আমার ভাগ্নেকে খাওয়ানোর সময় রোজ জুজু আসছে বলে ভয় দেখানো হত, ও খেয়েও নিত খুব তাড়াতাড়ি। কিছুদিন আগে সে মুখে খাবার না নিয়েই প্রশ্ন করেছে কোন দিক থেকে জুজু আসবে, তার কয়েকদিন পরে জিজ্ঞেস করেছে কখন আসবে। শেষমেশ সপ্তাহখানেক আগে বলেছে আগে জুজু আসুক, তারপর খাব। ব্যস, ওই জুজুবুড়ির খেলা শেষ, এখন অন্য কোনও ফিকির খোঁজা হচ্ছে। তাকে এখন জুজু আসছে বললে সে খিলখিলিয়ে হাসে, আমাল ভয়ে জুজু আসে না, এটাই সে আপাতত বলছে। এরকম হয়, রোজ ভয় দেখালে ভয় কেটে যায়, তারপর সেই ভয় হয়ে ওঠে হাসির খোরাক, তাকে নিয়ে পিওর খিল্লি হয়। রবিবার সকালে সেটাই করলেন মদন মিত্র। সাতসকালে সাজো সাজো রব সিবিআই আসছে। আসছে কেবল নয়, কলকাতা মহানাগরিকের ঘরে গেছে, কিছুক্ষণের মধ্যে খবর সেই সিবিআই-এর আরেক দল মদন মিত্রের বাড়িতে গেছে। তারপরে খবর পাওয়া গেল উত্তর ২৪ পরগনার বিভিন্ন অঞ্চলে প্রাক্তন মিউনিসিপালিটি চেয়ারম্যান বা কিছু আধিকারিকের বাড়িতেও সিবিআই গেছে। চোখে চোখ রাখা দালাল মিডিয়াতে কী উল্লাস। আর কিছুক্ষণ পরেই ববি মদন সব জেলে এবং সাতসকালেই সেই বিজেপির উচ্ছিষ্ট খাওয়া সাংবাদিকেরা গগন ফাটিয়ে বিশ্লেষণও শুরু করে দিল আর ক’দিন টিকবে মমতার মন্ত্রিসভা? মাসখানেক কি টিকবে? দুপুরের পর থেকে খবর আসছিল, আরও আধাসামরিক বাহিনী নাকি আসছে। এটাও ছিল ওই চোখে চোখ রাখনেওয়ালাদের প্রচার। বিকেলে জানা গেল সিবিআই কর্তারা ৫-৬ ঘণ্টা জেরার পরে মদন মিত্রের ঘর থেকে বেরিয়ে আসছেন। খানিক পরে জানা গেল ববি হাকিমের বাড়ি ছেড়েছেন সিবিআই অফিসারেরা। এও জানা গেল যে রাজ্যের প্রত্যেক জায়গা থেকেই সিবিআই অফিসারেরা ফেরত এসেছেন। না, কেউ গ্রেফতার হননি। ববি হাকিম বা মদন মিত্রের বাড়ি থেকে কোনও সিজারেরও খবর নেই। এরপর স্বাভাবিক ছিল ববি হাকিম বা মদন মিত্রের প্রতিক্রিয়া, তা যথারীতি এলও, আর সেটাই আমাদের বিষয় আজকে, সিবিআই তল্লাশির পর মদন মিত্রের প্রতিক্রিয়া সুপার্ব, ১০০-তে ১০০।
ববি হাকিম কলকাতার মহানাগরিক, তিনি ক্ষুব্ধ, তিনি দৃশ্যতই বিরক্তি আর রাগ প্রকাশ করেছেন। ঠিক আছে, স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া। কিন্তু মদন মিত্র বলেছেন, আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল ক’টা বউ? আমি বললাম আমি হাঁটলে পিছনে ৫০ জন গোপিনী হাঁটে, কৃষ্ণের পিছনে যেমন হাঁটত, সেটা আমার দোষ নয়। আমার ক’টা বউ সেটা একটু খোঁজ করলেই জানা যাবে, কিন্তু আমার বিরুদ্ধে ৪৯৮-এর কেস নেই। আমার সব ভার্চুয়াল। আমার ঘুমোতে যেতে রাত হয় সবাই জানে, ভোর ৪টেয় ঘুমোতে গিয়েছিলাম। সিবিআই অফিসারেরা যখন এল, তখন পোশাকও বদল করিনি, ওই বারমুডা পরেই ওদের কথার উত্তর দিয়েছি। বলেছি যে সময়ে এই নিয়োগ ছিল তখন আমি বিধায়ক ছিলাম না, জেলে ছিলাম। সিবিআই-এর যাঁরা এসেছিলেন তাঁরা লিখে দিয়ে গেছেন যে এখানে কিছুই পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুন: ইডি প্রতিষ্ঠা করে দেবে অষ্টম বামফ্রন্ট সরকার
পরিষ্কার খিল্লি। দেশের মানুষের ট্যাক্সের পয়সায় মাইনে পাওয়া কিছু সরকারি অফিসার হ্যাটা হয়ে বাড়ি ফিরলেন। সাংবাদিকদের এসব বলার পরে তিনি চলে যান অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ধরনা মঞ্চে, সেখানে চলে আসেন ববি হাকিমও। এই খিল্লির থেকে ভালো রিঅ্যাকশন আর হতেই পারে না। রোজ রোজ ভয় দেখালে এই রিঅ্যাকশন হতে বাধ্য। আসলে যত নড়বড় করছে বিজেপির ভবিষ্যৎ তত এই ভিজিলেন্স, ইডি, সিবিআইকে দিয়ে ভয় দেখানোর কাজ করছে বিজেপি সরকার। যে সাংবাদিকেরা বিরোধিতা করছে তাদের ধরো, কাউকে কাউকে জেলে পাঠাও, জেরা করো, মনোবল ভাঙো, এটাই লক্ষ্য। এখন দেশ জুড়ে সেটাই করছে বিজেপি। কিন্তু ওই যে রোজ রোজ গব্বরের ভয় দেখালে সেই ভয় কাটে একদিন, জুজুর ভয় কাটে আর এ তো এক সরকার মাত্র। ভয় দেখানোর আর ভয় পাওয়ার একটা সীমা তো থাকবেই। আপনারা মনে করে দেখুন সেই কবে, এই মদন মিত্রকে জেলে পোরা হয়েছিল, লক্ষ লক্ষ টাকার দুর্নীতির কথা বলা হয়েছিল। জেলেই কাটিয়েছেন বছর খানেকের বেশি, কিন্তু সে সব অভিযোগের একটাও প্রমাণ হয়নি, উনি বাইরে এসেছেন। এবং এই ইডি বা সিবিআই যে আদতে এক ভয় দেখানোর যন্ত্র, সেটা উনি কেবল নয়, বিরোধীরা বুঝে ফেলেছেন। আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞেস করেছিলাম, রাজ্য জুড়ে, কলকাতা মহানাগরিকের বাড়িতে, মদন মিত্রের বাড়িতে এই সিবিআই হানা, ইডির অভিযান, এগুলোর কি সত্যিই কোনও ভিত্তি আছে না সবটাই বিরোধীদের ভয় দেখানো, চাপে রাখা? শুনুন মানুষজন কী বলেছেন।
বাঘকে মানুষ ভয় পায় কিন্তু বাঘের চামড়া পরা গর্দভকে ক’দিন ভয় পেলেও সত্যিটা বেরিয়ে এলে তাকে পিটিয়ে গ্রাম ছাড়া করাটাই দস্তুর। দেশজুড়ে এক অলিখিত জরুরি অবস্থা জারি করে, সাংবাদিক থেকে বিরোধী নেতাদের জেলে পুরে মোদি সরকার মানুষকে, প্রতিবাদী মানুষজনকে, বিরোধী দল, নেতা আর কর্মীদের ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে। ওরা এই ভয় দেখানোর খেলায় শুরুর দিকে কিছুটা এগিয়ে থাকলেও দেখুন এখন অনায়াসে মানুষ সেই ভয় দেখানোর যন্ত্রগুলোকে নিয়ে খিল্লি করছে। শেষতম খিল্লিটা হল, এক ইডি অফিসার এক বাড়ির সামনে দাঁড়িয়েই আছেন, কিছুতেই ঢুকছেন না। তো এক ভালো মানুষ এগিয়ে গিয়ে বললেন আরে, আফটার অল আপনি হলেন ইডি, আপনি একটা ঘরে ঢুকতে পারছেন না? ইডি অফিসারটি শেষে জানালেন, এটা ওনারই ঘর, ঘরে ওনার গিন্নি আছে, বলেছে এরপর টাকা উদ্ধার করে লাখ চার পাঁচ না নিয়ে ঢুকলে ঠ্যাং খোঁড়া করে দেব। তো সেই ভালো মানুষটি জিজ্ঞেস করেছিলেন, তাতেই বা অসুবিধে কোথায়? এত কোটি কোটি টাকা উদ্ধার হচ্ছে ওই লাখ পাঁচেক নয়…। আরে দূর মশাই এখন যাদের বাড়িতে যাচ্ছি তাদের বাড়িতে কিছুই নেই। তাহলে যাচ্ছেন কেন? যাচ্ছি কি আর সাধে, ওনার নির্দেশে। উনিটা কে? সে বলা যাবে না। নাম বললে চাকরি যাবে, আর টাকা না নিয়ে ঢুকলে ঠ্যাং যাবে। তাই ঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে আছি। ইডি আর সিবিআই এখন পুরোদস্তুর খিল্লির বিষয়।