Tuesday, July 1, 2025
HomeআজকেAajke | নির্বাচনের আগে পরিকল্পনা করেই কি পুরনো ভিডিও ভাইরাল করানো হল?
Aajke

Aajke | নির্বাচনের আগে পরিকল্পনা করেই কি পুরনো ভিডিও ভাইরাল করানো হল?

হোয়াটসঅ্যাপে কিছু এলে আগে ভাবুন এটা মিথ্যে হতেও পারে

Follow Us :

আজকাল যদি তেমন তেমন সেনসেশনাল ভিডিও পান তাহলে আপনি বেশি নয়, শ’ খানেক মানুষের কাছে সেটা পাঠিয়ে দিন, ঘণ্টা তিন চার পরে আপনি দেখবেন আপনার অনেক পরিচিত যাঁদের আপনি ওই ভিডিও পাঠাননি, তারাও আপনাকে ওই ভিডিওটাই পাঠাচ্ছে। একেই বলে ভাইরাল হওয়া। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে যদি লাখখানেক মানুষের কাছে পৌঁছে যায় তাহলে নিশ্চিত ২০-২৪ ঘণ্টার মধ্যে তা ৫০-৬০ লক্ষ মানুষ দেখে ফেলবে। একেই বলে জিওমেট্রিক্যাল প্রোগ্রেশন। আর সেটাই যদি এক পরিকল্পিত মানে সোচি সমঝি চাল হয়, তাহলে? তাহলে তো দিন দুই তিনের মধ্যেই তা ৫-৬ কোটি মানুষের কাছে পাঠানো কোনও ব্যাপারই নয়। এবং সেই ভিডিও ঠিক কি না, তা নিয়ে এডিটিং টেবলে কারিকুরি করা হয়েছে কি না, তার অডিও, মানে যা শুনছেন তা অরিজিনাল কি না এসব দেখতে সময় লাগে, বুঝে উঠতে উঠতে সেই ভিডিও ক্লিপিং ভাইরাল হয়ে যায়। ৭২-৯৬ ঘণ্টা পরে সেই ভিডিও ফেক বুঝে ওঠার আগেই কার্যসিদ্ধি করে নেওয়া সম্ভব। এটাই হল সেই মগজ ধোলাইয়ের নতুন যন্ত্র, একটা ক্লিপিংস-এ দেখলেন এক মন্দির ভাঙাচোরা, পুরোহিত আহত, ভয়েজ ওভার বলছে এরপরেও যদি রক্ত গরম না হয় তাহলে ওটা রক্ত নয় খুন, অব ভি অগর খুন না খোলে, খুন নহি ওহ পানি হ্যায়। ব্যস, আপনার রক্ত গরম হয়ে গেল, পাশের মসজিদ আক্রমণ শুরু হয়েছে আপনিও বচ্চা বচ্চা রামকা বলে যোগ দিলেন। দাঙ্গা হল, ঘর পুড়ল গোটা ১২, ৮টা মুসলমান তো ৪টে হিন্দুরও, দু’ তিনটে লাশ পড়ে গেল, তারপর জানা গেল ক্লিপিংসটা কোনও সিরিয়াল বা সিনেমার। ততক্ষণে যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। এই ডিপ ফেক ভিডিও এক ফেক ন্যারেটিভ তৈরি করছে, সাধারণ মানুষ তার সত্যতা, সেটা সত্যি কি না তা বুঝে উঠতে পারছে না। আর সেটাই আজ বিষয় আজকে। নির্বাচনের আগে পরিকল্পনা করেই কি পুরনো ভিডিও ভাইরাল করানো হল?

বাই ইলেকশন ছিল মানিকতলা, বাগদা, রানাঘাট দক্ষিণ আর রায়গঞ্জে। প্রচার প্রায় শেষ লগ্নে, প্রতিটা রাজনৈতিক দল তাদের বক্তব্য নিয়ে মানুষের সামনে গেছে, দেওয়াল লিখন হয়েছে, রোড শো হয়েছে, বিভিন্ন মাধ্যমে বিভিন্ন দলের প্রচারকে সামনে রেখে মানুষ ভোট দেবে। ঠিক এই সময়ে কিছু ভিডিও ভাইরাল হল, একজন নটোরিয়াস ক্রিমিনাল জয়ন্ত সিং-এর ভিডিও। কিছুটা অস্পষ্ট, কিছুটা ঢাকা, যাতে বলা হল লোকটি এবং তার দলবল এক মহিলাকে বেঁধে পেটাচ্ছে, অকথ্য অত্যাচার।

আরও পড়ুন: Aajke | আম আদমির ভবিষ্যৎ কি বড়লোকের গাড়ির চাকার তলায় চাপা পড়া?

টিভি অ্যাঙ্করের কাজ তো এখন শুধু খবর পড়া নয়, তাদের অনেকে রীতিমতো অভিনেতা, ক্যামেরার সামনে চিল চিৎকার, কোন সভ্য জগতে আছি আমরা? এই দেখুন ওই সরকারে বসে থাকা শাসকদলের এক গুন্ডা কীভাবে মারছে এক মহিলাকে। সেই ভিডিও টিভিতে, সেই ভিডিও হোয়াটসঅ্যাপে, সেই ভিডিও ইনস্টাগ্রামে, টুইটারে, সর্বত্র, এবং সম্মিলিত আর্তনাদ সে কী? এও কি সম্ভব? নির্বাচন শেষ, ওই সিরিজের জয়ন্ত সিং-এর গোটাচারেক ভিডিও যা ভাইরাল করানো হয়েছিল, জানা গেল বছর তিন পুরনো, যা কিন্তু ওই টিভি সংবাদমাধ্যমে একবারও বলা হয়নি। আচ্ছা ভিডিওটা আড়াই কি তিন বছরের পুরনো হলে কি অন্যায় কিছুই হয়নি, এভাবে একজনকে অত্যাচার করা কি আইনত উচিত? না, এক্কেবারেই না, কিন্তু আড়াই তিন বছরের পুরনো ভিডিও সেই ইমপ্যাক্ট সেই অভিঘাত, সেই প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিতে পারে না তাই সযত্নে সেটা এড়িয়ে গেছে ওই সংবাদমাধ্যমগুলো। কিন্তু ওই মর্বিড, দেখার যোগ্য নয় ভিডিও চালিয়েছে, পরে এটাও জানা গেল যে ভিডিওতে যাঁকে মারছে বলে দেখানো হয়েছে তিনি পুরুষ, মহিলা নন। তার মানে এটা নির্বাচনী প্রচার ছিল? আগে বলা হল না কেন? কেন সব প্রচার, ভোট চুকে যাওয়ার পরে বলা হল এইসব? এটাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন। হ্যাঁ, বেশিরভাগ সংবাদমাধ্যম এক নির্বাচনী প্রচারের অঙ্গ হিসেবেই জেনে বা না জেনেই কাজ করেছে। আমাদের দর্শকদের কাছে জিজ্ঞেস করেছিলাম, যাঁরা এই পুরনো ভিডিওকে ভাইরাল করে দিয়ে এক অন্যায় প্রচারের সুযোগ নিল, তাদের গ্রেফতার করা হবে না কেন? যেসব সংবাদমাধ্যম না জেনেই, না বুঝেই এরকম এক প্রচারে শামিল হল, তাদের জন্য কোন শাস্তি বরাদ্দ করা হবে? শুনুন মানুষজন কী বলেছেন?

আমরা ঢুকে পড়েছি এক অদ্ভুত প্রচারের যুগে, যে প্রচার ঠিক না বেঠিক, সত্যি না মিথ্যে জানার আগেই কাজ শেষ করে ফেলে। কেবল এ রাজ্যে নয়, এ দেশেই নয় সর্বত্র এই বিদ্যুৎগতির প্রচার যেমন বিরাট সম্ভাবনার দরজা খুলে দিয়েছে, এক মুহূর্তে কোটি কোটি মানুষকে আগামী দুর্যোগের খবর দিয়ে দিচ্ছে তেমনিই এক-আধঘণ্টার মধ্যে সমাজে বিষ ছড়িয়ে দিচ্ছে। সে বিষ কেবল একটা নির্বাচন বা একটা জেতা হারা নয়, তার চেয়েও অনেক বেশি। সারা বিশ্ব এই ফেক ইনফর্মেশন, মিথ্যে তথ্য আটকানোর কথা ভাবছে, আমাদেরও ভাবতে হবে এবং সেই কাজটা প্রথমে নিজেকেই শুরু করতে হবে। হোয়াটসঅ্যাপে কিছু এলে আগে ভাবুন এটা মিথ্যে হতেও পারে, সেখান থেকেই সত্যিটা খুঁজে নেওয়ার তাগিদ জন্মাবে।

RELATED ARTICLES

Most Popular


Deprecated: Automatic conversion of false to array is deprecated in /var/www/ktv/wp-content/themes/techinfer-child/functions.php on line 39