চেন্নাইয়ান এফ সি–১ ইস্ট বেঙ্গল–০
(হাকামানেসি)
বিরতির আগেই গোল করার দুটো সুবর্ণ সুযোগ এসেছিল ইস্ট বেঙ্গলের সামনে। শুধু গোলকিপার ছাড়া সামনে আর কেউ নেই। কিন্তু প্রথমে ভি পি সুহের এবং তার খানিক পরে ক্লেটন সিলভা প্রায় একই জায়গা থেকে বল বাইরে মারলেন। আই এস এল-এর সব ম্যাচই পঞ্চাশ-পঞ্চাশ। এ রকম ম্যাচে পর পর দুটো সোনার সুযোগ হারাবার খেসারত দিতে হল ইস্ট বেঙ্গলকে। যে দলটার ডিফেন্স এবং গোলকিপার সারাক্ষণই লড়াই করে গেল তারাই মুহুর্তের একটা ভুলে গোল খেয়ে ম্যাচটা হেরে গেল। পাঁচ ম্যাচে ইস্ট বেঙ্গলের পয়েন্ট মাত্র তিন। কুড়ি ম্যাচের টুর্নামেন্টে পঁচিশ শতাংশ ম্যাচ খেলা হয়ে গেল স্টিভন কনস্ট্যানটাইনের দলের। সকাল যদি দিনের নির্দেশ দেয়, তাহলে বলতেই হচ্ছে এই দলটার কোনও ভবিষ্যৎ নেই। গত বছর এরা এগারো টিমের খেলায় এগারো নম্বর জায়গাটা পেয়েছিল। এবার সেখান থেকে হয়তো একটু উন্নতি হবে। কিন্তু ভাল কিছু হওয়ার সম্ভাবনা নেই। আর চেন্নাইয়ান? কলকাতায় এসে পর পর দুটো ম্যাচে হারিয়ে দিয়ে গেল দুই প্রধানকে। এটিকে মোহনবাগানের পর এবার ইস্ট বেঙ্গল। কলকাতার ফুটবল কোথায় যাচ্ছে তা বোঝাবার জন্য চেন্নাই-ই যথেষ্ট। শুক্রবার সল্ট লেক স্টেডিয়ামে বাংলার ফুটবলের জন্য আরও একটা কালো দিন।
ডার্বির পরের ম্যাচটা সব সময়েই বেশ কঠিন। সে জিতলেও কিংবা হারলেও। তবে এটা তো তখনকার কথা যখন ডার্বিতে নব্বই শতাংশ বাঙালি ফুটবলার খেলত। কিন্তু এখণ তো দুই বড় দলে বাঙালি ফুটবলার অনুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে খুঁজে দেখতে হবে। আবার এদিন তাদের মধ্যে যে ছেলেটা ভাল খেলছিল সেই সার্থক গোলুই পর পর দুটো হলুদ কার্ড দেখে লাল কার্ড দেখে বেরিয়ে গেলেন ৭৪ মিনিটের সময়। তার পাঁচ মিনিট আগে গোল খেয়েছে ইস্ট বেঙ্গল। সার্থক বেরিয়ে যাওয়ার পর লাল হলুদের কাম ব্যাক করার সম্ভাবনা আরও কমে যায়। এমনিতেই ম্যাচের শুরু থেকেই চেন্নাইয়ের দাপট বেশি ছিল। লাল হলুদের দুই বিদেশি মিডফিল্ডার চার্লস কিরিয়াকু এবং জর্ডন ডোহার্টি অন্য দিন যে রকম খেলেন এদিন তার সিকিভাগও খেলতে পারেননি। মাঝখানটা দুর্বল হলে বিপক্ষের আ্যাটাক বেশি হতে বাধ্য। চেন্নাই সেই সুযোগটা নিল ভালভাবেই। কিন্তু লাল হলুদের ডিফেন্স এবং গোলকিপার চেন্নাইয়ের ঝড় ঝাপ্টা সামাল দিল ভালভাবেই। এবং তারই মাঝে কাউন্টার অ্যাটাক থেকে লম্বা থ্রু পাসে এল দুটো সোনার সুযোগ। বড় লোকের বাউন্ডূলে ছেলের মতো সেই সুযোগ দুটো উড়িয়ে দিলেন সুহের আর ক্লেটন। ফরোয়ার্ডে ক্লেটনের সঙ্গী সিম্বোই হাওকিপ তো শুধু প্যাসেঞ্জার। দল জিতবে কী করে?
ইস্ট বেঙ্গল যেমন নতুন দল, চেন্নাই তো তা নয়। দলটা দুবারের চ্যাম্পিয়ন। অতীত যেমন ভাল, বর্তমানও তেমন খারাপ নয়। দলের নেতা অনিরুদ্ধ থাপা পুরো দলটার আক্রমণ এবং রক্ষণের সেতু। স্টিভন যখন ভারতের কোচ ছিলেন তখন অনিরুদ্ধ জাতীয় দলের নিয়মিত ফুটবলার ছিলেন। এখনও তাই। এ রকম ধারাবাহিকতা ভারতীয় ফুটবলারদের মধ্যে ইদানীং খুঁজে পাওয়া যায় না। এদিনও অনিরুদ্ধ তাঁর সুনাম বজায় রাখলেন। তুলে নিয়ে গেলেন ম্যাচের সেরার পুরস্কার। তাঁর সঙ্গীদের মধ্যে সামনের দিকে স্লিসকোভিচ যথেষ্ট ভাল খেললেন। গোল না পেলেও সারাক্ষণ ঠুকরে গেলেন লাল হলুদ ডিফেন্সকে। এদিন অবশ্য রহিম আলিকে সেভাবে খুঁজে পাওয়া যায়নি। যেমন খুঁজে পাওয়া যায়নি বিরতির পর নামা লাল হলুদের হিমাংশু জ্যাংরা এবং অনিকেত যাদবকে। আর এক বিদেশি এলিয়ান্দ্রো নাকি ব্রাজিলিয়ান। এদিনই শহরে পা দেওয়া কাফু যদি ম্যাচটা দেখেন তাহলে এলিয়ান্দ্রো ব্রাজিলের জানলে লজ্জা পাবেন। আর এক ব্রাজিলিয়ান ক্লেটন চেষ্টা করেছেন। গোল মিস করেছেন। গত চারটে মরসুম তিনি আই এস এল-এর প্লেয়ার। কিন্তু লাল হলুদে এখনও মানিয়ে নিতে পারেননি।
শেষ পর্যন্ত ৬৯ মিনিটে ইস্ট বেঙ্গল গোলটা খেল। আকাশ সঙ্গওয়ানের কর্নার কিকে হেড করে গোল করলেন হাকামানেসি। গোল করার পরেই দ্বিতীয় বার হলুদ কার্ড দেখতে হল তাঁকে। জার্সিটা তুলে গেঞ্জির উপর লেখাটা দেখাতেই হলুদ কার্ড দেখতে হল তাঁকে। কিন্তু চার মিনিট পরে তো সার্থকও লাল কার্ড দেখলেন। কেউ কারুর সুবিধেটা নিতে পারলেন না। তবে চার ম্যাচে সাত পয়েন্ট পেয়ে লিগ টেবলে অনেকটা উঠে এল চেন্নাই। এখন তারা পাঁচ নম্বরে। আর ইস্ট বেঙ্গল আবার নেমে গেল দশে। ইস্ট বেঙ্গলের পরের ম্যাচ বেঙ্গালুরুর সঙ্গে তাদের মাঠে। আবার একটা হারের সংকেত তো থেকেই যাচ্ছে।