skip to content
Sunday, June 16, 2024

skip to content
Homeচতুর্থ স্তম্ভFourth Pillar: ২০২৪-এর মহড়া শুরু হয়ে গেল, গুজরাতের ভোটের দিকে নজর সবার

Fourth Pillar: ২০২৪-এর মহড়া শুরু হয়ে গেল, গুজরাতের ভোটের দিকে নজর সবার

Follow Us :

প্রস্তুতি পর্বের শুরুয়াত, হিমাচল প্রদেশের ভোট আগেই ঘোষণা হয়ে গিয়েছিল, গুজরাত নির্বাচনের ঘোষণা হয়ে গেল। নির্বাচনের আগেই বরাবরের মতো বিজেপি এবং মোদির নির্বাচনী দাবার চাল ছিল গুজরাতে নরেন্দ্র মোদির বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের ঘোষণা। ১০ হাজার, ২০ হাজার, ৪০ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের ঘোষণা, বিভিন্ন বণিক সভার সঙ্গে বৈঠক ইত্যাদি। তো মোদিজি গুজরাতেই ছিলেন, ঘোষণা দিয়ে তিনি ফিরবেন, নির্বাচনের দিন ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন, চেনা ছক। কিন্তু তার আগেই ইশ্বরের ইশারা, মাচ্ছু নদীর ওপর ঝুলন্ত ব্রিজ ভেঙে ১৪৩ জনের মৃত্যু, তার মধ্যে ৪৫ জন শিশু। মোদিজি কাঁদলেনও, কিন্তু এখনও পর্যন্ত ওই ওরেভা কোম্পানির একজন ডায়রেকটরকে ছোঁওয়া তো দূরস্থান, তাদের নামে এফ ই আরও হয়নি। ইডি সিবিআই, ভিজিলেন্স দফতরের ব্যাঁকা চোখ পূর্বে, দক্ষিণে, পশ্চিমে নেই। গুজরাতের দিকে নজর দেবে তেমন সাহস কোথায়? এক দিনের অভিজ্ঞতা না থাকার পরেও ব্রিজ রক্ষণাবেক্ষণ আর রিনোভেশনের কনট্রাক্ট পেয়েছিল মোদিসখা জয়সুখভাই প্যাটেলের ওরেভা গোষ্ঠী। নতুন তথ্য জানা যাচ্ছে, তারাও ওই কাজ করেনি, আরও ছোট এক স্থানীয় কোম্পানিকেই কাজের দায়িত্ব দিয়ে দেওয়া হয়েছিল, এই সাব কন্ট্রাক্ট-এর বিষয়টা মূল চুক্তিতে ছিলই না। তো যাই হোক, এই সব আবহে ২০২৪-এর কাড়া-নাকাড়া বেজে উঠল। এরপর কর্ণাটক, তেলঙ্গনা, সেখানে ৫০ কোটি দিয়ে এম এল এ কেনাবেচার অভিযোগ বিজেপির বিরুদ্ধে। এদিকে ত্রিপুরা, মেঘালয়, মণিপুর। উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ত্রিপুরা নিয়ে যথেষ্ট চিন্তায় আছে বিজেপি। তারপর মেগা ভোট, রাজস্থান, ছত্তিশগড়, মধ্যপ্রদেশ। এই সব নির্বাচন শেষ হলেই ২০২৪, প্রশ্ন উঠবে, অব কি বার কি মোদি সরকার? অতএব রাজনৈতিক চহলপহল শুরু, নির্বাচনের বাদ্যি বেজেছে। কিন্তু গুজরাত এক আলাদা কেস, গুজরাত নির্বাচনের গুরুত্বটা এক্কেবারে আলাদা। এরকম নয় যে গুজরাত বিরাট বড় এক রাজ্য, এমনও নয় যে গুজরাত হারলে সরকার পড়ে যাবে। কিন্তু গুজরাত তো দেশের ১ নম্বরের, দেশের দুই নম্বরের, অর্থনীতির কুলশ্রেষ্ঠরা তো আপাতত গুজরাতেরই বাসিন্দা। সেই কবে ৯৫/৯৬ সাল থেকে একটানা শাসন বিজেপির, এই গুজরাতে, আর কোনও রাজ্যে এমন রেকর্ড নেই। ২০১৪তে ২৬-এ ২৬টা লোকসভা আসন, ২০১৯-এও। কেবল তাই নয়, দুটো লোকসভা ভোটে বিজেপির ভোট পার্সেন্টেজ? এদিক ওদিক ৬০ শতাংশ। কেবল একবার, মাত্র একবার বিজেপিকে অসহায় দেখাচ্ছিল, ২০১৭ র নির্বাচন। হার্দিক প্যাটেল, পাটিদার নেতা, জিগনেশ মেওয়ানি দলিত নেতা, কংগ্রেসের ঐক্যবদ্ধ ক্যাম্পেইন, গুজরাতি বেনিয়াদের ওপর জি এস টির চোট, সবমিলিয়ে নাজেহাল দেখাচ্ছিল বিজেপিকে। নির্দিষ্ট দিনের পরেও মোদিজি নিজেই ক্যাম্পেনের হাল ধরলেন, অমিত শাহ সমেত প্রায় গোটা মন্ত্রিসভা, কারণ গুজরাত মোদি শাহের জন্মভূমি, কর্মভূমি আর গুজরাত এই নয়া বিজেপি জিরো টু-র আঁতুড়ঘর। হিন্দুত্বের আঁতুড়ঘর, মুসলমান বিদ্বেষের আঁতুড়ঘর। বিজেপির এই ভয় দেখানোর রাজনীতির, পুলিশ ভিজিলেন্স দিয়ে শাসন চালানোর ল্যাবরেটরি টেস্ট এই গুজরাতেই। ২০১৭র রেজাল্ট, ৯২-এ সংখ্যাগরিষ্ঠতা, ৯৯ পেল বিজেপি, অনেকদিন পরে এই প্রথম দু’ অঙ্কে নামল। আর ১০টা কম পেলে? কংগ্রেস ৭৭, আর ১০টা বেশি পেলে? কী আর এমন হত? ১০/১৫ টা বিধায়ক কেনাবেচা কী আর এমন বড় কাজ, কিন্তু মুখ পুড়ত বিজেপির। সেদিন জয়ের খবর আসার পরে মোদিজি কেঁদেছিলেন, দলের বিধায়কদের সামনে চোখে জল মোদিজির। পরাজয়ের দোরগোড়া থেকে ফিরে আসার আনন্দে কেঁদেছিলেন। সেইদিন থেকেই অমিত শাহ মোদিজি এই ২০২২-এর নির্বাচনের প্রস্তুতি চালিয়ে গেছেন। হ্যাঁ, বর্ণ হিন্দু, গণধর্ষণে অভিযুক্তদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে জেল থেকে, দেশসুদ্ধ ছিছিক্কার, তাতে কী? গুজরাটের ভয়ঙ্কর মুসলমান বিদ্বেষী হিন্দুদের কাছে মেসেজ লাউড অ্যান্ড ক্লিয়ার, আমরা মিয়াদের বিরুদ্ধে। হ্যাঁ এই ভাষাতেই বলেন তাঁরা। ইনভেস্টমেন্ট-এর বন্যা বয়ে গেছে, কী চাই বলুন? জমি? বিদ্যুৎ? ট্যাক্সে ছাড়, দেব। ইনভেস্ট করুন। কেন্দ্রীয় প্রকল্পের বরাদ্দ বেড়েছে। কিন্তু তারপরেও কি নিশ্চিন্ত মোদি-শাহ? না, দোলাচল তো কাটেইনি, বরং বেড়েছে। আসছি সে কথায়, আগে এবারের নির্বাচনের নতুন ফ্যাক্টরগুলো নিয়ে কথা বলা যাক। প্রথম নতুন ফ্যাক্টর হল আপ। আপ কয়েকটা মিউনিসিপালিটি সিট পেয়েছে। কিন্তু রাজ্যজুড়ে তাদের অবস্থান? কতটা প্রভাবশালী হবে কেজরিওয়ালের প্রচার? স্থানীয় তেমন ওজনদার নেতা কই? পঞ্জাবে তারা কাজ শুরু করেছিল ওই দিল্লির সঙ্গেই, কিন্তু গুজরাতে? তারা এক্কেবারে নতুন। কিন্তু চর্চায় এসেছে, তাদের নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। গতবার বিজেপি পেয়েছিল ৪৯% ভোট, কংগ্রেস ৪১%। গুজরাতে এই দু’ দলেরই একটা সলিড বেস আছে, কংগ্রেসের ভোট ঘোরাঘুরি করে ৩৬ থেকে ৪২, ১৯৯৫/৯৬ থেকে বিজেপির ভোট থাকে ওই ৪৫ থেকে ৬১%-এর থেকে সামান্য কমবেশিতেই। যখন নরেন্দ্র মোদি নিজেই ক্যান্ডিডেট, লোকসভার ভোট, তখন ৬১/৬২, কিন্তু উনি না থাকলেই ৪৬/৪৯%। কিন্তু তার চেয়ে খুব বেশি কমে না। এবার এই নতুন ফ্যাক্টর আপ নিয়ে কংগ্রেস শুধু নয়, বিজেপিরও মাথা খারাপ হওয়ার দশা। আপ যদি খুব সাধারণ ইকুয়েশন মেনে বিজেপি বিরোধী ভোটের ১০% খেয়ে নেয়, তাহলে মোদি–শাহ মজা মা, কেম ছে, মজা মা ছে। আনন্দে থাকবেন। কিন্তু ভোট কি তত সরলরেখায় চলে? মানুষের মতিগতি কি অত সহজে বোঝা যায়? যদি আপ বিজেপির ভোট কেটে নেয়? ওই যে, টাকায় লক্ষ্মী গণেশ ছাপুন, কেজরিওয়াল বললেন। বিজেপি নেতাদের তো চোখে সর্ষেফুল, বলে কী লোকটা? কিন্তু লোকটার তো চোখ ভোটের দিকে। বেনিয়াদের মনে যদি সেটা কিঞ্চিৎ রেখাপাত করে? তাহলে? আপ যদি কংগ্রেস বিজেপির থেকে সমান ভোট কাটে, যদি কংগ্রেসের থেকে কম বিজেপির থেকে ভোট বেশি কাটে? যদি আপ ওই ২/৩% ভোটেই আটকে যায়? এই গবেষণা চলছে গুজরাতে। তার মধ্যে মোরবি দুর্ঘটনা মাথায় ভাঁজ এনেছে বিজেপি নেতাদের, ড্যামেজ কন্ট্রোলের রাস্তা খুঁজে পাচ্ছেন না। ওদিকে কংগ্রেসের গতবার পর্যন্ত সামনের নাম ছিল আহমেদ প্যাটেল, তিনি নেই। তিনি নেই বলে মুসলমান ভোট অন্য কোথাও যাবে, তা তো নয়। হার্দিক প্যাটেল বিজেপিতে চলে যাওয়ার পরে কোলি উপজাতির কংগ্রেস নেতা জগদীশ ঠাকোর হাল ধরেছেন। আগে সাংসদ ছিলেন পাটন থেকে, রাজ্যে আলাদা করে পদযাত্রা শুরু করেছেন। সৌরাষ্ট্রে গতবার খুব কম মার্জিনে বিজেপি বেশ কিছু আসন জিতেছিল, এবার সেখানে কংগ্রেস জোর দিয়েছে, আপও নাকি সেখানে বিজেপির ভোট কাটছে। হিমাচলপ্রদেশে ইতিমধ্যেই জনা ৩০ বিজেপি ছোট বড় নেতা পদত্যাগ করেছে, এবারের গুজরাত নির্বাচনে বেশ কিছু বিজেপি এম এল এ-র টিকিট কাটার কথা উঠেছিল, আপাতত সেসব তাকে তুলে রেখেছেন মোদি–শাহ। সব মিলিয়ে ভোটের বাজার সরগরম। না, এখনও কোনও সার্ভে এসে পৌঁছয়নি, মানে নির্বাচনী সমীক্ষার কথা বলছি, সেরকম কিছু পাইনি। কিন্তু সি এস ডি এস, সেন্টার ফর স্টাডি অফ দ ডেভেলপিং সোসাইটিজ এক অর্থনৈতিক সমীক্ষা করেছে। সেখান থেকে যা পাওয়া গেছে তা মোদি–শাহের কপালে চওড়া ভাঁজ ফেলেছে নিশ্চয়ই। তাঁদের অর্থনৈতিক সমীক্ষায় তাঁরা প্রশ্ন করেছিলেন এবারে নির্বাচনে ভোট দেওয়ার সময় আপনার মাথায় কোন বিষয়টা সবচেয়ে বেশি করে আসছে? ৫১%, হ্যাঁ ৫১% মানুষ জানিয়েছেন মূল্যবৃদ্ধি, ক্রমাগত বাড়তে থাকা জিনিসপত্রের দাম তাদের মাথাব্যথা হয়ে উঠেছে। এই একই প্রশ্ন আগের নির্বাচনের সময়েও ছিল। তখন এই শতাংশ ছিল ১৫%, এবার ঠিক উল্টো, এক পাঁচের জায়গায় পাঁচ এক, ৫১% মানুষ বলছেন ভোট দেওয়ার সময় তাদের মাথায় থাকবে এই মূল্যবৃদ্ধির কথা, এরপর? পরের চিন্তা বেরোজগারি, আনএমপ্লয়মেন্ট। ১৫% মানুষ জানিয়েছে তাদের মাথায় থাকবে বেরোজগারি, বেকারত্বের প্রশ্ন। আরও চিন্তার ব্যাপার হল প্রায় ৭০% মানুষের মাথায় থাকবে অর্থনৈতিক মাপকাঠি নিয়ে চিন্তা। না, হিন্দুত্ব নয়, রামমন্দির নয়, মিয়া মুসাররফ নয়, মাথায় থাকবে মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব। কাজেই অশনি সংকেত পেয়ে গিয়েছেন মোদি–অমিত শাহ। এখন দেখার তাঁরা এই ঠ্যালা সামলান কী করে? নাকি কেজরিওয়ালই তাঁদের সমস্যার সমাধান করে দেবেন? কাজেই এই টেনশন শেষ বল পর্যন্ত গড়াবে, তবে সব্বার, বিজেপির, কংগ্রেসের, সাংবাদিক বা সমীক্ষকদের একটা চোখ যে আপের দিকেই থাকবে সেটা বলাই বাহুল্য।

 

RELATED ARTICLES

Most Popular