৪ জুন লোকসভা নির্বাচনের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন রাজ্যের কিছু বাই ইলেকশন, দুটো রাজ্যের বিধানসভার নির্বাচনেরও ফলাফল বের হয়েছে। লোকসভার সদস্যরা শপথ নিয়েছেন, এনআইএ ইউএপিএ ধারাতে গ্রেফতার করে অসমের জেলে রেখেছিল অমৃতপাল সিং, এক স্বঘোষিত খলিস্তানপন্থীকে, এক ভিন্দ্রেলওয়ালার ভাবশিষ্যকে। তো তিনিও আজ শপথ নিলেন, ওদিকে ওড়িশা বা অন্ধ্র বিধানসভার বিধায়করা শপথ নিয়েছেন, সরকার তৈরি হয়েছে। বাকি রাজ্যের উপনির্বাচনে জেতা বিধায়করা শপথ নিয়ে বিধানসভার আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন। কেবল এই বাংলার দুই আসন ভগবানগোলা আর বরানগরের দুই বিধায়ক এতদিন পরে আজ আইনত বিধায়ক হয়ে উঠতে পারলেন। কেন এই বিলম্ব? এতদিন লাগল কেন? রাজ্যপাল বিধানসভাতে আসেন, বিধায়কদের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান হয়, এ সব অত্যন্ত নিয়মমাফিক স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু আমাদের রাজ্যপাল তো স্বাভাবিক নন, জানা নেই উনিও দাবি করেছেন কি না যে উনিজির মতো উনিও বায়োলজিক্যাল নন, জানি না, সত্যিই জানি না। কিন্তু উনি দাবি করেছেন যে উনি খুব নিয়মনিষ্ঠ তাই যেটা মনে করেন সেটাই করেন। ভাবা যায়, মোদি জমানায় একজন রাজ্যপাল এই কথা বলছেন। না, স্যর আপনার বলার ভুলটা ধরিয়ে দিই। আপনি ঠিক সেটাই করেন যা আপনাকে করতে বলা হয় কিন্তু এবারে সম্ভবত আপনি আপনার প্রভুদের খুশি করার তাগিদেই যা করার আদেশ এসেছিল তারচেয়ে কিছু বেশিই করেছেন এবং বিভিন্ন সমস্যা তৈরি হয়েছে, হচ্ছে। ওনার একগুঁয়েমির জন্য আজ মাসখানেক হয়ে গেল রাজ্যের দুই নির্বাচিত বিধায়ক তাঁদের দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না। উনি গোঁ ধরেছেন রাজভবনেই আসতে হবে। এখন ধীরে ধীরে স্টান্স বদলাচ্ছেন, ভয়ে ভক্তিতে নাকি প্যাঁচে পড়ে জানি না, কিন্তু বদলাচ্ছেন। বিধানসভার স্পিকার যেই বিশেষ অধিবেশনের ডাক দিয়েছেন, ওমনি বুঝেছেন কেলো করেছে, স্টান্স বদলাচ্ছেন, ঠিক তাই আমাদের বিষয় আজকে, বিধায়করা শেষ পর্যন্ত বিধায়ক হলেন।
তিনি চোপড়া যাচ্ছেন, দিল্লি যাচ্ছেন, দিল্লি থেকে ফিরে আবার দিল্লিই যাচ্ছেন, আসলে এক নার্ভাস মানুষ যা করেন তিনি তাই করে চলেছেন। ওদিকে সামহাউ কাঁথির খোকাবাবুও বুঝেছেন এই বোঝা বইবার কোনও মানে নেই, উনি দিল্লিকে জানিয়েছেন, এ বোঝা আমার নামাও বন্ধু নামাও। তো দিল্লি শুনেছে, কিন্তু তাঁরা তো তাঁদের জ্বালা নিয়েই জ্বলছেন, হুল ফুটিয়েছেন রাহুল।
আরও পড়ুন: Aajke | মোদিজি উট নন, তাই কাঁটা বেছেই খান
কিন্তু কাঁথির খোকাবাবু যে ওনার বোঝা বইবেন না বলেছেন সেটা কালো চশমা পরা রাজ্যপাল বুঝেছেন। বুঝেছেন বলেই নার্ভাস। যদি ঘাড়ে এসে মারে থাবা, মানে ওই রাজ্যপালের রক্ষাকবচটি যদি চলে যায় তাহলে বাঘা রে, গুপি রে, আমার যে এমন হবে তাই বা কে জানত? কাজেই তিনি ঠাহর করতে পারছেন না কী করা যায়, কী করিতে হইবে। তো শেষমেশ মান বাঁচাতে তিনি বল ঠেলে দিয়েছেন ডেপুটি স্পিকারের দিকে, বেশ তাহলে আপনিই শপথ পাঠের দায়িত্ব নিন। আলতো করে ডজ দিয়ে পাশ কাটিয়ে বল নিয়ে বেরিয়ে গেছেন ডেপুটি স্পিকার আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, আরে ছি ছি তা কী করে হয়, স্পিকার সাহেব তো কলকাতাতেই, তিনি উপস্থিত থাকতে আমি এ বোঝা বইব কেন? এবং শেষমেশ বিশেষ অধিবেশন, বিধানসভার। শেষ পর্যন্ত স্পিকারই শপথ গ্রহণ করালেন। সব মিলিয়ে আর একবার মুখ পুড়ল রাজ্যপালের। আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞাসা করেছিলাম, এই যে রাজ্যপালের খেয়ালখুশি মতো সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য নির্বাচিত বিধায়কদের অপেক্ষা করতে হল এই দীর্ঘ সময়, এর জন্য কে দায়ী? এর জন্য কি সেই বিধানসভার ভোটারদের কাছে রাজ্যপালের নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়া উচিত নয়? শুনুন দর্শকরা কী বলেছেন।
বরানগর থেকে জিতেছেন সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, ভগবানগোলা থেকে জিতেছেন রেয়াত হোসেন, এঁরা কেবল বিধানসভাতে বলবেন তাই নয়, এলাকার বহু মানুষের বহু সার্টিফিকেট বহু সাহায্য লাগে আর সেসবের জন্য ওনাদের শপথ নেওয়ার পরে বাকি কিছু সইসাবুদের পরেই সেগুলো করা যায়। এক অবিবেচক রাজ্যপাল তাঁর গোঁয়ার্তুমির জন্যই এলাকার মানুষজন সাফার করেছেন। কেন এই গোঁয়ার্তুমি, উনি কি একটা সেফ প্যাসেজ চাইছেন, আমার মামলাগুলো দেখুন আমি বিদেয় হব? জানা নেই, কিন্তু এটা জানি যে এই ধরনের ব্যাপার, রাজ্যপালের এই আচরণ কাম্য নয়।