Sunday, June 15, 2025
HomeCurrent Newsচতুর্থ স্তম্ভ: জলজন্তু

চতুর্থ স্তম্ভ: জলজন্তু

Follow Us :

দেশের লোকের সামনে হাতে পুস্পার্ঘ নিয়ে, গঙ্গায় ডুব দিলেন দেশের প্রধানমন্ত্রী, যে গঙ্গায় কদিন আগেও ভাসছিল দেশের মানুষের লাশ। তিনি আসলে কত বড় হিন্দু, তা প্রচার করতে চাইছেন, নিত্য স্নান, নিত্য গঙ্গা স্নানে নিজেকে পবিত্র করে তোলার ছবি তুলে ধরছেন, সামনে ভোট, আর কে না জানে ভোট বড় বালাই। সে ছবি দেখেই আমার মীরার ভজন, কবীরের দোহার কথা মনে পড়ে গ্যালো। মীরা বলছেন, নিত নহানে হরি মিলে তো, জলজন্তু হোই / ফলমূল খাকে হরি মিলে তো, বহুত বাদুর বাদরাই। রোজ চান করলেই যদি ভগবানকে পাওয়া যেত, তাহলে জলজন্তুরাই আগে ভগবানকে পেত, আর ফলমূল খেয়েই, মানে নিরামিষ খেয়েই যদি ভগবান পাওয়া যেত, তাহলে বাদুড়, পাখি আর বাঁদরেরাই ভগবানকে পেত। আর কবীর বলছেন, নহায়ে ধোয়া কেয়া হুয়া, জো মন ময়েল না জায়ে, মীন সদা জল মে রহে, ধোয়ে বাস ন জায়ে। চান টান করলেন, ভালো। কিন্তু মনের ময়লা যদি থেকেই যায়, তাহলে আর লাভ কি? মাছ তো সর্বদাই জলে থাকে, তার গায়ের আঁশটে গন্ধ তো চলে যায় না। কবীর, মীরা, নানক প্রতিবাদী ধর্মের প্রবক্তারা এমনসব কথা বলে গেছেন, সনাতন ব্রাহ্মণ্যবাদের পুজারিরা, এসব পড়েনও নি, জানেন ও না।

আমাদের প্রধানমন্ত্রী যখন গঙ্গায় চান করে শুদ্ধ হবার ভান করছেন, অসংখ্য ক্যামেরায় সেই ছবি তুলে দেশের মানুষকে দেখানো হচ্ছে, তখন নরেন্দ্রভাই দামোদর দাস মোদীর দু হাতে রক্ত, ৬৭১ জন কৃষকের রক্ত, লখিমপুর খেরির সেই ৪ জন অন্নদাতার রক্ত, লবপ্রিত সিং, গুরবিন্দর সিং, নক্ষত্র সিং আর দলজীত সিংয়ের রক্ত লেগে আছে তাঁর সর্বাঙ্গে, মুছলেই চলে যাবে? চান করলেই ধুয়ে যাবে? সেদিনের ঘটনার পরেই গুরুতর আহত লখিমপুরের কৃষক নেতা, তেজিন্দর সিং বির্ক, স্পষ্ট জানিয়েছিলেন, এটা দুর্ঘটনা নয়, এটা পরিকল্পিত হত্যাকান্ড, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অজয় মিশ্রার ছেলে আশিস মিশ্রা নিজে গাড়ি চালাচ্ছিল, যার নামে ঐ থর গাড়ির মালিকানা আছে, সেই গাড়ির তলায় চাপা পড়েই চার জন কৃষক, একজন সাংবাদিক মারা যান। ঐ সাংবাদিক তেজিন্দর সিং বির্ক এর সাক্ষাৎকার নিচ্ছিলেন, যখন গাড়ি এসে ধাক্কা মারে, তেজিন্দরের মাথায় ৩৫ টা সেলাই পড়ে, তিনি এখনও পুরোপুরি সুস্থ নন, কিন্তু ঐ সাংবাদিক ঘটনাস্থলেই মারা যায়।

লখিমপুর খেরিতে প্রতিবাদী কৃষকদের পিষে দেওয়ার পরের দিনে ছবি৷

তিনি বলার পরেও ঘটনা ধামাচাপা দেবার কাজ করেছিল পুলিশ, তারা দুর্ঘটনার ছবি সাজাচ্ছিল, আর খুনি আশিস মিশ্রার বাবা অজয় মিশ্রা টেনি, যিনি নাকি দেশের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, তিনি এই খুনের পেছনে কৃষক আন্দোলনকারীদের মধ্যে ঢুকে থাকা বব্বর খালসা, অন্য উগ্রপন্থীদের গল্প শোনাচ্ছিলেন। স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম, সিট তৈরি হয়েছিল সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে, বিচারপতিরা স্পষ্ট জানিয়েছিলেন, পুলিশ তদন্তের নামে আসলে অপরাধীদের বাঁচানোর চেষ্টা চালাচ্ছে, তাই সিট তৈরি হোক। সেই সিটয়ের প্রাথমিক রিপোর্ট হাতে এল, যেখানে পরিস্কার বলা হয়েছে যে, এই হত্যাকান্ড কোনও দুর্ঘটনা ছিল না, এটা ছিল পরিকল্পিত খুন, সেই কারণেই চার্জশিট থেকে অনিচ্ছাকৃত খুনের ধারা তুলে হত্যার অভিযোগ আনা হল, অর্থাৎ দেশের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সোনার চাঁদ পুত্র, আশিস মিশ্রা হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত, তিনি ক্যাবিনেট বৈঠকে বসেন, যে ক্যাবিনেটের মাথায় চা ওলা, চওকিদার কা দেশের প্রধানসেবক নরেন্দ্রভাই দামোদর দাস মোদী, যিনি গঙ্গায় ডুব দিয়ে নিজের আত্মাকে পরিস্কার করে ছবি তুলছেন, জলজন্তু কি সাধে বলছি?

আরও পড়ুন-চতুর্থ স্তম্ভ: কেউ খাবে আর কেউ খাবে না, তা হবে না, তা হবে না

এই মোদিজী দেশের মাথায় বসেছিলেন কী বলে? অচ্ছে দিন আয়েঙ্গে। অচ্ছে দিন মানে, দেশের অন্নদাতাদের তাঁর মন্ত্রী সভার স্বরাষ্ট্র দপ্তরের মন্ত্রীর ছেলে, থর গাড়ির চাকার তলায় পিশে মারবে, মোদীজী স্বচ্ছ প্রশাসনের কথা বলেছিলেন, ৩ অক্টোবর এই ঘটনা ঘটার এতদিন পরেও তাঁর ধক হয়নি ঐ অপরাধী পুত্রের বাবাকে, অজয় মিশ্রা টেনিকে মন্ত্রী সভা থেকে পদত্যাগ করতে বলার, উচিত তো ছিল সেই দিনই ঘাড় ধরে মন্ত্রীসভা থেকে তাড়িয়ে, তাকে জেলে পোরা। সে সব তো হলই না, উনি এখনও মন্ত্রী, দেশের আই পি এস অফিসাররা একজন খুনির বাবাকে দেখলে সেলাম ঠুকছে, আজও।

একটা অভিযোগও প্রমাণিত নয়, ইন ফ্যাক্ট কোনও প্রমাণই দাখিল করা যায় নি, সুধা ভরদ্বাজের বিরুদ্ধে, তিন বছর পরে তিনি জামিন পেলেন। জেলেই মারা গেলেন স্ট্যান স্বামী, জেলেই আছেন সোমা সেন, সুরেন্দ্র গ্যাডলিং সমেত আরও অনেকে, গৃহবন্দী সাংবাদিক গৌতম নভলাখা। এখনও জেলে ছাত্র নেতা উমর খালিদ, শার্জিল ইমাম সমেত অনেকে। কেবল খেলা হবে, এই কথাটা বলেছে বলে সায়নী ঘোষকে গ্রেপ্তার করা হল অথচ যে মন্ত্রী দু মিনিটে সবক শেখানোর কথা বললেন, শেখালেন, যিনি বললেন বলিয়া কেন, লখিমপুর খেরি থেকেও তাড়িয়ে ছাড়বেন, সেই মন্ত্রী এখনও বহাল তবিয়তে লাল বাতি জ্বালিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, আমাদের দেশের স্বরাষ্ট্র দপ্তরের কি চেহারা একবার ভাবুন, দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী একজন তড়িপার, এখনও তাঁর বিরুদ্ধে হত্যা আর হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ, আরেকজন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে নারী পাচারের অভিযোগ আছে, অন্যজন হত্যার ষড়যন্ত্রের মূল চক্রী। কি স্বচ্ছ প্রশাসন, সেই প্রশাসনের মাথা গঙ্গা জলে নেমে গঙ্গাপুত্র হবার যাত্রাপালা করছেন, আজ বা কাল বা পরশু বাধ্য হবেন ঐ খুনিকে মন্ত্রী সভা থেকে তাড়াতে, আবার সেই ভুলের কথা বলবেন, আমরা জানি। এবং তাকিয়ে দেখুন ঐ গঙ্গার হাঁটু জলে ডুবে মরেছে, দেশের মেইনস্ট্রিম মিডিয়া, এক গলা হুইস্কি চড়িয়ে অ্যাঙ্কারিং করছে, দেশের জওয়ানদের মৃত্যুতে এতটাই ব্যথিত।

আসলে দেশ চলে গেছে, একদল মূর্খ আর মধ্যযুগীয় মানুষদের হাতে, ২০১৪ থেকে শুরু হয়েছে সেই মধ্যযুগীয় শাসন, যে শাসনে দেশের অর্থনীতি বিধ্বস্থ, মূল্যবৃদ্ধি আকাশ ছুঁয়েছে, বেকারত্ব সর্বকালের রেকর্ড ভেঙেছে, দেশের সম্পদ বেচে, তুলে দেওয়া হচ্ছে ফড়েদের হাতে, বৈষম্য বাড়ছে, দারিদ্র বাড়ছে, শিক্ষায় ঢুকছে মধ্যযুগীয় দর্শন, যেখানে মহিলাদের জায়গা কেবল রান্নাঘরে, শুদ্রদের কাজ ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় আর বৈশ্যদের সেবা করা, যেখানে দেশের মাথা কেবল পুজো করে, ধ্যান করে বা করার ভড়ং দেখায়, যেখানে দেশের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে অভিযুক্ত। এই সাত বছরে কী হয়েছে? এক রামমন্দিরের শিলান্যাস, দুই কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের রিনোভেশন, ব্যস। আর একটা কাজের কথাও বলতে পারবে এই সরকার? নিজেদের মার্কশিট নিজেদের কাছে পরিস্কার, সেই জন্যই উত্তর প্রদেশের নির্বাচনের আগে নতুন করে হিন্দু হিন্দি হিন্দুস্থান, হিন্দু খতরে মে হ্যায়, শ্লোগান নিয়ে হাজির খোদ প্রধানসেবক। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কে সামনে রেখে, তেনার পাঁচ বছরের কাজকে সামনে রেখে নয়, গঙ্গার নামে, রামের নামে ভোট বৈতরিনী পার হবার শেষ প্রচেষ্টা। তাই গলাজলে ডুবে এই যাত্রাপালা শুরু হয়েছে, তিনি কতবড় হিন্দু সেটাই তুলে ধরার চেষ্টা চলছে, কোথায় গ্যালো গুজরাট মডেল? কোথায় গ্যালো শিল্পায়ন? কোথায় গ্যালো বিকাশ? সে সব চুলোর দোরে? নাকি আসলে কিছুই ছিল না, কেবল মিডিয়ার প্রচার নিয়ে, এক বিশাল মিথ্যের ফানুষ নিয়ে হাজির হয়েছিলেন চা ওলা?

আরও পড়ুন-চতুর্থ স্তম্ভ: ভো কাট্টা

প্রতিদিন মিথ্যে কথা বলা যাঁর অভ্যেস, প্রতিদিন নিজের মুর্খামির পরিচয় দেওয়া যাঁর প্রথম কাজ, ভাবতেও লজ্জা হয় যে তিনিই আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী। তিনি শিব লিঙ্গে দুধ ঢালছেন, যে দেশে শিশুরা দুধ পায় না, দেশের অপুষ্টি বাড়ছে, ক্ষুধা বাড়ছে, আর সেই বেড়ে চলা ক্ষুধার শীর্ষে বসে আছে উত্তর প্রদেশ, সেখানেই কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরে পাথরের শিবলিঙ্গে তিনি দুধ ঢালছেন, আবার কবীর মনে পড়ে গ্যালো, পাহন পুজে হরি মিলে তো, ম্যাঁয় পুজুঁ পহাড়। ইয়াতে চাকি ভলি জো, পিস খায়ে সংসার। পাথর পুজো করলেই যদি হরি পাওয়া যেত, তাহলে আমি পাহাড় পুজো করতাম। এর থেকে তো চাকি মানে যাঁতা ভালো যা পিষে মানুষের পেট ভরে। মোদিজী, পাথর পুজো করছেন তখন, যখন দেশের মানুষ, দেশের অপুষ্টিতে ভুগতে থাকা শিশুরা খাবার চাইছে, তাদের খাবার না দিয়ে দুধ ঢালছেন পাথরে, সন্দেশ দিচ্ছেন ভগবানকে, এক খুনির সঙ্গে বসছেন ক্যাবিনেট বৈঠকে।

শেষ করার আগে, এই ভক্ত, আত্মা শুদ্ধ করতে চাওয়া, ভগবানের জন্য গুহায় ধ্যানে বসা প্রধানমন্ত্রীর জন্য, মীরার ভজনের কটা লাইন, উনি পড়েন নি, পড়বেনও না, আপনারা শুনুন।

নিত নহানে হরি মিলে তো জলজন্তু হোই, ফলমুল খাকে হরি মিলে তো, বহত বাদুর বাদরাই, তৃণ খাকর হরি মিলে তো, বহত মৃগী অজা, স্ত্রী ছোড়কর হরি মিলে তো..স্ত্রী ছোড়কর হরি মিলে তো, বহত রহেঁ হ্যাঁয় খোজা, দুধ পিকর হরি মিলে তো বহত বৎস বালা, মীরা কহে বিনা প্রেম সে, নহিঁ মিলে নন্দলালা।

মানে বুঝে নিন, আমার তো পড়ে মনে হচ্ছে, মীরা ছিলেন ভবিষ্যতদ্রষ্টা, তিনি নরেন্দ্র মোদীর জন্যই এই কয়েকটা লাইন লিখেচ গেছেন। দেশের মানুষকে ভালবাসুন, দেশের শিশুদের, সেই সব অন্নদাতাদের ভালবাসুন, সেই বেকার যুবকদের হাতে কাজ দিন। আমরা জানি এসব ওনার দ্বারা সম্ভব নয়, সম্ভব হলে ৭ বছরে সাতটা কাজ অন্তত হত, সেটাও হয় নি। এই মধ্যযুগীয় শাসনের অবসান চাই, সেটাই একমাত্র প্রতিকার, সেটাই দেশকে, দেশের মানুষকে, আরেকবার উঠে দাঁড়ানোর রাস্তা দেখাতে পারে।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Ali Khamenei | চ‍্যালেঞ্জের মুখে ইরাক-আমেরিকার সৈন্যঘাঁটি, খামেনির হুঁশিয়ারি ট্রাম্প-ম‍্যাঁক্রোকে
00:00
Video thumbnail
Iran-Israel | ইরানের কাউন্টার অ‍্যা/টা/কে ছারখার তেল আভিভ, ইজরায়েলে শুধুই সাইরেনের শব্দ
00:00
Video thumbnail
Iran | Trump | ইরানের মা/রে মাটিতে আমেরিকার F35 যু/দ্ধবিমান, চিন্তার ভাঁজ ট্রাম্পের কপালে
00:00
Video thumbnail
Abhijit Ganguly | অসুস্থ, হাসপাতালে ভর্তি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়, কী হয়েছে? এখন কেমন আছেন?
00:00
Video thumbnail
Iran-Israel | Netanyahu | যু/দ্ধের মাঝেই প্লেনে চেপে পালাচ্ছেন নেতানিয়াহু? দেখুন চাঞ্চল্যকর ভিডিও
00:00
Video thumbnail
Iran-Israel | ইরানের ৬৫ মিনিটের অ‍্যা/টাক, খেলা শেষ ইজরায়েলের? দেশ ছাড়ল কে কে?
04:40:49
Video thumbnail
Ali Khamenei | চ‍্যালেঞ্জের মুখে ইরাক-আমেরিকার সৈন্যঘাঁটি, খামেনির হুঁশিয়ারি ট্রাম্প-ম‍্যাঁক্রোকে
02:59
Video thumbnail
Iran-Israel | ইরানের কাউন্টার অ‍্যা/টা/কে ছারখার তেল আভিভ, ইজরায়েলে শুধুই সাইরেনের শব্দ
03:36
Video thumbnail
Iran | Trump | ইরানের মা/রে মাটিতে আমেরিকার F35 যু/দ্ধবিমান, চিন্তার ভাঁজ ট্রাম্পের কপালে
06:00
Video thumbnail
আমার শহর (Amar Sahar) | উলুবেড়িয়ার এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের আশা পূরণ, প্রসূতিদের জন্য নয়া ব্যবস্থা
02:15