Friday, July 4, 2025
HomeScrollAajke | বাংলার রাজনীতিতে পরিবর্তন আনতে পারবেন শমীক ভট্টাচার্য?
Aajke

Aajke | বাংলার রাজনীতিতে পরিবর্তন আনতে পারবেন শমীক ভট্টাচার্য?

পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি বারবার আশার আলো দেখে আবার ধাক্কা খেয়ে মাটিতে পড়ে যায়

Follow Us :

শমীক ভট্টাচার্যের বিজেপির রাজ্য সভাপতি হিসেবে আবির্ভাব। হ্যাঁ আবির্ভাবই বলব, কারণ গোলমেলে সময়ে কেউ হাজির হয় না, জন্ম নেয় না, আবির্ভূত হন। কিন্তু সেটা একদিকে যতটা তাৎপর্যপূর্ণ, অন্যদিকে ততটাই প্রতীকী, প্রতীকী এক গোলযোগে জর্জরিত, বিভাজিত, জনভিত্তিহীন দলের নতুন তাস খেলার। পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি বারবার আশার আলো দেখে আবার ধাক্কা খেয়ে মাটিতে পড়ে যায়। ২০১৯ লোকসভায় পাওয়া ১৮টি আসনের ঘোড়ায় চেপে ২০২১ বিধানসভা দখলের স্বপ্ন দেখেছিল বিজেপি। কিন্তু বাস্তবে তারা গড়িয়ে গিয়েছিল মাটিতে, ২০০-র বেশি আসনের দাবিদার দলটা ঠেকল ৭৭-তে। আর সেখান থেকে এখন আরও খারাপ জায়গায়। সেই ভাঙনের দায় নিতে হয়নি কোনও শীর্ষ নেতাকে, বরং দোষ চাপানো হয়েছে পরস্পরের কাঁধে। এই অন্তর্দ্বন্দ্বই আজ বিজেপির বাংলার রাজনীতিতে ব্যর্থতার মূল কারণ। হাফ প্যান্ট আরএসএস কর্মী আজ রাজ্য সভাপতির চেয়ারে, কম কথা নয়, যখন হাফ প্যান্ট অনেকেই হুউউউউস করে বছর দুইয়ের মধ্যেই দলের দু’ নম্বরে চলে যান। তো শমীক ভট্টাচার্যের রাজনীতি শুরু হয় খুবই ছোট বয়সে, ১৯৭৪ সাল নাগাদ হাওড়ার মন্দিরতলা এলাকায় রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবকের শাখা থেকে। কলকাতার ছেলে, কিন্তু মনেপ্রাণে ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ ভাবনার একপ্রাণ বিশ্বাসী। ছোটবেলায় হাফ প্যান্ট পরে শাখায় যাওয়া, বুদ্ধিভিত্তিক আলোচনা আর শৃঙ্খলা, সব মিলিয়ে আরএসএস-এর ঘরানায় তাঁর রাজনীতি বেড়ে ওঠে। বিজেপি তখনও বাংলায় পাততাড়ি পাতেনি, কিন্তু শমীক ছিলেন দলের সৈনিক। শিক্ষিত, মার্জিত, হিন্দি-ইংরেজি-বাংলা মিলিয়ে চমৎকার বক্তা হিসেবে তিনি প্রথমে সংবাদমাধ্যমে বিজেপির মুখ হয়ে উঠলেন। পরে ২০১৪ সালে বিধাননগর কেন্দ্র থেকে বিধায়ক হন। এই জয় ছিল বিজেপির কাছে অপ্রত্যাশিত এক পাওনা। রাজ্যসভায় প্রতিনিধি হিসেবেও পাঠানো হয়েছে তাঁকে। কিন্তু সংগঠনে বড় কোনও জায়গায় তিনি ছিলেন না, কিন্তু গুরুত্ব বাড়ছিল, সংসদে শমীকের বক্তৃতা চোখ কেড়েছে। সেই তিনি আজ রাজ্য সভাপতি। খুউউব ক্রুশিয়াল এক সময়ে, কারণ এবারে খুব ভালো কিছু না করতে পারলে রাজনীতির স্বাভাবিক নিয়মেই বিরোধী রাজনৈতিক পরিসরে বামেরা উঠে আসবেই। সেটাই বিষয় আজকে, বাংলার রাজনীতিতে পরিবর্তন আনতে পারবেন শমীক ভট্টাচার্য?

শমীক ভট্টাচার্যের হাতে দলের দায়িত্ব আর ২০২৬-এর নির্বাচনের ঢাকে কাঠি পড়বে আনুষ্ঠানিকভাবে পুজোর পর থেকেই। কিন্তু সমস্যা অনেক, প্রথম সমস্যা, দলীয় কোন্দল। শুভেন্দু অধিকারী তৃণমূল থেকে আসার পর থেকেই বিজেপির বাংলার ঘরটা হয়ে উঠেছে গুমোট। দিলীপ ঘোষ ছিলেন স্বভাবতই প্রান্তিক কিন্তু গলা তোলা নেতাদের একজন, বহু বিজেপি কর্মীর চোখে তিনিই ছিলেন ‘অরিজিনাল’। সুকান্ত মজুমদার আসেন দলের হাইকম্যান্ডের পছন্দে, কিন্তু রুট লেভেলে তিনি আদৌ প্রতিষ্ঠিত ছিলেন না। শুভেন্দু, অন্যদিকে, তাঁর লোকবল ও প্রশাসনিক যোগাযোগ নিয়ে বিজেপির অন্যতম বড় মুখ হয়ে ওঠেন। কিন্তু দিলীপ বা সুকান্ত, কাউকেই তিনি অ্যাকসেপ্টই করেননি, বরং নিজের ঘরানা তৈরি করতে গিয়ে দলে ফাটল ধরিয়েছেন, মস্ত ফাটল, আদি বিজেপি, নব্য বিজেপির ফাটল। ফলে তিন ধারা, দিলীপ, সুকান্ত, শুভেন্দু, চলতে চলতে এমন জায়গায় পৌঁছয়, যেখানে দল নিজের অন্দরেই একে অপরকে টেনে নামাতে ব্যস্ত। পুরুলিয়ার জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো বা অগ্নিমিত্রা পল, যাঁরা শুভেন্দুর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ছিলেন, তাঁদের কপালে শিকে ছিঁড়ল না, তাঁদের কেউ হলে বাজি ফাটতো কাঁথিতে, তাই এটাও পরিষ্কার, শুভেন্দুর আধিপত্য খর্ব করার চেষ্টাতেই এই বদল। আর সেই খেয়োখেয়িতে শমীক আসলে আপসের মুখ। এক অসম্ভব টানাপোড়েনের আবহে বিজেপি হাইকম্যান্ড শমীক ভট্টাচার্যকে রাজ্য সভাপতির পদে বসিয়ে এমন কাউকে বেছে নিয়েছে, যিনি আপাত নিরপেক্ষ, কাউকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ করেন না, আবার মিডিয়ায় গ্রহণযোগ্য, মার্জিত, শিক্ষিত, এবং ‘হিন্দুত্ব’ অ্যাজেন্ডার সঙ্গে রাশভারি ভাবমূর্তি সামঞ্জস্যপূর্ণ। দলের একাংশ যাঁকে ‘হাইব্রিড নেতা’ বললেও, হাইকম্যান্ডের কাছে তিনি আপসের সেরা মুখ।

আরও পড়ুন: Aajke | বিজেপির মুখে আইন শৃঙ্খলা নিয়ে প্রতিবাদ? হাসিও পায়, বমিও পায়

তবে প্রশ্ন হল, তাঁকে এনে কি আদৌ বিজেপির সমস্যার সমাধান হবে? শমীক ভট্টাচার্য সংগঠন পরিচালনায় কতটা দক্ষ? জানা নেই এবং টাইম টেস্টেড নন, প্রমাণিত নন। মাঠে-ময়দানে তাঁর উপস্থিতি এখনও সীমিত। কলকাতা-কেন্দ্রিক মিডিয়ায় যতটা জায়গা পেয়েছেন, গ্রামবাংলায় তাঁর নামই বা কতজন জানে? বিশেষ করে, যেভাবে মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে বিজেপি একেবারেই জায়গা করতে পারছে না, সেগুলো সামাল দেওয়ার মতো সংগঠনগত কৌশল তাঁর হাতে কতটা আছে, তা আমাদের জানা নেই। দু’ নম্বর সমস্যা হল, মুসলিম ভোট ও শুভেন্দু-সমস্যা। পশ্চিমবঙ্গে প্রায় ৩৩ শতাংশ মুসলমান। তাঁদের এক বড় অংশ এখনও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পিছনে রয়েছেন, এবং বিজেপিকে একেবারে বিশ্বাস করেন না। উলটে শুভেন্দুর ‘জয় শ্রীরাম’ নামেই বিভাজন, ও এনআরসি-সিএএ নিয়ে লাগাতার হুমকি মুসলিমদের আরও বেশি করে তৃণমূলের দিকে ঠেলে দিয়েছে। বিজেপির তরফে কোনও ‘মুসলিম-বন্ধু’ ভাবমূর্তি গড়ে তোলার চেষ্টা করার প্রশ্নই নেই। ওদিকে রাজ্য রাজনীতিতে শুভেন্দু অধিকারী— তিনি নিজেই এখনও বঙ্গবাসীর একটা বড় অংশের কাছে বিশ্বাসযোগ্য নন। মমতার বিকল্প হিসাবে তাঁর গ্রহণযোগ্যতার কথা উঠলে লোকে হাসে। হতেই পারে দলীয়ভাবে তিনি নিজের বৃত্তে জনপ্রিয়, কিন্তু পুরো রাজ্যে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা এখনও নেই। এই কোন্দলকে, শুভেন্দুর এই অহংকে শমীক ভট্টাচার্য সামলাবেনই বা কী করে? আমরা আমাদের দর্শকদের প্রশ্ন করেছিলাম, সুকান্ত মজুমদারের বদলে এবারে বিজেপি রাজ্য সভাপতি হলেন শমীক ভট্টাচার্য, তিনি কি বদলাতে পারবেন বিজেপির দিন, তাঁর নেতৃত্বে কি পালাবদল সম্ভব? শুনুন মানুষজন কী বলেছেন।

শমীক যখন দায়িত্বে এলেন তখন সবথেকে বড় সমস্যা, নিচুতলার কর্মী হারিয়ে গিয়েছে, বসে গেছে। বিজেপির নিচুতলার সংগঠন আজ প্রায় ভেঙে পড়েছে। যারা ২০১৯-২১-র মধ্যে উঠে এসেছিল, তাদের অনেকেই আজ দলে নেই। দলীয় কর্মীদের মধ্যে হতাশা, অভিমান, অবহেলার অভিযোগ, মনোনয়ন ও পদ বণ্টনে পক্ষপাতিত্ব, এই সব মিলিয়ে এখন বিজেপি অনেকটাই ‘দলছুট’ মনে হচ্ছে। শমীক ভট্টাচার্য নিঃসন্দেহে মার্জিত, শৃঙ্খলাবদ্ধ, শিক্ষিত নেতা। কিন্তু তাঁর নিয়োগ আসলে এক আপৎকালীন সিদ্ধান্ত। দিলীপ, সুকান্ত, শুভেন্দুর ক্ষমতার টানাপোড়েন সামাল দিতে এমন একজন নেতার প্রয়োজন ছিল যিনি বিতর্ক এড়িয়ে চলতে পারেন। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির সমস্যাটা এতটাই গভীর, দলীয় বিভাজন, গ্রহণযোগ্য নেতার অভাব, নিচুতলার বিস্ফোরণ, মুসলিম ভোটের দুর্ভেদ্য দেওয়াল, যে কেবল একজন সভাপতি বদলালেই তা কাটবে না। শমীক ভট্টাচার্য সেই ভাঙা নৌকো নিয়ে কতদূর যেতে পারবেন, তা ভবিষ্যতের হাতেই ছেড়ে দেওয়া যাক। কিন্তু নতুন কেউ দায়িত্ব নিলে তাঁকে অভিনন্দন তো জানাতেই হয়। অভিনন্দন শমীক ভট্টাচার্য।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Kasba Incident | কসবা কাণ্ডে মনোজিতের হু/মকির অডিও ক্লিপ কলকাতা টিভির হাতে, দেখুন EXCLUSIVE রিপোর্ট
49:41
Video thumbnail
India-Pakistan | ভারত-পাক সম্পর্কে U-টার্ন, কেন? জল্পনা তুঙ্গে, দেখুন বড় আপডেট
44:00
Video thumbnail
Rahul Gandhi | শুনানি শুরু ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলার, কতটা চাপে সোনিয়া-রাহুল? দেখুন বড় আপডেট
32:41
Video thumbnail
Weather Forecast | অতি ভারী বৃষ্টি সঙ্গে ঝোড়ো হওয়ার দাপট! ভাসবে কোন কোন জেলা? দেখুন ওয়েদার আপডেট
02:33:06
Video thumbnail
Mahakumbh 2025 | মহাকুম্ভের মৃ/ত্যুর সরকারি হিসেব ভুয়ো? বিবিসির অন্তর্তদন্তে ফাঁ/স চাঞ্চল্যকর তথ্য
01:11:01
Video thumbnail
Kasba Incident | কসবা কাণ্ডে ধৃত মনোজিতের বিরুদ্ধে তৎকালীন উপাচার্যের চিঠি লালবাজারে
01:08:10
Video thumbnail
Good Morning Kolkata | সকালের গুরুত্বপূর্ণ খবর, দেখুন একনজরে সরাসরি
03:44:55
Video thumbnail
Politics | সুপ্রিম-বাতিলের পরে বন্ড ছাপা হল চুপ করে?
03:37
Video thumbnail
Politics | বিজেপির অস্বস্তি বিহার, ভোটার লিস্ট কবে হবে আর?
04:04
Video thumbnail
Politics | ফড়নবিশ গোলমালে ফের শেষ নেই এর?
04:03

Deprecated: Automatic conversion of false to array is deprecated in /var/www/ktv/wp-content/themes/techinfer-child/functions.php on line 39