Thursday, June 19, 2025
HomeদেশCPM Canteen | ১২ টাকায় 'মার্কসবাদী মধ্যাহ্নভোজ', বহু স্মৃতির আঁতুড়ঘর সিপিএমের ক্যান্টিন

CPM Canteen | ১২ টাকায় ‘মার্কসবাদী মধ্যাহ্নভোজ’, বহু স্মৃতির আঁতুড়ঘর সিপিএমের ক্যান্টিন

Follow Us :

সময় এখানে থমকে রয়েছে। একেবারে আটপৌরে চেহারা। আধুনিক বিলাসের কোনও উপকরণই নেই এখানে। কিন্তু, রয়েছে এক সুদীর্ঘ ইতিহাস। যেখানে কেউ নেতা নন, উচ্চনীচ, ব্রাহ্মণ-অব্রাহ্মণ-দলিত-ম্লেচ্ছর ভেদাভেদ নেই। সকলেরই এক নাম, এক পরিচয়- কমরেড। নয়াদিল্লির ভাই বীর সিং মার্গের বট, অশত্থ, নিম, পিপুলসহ আরও গাছগাছালিতে ভরা এ কে গোপালন ভবনের ক্যান্টিনে এলেই মিলবে সেই পরিচয়। দ্রব্যমূল্যের এই বাজারেও যে ‘খাবারঘরে’ ঢুকলে মিলবে মাত্র ১২ টাকায় দুপুর ও রাতের খাবার। চাপাটি, সবজি, ডাল, ভাত এবং দই। কমিউনিস্ট পার্টির মূল ভাবধারা ও আদর্শ যেখানে আজও নিঃশ্বাস ফেলে চলেছে সগর্বে।

প্রবীণ নেতা হন বা সর্বক্ষণের কর্মী কিংবা দলের একনিষ্ঠ ‘পদাতিক’ সেনা। দিনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এক টেবিলে বসে উদরপূর্তির রুটি ছিঁড়তে পারবেন মুখোমুখি বসে। কারও জন্য আলাদা কোনও ব্যবস্থা নেই। পলিটব্যুরো সদস্য থেকে ক্যান্টিনের কর্মীও এক টেবিলে বসে খান এখানে। মূল্য মাত্র ১২ টাকাই। খাদ্যতালিকাও এক।

আরও পড়ুন: Vice Chancellor | রাজ্যপালের সিদ্ধান্তে অচলাবস্থা, মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চান প্রাক্তন উপাচার্যরা

সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি এই ক্যান্টিনের নিয়মিত খদ্দের। সদর দফতর গোপালন ভবনের একতলার এই ক্যান্টিনে প্রায় দুপুরে খান তিনি। ইয়েচুরি বলেন, দলের সর্বক্ষণের কর্মী হয়ে দলের সদর দফতরে বসে কাজ করার সময় থেকে এখানেই খেতাম। সে প্রায় ১৯৮৬ সাল থেকে, মনে করে বলেন তিনি। প্রায় ৪০ বছর হতে চলল আমরা বেশ কয়েকজন রোজই এখানে খাই।

একসময় তিন রাজ্যে রাজ করা সিপিএমের এই ক্যান্টিনে তেমন কোনও আধুনিক সাজসরঞ্জামও নেই। থাকার মধ্যে আছে একটা ২৩০ লিটারের ফ্রিজ। ঠান্ডা জলের একটা মেশিন। একটা মিক্সার-গ্রাইন্ডার। দেওয়াল ঘড়ি। ক্যান্টিনে রয়েছে তিনটি খাওয়ার টেবিল। প্রতিটিতে চারটি করে চেয়ার। জানালার ধারে দাঁড়িয়ে খাওয়ার মতো একটা লম্বা পাটাতন। সেখানে কয়েকটা চেয়ার। সিলিং ও দেওয়ালে লাগানো কয়েকটা পাখা। দুটি স্টোভ, কয়েকটি গ্যাস সিলিন্ডার এবং রান্নার সামগ্রী ও স্টিলের থালা-বাসন।

আকর্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, দেওয়ালের একপাশে টাঙানো রয়েছে একটি ছাপানো এ-ফোর সাইজের কাগজ। যাতে চলতি মাসে কে, কত টাকার খেয়েছেন এবং কার, কত টাকা বাকি আছে তা লেখা রয়েছে। যেমন ইয়েচুরির ধার রয়েছে ১৩২ টাকা। পলিটব্যুরো সদস্য এ বিজয়রাঘবের ২৪ টাকা এবং এম এ বেবির ২৫৫ টাকা বাকি পড়ে গিয়েছে। এটাই আমাদের প্রাত্যহিক জীবন, হেসে বললেন ইয়েচুরি। বাস্তবিক এখানে যখন কোনও বৈঠক থাকে এবং আরও অনেকে আসেন তখন আমরা কাজের ফাঁকে এখানে লাইন করে দাঁড়াই। নিজেদের থালা নিজেরা নিই। রেখে দেওয়া খাবার নিজেরাই তুলে নিই। কোনও কোনও সময় যিনি রান্না করেন, তিনি সাহায্য করেন। এটাই এখানকার রীতি।

স্মৃতি রোমন্থন করে এম এ বেবি বলেন, কেরলের প্রথম সিপিএম মুখ্যমন্ত্রী এবং সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত ই এম এস নাম্বুদ্রিপাদের সময় থেকে এই ব্যবস্থা চলে আসছে। কলকাতা থেকে দলের সদর কার্যালয় দিল্লিতে ১৪ অশোক রোডে চলে আসার পরই এই ক্যান্টিন চালু হয়। বেবি বলেন, তখন আমরা ছাত্র রাজনীতি করি। ইয়েচুরি ও অন্য কয়েকজনের সঙ্গে দিল্লির অফিসে বসি। নাম্বুদ্রিপাদ, জ্যোতি বসু সকলেই আসতেন। সকলেই ওখানে একসঙ্গে বসে একই খাবার খেতাম। নিজেদের থালা নিজেরাই ধুয়ে রাখতাম। পি সুন্দরাইয়া ও নাম্বুদ্রিপাদের কাল থেকেই এই ব্যবস্থা চলে আসছে। ক্যান্টিনের সাফাইকর্মী ব্রিজ লালের সঙ্গে এক টেবিলে খেতে খেতে পলিটব্যুরো সদস্য বেবি বললেন, এখানে দুপুরের খাবার খেতে দারুণ লাগে। হেসে বলেন, এটা হল মার্কসবাদী-লেনিনবাদী মধ্যাহ্নভোজ।

এই ক্যান্টিনের আরও একজন খদ্দের হলেন বৃন্দা কারাত। তিনি বলেন, একটা সময় এমপিরাও সংসদের ক্যান্টিন ফেলে এখানে এসে খেতেন। লোভনীয় খাবার না মিললেও পেট ভরা ভাত-ডাল জোটে এখানে। সপ্তাহে দুদিন আমিষ খাবার। সোমবার চিকেন এবং শুক্রবার ডিমের ঝোল। দিনে তিনবার চায়ের ব্যবস্থা আছে। তবে তার রেট সামান্য বেশি। চালু থালি হল ভাত, রুটি, ডাল, সবজি ও দই। 

এখানকার কর্মীর সংখ্যাও নগণ্য। পার্টি অন্তপ্রাণ এই কর্মীরা দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে এসে এখানে পড়ে রয়েছেন। তাঁদের সকলের সঙ্গেই সুসম্পর্ক সুভাষিণী আলি থেকে হান্নান মোল্লার মতো প্রবীণ নেতানেত্রীদেরও। তবে সকলকেই পয়সা খরচ করে খেতে হয়। বেবি জানান, ইয়েচুরি থেকে সাধারণ কর্মী সকলকেই পয়সা দিয়ে খেতে হয় এখানে। তখন না দিলে ধারের খাতায় লিখে রাখা হয়। এই ক্যান্টিনের প্রতি টেবিলেই ছড়িয়ে আছে অজস্র স্মৃতি।

ইয়েচুরি বললেন, একবার বিহারের মুখ্যমন্ত্রী লালুপ্রসাদ যাদব এবং প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী আই কে গুজরালও এসে খেয়েছিলেন এই ক্যান্টিনে। বেবি তো মজা করে একটা গল্পই বলে ফেললেন। তখন পার্টি অফিস ছিল অশোক রোডে। কেরলের প্রাক্তন এক মন্ত্রী তথা এমপি নাম্বুদ্রিপাদের কাছে অভিযোগ জানালেন যে, তাঁকে খুব ছোট ছোট ২ পিস মাংস দেওয়া হয়েছে। তার জবাবে ইএমএসের সুরসিক জবাব ছিল, কমরেডের মাংস খাওয়ার সময় যদি দাঁতই টের না পেল, তাহলে কী হবে? আজ তাঁদের কেউ জীবিত নেই, কিন্তু তাঁদের স্মৃতি আজও সচল এই মার্কসবাদী ক্যান্টিনে।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Weather Update | বঙ্গে শুরু বর্ষার ঝোড়ো ব্যাটিং, সপ্তাহান্তে ভাসবে কোন কোন জেলা?
00:00
Video thumbnail
Alifa Ahmed | By-Election | কালীগঞ্জে ভোট দিয়ে কী বললেন আলিফা?
00:00
Video thumbnail
Kaliganj By-Election | কালীগঞ্জে ভোট চলছে , দেখুন কী অবস্থা
00:00
Video thumbnail
Kaliganj By-Election | কালীগঞ্জে ভোট শুরুতেই এ কি ঘটল …
00:00
Video thumbnail
Ali Khamenei | ইজ্জত কা সওয়াল, ভয়ঙ্কর রূপে খামেনি, ইজরায়েলে এবার তাণ্ডব চালাবে ইরান
00:00
Video thumbnail
Kaliganj By-Election | কালীগঞ্জ বিধানসভা উপনির্বাচন, দেখুন সরাসরি
00:00
Video thumbnail
Iran-Israel | ইরান-ইজরায়েল যু/দ্ধ, কীভাবে এন্ট্রি চিনের? কতটা চাপে নেতানিয়াহু?
00:00
Video thumbnail
Weather Update | বঙ্গে শুরু বর্ষার ঝোড়ো ব্যাটিং, সপ্তাহান্তে ভাসবে কোন কোন জেলা?
02:27
Video thumbnail
Iran-Israel | ইজরায়েলকে সমর্থন ট্রাম্পের ইরানকে সমর্থন পুতিনের, তৃতীয় বিশ্বযু/দ্ধ লেগেই গেল!
03:38:40
Video thumbnail
Vladimir Putin | Donald Trump | এবার ইরানকে খোলাখুলি সমর্থন পুতিনের, এবার কী করবেন ট্রাম্প?
04:04:25