বাঁকুড়া : অলিতে গলিতে মুখোশধারী হনুমান, জম্বুবান, সুগ্রীব ও বিভীষণ। তাদের নাচে মল্লগড়ে আজও জনপ্রিয় প্রাচীন রাবনকাটা নৃত্য। পুজো শেষ হলেও বিষ্ণুপুরের মল্লগড়ে এখনও উৎসবের আমেজ। পুজো শেষের পরে দ্বাদশী পর্যন্ত চলে এই উৎসব। মল্লরাজাদের রাজত্বের সময় থেকেই বিষ্ণুপুরের অলি গলি রাজপথে এখনও প্রাচীন নিয়ম মেনেই রাবনকাটা নৃত্যের দল আরও কিছু দিন উৎসব করেন। মল্ল রাজাদের আমল থেকে বিষ্ণুপুরে এই রীতি চলে এলেও তার জনপ্রিয়তা আজও ম্লান হয়নি এতটুকুও। আজও এই উৎসব দেখতে ভিড় জমে মল্লগড়ে।
আরও পড়ুন : অলিম্পিক থেকে লকডাউন, রকমারি থিমে সেজেছে বাঁকুড়ার পুজো
মল্লরাজাদের রাজধানী ছিল বিষ্ণুপুর। সেই শহরের সর্বত্রই নানান স্মৃতি জানান দেয় মল্লরাজাদের রাজত্বের কথা। হাজার বছরের প্রাচীন শহর বিষ্ণুপুরে যেমন রয়েছে, তেমন রয়েছে নানান লোকশিল্প সমৃদ্ধ লোকাচার। এমনই এক লোকাচার হল রাবনকাটা নৃত্য। দশমীর দিন থেকে এই নৃত্যের সঙ্গে যুক্ত ৪ জন শিল্পী বিশেষ এক ধরণের পোষাক পরে যথাক্রমে হনুমান, বিভীষণ, সুগ্রীব ও জম্বুবান সাজেন। এই নৃত্যদলে থাকে আরও কয়েকজন বাজনদার। বাজনদারদের কাঁধে থাকে লাগড়ে ও পিটেরা নামের বিশেষ প্রাচীন বাদ্যযন্ত্র। এই লাগড়ে ও পিটেরার তালে তালে বিষ্ণুপুরের অলিতে গলিতে ঘুরে হনুমান, বিভীষণ, সুগ্রীব ও জম্বুবানের মত সাজ পোশাক পরে নাচ দেখান ৪ জন নৃত্যশিল্পী। গবেষকদের অনেকে বলেন রাম রাবণের যুদ্ধে রাবণ নিহত হওয়ার আনন্দে রাম শিবিরে উচ্ছাসের ধারাই আসলে পরবর্তীতে রাবনকাটা নৃত্যের জন্ম দিয়েছিল। মল্ল রাজারা পুজোর পরও মল্ল রাজধানীতে আরও কয়েকদিন উৎসবের রেশ ধরে রাখতে এই নৃত্য প্রদর্শনের আয়োজন করতেন। সেই থেকে আজও নিয়ম মেনে মল্লরাজাদের সময়কালের প্রাচীন এই লোকনৃত্য স্বমহিমায় বিরাজ করছে বিষ্ণুপুরে। পুজো শেষের পরে দশমী থেকে দ্বাদশী পর্যন্ত বিষ্ণুপুরের বিভিন্ন জায়গায় জমে ওঠে রাবনকাটা নৃত্য। পুজো শেষের পরে এই লোকনৃত্য আরও ৩ দিন হয়, যার ফলে ৩ দিনের জন্যে হলেও থেকে যায় পুজোর রেশ।