নয়াদিল্লি: “সেখানে নগদ অর্থ ছিল। অর্ধদগ্ধ নোট সরানো হয়।” বিচারপতি যশবন্ত ভার্মার (Justice Yashwant Verma) বাড়িতে আগুন লাগার পরিপ্রেক্ষিতে হওয়া তিন বিচারপতির তদন্তের রিপোর্টে দাবি এমনটাই।
উচ্চতর বিচার বিভাগের ইতিহাসে এর আগে এমন উদাহরণ প্রায় নেই। ১৪ ই মার্চ রাত ১১ঃ৩৫ মিনিট নাগাদ দিল্লি হাইকোর্টের (Delhi High Court) বিচারপতি যশবন্ত ভার্মার বাড়িতে আগুন লাগার পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court) নিয়োজিত তিন বিচারপতির প্যানেল দ্বারা হওয়া ১০ দিনের তদন্ত, ৫৫ জন সাক্ষীর যাচাইকরণ, নিজেদের মধ্যে হওয়া বেশ কিছু বৈঠক এবং ঘটনাস্থল পরিদর্শনের ভিত্তিতে তৈরি রিপোর্টের সংক্ষিপ্তসার রীতিমতো চমকপ্রদ।
এই তদন্তের প্রতিটি পর্যায় ভিডিও রেকর্ড করা হয়েছে। যাতে তার বিশ্বাসযোগ্যতা কোনও পর্যায়েই চ্যালেঞ্জ করার সুযোগ না থাকে। আর সেই সূত্রে ৬৪ পাতার যে রিপোর্ট ওই প্যানেল দিয়েছে, তার দুটি পরিচ্ছেদ অত্যন্ত আকর্ষণীয়। রিপোর্টের শেষ পর্বে বলা হয়ে, নয়াদিল্লির ৩০ তুঘলক ক্রিসেন্ট রোডে বিচারপতি যশবন্ত ভার্মার সরকারি বাসভবনে নগদ অর্থ পাওয়া গিয়েছিল। বাসভবন সংলগ্ন যে স্টোররুমে ওই অর্থ পাওয়া যায়, তা বিচারপতি ভার্মা এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের সক্রিয় নিয়ন্ত্রণেই ছিল। ১৫ মার্চের ভোরে সেই অর্ধদগ্ধ অর্থ স্টোর রুম থেকে সরানো হয়।
আরও পড়ুন: ‘অপারেশন সিন্ধু’, ইরান থেকে ১১০ জন পড়ুয়াকে নিয়ে ভারতের মাটি ছুঁল প্রথম বিমান
২২ মার্চ প্রধান বিচারপতির চিঠিতে অভিযোগের যে সারাংশ উল্লেখিত হয়েছিল, সেই অনুযায়ী কমিটি দৃঢ়ভাবে মনে করে, বিশেষত প্রত্যক্ষ এবং ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে নথিভুক্ত প্রমাণের ভিত্তিতে যে, অভিযোগে যথেষ্ট যুক্তি আছে। অসদাচরণের যে প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে, তার ভিত্তিতে বিচারপতি ভার্মাকে অপসারণের উদ্যোগ নেওয়া দরকার। কমিটির রিপোর্টে এমনই সুপারিশ করা হয়েছে।
অন্তত ১০ জন সাক্ষী অর্ধদগ্ধ নোটের স্তূপ দেখেছিলেন। যাদের সাক্ষ্য যাচাই করেছে প্যানেল। তাদেরই একজনের বয়ান এমন, “সেখানে ঢোকার পর ঘরের ডান দিকে এবং সামনে ৫০০ টাকার নোটের বিশাল স্তূপ নজরে পড়ল। মেঝেতেও ছড়িয়ে ছিল বহু টাকা। তাকের উপর আরও এমন নোট ছিল কি না, নিশ্চিত করে বলতে পারব না। আসলে এত বিপুল টাকা দেখে তখন আমি বিস্মিত, বিভ্রান্ত। জীবনে একসঙ্গে এত টাকা কখনও দেখিনি।”
বিচারপতি ভার্মার ব্যক্তিগত সচিব রাজিন্দর সিং কারকি এবং তার কন্যা দিয়া ভার্মার সন্দেহজনক ভূমিকাও কমিটি যাচাই করেছে। কারণ ঘটনাস্থল পরিষ্কার করা এবং প্রমাণ লোপাটের অভিযোগ উঠেছে তাঁদের বিরুদ্ধে। দমকল কর্মীরা তাঁদের রিপোর্টে যাতে নগদ টাকার কথা উল্লেখ না করেন, সেজন্য নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে কারকির বিরুদ্ধে।
তদন্ত শুরু করার আগে তিন বিচারপতির এই প্যানেল নিজেদের জন্য তিনটি প্রশ্ন সামনে রেখেছিল।
৩০ তুঘলক ক্রিসেন্টের স্টোর রুমে অর্ধদগ্ধ টাকা পাওয়া গিয়েছিল কি? কমিটির সিদ্ধান্ত- হ্যাঁ।
স্টোররুমটি কি ৩০ তুঘলক ক্রিসেন্ট ঠিকানাতেই অবস্থিত? কমিটির জবাব- হ্যাঁ।
স্টোররুমে কীভাবে নগদ টাকা এল, তার ব্যাখ্যা কি বিচারপতি ভার্মা দিতে পেরেছেন? কমিটির অভিমত, তিনি জবাব দিতে ব্যর্থ।
উল্লেখ্য, বিচারপতি ভার্মাকে ওই ঘটনার পর দিল্লি হাইকোর্ট থেকে এলাহাবাদ হাইকোর্টে (Allahabad High Court) বদলি করা হয়। কিন্তু তাঁকে বিচার করার কোনও কাজ দেওয়া হয়নি। যদিও তিনি নিজেকে নিরপরাধ দাবি করেছেন। পদত্যাগ করতেও তিনি নারাজ। এমনকী স্বেচ্ছায় অবসর নিতেও অস্বীকার করেছেন। তিনি মনে করেন, তাঁর বিরুদ্ধে যে পদক্ষেপ করা হয়েছে তা মৌলিকভাবে অযৌক্তিক। অন্যদিকে ওই তদন্ত রিপোর্টের প্রতিলিপি রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীকে পাঠিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। সেই সূত্রে কেন্দ্রের আইন মন্ত্রক বিচারপতি ভার্মার বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্ট প্রক্রিয়া শুরু করার উদ্যোগ নিয়েছে বলে খবর।
দেখুন অন্য খবর: