রাণীগঞ্জ: পিতলের রথে এবারও হাজার ভক্ত দড়িতে টান দিয়ে নতুন রাজবাড়ি থেকে রথকে নিয়ে গেল পুরনো রাজবাড়িতে। আর এই রথ টানাকে ঘিরে ভক্তদের উন্মাদনা ছিল চোখে পড়ার মতো। জানা গিয়েছে, রাণীগঞ্জের দীর্ঘ প্রাচীন এই পিতলের রথের মেলা দেখতে দূর দূরান্ত থেকে বহু মানুষজনের সমাগম ঘটে এই মেলায়। এই রথের মেলা প্রসঙ্গে জানা যায়, পিতলের এই রথ এবার ৯৯ তম বছরে পড়ল। প্রাচীনকালে সিয়ারশোল রাজ পরিবারের এই রথ নিয়ে যেসব কথা উঠে আসে, তা অনেকটাই এরকম।
১৯২৫ সালের আগে পর্যন্ত পুরীর জগন্নাথ দেবের রথের আদলে কাঠের রথ, পুরনো রাজবাড়ি থেকে নতুন রাজবাড়ি পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হত। পরে সেই রথ উৎসব শেষে রাজ পরিবারের একটি হল ঘরে রাখা হত। পরবর্তীতে সিয়ারশোল রাজ পরিবারের সেই রথ, কোনও কারণে আগুন লেগে পুড়ে যাওয়ায়, তারপরই সিয়ারসোলের রাজ পরিবারের সদস্য প্রমথনাথ মালিয়া, কলকাতার চিৎপুরের, প্রসাদ চন্দ্র দাসকে দিয়ে পেতলের রথ তৈরি করান। যে রথের চারপাশে রামায়ণ-মহাভারতের বিভিন্ন দেবী, দেবতার, লীলার বিষয়, তথা কৃষ্ণ লীলার, নানান কাহিনী, মূর্তির আদলে তুলে ধরে, তা রথের স্থাপন করা হয়। তবে এই রথে জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রার সঙ্গে চূড়ায় অধিষ্ঠিত হন রাজ পরিবারের কুলো দেবতা, দামোদর চন্দ্র জিউ। আগে এই রথ পুরনো রাজবাড়ি থেকে নতুন রাজবাড়ি নিয়ে আসা হলেও, বিগত কয়েক বছর ধরে সুবিশাল এই রথটিকে, নতুন রাজবাড়ি থেকে পুরনো রাজবাড়ি নিয়ে আসার চল শুরু হয়েছে।
মূলত রক্ষণাবেক্ষণের জন্য, ও রথের মধ্যে থাকা মূল্যবান মূর্তি যাতে কেউ চুরি করে না নিয়ে যায়, সেই বিষয়টি নজরে রেখে, বছর ভর খোলা আকাশের নীচে নতুন রাজবাড়ির সামনে, কড়া নজরদারির মধ্যে রাখা হয় রথটি। পুরীর জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা সময়কাল থেকেই এখানেও এই রথযাত্রার আয়োজন করা হয়। আর এই রথযাত্রা উৎসবকে ঘিরে বসে মেলা। যেখানে প্রাচীন সময়ের চাষ আবাদের জন্য প্রয়োজনের যে সকল সামগ্রী থাকতো, সে সকল সামগ্রী, প্রতিবছর নিয়ম করে এই রথের মেলায় পসরা নিয়ে হাজির হয়। আর তার সঙ্গে বর্তমান সময়ের বিভিন্ন সামগ্রী নিয়ে, মহিলাদের বিভিন্ন প্রসাধনের ও সাজগোজের সামগ্রী, সহ বিভিন্ন গাছের চারা ও আচারের দোকান নজর কাড়ে এই মেলায়।