যেমনটা রোজ করে থাকি, একটা বিষয়ের অবতারণা আর সেই বিষয়কে নিয়ে অন্তত দুটো ভিন্ন মতামতকে এনে হাজির করা, যাতে করে আপনারা আপনার মতটাকে শানিয়ে নিতেই পারেন আবার আপনার বিরুদ্ধ মতটাকেও শুনে নিতে পারেন। আজ নয় রাজনৈতিক উত্থানের প্রথম দিন থেকেই নিয়ম করেই মিথ্যে বলেন মোদিজি। উদাহরণ প্রচুর আছে, ২০১২,নরেন্দ্রভাই দামোদরদাস মোদি তখন ভাইব্রান্ট গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী। কেন্দ্রে কংগ্রেস সরকার, রাজ্যে রাজ্যপাল কংগ্রেসের নেতা কমলা বেনিওয়াল, একসময় রাজস্থানের উপমুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, কেন্দ্র সরকার ২৬/১১ র ঘটনার পর National Counter Terrorism Centre তৈরি করেছেন। মোদিজি তার বিরাট প্রতিবাদ করছেন, তাঁর বক্তব্য কেন্দ্র সরকার রাজ্যের কাজে দখলান্দাজি করছে, রাজ্যপাল কংগ্রেস সরকারের হয়ে ষড়যন্ত্র চালাচ্ছেন। আজ্ঞে হ্যাঁ, ২০১২, তিনি হুবহু এই কথা বলছেন, “grab power through the backdoor”. পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতা দখল করার চেষ্টা করছেন, মোদিজি বলছেন। তাঁর আশঙ্কা, “It’s a conspiracy to grab power through the backdoor… Already several opposition leaders are in CBI’s dragnet, now they are bringing in NCTC…” ভাবুন একবার, মোদিজি বলছেন, এমনিতেই সিবিআই দিয়ে ভয় দেখানো হচ্ছিল, এখন NCTC আনা হচ্ছে। ওই বক্তৃতাতেই আমাদের প্রধান সেবক নরেন্দ্রভাই দামোদরদাস মোদি বলছেন যে পুঞ্চি কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী রাজ্যপাল হিসেবে একজন রাজনৈতিক, মানে রাজনীতির মানুষকে কখনওই মনোনীত করা উচিত নয়, কিন্তু কেন্দ্র আমাদের উপর আমাদের বিরোধী রাজনীতির একজনকে চাপিয়ে দিচ্ছে। অবাক হবেন না, এগুলো বলছেন নরেন্দ্র মোদি। এবার সিনেমার নেক্সট সিন, মোদিজি প্রধানমন্ত্রী, রাজ্যে রাজ্যে রাজ্যপাল নিযুক্ত হয়েছে, প্রতিটা নিযুক্তি রাজনৈতিক শুধু নয় ১০০% দলের, আরএসএস-এর লোকদের পাঠানো হয়েছে রাজ্যপাল হিসেবে। তাঁরা রাজ্যে গিয়ে একটাই কাজ করছেন, সেখানকার বিজেপি দলের হেডকোয়ার্টারের কাজ। ওখান থেকে উসকানি দেওয়া হচ্ছে, সরকার ভাঙার পরিকল্পনা হচ্ছে, ভাঙা হচ্ছে। মোদিজি মিথ্যে বলেন, ডাহা মিথ্যে বলেন বার বার প্রমাণিত, তিনি মিথ্যেবাদী।
ধরুন ২০১৪, সারা দেশ ঘুরছেন বিজেপির প্রধানমন্ত্রী মুখ নরেন্দ্র মোদি, কী কী বলছিলেন? না খাউঙ্গা না খানে দুঙ্গা, এখন দেখছি আদানি আম্বানিই খেয়ে ফাঁক করে দিল। এক এক কো জেল ভেজুঙ্গা, কেবল বিরোধী রাজনৈতিক নেতা ছাড়া কাউকে জেলে পাঠাননি। কালা ধন ওয়াপস লাউঙ্গা, এক পয়সা ফেরত আসেনি। হরেককে খাতে মে পন্দ্রহ পন্দ্রহ লাখ ইউহি চলা যায় গা। এটা নিয়ে অবশ্য ছোটা মোটা ভাই ক্লারিফিকেশন দিয়ে দিয়েছেন, ওটা নাকি জুমলা ছিল, মানে মোদিজি বিশুদ্ধ ঢপ দিয়েছিলেন। ডলার উঠ রহা হ্যায়, পয়সা গির রহা হ্যায়, এখন ডলার সেঞ্চুরির দিকে এগোচ্ছে। পেট্রল ডিজেল কি কিমত সোনে কা বরাবরি করনেওয়ালা হ্যায়, সেদিন পেট্রল ছিল ৬০/৬২ র ঘরে আজ ১০০ ছাড়িয়ে গেছে। বেকার নওজওয়ান কা ভারত অব আমিরোঁ কা ঘোঁসলা হ্যায়। হরেক সাল তিন করোড় কা নোকরি দেঙ্গে। বেকারত্ব তার রেকর্ড ছুঁয়েছে। অমির আউর আমির বন রহে হ্যাঁয়। এখন বৈষম্য কতটা? দেশের ১০% মানুষের কাছে ৫৭% সম্পদ আছে। সরকার বিরোধিয়োঁ কো চুপ করানে কে লিয়ে সিবিআই কা গলত ইস্তেমাল কর রহেঁ হ্যায়। এটা শুনলে ঘোড়াতেও হাসবে। মানে প্রায় কম্পালসিভ লায়ার-এর মতন মিথ্যে কথা বলেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু তিনি কিছু সত্যিও বলেন।
আরও পড়ুন: অদিতির সঙ্গে সাদা কালো | সিপিএম, গণতন্ত্র, সোনার পাথরবাটি
আসুন এবার আমাদের প্রধানমন্ত্রীর সত্যিগুলোও দেখা যাক। তিনি বলেছিলেন, জনসভাতে দাঁড়িয়েই বলেছিলেন যে কপড়া দেখকে পহচান লেতা হুঁ ওহ লোগ কোন হ্যায়। মানে কাপড়, আসলে বলতে চেয়েছিলেন লুঙ্গি দেখেই উনি বুঝে ফেলেন যে ওরা কারা, হ্যাঁ উনি মুসলমান চেনার সহজ সোজা রাস্তাটা দেখাচ্ছিলেন, এবং উনি বা ওনার সরকার এ বিষয়ে কোনও ভুল করেনি। উত্তরপ্রদেশের এক সংখ্যালঘু এমএলএ তাঁর ভাষণে বলছিলেন যে যত মানুষ কুম্ভে ডুব দিয়েছেন তার হিসেব দেখলে আপাতত নরক প্রায় ফাঁকা হয়ে গেছে, কারণ সব অপরাধ তো ধুল গয়া, ধুয়ে গেছে, আর স্বর্গে এখন ভারি ভিড়। ব্যস, হিন্দু ধর্মের অবমাননার দায়ে তাঁকে থানায় ডাকা হয়েছে, মামলা রুজু হয়েছে। ওনার সাংসদ রমেশ বিধুরি সংসদের মধ্যেই সংখ্যালঘু মুসলমানদের ছাপার অক্ষরে বলা বা লেখা যাবে না এমন গালিগালাজ করলেন, না ওনাকে কিচ্ছু বলা হয়নি, জিতলে উনি দিল্লির প্রধানমন্ত্রী হতেন। দেখুন আমাদের প্রধানমন্ত্রী তাঁর আরএসএস-এর সব কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করছেন, যে আরএসএস সাফ জানিয়ে দিয়েছে যাঁদের পবিত্র পূণ্যভূমি এদেশে না হয়ে মক্কা মদিনা বা বেথলেহেম বা ভ্যাটিক্যান সিটি হয় তাঁরা এই দেশের নাগরিক নন। আর নাগরিক না হলে তাকে মারার, পিটিয়ে খুন করার, জেলে পাঠানোর স্বাধীনতা তো ওনার আছে। উনি সেই কবেই বলেছিলেন ওই বাবরি মসজিদের জায়গাতে রামলালার বিশাল মন্দির তৈরি করব, অক্ষরে অক্ষরে সেই কথা রেখেছেন। উনি বলেছিলেন খুব শিগগির দেশ কংগ্রেস মুক্ত হতে চলেছে, প্রতিদিন নিয়ম করেই তিনি সেই কাজ করেন, সফলতাও এসেছে। কাজেই এক কম্পালসিভ লায়ার হলে কী হবে আমাদের প্রধানমন্ত্রী মাঝেমধ্যে সত্যি কথাও বলেন বইকী।