Tuesday, July 1, 2025
Homeচতুর্থ স্তম্ভচতুর্থ স্তম্ভ: বাংলাদেশ এগোচ্ছে, আমরা চলছি পেছন পানে

চতুর্থ স্তম্ভ: বাংলাদেশ এগোচ্ছে, আমরা চলছি পেছন পানে

Follow Us :

৩০ মে ২০২১ বলেছিলাম, “কিছুদিন আগেও বাংলাদেশের ১০০ টাকা দিলে ভারতের ৫৫ টাকা দিতে হত৷ এখন ভারতের ৮৬ টাকায় বাংলাদেশের ১০০ টাকা হয়৷ ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক রিপোর্ট বলছে বাংলাদেশের গ্রোথ বা বৃদ্ধির হার, ৩.৮%, ভারতের, -১০.২৯%। বাংলাদেশের মাথা প্রতি জিডিপি ১৮৮৭.৯৭ ডলার, ভারতের ১৮৭৬.৫৩ ডলার৷ হিসেবটা আমেরিকান ডলার অনুযায়ী। আরও কিছু হিসেব দিই৷ ভারতবর্ষে মানুষ গড়ে ৬৯.৪ বছর বাঁচে৷ বাংলাদেশে, ৭২.৩ বছর। শ্রমিকদের মধ্যে নারী শ্রমিকদের সংখ্যা বাংলাদেশে ৩৬, ভারতে ২০%। মহিলা পুরুষ সাম্য মানে লিঙ্গ সাম্যের দিক থেকে বাংলাদেশ ৫০ এ আর আমার দেশ ভারতবর্ষ, ১১২ তে৷ বিশ্ব ক্ষুধা তালিকায় বাংলাদেশ ৭৫ এ, আর আমরা ৯৪ তে। কোথায় পেলাম এই তথ্য? গ্লোবাল হাঙ্গার রিপোর্ট, ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্ক। হ্যাঁ সেই বাংলাদেশ, যেখানকার নাগরিকদের সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে, আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, তড়িপার, অমিত শাহজি বলেছিলেন, টারমাইট, উঁইপোকা। ওনার জানাই নেই, উঁইপোকার ঢিপির ভেতরে ছিলেন বাল্মিকী, রামায়ণ প্রণেতা। তো সেই কোট আনকোট উইঁপোকার দল, যারা স্বাধীনতা পেল এই সেদিন, তারা আমাদের থেকে অর্থনীতিতে এগিয়ে যাচ্ছে৷ কৃষিতে অগ্রগতি অবাক করে দেওয়ার মত৷ আইটি ইউনিভার্সিটিতে তৈরি হচ্ছে ভবিষ্যতের বিশ্বকর্মারা৷ তাদের সরকার জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছে মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে৷ জামাতে ইসলাম সেখানে নিষিদ্ধ, কাঠমোল্লার বিরুদ্ধে লড়ছে সরকার, সেদেশের যুক্তিবাদী মানুষজন, ছাত্র ছাত্রীরা।’’

সেদিন কুর্ণিস জানিয়েছিলাম, আজ আরও একবার। কারণ ২০২১ এ অনেকেই বলেছিল, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের তুলনা করোওনা৷ একবছর একটু এগিয়েছে৷ সামনের বছরে এই গ্রোথ থাকবে না৷ আফটার অল, ভারতবর্ষের কত বড় অর্থনীতি, ও ঠিক সামলে নেবে। তো বছর ঘুরতেই, আবার আইএমএফ আউটলুক রিপোর্ট বেরিয়েছে৷ তাতে বলা হচ্ছে, বাংলাদেশ কেবল এগিয়েছেই নয়, আগামী ২০২৬-২৭ পর্যন্ত যে আনুমানিক বৃদ্ধির হিসেব আইএমএফ, ইন্টারন্যাশন্যাল মানিটারি ফান্ড করেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে ২০২৬-২৭ পর্যন্ত বাংলাদেশ এগিয়ে থাকছে৷ তাদের বৃদ্ধির হার আরও বাড়ছে৷ বাংলাদেশ আর ভারতের বৃদ্ধির হারের যে ফারাক, তা আরও বড় হচ্ছে।

একটু পিছনের দিকে তাকানো যাক৷ ২০১০, এই একই আইএমএফ আউটলুক রিপোর্ট জানাচ্ছে, ভারতের মাথা পিছু আয় ছিল ১৩৮৪ ডলার৷ বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ছিল ৭৮১ ডলার৷ মানে ভারতবর্ষের প্রায় অর্ধেক। ২০১২-র হিসেব বলছে বাংলাদেশের পার ক্যাপিটা ইনকাম ছিল ৮৮৩ ডলার, ভারতবর্ষের ১৪৪৪ ডলার৷ মানে দ্বিগুণ না হলেও প্রায় দুয়ের তিন গুণ। ২০০৪ এর হিসেবটা দেখা যাক৷ কেন ২০০৪? কারণ ওই বছর অটলবিহারী বাজপেয়ির হাত থেকে ক্ষমতা এসেছিল মনমোহন সিং এর হাতে৷ মাথা পিছু আয় ছিল ৬২৮ আমেরিকান ডলার৷ এবার আসুন ২০১৪, মনমোহন সিং সরে যাচ্ছেন, আসছেন নরেন্দ্রভাই দামোদরদাস মোদী৷ মাথা পিছু আয় ২০১৪-তে ১৫৭৪, মানে আড়াইগুণ বৃদ্ধি৷ এবার এলেন মোদিজি৷ চলছিল ভালোই৷ কিন্তু এন্টায়ার সায়েন্স পড়া মোদীজি নোটবন্দি আনলেন৷ ২০১৭ তে মাথা পিছু আয় ১৯৮১ আমেরিকান ডলার, ২০১৮ তে ১৯৯৭ ডলার, মানে মাত্র ১৬ ডলার বাড়ল৷ ২০১৯ এ প্যান্ডেমিক আসার আগেই, ২১০১ আমেরিকান ডলার, ২০২০ তে ১৯০১ ডলার৷ মূল্যবৃদ্ধিকে মাথায় রাখলে মাথা পিছু আয় হু হু করে কমছে৷ ওদিকে ওই সময়েই বাংলাদেশের মাথা পিছু আয় বাড়ছে৷ ২০১০ যাদের মাথা পিছু আয় আমাদের অর্ধেক ছিল, ২০১৯ এ তাদের আয় ১৮৫৪ ডলার৷ মানে আমাদের থেকে ১৫০ ডলার কম৷ ২০২০ তে বাংলাদেশের মাথা পিছু আয় ১৯৬১ ডলার, মানে আমাদের থেকে ৬০ ডলার বেশি৷ এবার ২০২১, বাংলাদেশের মাথা পিছু আয় ২১৩৮ ডলার, ভারতবর্ষের ২১১৬ ডলার।

এবার সেই আইএমএফ-ই একটা প্রোজেকশন দিয়েছে, কতটা বাড়বে আমাদের আর বাংলাদেশের পার ক্যাপিটা ইনকাম, ২০২২ এ ভারতবর্ষের মাথা পিছু আয় হবে ২৩১২, বাংলাদেশের ২৩২৬ ডলার৷ ২০২৩ এ? বাংলাদেশের ২৫৩৪ ডলার, ভারত বর্ষের ২৪৭৮৷ ২০২৪ এ ভারতবর্ষের ২৬৪৯ ডলার, বাংলাদেশের ২৭৫৪৷ ২০২৫ এ আমাদের মাথা পিছু আয় ২৮২৯ ডলার, বাংলাদেশের ২৯৯৪৷ ২০২৬ এ আমাদের সঙ্গে বাংলাদেশের মাথা পিছু আয়ের ফারাক বেড়ে দাঁড়াবে ২৩৫ ডলারে৷ মানে আমাদের আয় হবে ৩০১৮ ডলার, বাংলাদেশের আয় হবে ৩২৫৩ ডলার৷ মানে বাংলাদেশ আরও এগোবে৷ ভাষার প্রশ্নে এই সেদিন স্বাধীন হওয়া এক ছোট্ট দেশ আজ এশিয়ান টাইগার৷ হাজার একটা সমস্যা পার করে, উগ্রপন্থা আর ইসলামিক টেররিজমের সঙ্গে লড়াই করে, একটা ছোট্ট দেশ তার অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে চলেছে। আর আমাদের? এই ২০২২ এর আইএমএফ আউটলুকের তথ্য অনুযায়ী, আমাদের রিজার্ভ ব্যাঙ্ক যে হিসেব দিয়েছিল, ৮.২% বৃদ্ধির, তা নাকি সম্ভব নয়৷ আইএমএফ বলছে বৃদ্ধি হবে ৬,৯% হারে। যে দেশ ২০০৪ থেকে ২০১৪, ১০ বছরে মাথা পিছু আয় আড়াই গুণ বাড়াতে পেরেছে, সেই একই দেশের মাথা পিছু আয় ২০১৫ র ১৬০৬ ডলার থেকে বেড়ে ২০২১-২২ এ ২১১৬৷ মানে ৮ বছরে ৫১০ ডলার৷ অর্থাৎ আয় বেড়েছে মাত্র দশমিক পাঁচ গুণ, এবং এই বৃদ্ধির সঙ্গে মূল্যবৃদ্ধিকে ধরলে মাথাপিছু আয় যেই কার সেই থেকে গেছে৷ তাহলে এই বিকাশ, উন্নয়ন, আচ্ছে দিন ইত্যাদির বাওয়ালি কেন? কারণ এই সময়ের মধ্যে বিশ্বের অর্বুদ কোটি সম্পত্তিওলাদের তালিকায়, ভারতবর্ষ থেকেই ঠাঁই পেয়েছেন ২০ জনের বেশি৷ কারণ এশিয়ার ধনীতমদের তালিকার সবচেয়ে ওপরে চলে এসেছেন গৌতম আদানি৷ মানে উন্নতি তো হচ্ছে৷ আমাদের ছোটা মোটা ভাই এর ছেলে বিশ্ব ক্রিকেটের এক স্থপতির সঙ্গে এক মঞ্চে বসে, ক্রিকেট নিয়ে কথা বলে৷ তড়িপার ওই ছোটা মোটা ভাই এর ছেলের সম্পত্তি বাড়ে ৩০০ গুণেরও বেশি৷ একে যদি আচ্ছে দিন না বলেন, তো বলবেন কাকে? দেশের ২০ কোটি মানুষ, অনেক লেংচে হাতড়ে মধ্যবিত্ত তালিকায় নাম লেখাতে পেরেছিল, হুউউস করে তারা আবার পূনর্মূষিক ভব, আবার দরিদ্র সীমারেখার নীচে চলে গিয়েছে৷ কিন্তু কোটিপতিদের সংখ্যা বাড়ছে৷ পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ব্যাঙ্কে এনপিএ, নন পারফর্মিং অ্যাসেট৷ পাল্লা দিয়েই বাড়ছে দেশের মানুষের টাকা নিয়ে বিদেশে চলে যাওয়া ব্যবসায়ীদের সংখ্যা৷ অন্যদিকে বিশ্বের ধনীদের তালিকায় একজনও যে দেশ থেকে নেই, সেই দেশের পার ক্যাপিটা ইনকাম আমাদের থেকে বেড়েই চলেছে৷ এবং আরও বাড়বে বলে জানাচ্ছে আইএমএফ৷

কেন? কিভাবে? ম্যাজিক জানেন নাকি মুজিব তনয়া শেখ হাসিনা? তফাতটা কোথায়? একটা তফাত তো আছেই৷ তিনি এন্টায়ার পলিটিকাল সায়েন্স পাস করা ফকির নন৷ তাঁর দেশেও কালো টাকার এক সমান্তরাল অর্থনীতি আছে৷ কিন্তু সে সমস্যা মেটাতে তিনি ডিমনিটাইজেশনের কথা ভাবেননি৷ একটা মন্দিরে বিগ্রহ ভাঙা হয়েছিল৷ গ্রেফতার হয়েছে মোট ১৭ জন৷ শেখ হাসিনা নিজে পাশে দাঁড়িয়েছেন সেই সমুদায়ের৷ বলেছেন এটা সংবিধান বিরোধী৷ কেবল তিনিই নয়, দেশের বিরাট সংখ্যক মানুষ পাহারা দিয়েছেন হিন্দুদের মন্দির৷ এক হিন্দু যুক্তিবাদী খুনের মামলায় অপরাধীদের ফাঁসি হয়েছে৷ আমাদের দেশের দিকে তাকান, অর্থনীতি গিয়েছে গরু চরাতে৷ দারিদ্র, ক্ষুধা, পানীয় জলের অভাব, মাথার ওপর ছাদের অভাব ইত্যাদি কোনও ইস্যুই নয়, দেশজুড়ে ইস্যু হল লাভ জেহাদ, হিজাব, লাউড স্পিকারে আজান, গোমাংস, প্রকাশ্য জনসভায় কতগুলো ক্রিমিনাল হিন্দু রাষ্ট্রের কথা বলছে, হিন্দু রাষ্ট্রের জন্য প্রয়োজনে মানুষ মারার শপথ নিচ্ছে, সেই শপথগ্রহণ সভায় বিধায়কও থাকছেন, সংবিধান অবমাননা, সংবিধান বিরোধী কথা বলার দায়ে যাদের জেলের ভেতরে থাকার কথা, তারা বাইরে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে৷ একটা কথাও না বলে, তাদের সাহস আর নৈতিক সমর্থন জানাচ্ছেন দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্রভাই দামোদরদাস মোদী।

আর এই কথা বলার দায়ে, গুজরাটের বিধায়ক জিগনেশ মেবানিকে গ্রেফতার করে জেলে পোরা হচ্ছে৷ এই কথা বলার দায়েই উমর খালিদের ওপর ইউএপিএ৷ তিন বছর তিনি জেলে। দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি হয় তখন যখন দেশের মানুষ, দেশের নাগরিকরা ধর্ম, বর্ণ, জাতির বৈষম্যের ঊর্ধে উঠে বাঁচতে শেখেন৷ বাংলাদেশ শিখেছে৷ তার লাখো শহীদের রক্তে গড়া দেশে কিছু কাঠমোল্লা আছে বৈকি, কিছু ধর্মান্ধ মানুষ আছে বৈকি, কিন্তু জাতির জনকের হত্যাকারীদের ফাঁসি হয়েছে, হচ্ছে, তাদের পুজো করার মানুষ সেখানে নেই৷ আর আমাদের দেশের সাংসদ জাতির পিতা গান্ধী হত্যাকারী গডসেকে দেশপ্রেমী বলছেন৷ গোমাংস বিক্রি করেছে বা খেয়েছে মাত্র এই অভিযোগে পিটিয়ে মারা হচ্ছে৷ সমস্ত দেশকে দুভাগ করার চেষ্টা চলছে৷ ফলও হাতে নাতে৷ আমরা পিছোচ্ছি, দেশ পিছচ্ছে৷ ভারতবর্ষ পিছিয়ে পড়ছে৷ বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে৷ আমার স্বান্তনা, ওরা বাংলায় গান গায়, ওরা বাংলায় দেখে স্বপন, ওরা বাংলায় বাঁধে সুর।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Iran-America | মধ‍্যপ্রাচ‍্যে প্রভাব বাড়ছে আমেরিকার! কী করবে ইরান? কী সিদ্ধান্ত খামেনির?
00:00
Video thumbnail
Donald Trump | Harvard University | ট্রাম্প vs হার্ভার্ড, চরম পদক্ষেপ শেষ কোথায়?
00:00
Video thumbnail
Donald Trump | ট্রাম্প-মাস্ক লড়াই চরমে, সেনেটে বিল পাশ করাতে কালঘাম ছুটছে ট্রাম্পের, কী হতে চলেছে?
00:00
Video thumbnail
Donald Trump | Narendra Modi | মোদি-ট্রাম্প সম্পর্ক অতি মধুর, জানালেন হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র
00:00
Video thumbnail
Firhad Hakim | জাতীয় নির্বাচন কমিশনে তৃণমুলের প্রতিনিধি দল, কী বললেন ফিরহাদ হাকিম? দেখুন সরাসরি
00:00
Video thumbnail
Donald Trump | ট্রাম্প-মাস্ক লড়াই চরমে, সেনেটে বিল পাশ করাতে কালঘাম ছুটছে ট্রাম্পের, কী হতে চলেছে?
04:35
Video thumbnail
Donald Trump | Harvard University | ট্রাম্প vs হার্ভার্ড, চরম পদক্ষেপ শেষ কোথায়?
07:15
Video thumbnail
Kaliganj News | কালীগঞ্জে নয়া বিধায়ক আলিফা আহমেদ, বুধবার শপথ গ্রহণ
03:50
Video thumbnail
Kasba Incidetn | মনোজিত সহ দুই পড়ুয়া সাসপেন্ড, গভর্নিং বডি মিটিংয়ে কড়া পদক্ষেপ, দেখুন বড় আপডেট
59:55
Video thumbnail
Kasba Incident | কসবা কাণ্ডে ল' কলেজের সিসিটিভি ফুটেজে উঠে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য, দেখুন ভিডিও
01:26:31

Deprecated: Automatic conversion of false to array is deprecated in /var/www/ktv/wp-content/themes/techinfer-child/functions.php on line 39