ওয়াশিংটন: ধ্রুব তারা দেখতে পাওয়া নাকি ভাগ্যের বিষয়। এমন বলে থাকেন অনেকেই। কিন্তু, আকাশময় অন্য তারারা? তারা কী আর আগের মতো দেখতে পাওয়া যায়? বায়না ধরে কাঁদতে থাকা ছোট ছেলে-মেয়েকে অনেকেই ছাদ, ব্যালকনি থেকে আকাশের তারা দেখিয়ে চুপ করান। তারাদের নিয়ে বানানো গল্প বলেন। তারা নিয়ে কত কবিতা লেখা হয়েছে। সিনেমার রেফারেন্সে তারা এসেছে। সর্বোপরি কারও ভালো কাজের জন্য নাম ডাক হলে বলা হয় তারা। আরও কৃতী হলে বলা হয সুপার স্টার । মিট মিটে তারারা একসময জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে বাড়িতে চিঠি পৌঁছে দিতে যাওয়া রানারকে পথ দেখাত। সেই তারা কী অচিরে আর দেখা যাচ্ছে না? একটি গবেষণা রিপোর্টে সেই আশঙ্কাই সত্যি হতে চলেছে।
ওই রিপোর্টে বলা হচ্ছে, কৃত্রিম আলোর দাপটে অনেক তারাই এখন আর আগের মতো দেখা যাচ্ছে না। দশকে অন্তত ১০ শতাংশ উজ্বল (light pollution) হয়েছে বিশ্ব। যার প্রভাব পড়েছে দৃশ্যমানতায়। অনেকে এমনও তথ্য দিয়েছেন ২০ বছর আগে যা তারা দেখা যেত এখন তার অর্ধেক দেখা যায়। কারণ একটাই, আলোর দূষণ। ফলে বায়ু দূষণ, শব্দ দূষণের সঙ্গে এবার আলোর দূষণেও যুঝতে হচ্ছে প্রাকৃতিক বিশ্বকে।
আরও পড়ুন: Mysterious Cloud In Turkey: তুর্কির আকাশে রহস্যজনক মেঘ
কেন এই কথা অকস্মাৎ?
আমেরিকার দ্য ন্যাশনাল অপটিক্যাল-ইনফ্রারেড অ্যাস্ট্রনমি রিসার্চ ল্যাবরেটরি (National Optical-Infrared Astronomy Research Laboratory in the US) একটি গবেষণা করেছে। তাতে বিশ্বের ৫১ হাজার নাগরিক বিজ্ঞানীকে দিয়ে সমীক্ষা হয়েছে ২০১১ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত। সা্য়েন্স (SCIENCE) নামে একটি পত্রিকাতে ওই গবেষণা্ তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। তাতে দেখা গিয়েছে, কৃত্রিম আলোর জন্য বিশ্বের উজ্জ্বলতা কীভাবে পরিবর্তন হচ্ছে। গ্লোব অ্যাট নাইট (Globe at Night) নামে এই কাজ চলেছে। জার্মান রিসার্চ সেন্টার ফর জিওসায়েন্সেস (GFZ German Research Centre for Geosciences)-এর এক পদার্থবিদ ক্রিস্টোফার কাইবা (Christopher Kyba) বলেন, এটা নাড়িয়ে দেওয়ার মতো ঘটনা। তার চেয়েও খারাপ বলা যেতে পারে। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, যদি এরকম চলতে থাকে তাহলে এখন যাঁরা জন্ম নিচ্ছেন তাঁরা ২৫০ তারা দেখতে পেলে। ওঁরাই ১৮ বছর বয়সে ১০০টি তারা দেখতে পাবেন কি না সন্দেহ। এর একটিই কারণ তা হলে আকাশের উজ্জ্বলতা (skyglow)-র খারাপ প্রভাব পড়তে পরে পরিবেশে। এমনই শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।
রাস্তায় যেসব সুন্দর বিল বোর্ড থাকে। রাস্তার সৌন্দর্যময় সাজানো আলো। কিংবা দোকানের সামনে লেখাগুলো থেকে যে ফোটন ছোটে। সেগুলিই এই দৃশ্য দূষণের অন্যতম কারণ বলে মনে করা হচ্ছে বলে ওই গবেষণা রিপোর্টে তথ্য উঠে এসেছে। কলকাতার এক গবেষকের কথায়, আমরা আলোর বাহারি আওয়োজন করছি যার ফলে তারাদের হারাতে হচ্ছে। রূপম ইসলামের গানের কথায় বলে যেতে পারে, ‘ভেবে দেখেছো কী তারারাও কত আলোকবর্ষ দূরে যায় ক্রমে সরে-সরে…।’