, পরেরটা পরে দেখা যাবে। কাজেই ক’বছরের মধ্যে মিথ্যে ধরা পড়বেই, জেনেও প্রধানমন্ত্রী মিথ্যে বলেই যাচ্ছেন, এটা একটা সম্ভাবনা। দ্বিতীয়টা ভয়ঙ্কর, সেটা হল প্যাথোলজিক্যাল লায়ার, মানে তার মিথ্যে বলাটা একটা রোগ। সেই ব্যক্তি মিথ্যে বলেন মিথ্যে বলছেন ভেবেও নয়, তিনি অনর্গল কথা বলার মতোই মিথ্যে বলে যান। দু’টোই মানসিক রোগ, দু’টো রোগেই ডাক্তার দেখানো উচিত, দু’টো রোগই চিকিৎসার পরে সেরে যায়। আর যাইহোক, আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী প্রাণের দায়ে তো মিথ্যে বলছেন না। তাহলে বাকি থাকে চিকিৎসাযোগ্য অসুস্থতা। বন্ধুরা দিয়া জ্বালান, ব্যালকনিতে আসুন, ব্যালকনি না থাকলে রাস্তায়। আসুন আমরা সবাই আমাদের প্রধানমন্ত্রীর সুস্থতা কামনা করি।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Iran | আমেরিকার ইরান হা/ম/লা আন্তর্জাতিক আইনবিরোধী, হু/ঙ্কার খামেনির,শুরু অ‍্যা/টা/কের পর অ‍্যা/টা/ক
00:00
Video thumbnail
Iran-America | মার্কিন হা/নার পরই পাল্টা অ্যা/কশন ইরানের, শুরু প্রবল যু/দ্ধ কী হবে এবার?
00:00
Video thumbnail
Nitish Kumar | বিহারে NDA আদৌ ক্ষমতায় ফিরবে? না কি অন‍্য অঙ্ক? দেখুন স্পেশাল রিপোর্ট
00:00
Video thumbnail
Weather Update | রবিবাসরীয় বর্ষায় ভাসবে কোন কোন জেলা? দেখুন আবহাওয়ার বড় আপডেট
00:00
Video thumbnail
Iran-Israel | Donald Trump | ইরানে হা/ম/লা আমেরিকার, কী অবস্থা? এবার কী করবেন খামেনি?
00:00
Video thumbnail
BJP | বিজেপির নতুন সভাপতি কে? উঠে আসছে কাদের নাম? দেখুন স্পেশাল রিপোর্ট
00:00
Video thumbnail
Iran-Israel | ধূলিসাৎ ইজরায়েল, নেতানিয়াহুর কী অবস্থা? বাংলায় শুনুন ইজরায়েল থেকে Live
00:00
Video thumbnail
Good Morning Kolkata | সকালের গুরুত্বপূর্ণ খবর, দেখুন একনজরে সরাসরি
00:00
Video thumbnail
Iran | আমেরিকার ইরান হা/ম/লা আন্তর্জাতিক আইনবিরোধী, হু/ঙ্কার খামেনির,শুরু অ‍্যা/টা/কের পর অ‍্যা/টা/ক
04:40
Video thumbnail
Iran-America | মার্কিন হা/নার পরই পাল্টা অ্যা/কশন ইরানের, শুরু প্রবল যু/দ্ধ কী হবে এবার?
03:48