সেই গরুচোরেদের গল্পটা আর একবার আজ বলব। এ গল্প কোনওদিনও পুরনো হবে না। গরুচোরেরা আসতো দল বেঁধে। গ্রামের মানুষজন ঘুমোচ্ছে, তারা সন্তর্পণে গরুগুলোর গলা থেকে ঘণ্টা খুলে নিয়ে গরুগুলোকে বের করত। তারপর একজন ওই গরুগুলোর ঘণ্টা নিয়ে উত্তর দিক বরাবর রওনা দিত, বাকিরা গরু নিয়ে দক্ষিণমুখো। মিনিট দশেক পরে সেই একজন ঘণ্টাগুলো নাড়তে শুরু করত, গেরস্থরা আওয়াজ শুনে মনে করতো যে গরু চুরি করে গরু চোরেরা গ্রামের উত্তর দিক ধরে পালাচ্ছে, সব্বাই বেরিয়ে তাড়া করত, সেই একলা গরুচোর ঘণ্টাগুলো ছুড়ে ফেলে উধাও হয়ে যেত। আর গ্রামবাসীরা উত্তর দিকে গরুর খোঁজে ছুটত। ওদিকে আসল গরুচোরেরা দক্ষিণ দিক দিয়ে গরু নিয়ে পগার পার। হ্যাঁ এটাই হল সেই লোকঠকানো, মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা, মানুষকে অন্য কিছু দিকে দৃষ্টি ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা যা আমাদের শান্তিকুঞ্জের খোকাবাবু করেই যাচ্ছেন। ভাবুন একবার বিধানসভাতে বিরোধী দলনেতার অভিযোগ এ রাজ্যে পুলিশ প্রশাসন সরকার নাকি সরস্বতী পুজো হতে দিচ্ছে না। কোনও পাগলেও বিশ্বাস করে এই কথা? পাড়ায় পাড়ায়, স্কুলে স্কুলে কলেজে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সর্বত্র সরস্বতী পুজো হয়েছে, ছাত্রছাত্রীরা অঞ্জলি দিয়েছে, এবার নয় প্রতিবছর এটাই তো বাঙালির ভ্যালেন্টাইন্স ডে, এই দিনেই তো প্রথম শাড়ি পরা মেয়েটিকে ভালো লেগেছিল অনেকের। সরস্বতী পুজোর ভোগ পাত পেড়ে বসে খাওয়ার সেই দিনগুলো তো আজকের নয়। সেই কবে জেলে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ফাঁসির আসামি একলা কনডেমড সেলে রাখা দীনেশ গুপ্তকে বের করে তাঁর বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ করে দিতে সরস্বতী পুজো করেছিলেন। ওই দিন দীনেশকে বের করা হয়েছিল, তিনি বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন, প্রণাম করেছিলেন নেতাজিকে। সেই থেকে এ রাজ্যে এমনকী জেলেও সরস্বতী পুজো হয়। কিন্তু বিধানসভায় বিরোধী নেতারা কেন সরস্বতী পুজো হতে দেওয়া হচ্ছে না বলে সভার কাজকর্ম ভন্ডুল করার চেষ্টা চালালেন? আসলে সেটা ছিল ওই গরুচোরের মতো যে ঘণ্টা নেড়ে গ্রামের মানুষের দৃষ্টি অন্যদিকে ঘোরানোর চেষ্টা চালাচ্ছিল, কাজেই সেটাই আমাদের বিষয় আজকে, শুভেন্দু আর সেই গরুচোরের সঙ্গে মিলটা কোথায়?
এর আগে দেশসুদ্ধ মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছিল যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুর্গাপুজো বন্ধ করতে চান, এবারে বলার চেষ্টা হচ্ছে মমতার সরকার সরস্বতী পুজো বন্ধ করার চেষ্টা চালাচ্ছে। আসলে এ হল নজর ঘোরানোর কৌশল। মানুষ দেখতে পাচ্ছে কুম্ভ মেলার বিপর্যয়, লাশ গায়েব করার অভিযোগ উঠেছে, পে লোডার দিয়ে লাশ তোলার অভিযোগ উঠেছে। এবারে স্টেশনে পদপিষ্ট হয়ে মারা গেলেন ১৮ জন মানুষ, স্টেশনে উন্মত্ত জনতা ট্রেনের জানলা ভাঙছে, রিজার্ভ কম্পার্টমেন্টে উঠে পড়ছে, বাংলার এক নাটকের দলকে চূড়ান্ত হয়রানি করা হয়েছে, এসব চোখের সামনেই হচ্ছে, এবং এক অভূতপূর্ব প্রশাসনিক ব্যর্থতা।
আরও পড়ুন: Aajke | দমকল ডাকুন, আগুন লেগেছে রাজ্য বিজেপিতে
ওদিকে আমেরিকা থেকে অনুপ্রবেশকারীদের হাতে হাতকড়া পরিয়ে যুদ্ধবিমানে পাঠানো হচ্ছে দেশে, তাদের মধ্যে গুজরাটিদের সংখ্যা বিরাট, দেশ এগোচ্ছে, দেশ বিশ্বগুরু এসব বাওয়ালের পরে মোদিজির নিজের রাজ্যের মানুষজন দেশের মধ্যে তাঁদের স্বপ্নপূরণ হবে না জেনেই অবৈধভাবে আমেরিকাতে গেছেন। আমাদের রাজ্য থেকে পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে এত কথা বলা শান্তিকুঞ্জের খোকাবাবু এখন বুঝতে পারছেন এই প্রশ্ন উঠবেই, তো তার আগে তিনি অন্য দিকে ঘণ্টা নিয়ে বাজানোর চেষ্টা করছেন। পালাবেন কোথায়? দলের মধ্যে এ ওকে চোর বলছে, সে তাকে তৃণমূলের দালাল বলছে, টাকা নাকি গেছে শান্তিকুঞ্জেও, হ্যাঁ চাকরির বদলে টাকা, অভিযোগ তো সেরকম, রাজ্য বিজেপিতে জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় এত বড় হনু নন যে দুম করে নিজের থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায়তে ওসব পোস্ট করে দেবেন, কেউ তো উপরে আছেন যাঁরা বা যিনি নাচাচ্ছেন। দিলু ঘোষ বলেছেন আমাকে কাঠিবাজি করে হারানো হয়েছে, তো কাঠিবাজি তো তৃণমূলের কেউ করেননি, তাহলে? ওদিকে অর্জুন সিং নাকি আর রাস্তায় নামবেন না, কাছাকাছি লোকজনদের বলেছেন। সবমিলিয়ে এক ডামাডোল চলছে। হ্যাঁ, এই সব অস্বস্তি এড়াতে শুভেন্দুবাবু কত কিছুই তো করতে পারতেন, কিন্তু এক আজগুবি তত্ত্ব নিয়ে মাঠে নামলেন, বাংলায় সরকার, প্রশাসন, তৃণমূল দল নাকি সরস্বতী পুজো করতে দিচ্ছে না। তো আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞেস করেছিলাম যে আপনারা আপনাদের বাড়ি বা কর্মক্ষেত্রের আশেপাশে কোথাও দেখেছেন যে সরকার বা প্রশাসন থেকে সরস্বতী পুজো বন্ধ করার জন্য কোনও সিদ্ধান্ত নিয়েছে বা চাপ দিয়েছে বা বন্ধ করে দিয়েছে? রাজ্যের সরকার বা তৃণমূল দলকে কি কোথাও সরস্বতী পুজো বিরোধী বলে মনে হয়? শুনুন মানুষজন কী বলেছেন।
মানুষকে ভুল বুঝিয়ে রাজনীতি খুব নতুন কিছু নয়, আর বিজেপির ক্ষেত্রে তো নয়ই। আজ তো নয় সেই জন্মের সময় থেকেই দেশের মানুষকে আরএসএস ভুল বোঝানোর চেষ্টা করেছে, তারাই বলেছিল ইংরেজ নয় দেশের শত্রু হল মুসলমান শাসকেরা, তারাই দ্বিজাতিতত্ত্বের কথা বলে দেশ ভাগের কথা বলেছিল, তারাই জাতির পিতাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিল, তারা দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে একদিনের জন্যও জেল যায়নি, রাস্তায় নামেনি। সেই তারাই আজ নিজেদের আগমার্কা দেশপ্রেমিক বলে ঘোষণা করে, সেই তারাই আজ তিলক কেটে আগমার্কা হিন্দু হওয়ার চেষ্টা করে। সমস্যা হল এই বাংলায় বিশুদ্ধে উচ্চারণে সংস্কৃত মন্ত্রপাঠ করে বাগদেবীর আরাধনা করেছিলেন সৈয়দ মুজতবা আলি, হ্যাঁ এটাই বাংলার ইতিহাস, এটাই বাংলার গর্ব, আজ হঠাৎ সেখানে মিথ্যে কথা বলে মানুষের দৃষ্টিকে ঘোরানোর চেষ্টা করছেন শুভেন্দু অধিকারী। ও দাদা আমরা গরুচোরের গল্প তো জানি, আপনি সেই ভূমিকায় নামলে আমরা তো ধরে ফেলবই।