Saturday, June 14, 2025
Homeচতুর্থ স্তম্ভFourth Pillar | নীতীশের ছক এবং কর্নাটক টলমল

Fourth Pillar | নীতীশের ছক এবং কর্নাটক টলমল

Follow Us :

যখনই মনে হয় জগন্নাথের রথের চাকা আর নড়বে না, তখনই হঠাৎ চাকার আওয়াজ শোনা যায়। সে আওয়াজ ছড়িয়ে যায় ভক্তদের কাছে, নড়েছে, নড়েছে, তারপর চাকা ঘুরতে থাকে, রথ চলে। মহাকালের রথের ঘোড়া সময় বদলে দেয়, রাজছত্র ভেঙে পড়ে, রণডঙ্কা শব্দ নাহি তোলে, জয়স্তম্ভ মূঢ়সম অর্থ তার ভোলে, রক্তমাখা অস্ত্র হাতে যত রক্তআঁখি শিশুপাঠ্য কাহিনিতে থাকে মুখ ঢাকি। যখন মনে হয়েছিল পৃথিবীর মানুষের, এবার জার্মানির হিটলার বুঝি দখল করে নিল গোটা পৃথিবী, ঠিক তখনই স্তালিনগ্রাদে পরাজিত হয় জার্মান সেনা, বার্লিনের পতন হয়ে ওঠে অনিবার্য। ঠিক যখনই মনে হয়েছে জরুরি অবস্থার অন্ধকার আর কাটবেই না, তখনই আওয়াজ উঠেছে সিংহাসন খালি করো কি জনতা আতি হ্যায়। পরাজিত হয়েছেন ইন্দিরা, সঞ্জয়। ইতিহাস বার বার প্রমাণ করেছে এ কথা। বাইজানটাইন সাম্রাজ্য ভেঙে গেছে, ওটোমান সাম্রাজ্য চুরমার হয়ে গেছে, নাদির শাহ, চেঙ্গিস খাঁ, তৈমুর লং-এর অভিযান থেমেছে। পাল, গুপ্ত, মৌর্য থেকে চোল, চালুক্য, পল্লব, মুঘলদের পতন হয়েছে। যেখানে সূর্য অস্ত যেত না, রুল দ্য ব্রিটানিয়া, রুল দ্য ওয়েভ, সেই ইংরেজ সাম্রাজ্যের অবসান হয়েছে। তবুও তুচ্ছ মানুষ নিজেকে অজর অমর অক্ষয় বলেই মনে করে ভুল করে। 

কর্নাটকে গিয়ে অমিত শাহ বললেন, ২০২৪-এ ৩০০-র বেশি আসন পাবে বিজেপি। কংগ্রেস মুক্ত ভারত তো হবেই, আগামী ১০০ বছর ভারতে বিজেপিরই শাসন থাকবে। সাংবাদিকরা কেউ জিজ্ঞেস করেনি যে ১০১তম বর্ষে ভারতে কোন দল শাসন করবে? সে থাক, যেদিন উনি ওনার এই মনের ইচ্ছের কথা মুখ ফুটে বলে ফেললেন, তারপরের কটা দিনে কী কী ঘটল? আসুন একটু নজর রাখা যাক। কর্নাটকে বিদ্রোহ। ছোটখাটো নয়, এ যেন কংগ্রেসি রাজনীতির পূনরাবৃত্তি। কর্নাটকে কংগ্রেসের সবথেকে বড় জয় এনে দিয়েছিল বীরেন্দ্র পাটিল, ১৯৮৯-এ ২২৪-এ ১৭৮টা আসন। বীরেন্দ্র পাটিল নিজেই ছিলেন লিঙ্গায়েত, কাজেই সে গোষ্ঠীর পুরো সমর্থন ছিল কংগ্রেসের দিকে। কিন্ত ১৯৯০-এ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পরে রাজীব গান্ধী কোনও আলোচনা না করেই খুব দৃষ্টিকটুভাবেই বীরেন্দ্র পাটিলকে সরিয়ে দেন। সেই থেকে লিঙ্গায়েত ভোট চলে গেছে কংগ্রেসের কাছ থেকে, ওধারে আরেক গুরুত্বপূর্ণ গোষ্ঠী ভোক্কালিগাদের সমর্থন কিছুটা কংগ্রেস পেলেও অনেকটা পান কুমারস্বামী দেবেগৌড়া। আর বিজেপির প্রবীণ নেতা ইয়েদুরিয়াপ্পা বা বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী বাসবরাজ বোম্মাই হলেন লিঙ্গায়েত। কিন্তু, হ্যাঁ এখানেই কিন্তু আছে। ইয়েদুরিয়াপ্পা ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী, তাঁর ইচ্ছের বিরুদ্ধে তাঁকে সরানো হল, বাসবরাজ বোম্মাইকে বসানো হল, কিন্তু তিনি চেয়েছিলেন এবারের নির্বাচনে তাঁর পুত্র বিজয়েন্দ্রকে মুখ্যমন্ত্রী পদের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হবে, তাঁর সমর্থকদের ঢালাও টিকিট দেওয়া হবে, কিন্তু সেসব হয়নি। কাজেই ইয়েদুরিয়াপ্পা চুপ থাকলেও রাজ্যের বিভিন্ন অংশে তাঁর সমর্থকরা, বিজেপি নেতারা বিদ্রোহ ঘোষণা করছেন। কেউ জানিয়ে দিচ্ছেন রাজনৈতিক সন্ন্যাসের কথা, কেউ আবার টিকিট না পেয়ে নির্বাচনে নির্দল প্রার্থী হিসেবে দাঁড়াবেন, জানিয়ে দিয়েছেন। গোদের ওপর বিষফোঁড়া হয়েছে দল ভাঙানো, গতবার কংগ্রেস বিধায়কদের ভাঙিয়ে দলে এনে সরকার তৈরি হয়েছিল, এবার তাদের টিকিট দিতে হচ্ছে। কিন্তু সেসব আসনে তো বিজেপি নেতারা ছিলেন, তাঁরা এবার বিদ্রোহী হচ্ছেন, আবার দলবদলু নেতাদের টিকিট না দিলে সেখানে আরেক ধরনের বিদ্রোহ দেখা যাচ্ছে। ফলে কংগ্রেস তো বটেই, এমনকী দেবেগৌড়ার জেডিএস-ও যখন প্রার্থী তালিকা স্থির করে ফেলেছে, তখন বিজেপির ফাইনাল প্রার্থী তালিকা বের হল না। পার্টি উইথ আ ডিফারেন্স বিজেপি দলের কোন্দল থামাতে, বিদ্রোহ থামাতে নাকানি চোবানি খাচ্ছে। 

আরও পড়ুন: Fourth Pillar | আরএসএস–বিজেপির নেতৃত্বে দেশজুড়ে ঘৃণা ছড়ানো হচ্ছে  

এমনিতেই কর্নাটকে পিছিয়ে থেকেই খেলা শুরু করেছে বিজেপি, গতবারের দল ভাঙিয়ে সরকার হয়েছে বইকী। কিন্তু বাসবরাজ বোম্মাই আসার পর থেকে লাগাতা করাপশন ইস্যুতে বারবার বিদ্ধ হয়েছে সরকার। একটা এমন কোনও কাজের কথা বোলতে পারবে না যা বলে ভোট চাওয়া যায়, চরম অ্যান্টি ইনকমব্যান্সি কাজ করছে সেখানে। সবমিলিয়ে ব্যাকফুটে বিজেপি। ঠিক এরকম একটা ছবি আমরা দেখেছিলাম হিমাচলপ্রদেশে। কাজেই সেখানে ভরসা নম্বর এক) মোদিজি, ভরসা নম্বর দুই) তীব্র মেরুকরণ। দুটোই চালু আছে। কিন্তু সেখানেও সমস্যা। প্রথম সমস্যা হল ট্রাম্প কার্ড তো ট্রাম্প কার্ড, তা যদি রণে বনে জলে জঙ্গলে সর্বত্র ব্যবহার করা হয়, তাহলে তা ভোঁতা হতে বাধ্য। এক্ষেত্রেও মোদিজির অতিব্যবহার একটা ক্লান্তি তো আনছেই। দুই হল, তীব্র মেরুকরণের এক শিক্ষা বিজেপি এই বাংলা থেকেই পেয়েছে। মুসলিম ভোট সব এক জায়গায় জমা হওয়ার ফলে সবচেয়ে বড় বিজেপি বিরোধী দলের বিরাট লাভ হয়েছে। এই মুসলিম ভোটের একটা বড় অংশ যদি বাম বা কংগ্রেসের ঝোলায় যেত, তাহলে ফলাফল উল্টে যেত বলছি না কিন্তু খানিক ফেরবদল তো হতই। কর্নাটকেও তাই, বিজেপি বিরোধী দুটো দল, যদিও জেডিএস এক বিশেষ অঞ্চলেই সীমাবদ্ধ তাহলেও জেডিএস-এর থেকে মুসলিম ভোট সরে তো বিজেপিতে যাবে না, কংগ্রেসে যাবে কাজেই কংগ্রেসের লাভ। এরপর আছে খাল কেটে কুমির ডেকে আনা, যে মগরমচ্ছ মোদিজি ধরেছিলেন, এ ততটা নিরামিষ নয়। প্রথম কুমির হল মহারাষ্ট্র-কর্নাটক এলাকা, মানে যে এলাকা মহারাষ্ট্র আর কর্নাটকের লাগোয়া, সেই অঞ্চলে মহারাষ্ট্র শিন্ডের সরকার যে মারাঠি মানুষরা বসবাস করেন, তাঁদের হেলথ স্কিমের আওতায় এনেছে। মহারাষ্ট্র সরকারের দাবি, ওই অঞ্চল আসলে মহারাষ্ট্রের। এরফলে কর্নাটকের মানুষজন খাপ্পা। এদিকে মহারাষ্ট্রে শিন্ডে আর বিজেপির সরকার, কাজেই এলাকার কন্নডিগারা খেপে লাল। 

অন্য সমস্যাও বিজেপিরই তৈরি। কর্নাটকে নন্দিনী হল আমাদের এখানের মাদার ডেয়ারি, শুধু তাই নয়, তারা দেশের মধ্যে সবথেকে কম দামে দুধ বা দই বিক্রি করে, নন্দিনী চলে কো অপারেটিভের মাধ্যমে। বোম্মাইয়ের বিজেপি সরকার কিছুদিন আগে সিদ্ধান্ত নেয়, নন্দিনীকে আমুলকে সঙ্গে মিশিয়ে দিতে। নন্দিনীর সঙ্গে গুজরাটের আমুলকে খামোখা কেন মেশানোর প্রস্তাব এল তাও পরিষ্কার নয়, কিন্তু আবার সেই কন্নডিগা আভিজাত্যে ঘা পড়েছে। এই দুই ইস্যু খাল কেটে আনা কুমিরের ওপর রাজ্য জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। সবমিলিয়ে এ যাত্রায় বিজেপির কর্নাটক জয় বেশ কঠিন বলেই মনে হচ্ছে। আর ঠিক সেই সময় বিহারের নীতীশ কুমার, সঙ্গে তেজস্বী যাদবকে নিয়ে দিল্লি এলেন। প্রথমে লালুজির সঙ্গে দেখা করলেন, সেই আলোচনার সময় বিস্তর ফোনাফুনি হয়েছে বলেও জানা গেল, তারপর বিহারের মুখ্যমন্ত্রী এবং উপমুখ্যমন্ত্রী গেলেন রাহুল আর সোনিয়ার সঙ্গে দেখা করতে। একান্তে বহুক্ষণ আলোচনা চলল। এরপর সেখান থেকে বেরিয়ে তাঁরা চলে গেলেন আপ নেতা কেজরিওয়ালের সঙ্গে দেখা করতে, সেখানেও দীর্ঘক্ষণ বৈঠক হল। নীতীশ কুমার কী বললেন? বললেন, সব কথা তো বলা যাবে না, তবে এক বিরোধী ঐক্য গড়ে তোলার লক্ষ্যে আমরা একমত, কীভাবে কোন শর্তে সেই ঐক্য হবে তার ফরমুলা এখনও হাতে নেই, কিন্তু তার কাজ চলছে। রাহুল গান্ধী বললেন, আমরা বিরোধী ঐক্য গড়ে তুলতে বদ্ধপরিকর, কমিটেড কথাটা ব্যবহার করলেন। কেজরিওয়াল জানালেন বিজেপির বিরুদ্ধে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে লড়ব, আগ বাড়িয়েই বললেন, নেতৃত্ব ইতাদি নিয়ে বিবেচনার সময় এটা নয়, বিজেপির হাত থেকে দেশকে বাঁচাতে হবে। শোনা গেল, কংগ্রেসের সঙ্গে সম্পর্ক তেমন ভালো নয় যে দলগুলোর তাদের সঙ্গে লিয়াজোঁ মেইনটেন করবেন নীতীশ কুমার। অর্থাৎ তৃণমূল, আপ, তেলঙ্গনার বিআরএস ইত্যাদিদের সঙ্গে সেতুবন্ধনের দায়িত্ব উনিই নিয়েছেন। বামেদের যোগাযোগ আছে কংগ্রেসের সঙ্গে, মহারাষ্ট্রে বা বিহারে মহাজোট আছে, ডিএমকের সমর্থন আছে। 

আপাতত যা খবর তাতে দেশজুড়ে এক বিরাট বিরোধী ঐক্য গড়ে উঠতে চলেছে তেমনটাও নয়। কেবল কিছু নির্বাচনী বোঝাপড়ার ভিত্তিতেই বিরোধীরা একের বিরুদ্ধে এক প্রার্থী দেওয়ার চেষ্টা করবেন। তাঁদের ধারণা ৪২০-৪২৫টা আসনে এটা করা সম্ভব। সমস্যার জায়গাগুলোও চিহ্নিত হয়েছে। গুজরাত একটা সমস্যর জায়গা, যেখানে আপ–কংগ্রেস মুখোমুখি হতেই পারে, কিন্তু জিগনেশ মেওয়ানির মতো গুজরাতের নেতারা একটা নির্বাচনী সমঝোতায় আসতে চান। তেলঙ্গনা একটা সমস্যার জায়গা যেখানে কংগ্রেস এবং বিআরএস কেউই জমি ছাড়ার কথা ভাবছে না। বাংলাতেও একই সমস্যা কংগ্রেসের সঙ্গে যদি বা কোনও সমঝোতা হয়, মানে হাইকমান্ডের চাপে অধীর চৌধুরী নিমরাজি হনও, তাহলেও সিপিএম-এর সঙ্গে তৃণমূলের সমঝোতা অসম্ভব। এছাড়া নীতীশ কুমার নয়, এক শিল্পপতি এবং শরদ পাওয়ার ওড়িশার বিজেডি আর অন্ধ্রপ্রদেশের ওয়াইএসআরসিপি-র সঙ্গে কথা বলায় দায়িত্ব নিয়েছে বলেও জোর গুজব। কিন্তু মোটের ওপরে সলতে পাকানোর কাজে যে গতি এসেছে তা কিন্তু স্পষ্ট। মানে দুটো ঘটনা, এক, কর্নাটক টলমল, দুই, বিরোধী ঐক্য প্রচেষ্টা জোরদার হওয়া শুরু হয়েছে। কিন্তু এ প্রচেষ্টা ঝড় তুলে দেবে যদি বিজেপি কর্নাটকে হারে। আর সে খবর বিজেপির কাছেও আছে। কাজেই তারা তাদের তূণীরের প্রতিটা অস্ত্র ব্যবহার করবে, আগামী ২০-২৫ দিনের মধ্যে বড় রকমের অশান্তির আশঙ্কার কথা বলছেন কংগ্রেস নেতা সিদ্দারামাইয়া। হতেই পারে, আরএসএস–বিজেপির তূণীরের প্রধান অস্ত্রই তো সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, কিন্তু তা দিয়েও এই মুহূর্তের সংকট বিজেপি কাটাতে পারবে বলে মনে হয় না।    

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Iran-Israel | প্র/তিশোধের লাল পতাকা, ৬৫ মিনিটে ফের ৩০০ মি/সা/ইল ছুড়ল ইরান, ত/ছন/ছ ইজরায়েল
00:00
Video thumbnail
BJP | প্রবল ক্ষু/ব্ধ বিজেপি বিধায়করা, বনশলের সামনেই উগরে দিলেন ক্ষো/ভ, তারপর কী হল দেখুন
00:00
Video thumbnail
498A Tea Shop | অভিনব চায়ের দোকান নাম 498A, কেন এরকম নাম? কি এর কাহিনি? দেখুন স্পেশাল রিপোর্ট
00:00
Video thumbnail
বাংলা বলছে (Bangla Bolche) | ইজরায়েল-ইরান ক্ষে/পণা/স্ত্র ল/ড়া/ই, তৃতীয় বিশ্বযু/দ্ধের পদধ্বনি?
00:00
Video thumbnail
Iran-Israel | প্র/তিশোধের লাল পতাকা, ৬৫ মিনিটে ফের ৩০০ মি/সা/ইল ছুড়ল ইরান, ত/ছন/ছ ইজরায়েল
03:42
Video thumbnail
Seat No. 11A | ভ/য়াবহ বিমান দু/র্ঘটনায় বেঁচেছেন দুই সৌভাগ্যবান, সিট নম্বর 11A কতটা পয়া?
02:11
Video thumbnail
Ahmedabad Flight Incident | কেন ঘটল বিমান দু/র্ঘটনা? কী বলছেন চিফ অফ মার্শাল
01:40
Video thumbnail
Bangla Bolche | Anik vs Avro vs Anirban vs Chandan | স্বার্থের রাজনীতিই কি শেষ করবে পৃথিবীকে?
13:50
Video thumbnail
Donald Trump | Israel | ইজরায়েলকে সমর্থন আমেরিকার এবার কী হবে? দেখুন স্পেশাল রিপোর্ট
02:07:26
Video thumbnail
South Africa | ঘুচল চোকার্স তকমা, অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন দক্ষিণ আফ্রিকা
01:35:39