৯৩ বছর বয়সে চলে গেলেন ভারতীয় টেনিসের কিংবদন্তী কোচ দ্রোণাচার্য নরেশ কুমার। দীর্ঘ দিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন ভারতের ডেভিস কাপ দলের প্রাক্তন অধিনায়ক নরেশ, টেনিস সার্কিটে যাঁকে লোকে ডাকত কুমার সাব বলে। কলকাতা সাউথ ক্লাবেও যেমন লন্ডনের অল ইংল্যান্ড টেনিস ক্লাবেও (উইম্বলডন) তেমনই জনপ্রিয় ছিলেন নরেশ কুমার। ১৯২৮ সালের ২২ ডিসেম্বর লাহোরে জন্ম গ্রহণ করেন নরেশ। চার বছর বয়সে চলে আসেন কলকাতায়। সেই থেকে আমৃত্যু এই শহরই ছিল তাঁর ঠিকানা। ১৯৫২ সাল থেকে তিনি দেশের হয়ে ডেভিস কাপে খেলেন। পরে অধিনায়ক হন। ১৯৫৩, ১৯৫৫ এবং ১৯৫৮ সালে তিনি উইম্বলডনের কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠেন। ১৯৫২ এবং ১৯৫৩ সালে চ্যাম্পিয়ন হন আইরিশ টেনিসে। ১৯৫২ সালে ওয়েলস চ্যাম্পিয়নশিপেও বিজয়ী হয়েছিলেন। এছাড়াও জিতেছেন ইংল্যান্ডের এসেক্স চ্যাম্পিয়নশিপ (১৯৫৭) এবং সুইৎজারল্যান্ডের ওয়েঙ্গেন ওপেন (১৯৫৮)।
তবে ভারতের টেনিস অনুরাগীরা তাঁকে মনে রাখবে কোচ হিসেবে। জয়দীপ মুখোপাধ্যায় কিংবা লিয়েন্ডার পেজকে তিনিই ভারতীয় দলে জায়গা করে দেন। বিশেষ করে ১৯৯০ সালে জাপানের বিরুদ্ধে প্রায় জোর করেই খেলিয়েছিলেন ১৬ বছরের লিয়েন্ডারকে। তাঁকে আঙ্কল বলে ডাকেন লিয়েন্ডার। ডেভিস কাপে ভারতের হয়ে দুর্দান্ত ম্যাচগুলো যখন খেলতেন লিয়েন্ডার তখন লোকে বলত নরেশ না থাকলে ভারতীয় দলে জায়গা হত না ভেস পেজের ছেলের। তার আগে ১৯৬০ সালে জয়দীপ মুখার্জিকে জাতীয় দলে ঢোকানোর পিছনেও ছিল নরেশ কুমারের বড় ভূমিকা। জয়দীপ মুখোপাধ্যায় বলছিলেন, ” সেবার থাইল্যান্ডের সঙ্গে আমাদের ম্যাচ পড়েছে ব্যাঙ্ককে। প্রেমজিৎলাল তখন সাসপেন্ড। আমি তখন পাকিস্থানে একটা টুর্নামেন্ট খেলতে গেছি। কিন্তু ম্যাচের দুদিন আগে রামনাথন কৃষ্ণণের চিকেন পক্স হয়ে গেল। জরুরি ভিত্তিতে তলব করা হল আমাকে। ইসলামাবাদ থেকে সরাসরি চলে গেলাম ব্যাঙ্কক। বৃহস্পতিবার রাতে পৌছে বিনা প্র্যাক্টিসেই নেমে পড়লাম শুক্রবার।” তখন নরেশ ছিলেন ভারতের নন প্লেয়িং ক্যাপ্টেন। জয়দীপ মুখোপাধ্যায় থেকে লিয়েন্ডার পেজ–সুদীর্ঘ তিরিশ বছর ধরে তিনি ভারতের টেনিসের কোচ ছিলেন। এবং এরই স্বীকৃতিতে ২০২০ সালে তাঁকে দ্রোণাচার্য পুরস্কারে সম্মানিত করে কেন্দ্রীয় সরকার। এখন পর্যন্ত টেনিসে তিনিই একমাত্র দ্রোণাচার্য।
স্ত্রী সুনীতা কুমার চিত্রশিল্পী। নরেশ কুমারের বাড়িতে সারা বিশ্বের সেরা চিত্রকরদের আঁকা ছবি আছে। এই সম্পদ ঈর্ষণীয়। মকবুল ফিদা হোসেন ছিলেন তাঁর বন্ধু। এই সবকে পিছনে ফেলে চলে গেলেন নরেশ কুমার। ভারতীয় টেনিস সার্কিটের কুমার সাব।