অমন যে শিবু-নন্দিতা, হিটের পর হিট ছবি, তাঁরাও তেনাকে নিয়ে ছবি করে তুলে ধরতে পারলেন না। তিনি মানে মিঠুন চক্কোত্তি। ওদিকে দেবের খাদান নাকি রাত দুটোয় হাউসফুল। সে হোক, মিঠুনদার কী হল? আসলে এ রাজ্যে বিজেপির গ্রাফ নামছে হু হু করে, আর সেই সঙ্গে নামছে বিজেপি নেতাদের গ্রাফ, শুভেন্দু অধিকারী মিছিল বা মিটিং করার আগে নিজেই লোকজন গাড়িতে ছোট হাতিতে তুলে দিয়ে তারপর সেখানে যাচ্ছেন। আর ইনি মানে মিঠুনদা তো বিজেপির গোখরো সাপ। এক ছোবলেই ছবি। তো তেনার গ্রাফ যে নামবে সে আর নতুন কী কথা। তাই তিনি এই ক্রিসমাসেও উটির হোটেল না সামলে বাংলাতে এলেন, ছবির প্রোমোশনে। আর কে না জানে রথ দেখা কলা খাওয়া এবং কলা বেচাতে মাস্টার আমাদের মিঠুন চক্কোত্তি। তো তিনি এলেন ছবির প্রোমোশনে এবং সেই তালে বিজেপির কিছু কর্মিসভা ইত্যাদি। তো কিছু অনাপ সনাপ বকওয়াস দিয়ে যদি কাগজের শিরোনামে আসা যায়, সেই চেষ্টাও করলেন। এদিকে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব রাজ্য নেতাদের বলেছেন যে ১ কোটি সদস্য সংখ্যা করতে হবে। কেউ কেউ বলবেন কুঁজোর কি চিত হয়ে শোওয়ার ইচ্ছে করতে নেই। তো ওনাদের ইচ্ছে হয়েছে ওনারা টার্গেট বেঁধে দিয়েছেন। এদিকে বিয়েবাড়ি শ্রাদ্ধবাড়ি অমুকবাড়ি তমুকবাড়ি মায় নকশালবাড়ি ঘুরেও ২৫-৩০ লক্ষের উপরে তোলা যাচ্ছে না। শোনা যাচ্ছে বিরোধী কেউ নয়, এক প্রবীণ বিজেপি নেতা যিনি অপকথা আর অপশব্দের জন্য বিখ্যাত, তিনি বলেছেন জাপানি তেল লাগবে ওই সদস্যসংখ্যা তুলতে। তেমন এক সদস্যসংখ্যা বাড়ানো অভিযানে হাজির হলেন মিঠুন চক্কোত্তি। কিছু একটা বলে কাগজের হেডলাইন তো দখল করতে হবে, তো বললেন লকেট চট্টোপাধ্যায় এবারে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের শিকার হয়েছেন বলেই হেরে গেছেন। কাজেই আলোচনা তো বনতা হ্যায় মিঠুনদা। সেটাই বিষয় আজকে, গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের শিকার লকেট, বললেন গোখরো সাপ মিঠুন চক্কোত্তি।
তিনি মানে আমাদের ডিস্কো ডান্সার মিঠুনদা বিজেপির সদস্যসংখ্যা বাড়াতে মাঠে নামলেন। শমীক ভট্টাচার্য তো বিয়েবাড়িতে গিয়েও সদস্য বাড়াচ্ছেন, বাড়ছে না। শুভেন্দু অধিকারীর জেলাতেও নাকি দিল্লি দূর অস্ত, টার্গেট থেকে যোজনখানেক পিছিয়ে রয়েছেন। সুকান্ত মজুমদারের অবস্থা তুলনামূলকভাবে একটু ভালো। দিলীপ ঘোষ জানিয়েছেন দায়িত্ব দেওয়া হোক, দেখিয়ে দেব। এখন তিনি মাঠের বাইরে, টুয়েলভথ প্লেয়ার। তাই বচাখুচা গ্ল্যামার ভাঙিয়ে যদি কিছু সদস্যসংখ্যা বাড়ে, সেই কাজে মিঠুনদাকে নামানো হয়েছে। তো তিনি এসেই প্রথমেই খোলসা করে দিয়েছেন, ওই ১ কোটি, ওটা আসলে বাড়িয়ে বলা।
সে কী! কেন? আসলে বাড়িয়ে বললে নাকি আসল লক্ষ্যতে পৌঁছতে সুবিধে হবে। তো আসলে কত? ৭৫? ৫০? সেটা অবশ্য খোলসা করে বলেননি। কিন্তু কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ওই এক কোটির ফিগারটা যে ১০০ শতাংশ বাওয়াল, সেটা উনি বুঝিয়েই দিয়েছেন। এবং খেয়াল করে দেখুন পারিবারিক কিছু কথা মাথায় রেখেই উনি আরজি কর ধর্ষণ খুন নিয়ে কোনও কথাই বলেননি কিন্তু মুখ খুলেছেন নির্বাচন নিয়ে, বলা ভালো, নির্বাচনে হার নিয়ে। শনিবার পান্ডুয়ায় দলের সদস্য সংগ্রহ অভিযান গিয়েছিলেন, জানালেন এখানে সদস্য সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা তিন লক্ষ। এখনও পর্যন্ত ৫১ হাজার হয়েছে। সক্রিয় সদস্য সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা তিন হাজার, হয়েছে ৩৬৩ জন। এরপরেই আমাদের মিঠুনদার প্রশ্ন, ‘‘বসের নির্দেশে এসেছি। বসকে কী জবাব দেব?’’ বস মানে? দেশের প্রধানমন্ত্রী। এবং তারপরেই একটা বোমা ফাটালেন, ‘‘আমরা জিততে পারেনি, এর একমাত্র কারণ নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব বা গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। যেটা খুবই দুঃখের খবর। যদি সবাই কাজ করতেন, তা হলে লকেটকে হারতে হত না। এখানে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব কাজ করেছে।’’ নির্বাচনের ফলাফল বার হওয়ার পরেই হাউ হাউ করে কাঁদতে কাঁদতে এই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথা জানিয়েছিলেন লকেট চট্টোপাধ্যায় নিজেই, কিন্তু তার এতদিন পরেও সেই গোষ্ঠীদন্দ্ব যে বহাল আছে তা জানালেন আমাদের মিঠুনদা। শোনা যাচ্ছে শুভেন্দুর ঘুঁটি কাঁচিয়ে মিঠুনদাই হবেন ২০২৬-এর প্রোজেক্টেড মুখ্যমন্ত্রী। সে যদির কথা নদীর ধারেই রেখে মিঠুনদাকে জানাই যে আপনার কি জানা আছে, ওই লকেট দিদিমণির হুগলি লোকসভা কেন্দ্রে ক’টা বিধানসভা আছে? আর ২০২১-এ সেখানে রেজাল্ট কী হয়েছিল? জানা নেই, জানিয়ে দিই, সাতটা বিধানসভার সাতটাতেই জিতেছিল তৃণমূল, কাজেই ২০২৪-এর ভোটের বহু আগে থেকেই জানা ছিল ঘটি উল্টোবে, উল্টেছে। অবশ্য আমাদের ডিস্কো ডান্সার মিঠুন চক্রবর্তীর কাছ থেকে রাজনৈতিক জ্ঞানগম্মি কেউ আশাও করে না। কিন্তু যা বলেছেন সেটাই আমাদের দর্শকদের সামনে নিয়ে গিয়েছিলাম। আমাদের প্রশ্ন ছিল, মিঠুন চক্রবর্তী জানালেন, দলের মধ্যের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জন্যই হেরেছেন লকেট চট্টোপাধ্যায়, এরকম কাঠিবাজি বা গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথা এর আগে দিলীপ ঘোষের মুখেও শুনেছি, তার মানে এই বাংলাতে নিজেদের মধ্যে লড়াই করেই বিজেপি হারছে? নাকি মমতা সরকারের কাজের জন্য তৃণমূল জিতছে? শুনুন মানুষজন কী বলেছেন।
আরও পড়ুন: Aajke | মহিলার কোলে বসে পড়ার জন্য ৬ মাস সাসপেন্ড তন্ময়
ওদিকে হুগলিতে যে তুষার মজুমদারের বিরুদ্ধে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের অভিযোগ, তিনি কিন্তু সাফ কথাটা জানিয়ে দিয়েছেন, আগে একটা নম্বরে মিসড কল দিলেই আপনি বিজেপির সদস্য হয়ে যেতে পারতেন, জানি না সত্যি কিনা শুনেছি ট্রেনের টয়লেটে আমি স্বপ্না যোগাযোগ করুন লিখে ওই নম্বরটা দিয়ে দেওয়া হয়েছিল, তাতে নাকি প্রচুর সদস্য হয়েছিল। সে যাই হোক প্রসেসটা সোজা ছিল, এখন নাকি ওই মোবাইলে সব লিখতে হচ্ছে সেই কারণেই নাকি সদস্যপদ বাড়ছে না। বিজেপির জেলা নেতাদের কেউ কেউ দাবি করছেন ওই মিসড কলের ব্যাপারটা তাঁরা ভীষণ মিস করছেন।