এটিকে মোহনবাগান–২ ইস্ট বেঙ্গল–০
(হুগো বুমো, মনবীর সিং)
যত বার ডার্বি, তত বার হারবি। এবার থেকে ইস্ট বেঙ্গল সমর্থকদের উদ্দেশ্য করে এই ব্যঙ্গটা করতে পারেন মোহনবাগান সমর্থকরা। শনিবার আবার মোহনবাগানের কাছে হারল ইস্ট বেঙ্গল। এই নিয়ে টানা সাতটা ডার্বিতে সবুজ মেরুনের কাছে মাথা নত করল লাল হলুদ। আই এস এল ডার্বিতে এই প্রথম সল্ট লেক স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হল দুই প্রধান। ম্যাচটা দেখতে স্টেডিয়ামে দর্শক একেবারে ভেঙে পড়েছিল। তবে ম্যাচ শুরু হতে কুড়ি মিনিট বিলম্ব হয়। হায়দরাবাদে এফ সি গোয়ার সঙ্গে ম্যাচ ছিল হায়দরাবাদ এফ সি-র। সেই ম্যাচ চলাকালীন বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটে। শেষ পর্যন্ত যেটার সমাধান করে ম্যাচ আবার শুরু হয়। হায়দরাবাদ ১-০ গোলে জেতে। তাই সল্ট লেকের ম্যাচ শুরু হয় কুড়ি মিনিট পরে।
ম্যাচ শুরুর আগে দেখার ছিল কোন কোচ কীভাবে দল সাজান। মোহনবাগান কোচ জুয়ান ফেরান্দো এদিন চার ব্যাকে খেলেন। দুই সাইড ব্যাকে আশিস রাই এবং শুভাশিস বসুকে রেখে সেন্টার ব্যাকে তিনি খেলান প্রীতম কোটাল এবং ব্লেন্ডন হামিলকে। এতে কাজ হয়। তিন ব্যাকে খেলার জন্য দিফেন্সে যে ফাঁক ফোকড় ছিল তা অনেকটাই ভরাট হয়। ইস্ট বেঙ্গল কোচ স্টিভন কনস্ট্যানটাইন মাঝ মাঠে দুই বিদেশি কিরিয়াকু এবং জর্ডন ডোহার্টিকে নামিয়ে বাগানের আক্রমণ রোখার চেষ্টা করেছিলেন। প্রথমার্দ্ধে তাঁর এই প্রচেষ্টা ফলবতী হলেও বিরতির পর তা ব্যর্থ হয়। তবে ইস্ট বেঙ্গল মাঝ মাঠ এবং ডিফেন্স চেষ্টা করেছে বাগান আক্রমণকে সামাল দিতে। কিন্তু ইস্ট বেঙ্গলের অ্যাটাক বলতে কিছুই ছিল না। তাদের দলে খেলা তৈরি করার লিক ছিল না। তাই ক্লেটন সিলভা কিংবা ভি পি সুহের কোনও বলই পাননি। তবু প্রথমার্দ্ধের মাঝামাঝি জর্ডন ডোহর্টির একটা সেন্টারে হেড করে প্রায় গোল পেয়ে যাচ্ছিলেন সেমবই হাওকিপ। মোহন গোলকিপার বিশাল কাইথ ডাইভ দিয়ে চমৎকারভাবে বাঁচান বলটা। এদিন কিন্তু বিশাল ছিলেন আনির্ত্মভরতার প্রতীক। যেটা লাল হলুদ গোলকিপার কমলজিৎ সিং সম্পর্কে বলা যাবে না।
৫৬ মিনিটে হুগো বুমোর গোলটার জন্য কমলজিৎকে দায়ী করা যেতে পারে। বক্সের বাইরে থেকে চকিতে বুমোর শটটার সময় কমলজিৎ ঠিক পজিশনেই ছিলেন। কিন্তু শটটার পিছনে গিয়েও আটকাতে পারেননি। বল তাঁর দুহাতে লেগে গোলে চলে যায়। শুধু এই গোলটার জন্যই নয় বুমো এদিন ছিলেন বাগানের গেমমেকার। সঙ্গত কারণেই তিনি ম্যাচের সেরা। তাঁর পাশে ডিফেন্সিভ ব্লকার হিসেবে যোগ্য সঙ্গত করেছেন জনি কাউকো। দুজনে মিলে বহু বল বাড়িয়েছেন তাঁর সতীর্থদের উদ্দেশে। কিন্তু লিস্টন কোলাসো কিংবা মনবীর সিংরা সেগুলোকে কাজে লাগাতে পারেননি। আর আগের ম্যাচে কেরালা ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে হ্যাটট্রিক করা দিমিত্রি পেত্রাত্রোস ছিলেন প্যাসেঞ্জার। প্রথমার্দ্ধে বিশেষ সুবিধে করতে না পেরে বিরতির পর তিনি সেট পিসে চলে যান। কর্নার বা ফ্রি কিক নিতে থাকেন। সেগুলো অবশ্য কোনও সময়েই ভাল ছিল না।
৬৬ মিনিটে মোহনবাগানের দ্বিতীয় গোল তাদের ডিফেন্ডারদের দোষে। বাঁ দিক থেকে বাগানের আক্রমণ রুখতে গোটা ডিফেন্সই তখন সেদিকে চলে গেছে। এই সময় একটা লুজ বল চলে আসে ফাঁকায় থাকা মনবীর সিংয়ের কাছে। সামনে শুধু কমলজিৎ। গোল করতে ভুল করেননি মনবীর। মোহনবাগান যে ম্যাচটা খুব ভাল খেলেছে তা নয়। তবে তারা জিতল তাদের দলে গোল করার লোক বেশি বলে। ইস্ট বেঙ্গল আক্রমণে ধার এবং ভার কিছুই ছিল না। মাঝ মাঠে কিছু ট্যাকল, ব্যাক পাস, স্কোয়ার পাস দিয়ে কি আর বড় ম্যাচ জিতে যায়। এই ইস্ট বেঙ্গলকে দাঁড় করাতে স্টিভনকে প্রচুর খাটতে হবে। উল্টো দিকে ডার্বি জিতে বাড়তি উৎসাহ নিয়ে পরের ম্যাচগুলোতে দ্বিগুণ উদ্যমে খেলতে পারবে। ম্যাচ শেষের পর এক লাল হলুদ সমর্থকের ব্যাকুল প্রশ্ন খানিকটা কান্নার মতো শোনাল। ইস্ট বেঙ্গল কবে জিতবে বলতে পারেন? এই প্রশ্নের উত্তর মনে হয় ফুটবল দেবতাও জানেন না।