Placeholder canvas

Placeholder canvas
HomeWTCWTC Final Preview | বিশ্বক্রিকেটের রাজদণ্ড ৫২ বছর পর ওয়াদেকার-বংশধরদের অপেক্ষায়  

WTC Final Preview | বিশ্বক্রিকেটের রাজদণ্ড ৫২ বছর পর ওয়াদেকার-বংশধরদের অপেক্ষায়  

Follow Us :

নদীর এপার কহে ছাড়িয়া নিশ্বাস
ওপারে স্বর্গসুখ আমার বিশ্বাস

অন্তত এই কথাটা টেমসের উত্তরে বসবাসকারী মানুষেরা নদীর ওপারের অধিবাসীদের সম্পর্কে বলবে না। ভাববেও না।  

টেমসের উত্তর মানে সেন্ট্রাল লন্ডন। নদীর এপার। যেখানে অবস্থিত ক্রিকেট পৃথিবীর রাজদরবার– লর্ডস। আর ওপার মানে শিল্পাঞ্চল, কৃষ্ণাঙ্গ অধ্যুষিত, তৃতীয় বিশ্বসুলভ ওভাল।

আজ থেকে ছত্রিশ বছর আগে ওভাল টিউব স্টেশনে নেমে প্রথমেই চোখে পড়েছিল একটা জুতো সারাইয়ের দোকান। তার পাশে একটা স্টেশনারি শপ। যেটার দিকে একঝলক তাকালেই বোঝা যায় আমাদের মতো গরিবদের আনাগোনার জন্য তৈরি। জায়গাটার মধ্যেও যেন সাহেবি সাহেবি গন্ধ নেই। বিশালদেহী এক কৃষ্ণাঙ্গ ফুটপাথ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। স্টেশনে উল্টো দিক দিয়ে ট্রেন ধরতে ছুটছে কিছু ভারতীয় মুখ। টিউব স্টেশনটাও ইতিমধ্যে যা সব ঝলমলে নমুনা দেখে ফেলেছি, তার পাশে ম্রিয়মান। যেন কালার গতিময় ভিডিওর পাশে নির্বাক এবং বিবর্ণ ব্ল্যাক আন্ড হোয়াইট।

সাতাশি সালের সেই দুনিয়ায় সেলফি নেই। মোবাইল নেই। ছোট নিকন ক্যামেরা হাতে ছিল। কিন্তু ওভালের বাইরের কোনও ছবি তুলিনি। লন্ডনের যে প্রবীণ পিকচার পোস্টকার্ডগুলো আজও মেট্রো গলির আশেপাশে বিক্রি হয় তার কোথাও ওভাল এলাকার ছবি চোখে পড়েনি। প্রথম দর্শনেই মনে হয়েছিল এই এলাকাটা আমার মধ্যবিত্ত রেস্তকে যতই আশ্বস্ত করুক, কলকাতার পরিচিতদের সেই গা ছমছমে অনুভূতিটা দিতে পারবে না। হ্যাঁ এই যে লন্ডন। দেখো গৌতম কোথায় গেছে!

একই শহরের মায়ের পেটের দু’ভাই কী করে চরিত্রে এত ভিন্ন হতে পারে জানতে চাওয়ায় লর্ডস প্রেস বক্সে কিংবদন্তি ইংরেজ সাংবাদিক জন উডককের মৃদু বকুনি খেয়েছিলাম।” উঠতি ভারতীয় সাংবাদিক, আপনি কি অঞ্চলের পার ক্যাপিটা ইনকাম হিসেব করতে এসেছেন না ক্রিকেট মাঠকে মাঠের মানদন্ডে তুলনাটা করবেন?”

এর চেয়ে খাঁটি কথা হয় না। দ্রুত দু মাঠকে ক্রিকেটীয় দাড়িপাল্লায় ভাগ করতে গিয়ে আবিষ্কার করি, জৌলুসে যতই কম্পার্টমেন্টাল পাক। ওভালের অন্তর্লীন ঐশর্য অনেক বেশি। লর্ডস যদি সেই সময়কার বিলেতের ক্লান্ত, নবতিপর প্রতিচ্ছবি হয় যখন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে সূর্য অস্ত যেত না। তাহলে ওভাল ক্রিকেট মণিমাণিক্যের মহাফেজখানা। ইংরেজদের লুঠ করা কোহিনূর যদি মাঠ থেকে মিনিটকুড়ি মোটরদূরত্বের টাওয়ার অফ লন্ডনে বন্দী থাকে। তাহলে ইংল্যান্ডের প্রাচীনতম ক্রিকেট মাঠে এই সভ্যতার কত সব রেট্রোস্পেক্টিভ।

রোহিত শর্মা জানেন কিনা জানি না। কিন্তু ছোটবেলা থেকে যাদের ক্রিকেট একাডেমিতে বাধ্যতামূলক ভাবে বাপঠাকুর্দার ইতিহাস পড়তে হয় সেই প্যাট কামিন্স অবশ্যই জানবেন শতাব্দীপ্রাচীন মাঠের মাহাত্ম্য।

* অ্যাসেজ সিরিজ জন্মেছে এখানে
* হাটনের ৩৬৪ এখানে
* গাভাসকরের ২২১ এখানে
* ব্র্যাডম্যানের শেষ ইনিংসের ঐতিহাসিক শূন্য এখানে
* ওরেলের শেষ টেস্ট এখানে
* ভারতের প্রথম ইংরেজ-জয় এখানে
* ডগলাস জার্ডিনের ঘরের মাঠ
* বেডসার ভাইদের লীলাক্ষেত্র
* স্যার জ্যাক হব্স—-ব্র্যাডম্যানের আগের ব্র্যাডম্যানের মাঠ

গত তিরিশ-চল্লিশ বছরে মাঠটার এত বিভিন্ন ধর্মী সংস্কার হয়েছে যে তার সাবেকি ইন্টিরিয়ার ডেকরেশন যেমন প্রাচীন ব্রাহ্ম সংগীত মুখী উপাসনা গৃহ ছিল। সেটায় কখনও যেন ৱ্যাপের প্রলেপ পড়েছে। কখনও যেন রেগে হয়েছে। হয়ে একটা দোআশলা ব্যাপার দাঁড়িয়েছে। যেখানে ঐতিহ্যপূর্ণ সেই ওভাল ব্যালকনি যেখানে ওয়াদেকরদের একাত্তরের জয়ের ছবি এখনো ধরা, সেটা উধাও। প্যাভিলিয়নের দিকে দাঁড়ালে উল্টোদিকে মাঝেমধ্যে ধোঁয়া ভেসে আসে। ওটা স্থানীয় কারখানার।

প্রতীকীও যে এটা হ্যারডস বা মার্ক এন্ড স্পেনসার নয়। আলটুসি  শপিং পৃথিবী নয়। খেটে খাওয়া মজদুরের শিল্পাঞ্চল। বাইরে থেকে যাই মনে হোক এটা ফেরারি-পোর্সের নয়। ইনিংসের শুরুর দিকে বরং ব্ল্যাক ক্যাব আর রেসিং সাইকেলের। দুপুরে ওভাল ওয়েদার জানতে চাওয়ায় এক সাংবাদিক মাঠ  থেকে করা ভিডিও কলে আকাশের অবস্থা দেখালেন আর বললেন বেশ ঠান্ডা। জোর হাওয়া দিচ্ছে। ওয়েদার রিপোর্ট অনুযায়ী টেস্টের দ্বিতীয়-তৃতীয় দিন আরও ঠান্ডা বাড়বে। আকাশ নাকি আরো মেঘলা হবে। ওভালে একাধিক টেস্ট কভার করেছি যেখানে ম্যাচ চলাকালীন পুরুলিয়ার গরম থেকেছে। আর উইকেট জেগে ওঠার জন্য মনে হয়েছে অ্যালার্ম বেল লাগবে। কিন্তু ঠান্ডায় চোবানো ওভাল সম্পূর্ণ অন্য  অভিজ্ঞতা।

ঠান্ডার ওভালে কারা এগিয়ে থেকে শুরু করছে? অবশ্যই ডনের দেশ। স্ট্যাটাস দেখাচ্ছে মিচেল স্টার্ক এদেশে ৯ টেস্টে ৩৩ উইকেট নিয়েছেন। প্যাট কামিন্স তো আরও এগিয়ে। ৫ টেস্টে ২৯ উইকেট। টেস্টপিছু প্রায় ছয়। সেখানে প্রতিদ্বন্দ্বী পেস বোলিং ক্যাপ্টেন মহম্মদ শামি সাহেবদের দেশে ১৩ টেস্টে ৩৮ উইকেট। টেস্ট পিছু তিনও নয়। বোঝা গেল ফাস্ট বয় আর ক্লাসের মাঝারি ছাত্রের মতো তফাৎ। দাঁড়ান দুশ্চিন্তার ক্লিপ শেষ হয়নি। ভারতীয় মিডল অর্ডারে শেষ তিনবছর ধরে রানের এমনি খরা যে ডিসেম্বর’২০ থেকে একেকজনের গড় দেখছিলাম। পূজারা ৩০.৫৫। কোহলি ৩১.৭৮। রাহানে ২৪.২৬। সাম্প্রতিক ফর্মে কারা নির্ভরযোগ্য ছিলেন জানেন? শ্রেয়স আইয়ার ৪৪। ঋষভ পন্থ ৪৭।

শুভমন গিল অবশ্যই বিরাট আশা। এই টেস্টে যদি রান করে দিতে পারেন বিশ্বক্রিকেটের প্রকৃত কুলীন সমাজে নতুন কোহিনুর হিসেবে শোরগোল ফেলে দেবেন। বিশ্বক্রিকেট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনাল দু’বছর আগে তাঁকে সমাদর না করে ২৮ ও ৮ রানে ফিরিয়েছিল। অস্ট্রেলিয়া জানে রোহিত শর্মা জড়োসড়ো। অনিশ্চিত। জানে ইংল্যান্ডে বিরাটকে কোন লাইনে বল করতে হবে? তাহলে আর টিমের সঙ্গে থাকা আইটি বিশেষজ্ঞ আর স্রেফ ডব্লিউটিসি-র জন্য যুক্ত হওয়া আন্ডি ফ্লাওয়ারের কাজটা কী? খুব সিম্পল। হোটেলের ঘরে পরের পর ব্ল্যাক কফির অর্ডার দিতে দিতে গিলের মুভমেন্টের ওপর ল্যাপটপে ঝুঁকে পড়া। গিল তিনি কী করতে পারেন? সেটাও সিম্পল। ব্রিসবেনের অমর ২০২১ টেস্টের সেকেন্ড ইনিংসে নিজের দুর্দান্ত সেই ৯১ রানের ভিডিও বারবার ইউটিউবে দেখতে পারেন। আর সেখান থেকে শক্তির খোঁজ নিতে পারেন যে তোদের কিনা তোদের নিজের দেশে মেরে এসেছি তো ওভাল কী! যদিও সন্দেহাতীতভাবে ওভালের ঠান্ডা হাওয়া তাঁর জন্য গাব্বার বাউন্সের চেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ নিয়ে অপেক্ষা করবে।

রোহিত শর্মার প্র্যাকটিসে পাওয়া বুড়ো আঙুলের চোট শুনলাম আশংকাজনক নয় এবং তিনি খেলবেন। ধরা যাক এমন পরিস্থিতি যে আঙ্গুল রাতে ফুলে গেল এবং বুধবার সকালে তাঁকে অনিশ্চিত লাগছে। হবে না। তবু আগাম প্ল্যান বি ভেবে রাখতে দোষ কী? এখানেই জিজ্ঞাসা প্ল্যান বি কী? মানে টিম ইন্ডিয়ার ভাইস ক্যাপ্টেন কে? দরকার পড়লে কাকে ব্লেজার পরে মাঠের মাঝখানে যেতে হবে? কোহলি আবার? জাদেজা? রাহানে? কে? দ্রাবিড় বা জয় শাহ ছাড়া কেউ জানে বলে মনে হয় না।

মেঘলা আবহাওয়ায় দুই স্পিনার খেলানোর মডেল বদলাবে ভারত? সেখানেও সমস্যা। অস্ট্রেলিয়ার পাঁচ বাঁ হাতি। আর বাঁ হাতিদের বিরুদ্ধে অশ্বিনের মতো সফল বোলার টেস্ট ক্রিকেটের প্রায় দেড়শো বছরের ইতিহাসে হয়নি। তাঁর মোট ৪৭৪ উইকেটের মধ্যে ২৪১ উইকেট বাঁ হাতিদের বিরুদ্ধে। শেষ অস্ট্রেলিয়া সিরিজ জ্বলন্ত প্রমাণ। যেখানে তাঁর ২৫ উইকেটের ১৫ লেফট্ হ্যান্ডার। কী করে এই লোককে বসাবেন? বিশেষ করে যখন আপনার  কিপার ব্যাট করে না। যেখানে আপনার সেরা কিপার-ব্যাটসম্যানকে আপনি স্রেফ জেদের বশে কলকাতার সাউথ  সিটি আপার্টমেন্টে খামোকা বসিয়ে রেখেছেন। আর সে-ও আপনাকে সাহায্য করে সবসময় নীরব থেকে যায়।

যা হোক, পরিবেশ ও পরিস্থিতি বিরুদ্ধে। সামান্য হলেও এডভ্যান্টেজ অস্ট্রেলিয়া? কেন হবে? ৫২ বছর আগের ওভালেও তো কাগজেপত্রে এমনি পিছিয়ে ছিল ভারত। রে ইলিংওয়ার্থরা সেবার অঘোষিত বিশ্বসেরা। অঙ্ক তো এমাঠে কাজ করেনি। এবারই বা বিশ্বক্রিকেটের রাজদণ্ড প্রদান অনুষ্ঠানে করবে কেন?

মনে রাখতে হবে ওভালের অনতিদূরে যিনি থাকতেন। যাঁকে ধরা হয়েছে টেমসের এপারে নেভিল  কার্ডাসের উপযুক্ত উত্তর। তিনি তো ওয়াদেকারদের জয়ের সময় এখানেই ছিলেন। শচীনের আবির্ভাবের বছরে ওভাল থেকে মিনিট পনেরো দূরের ব্রিক্সটনের বাড়িতে মারা যান। ইতিহাসবিদ, সাংবাদিক, কমুনিস্ট। সিএলআর জেমস কী লিখতেন ম্যাচ প্রিভিউতে? আন্দাজ করতে ক্ষতি কী!

তারা ক্রিকেটের কী বোঝে যারা শুধুই ক্রিকেটস্ট্যাটস বোঝে!

RELATED ARTICLES

Most Popular