ফ্রান্স–২ ডেনমার্ক–০
(কিলিয়ান এমবাপে–২) (আন্দ্রে ক্রিশ্চিটেনসেন)
রাখে এমবাপে মারে কে? পর পর দুটো ম্যাচ জিতে কাতার বিশ্ব কাপের প্রিকোয়ার্টার ফাইনালে উঠে গেল বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স। বিরতির আগে কোনও গোল হয়নি। বিরতির পর ৬১ আর ৮৬ মিনিটে জোড়া গোল করে ডেনমার্কের বিরুদ্ধে ফ্রান্সকে জিতিয়ে দিলেন কিলিয়ান এমবাপে। এই বছরেই উয়েফা নেশনস লিগে ডেনিশদের কাছে পর পর দুবার হেরেছিল ফ্রান্স। বিশ্বজয়ীরা যদি শনিবারও হারত তাহলে শুধু যে হারের হ্যাটট্রিক হত ডেনমার্কের কাছে তাই নয়, ২০০২ থেকে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের যে অভিশাপ তাড়া করে বেড়াচ্ছে তার কোপেও পড়তে হত দিদিয়র দেশঁর দেশকে। ১৯৯৮ সালে ফ্রান্স চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। পরের বিশ্ব কাপ মানে ২০০২ সালে তারা বিদায় নেয় প্রথম রাউন্ড থেকে। ২০০৬ সালে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ইতালি। ২০১০ সালে তারা বিদায় নিয়েছিল প্রথম রাউন্ড থেকেই। একই দুর্দশা হয়েছিল ২০১০-এর চ্যাম্পিয়ন স্পেন এবং ২০১৪-র চ্যাম্পিয়ন জার্মানিরও। ২০১৪ সালে স্পেন এবং ২০১৮ সালে জার্মানি প্রথম রাউন্ড থেকে বিদায় নিতে বাধ্য হয়।
এত দিনে চ্যাম্পিয়নদের গায়ে লাগা অভিশাপ কাটল। শেষ পর্যন্ত ফ্রান্স কত দূর যাবে তা তো সময়ই বলবে। কিন্তু তারা যে প্রথম রাউন্ডের বাধা পেরোতে পারল এতে শুধু তাদের সমর্থকদের আনন্দই নয়, স্বস্তি ফিরল সব মহলেই। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের লোকে অনেকটাই দেখতে চায়। প্রথম রাউন্ডে বিদায় নিলে সেই মজাটাই নষ্ট হয়ে যায়। ফ্রান্স যে গ্রুপে রয়েছে, তাতে তাদের নক আউটে যাওয়াটা খুব শক্ত কাজ ছিল না। কারণ ডেনমার্ক, অস্ট্রেলিয়া এবং তিউনিশিয়া এমন কোনও উঁচু দরের টিম নয়। তবে বিশ্ব কাপে প্রতি বছরই কোনও না কোনও অঘটন তো ঘটে। এবারই তো আর্জেন্তিনা এবং জার্মানি প্রথম ম্যাচে হেরে বসে আছে। ফ্রান্স সেই ঝামেলায় পড়েনি।
এদিন শুরু থেকেই দাপিয়ে খেলতে থাকে ফ্রান্স। রাশিয়া বিশ্ব কাপের অন্যতম নায়ক রাফায়েল ভারানে কি প্রথম দলে ফিরিয়ে আনা হল। তিনি এলেন ইব্রাহিম কোনাতের জায়গায়। রাইট ব্যাকে বেঞ্জামিন পাভার্ডের জায়গায় এলেন জে কুন্ডে। বাকি সব আগের ম্যাচের মতোই। লেফট ব্যাকে লুকাস হার্নান্ডেজ অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে চোট পেয়েছিলেন। মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার পর সামলেছিলেন তাঁর ভাই লিও। এদিনও লিও পুরো ম্যাচটাই খেললেন। ফ্রান্সের লক্ষ্য ছিল শুরু থেকেই গোলের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়া। ওসুমানু দেম্বলে, আঁতোয়া গ্রিজম্যান এবং কিলিয়ান এমবাপের সামনে সিঙ্গল স্ট্রাইকার অলিভার জিরু, যাঁর জোড়া গোল ছিল অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে। এদিন অবশ্য জিরু তাঁর নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। ৬৩ মিনিটেই তাঁকে তুলে নিয়ে নামানো হল মার্কাস থুরঁকে। তার দু মিনিট আগেই গোল করেছেন এমবাপে। প্যারিস সাঁ জামাঁ স্ট্রাইকারের তিনটে গোল হয়ে গেল। বাঁ দিক থেকে লিও হার্নান্ডেজের ক্রসটা এল গোল লাইন থেকে। বলটা পেয়েই ডান পায়ের ভলিতে গোল করলেন এমবাপে। সাত মিনিটের মধ্যে গোলটা শোধ করে দিল ডেনমার্ক। ক্রিশচিয়ান এরিকসনের কর্নার হেড করে গোল করলেন বার্সেলোনার সেন্টার ব্যাক আন্দ্রে ক্রিশ্চেটেনসেন। এর পর মনে হচ্ছিল, ফ্রান্স বুঝি আটকে গেল। কিন্তু সেটা হতে দিলেন না এমবাপে। ডান দিক থেকে আঁতোয়া গ্রিজমানের মাপা ক্রস এসে পড়ল এমবাপের মাথায়। ঘাড়ের কাছে একজন ডেনিস ডিফেন্ডারকে নিয়েও ডান পায়ের টোকায় গোল করে ফ্রান্সকে জিতিয়ে দিলেন এমবাপে। বুধবার নিয়ম রক্ষার ম্যাচে ফ্রান্স খেলবে তিউনিশিয়ার বিরুদ্ধে। ভুল বললাম, এমবাপের গোলের সংখ্যা বাড়ানোর ম্যাচ হতে পারে তিউনিশিয়া।