যেমনটা রোজ করে থাকি, একটা বিষয়ের অবতারণা আর সেই বিষয়কে নিয়ে অন্তত দুটো ভিন্ন মতামতকে এনে হাজির করা, যাতে করে আপনারা আপনার মতটাকে শানিয়ে নিতেই পারেন আবার আপনার বিরুদ্ধ মতটাকেও শুনে নিতে পারেন। আজকের বিষয়, বিজেপি ভোট পেরোলেই বোমভোলা।
মহারাষ্ট্র ভোটের ঠিক আগে ‘লাডকি বহেন’, আদরের বোন নামে এক প্রকল্প চালু করেছিল। এই আদরের বোন আদতে আমাদের রাজ্যের লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের কার্বন কপি। বাড়িতে কমসম করেও যে মহিলারা ১৫-১৮ ঘণ্টা কাজ করেন, সেই মহিলাদের আমাদের বাংলার সরকার জানিয়েছিল, আপনাদের হাতে তুলে দেওয়া হবে ক্যাশ টাকা, তা দিয়ে কেউ মোবাইলের বিল ভরেছে, কেউ সিনেমা দেখেছে, কেউ নাতিকে বই কিনে দিয়েছে, কেউ গ্রামে নতুন গজিয়ে ওঠা সেলুনে ফেসিয়াল করিয়েছে, শহর থেকে শিখে সে নতুন দোকান দিয়েছে, বিউটি পার্লার। এক ধরনের ডানা গজানোর ব্যবস্থা করে দিলেন আমাদের মহিলা মুখ্যমন্ত্রী, যিনি প্রকাশ্যেই বলতে পারেন, একটু আধটু প্রেম না হয় করলে, ক্ষতি কী? হ্যাঁ, তিনিই চালু করেছেন লক্ষ্মীর ভাণ্ডার আর তারপর থেকে দেদার সিটিআরএল সি, সিটিআরএল ভি, কপি পেস্ট হয়েছে এই স্কিম। সব্বাই বুঝেছেন ওইখানে আছে আসল লক্ষ্মী, এসো মা লক্ষ্মী বোসো ঘরে বলে এখানে মুখ্যমন্ত্রী সম্মান যোজনা সেখানে লাডকি বহেন, অন্য কোথাও মাইয়া সম্মান, আদতে মহিলাদের হাতে তুলে দেওয়া কিছু টাকা, তার স্কিম চালু হয়েছে। তো নির্বাচনের আগে মহারাষ্ট্রেও চালু হয়েছিল। মাত্র ক’মাস আগে চালু হওয়া স্কিমের এখন কী অবস্থা? গত এক মাসে উপভোক্তার সংখ্যা ৫ লক্ষ কমে গিয়েছিল। এবং জানা যাচ্ছে মহারাষ্ট্রের ‘লাডকি বহেন’ প্রকল্পে উপভোক্তা মহিলার সংখ্যা কমতে পারে আরও কয়েক লক্ষ। মহারাষ্ট্রের বিধানসভা ভোটে বিজেপি জোট ‘মহায়ুতি’ সবচেয়ে জোর দিয়েছিল মহিলাদের মাসে মাসে ১৫০০ টাকা সহায়তার প্রকল্পে। কিন্তু রাজ্য বাজেটে এই প্রকল্পের খাতে বাড়ানো হয়নি বরাদ্দ। জানুয়ারিতে দেখা গিয়েছিল উপভোক্তার সংখ্যা ২.৪৬ কোটি থেকে ৫ লক্ষ কমে হয়েছে ২.৪১ কোটি। বিজেপি নেতা এবং মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশের প্রশাসন বলেছে যে ১.৫ লক্ষ নাম বাদ হয়েছে এই মহিলাদের বয়স ৬৫ পেরিয়ে যাওয়ায়। প্রশ্ন উঠেছে, বয়সসীমায় তো নতুন নামও যুক্ত হওয়ার কথা। তা হয়নি কেন? এমনিতেই বিজেপির জয় ঘিরে কারচুপির অভিযোগ এবং তথ্য ভেসে বেড়াচ্ছে রাজনীতির বাতাসে। আচমকা লাফিয়ে বেড়ে গিয়েছিল বিধানসভা ভোটে ভোটদাতার সংখ্যা। লোকসভা ভোটে যে বিজেপি জোট পর্যুদস্ত হয়েছিল রাজ্যে মাস কয়েক পরেই বিধানসভা ভোটে সেই জোটই রমরমিয়ে জিতেছে। বিরোধীরা চ্যাঁচাবেই, কংগ্রেসের প্রদেশ সভাপতি নানা পাটোলে বলেছেন, ‘‘রাজ্যের মহিলাদের ধোঁকা দিয়ে তিন ভাই- দেবেন্দ্র ফড়নবিশ, একনাথ শিন্ডে এবং অজিত পাওয়ার ক্ষমতায় বসেছেন।’’ তিনি বলেছেন, ‘‘৫ লক্ষ নাম বাদ দেওয়ার তথ্য এখনই বেরিয়েছে। আরও কয়েক লক্ষ নাম বাদ দেওয়া হচ্ছে উপভোক্তা হওয়ার শর্ত পূরণ না হওয়ার অজুহাত দিয়ে।’’ এটা মহারাষ্ট্রের ছবি। ওদিকে দিল্লিতে ক্ষমতায় এলেই প্রথম ক্যাবিনেট বৈঠকে বসে মহিলাদের ক্যাশ টাকা পৌঁছে দেওয়ার স্কিম পাশ করা হবে জানিয়েছিল বিজেপি, আপাতত মেমোরি লস-এ ভুগছে, ওসব নিয়ে উচ্চবাচ্য নেই। এবারে চলুন একটু বাংলার দিকে নজর রাখি।
আরও পড়ুন: অদিতির সঙ্গে সাদা কালো | ফুরফুরা শরিফ আর দিঘার জগন্নাথ মন্দির
হ্যাঁ, বাংলায় চালু হয়েছিল কেবল নয়, বাংলা থেকেই এই স্কিম কাট পেস্ট করেছে দেশের বহু রাজ্যের সরকার। তো সেই স্কিমের এখনকার হাল হকিকত কী? ২০২৩ এই মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন আরও প্রায় ১০ লক্ষ মহিলা পাবেন লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের সুবিধা। এপ্রিল মাসের দুয়ারে সরকার শিবিরে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের জন্য জমা পড়েছে প্রায় ১১ লক্ষ ১৬ হাজার আবেদন। তার মধ্যে প্রায় ১০ লক্ষ ৩৯ হাজার আবেদন অনুমোদন পেয়ে গিয়েছে বলে নবান্ন সূত্রে খবর।
নবান্নে সব দফতরকে নিয়ে এক পর্যালোচনা বৈঠকে বসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের নতুন এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছিল আর ওই দিনই মুখ্যমন্ত্রী নতুন উপভোক্তাদের অ্যাকাউন্টে সরাসরি টাকা পাঠিয়েছিলেন। এবারে সেই প্রকল্পের পরিধি আরও বাড়ানো হচ্ছে। এখন লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পে প্রতি মাসে রাজ্য সরকারের খরচের পরিমাণ প্রায় ১০৩০ কোটি টাকা। নতুন সাড়ে ১০ লক্ষ উপভোক্তা এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় প্রতি মাসে এই খাতে খরচ বাড়বে প্রায় ৬০ কোটি টাকা। অর্থাৎ আগামী মাস থেকে এই প্রকল্পের খরচের পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ১১০০ কোটি টাকা। বর্তমানে আমাদের বাংলায় লক্ষ্মীর ভাণ্ডার থেকে অর্থ পান প্রায় ১ কোটি ৮৮ লক্ষ মহিলা। নতুন করে আরও ১০ লক্ষের বেশি মহিলা যুক্ত হওয়ায় সেই সংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় এক লক্ষ ৯৮ হাজারে। ২০২১ সালে তৃতীয়বার নবান্ন দখলের পর লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের সূচনা হয়েছিল, তা কলেবরে বাড়ছে। নির্বাচনের আগে ইস্তাহারে তিনি এই প্রকল্প শুরুর কথা জানিয়ে দিয়েছিলেন আর সেই অনুযায়ীই আরও বেশি মহিলাকে এর আওতায় নিয়ে আসার কাজ চলছে। ডিসেম্বর ২০২৪ থেকে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পে আরও ৫ লক্ষ মহিলা গ্রাহক যুক্ত হয়েছেন। আবেদনকারীদের ফাইল খতিয়ে দেখে ২৫ নভেম্বরের মধ্যে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। আর ২ ডিসেম্বর থেকে নতুন গ্রাহকদের অ্যাকাউন্টে টাকা জমা পড়ছে। মানে এই কলেবর বেড়ে এখন ২.২ কোটি মহিলার পাশাপাশি আরও ৫ লক্ষ মহিলা এই টাকা পাবেন। হ্যাঁ, তফাৎ আছে, বিজেপি আর তৃণমূলের তফাৎ তো আছে।