ব্রাজিল–১ সুইৎজারল্যান্ড–০
(কাশেমিরো)
বিশ্ব কাপে পাঁচ বারের চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল কোনও দিন হারাতে পারেনি সুইৎজারল্যান্ডকে। সোমবার কাতারের স্টেডিয়াম ৯৭৪-এ সেই মিথটাই যেন প্রতিষ্ঠিত হতে চলেছিল। ৮৩ মিনিট খেলা হয়ে গেছে। তখনও গোল নেই ব্রাজিলের। তার আগে ভিনিসিয়াস জুনিয়রের করা গোল রেফারি বাতিল করেছেন ভারের সাহায্যে। তাহলে কি নেমারবিহীন ব্রাজিল আবার আটকে যাবে সুইসদের কাছে। শেষ পর্যন্ত সেটা হতে দিলেন না ব্রাজিলের ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার কাশেমিরো। একদা রিয়াল মাদ্রিদের প্রথম একাদশের সফল প্লেয়ার কাশেমিরো দল বদলে এখন ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডে। বাঁ দিক থেকে একটা আক্রমণ তুলে আনল ব্রাজিল। ভিনিসিয়াস-রডরিগে হয়ে বল এল কাশেমিরোর পায়ে। বক্সের মধ্যে ঢুকে ডান পায়ের দুর্দান্ত ভলিতে কাশেমিরোর শট এক ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে গোলে ঢুকে গেল। সুইস গোলকিপার ইয়ান সোমারের কিছু করার ছিল না। এই জয়ের ফলে দুই ম্যাচে ছয় পয়েন্ট নিয়ে ব্রাজিল হাসতে হাসতে চলে গেল প্রিকোয়ার্টার ফাইনালে। শুক্রবার গ্রুপের শেষ ম্যাচে তাদের সামনে ক্যামেরুন।
নেমার না থাকায় ব্রাজিলের সমস্যাই হচ্ছিল। নেমার গোল করুন না করুন, তাঁর দিকে নজর রাখতেই হয় বিপক্ষকে। এতে খানিকটা হলেও সুবিধে পান ব্রাজিলের অন্য অ্যাটাকাররা। কিন্তু গোড়ালিতে চোট পেয়ে নেমার এখন মাঠের বাইরে। তাঁর বদলি তো রাতারাতি পাওয়া যায় না। এই পরিস্থিতিতে ব্রাজিলের আক্রমণ গড়ার দায়িত্বটা নিতে হল ভিনিসিয়াস জুনিয়রকে। রিয়াল মাদ্রিদের প্রথম একাদশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভিনিসিয়াস বাঁ দিক দিয়ে আক্রমণ শানাচ্ছিলেন। তাঁর সঙ্গে সার্বিয়া ম্যাচের জোড়া গোলের নায়ক রিচার্লিসন এবং নেমারের বদলে যাঁকে নামানো হল সেই লুকাস পাকুয়েতা অ্যাটাকে বার বার গেলেও তাঁদের মধ্যে তেমন পেনিট্রেশন ছিল না। সুইৎজারল্যান্ড ইউরোপের প্রথম শ্রেণীর দল নয়। ফিফার সদর দফতর তাঁদের দেশে হলেও তারা আসলে মধ্য মেধার দল। তারা জানত ব্রাজিলকে ফ্রি হুইলিং ফুটবল খেলতে দিলে সর্বনাশ হয়ে যাবে। প্রথম থেকেই তারা তাই জোর দিল ডিফেন্সে। ব্রাজিলের আক্রমণের সময় ডিফেন্সে ছয় থেকে সাতজনকে নামিয়ে এনে তারা আটকে দিচ্ছিল রাফিনাদের। তবু ওরই মধ্যে রাফিনার ক্রস থেকে ভিনিসিয়াস জুনিয়র গোল করার জায়গায় পৌছে গিয়েচিলেন। কিন্তু তাঁর ভলি আটকে দেন সুইস গোলকিপা ইয়ান সোমার। একটু পরেই রাফিনার শটও বাঁচিয়ে দেন সোমার। আসলে ব্রাজিল টিমে এদিন কোনও গেমমেকার ছিল না। যিনি খেলাটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। স্টেডিয়ামে পাশাপাশি বসে খেলা দেখছিলেন ব্রাজিলের বিশ্ব কাপ জয়ী তিন নায়ক। কাফু, রবের্তো কার্লোস এবং রোনাল্ডো। তিন জনকেই বেশ চিন্তিত দেখাচ্ছিল বার বার।
ডিফেন্সের খোলস ছেড়ে সুইসরা বিরতির পর একটু আক্রমণে আসতে শুরু করে। কিন্তু ব্রাজিলের ডিফেন্স ভাঙার ক্ষমতা ছিল না তাদের। অধিনায়ক থিয়েগো সিলভার নেতৃত্বে ব্রাজিল ডিফেন্স ছিল রক সলিড। উল্টো দিকে গোলের জন্য মরিয়া হচ্ছিল ব্রাজিল। নয় জন স্ট্রাইকার নিয়ে এসে যদি সুইজারল্যান্ডের মতো দলের বিরুদ্ধে গোল না করা যায় তার চেয়ে লজ্জার কিছু নেই। ব্রাজিল কোচ তিতে নামালেন গ্যাব্রিয়েল জেসুসকে। কিন্তু তাঁর খেলায় আগের মতো ঝাঁজ কোথায়? এর মধ্যে ভিনিসিয়াস জুনিয়রের গোল বাতিল হল। চাপ বাড়তে লাগল ব্রাজিলের উপর। রিচার্লিসনকে তুলে নিলেন তিতে। শুধু ভরসা বলতে তখম মাঠে ভিনিসিয়াস। শেষ পর্যন্ত কাশেমিরোর গোলে এদিনের মতো ম্যাচ বাঁচল। সম্মান রইল হাতে। গ্রুপ লিগের বৈতরণী ব্রাজিল পেরিয়ে গেল। কারণ গ্রুপটা খুবই সহজ ছিল। আসল লড়াই তো নক আউটে। এই ফুটবল খেললে ব্রাজিলের কপালে কিন্তু দুঃখ আছে।