চেন্নাইয়ান এফ সি-২ এস সি ইস্ট বেঙ্গল–২
(হীরা মণ্ডল-নিজ গোল, নিমথই মিতাই) (ড্যারেন সিডিওল, নামতে)
দু মিনিটেই প্রথম গোল খেয়ে গেল ইস্ট বেঙ্গল। পনেরো মিনিটে সেটা হয়ে গেল ২-০। তখন মনে হচ্ছিল ডার্বির হারের হ্যাং ওভার এখনও কাটেনি মারিও রিভেরার ছেলেদের। ডার্বিতে জামশিদ নাসিরির ছেলে হ্যাটট্রিক করে গেছেন লাল হলুদের বিরুদ্ধে। আর পনেরো মিনিটে দু গোলে পিছিয়ে পড়ার পর তাহলে হারের হ্যাটট্রিক হতে চলেছে? না শেষ পর্যন্ত সেটা হয়নি। ইস্ট বেঙ্গল ম্যাচটা জিততে পারেনি বটে। তবে দু গোলে পিছিয়ে থেকে শেষ পঁয়তাল্লিশ মিনিট যা ফুটবল খেলল রিভেরার ছেলেরা তাতে তাদের পঞ্চমুখে প্রশংসা করতে হবে। একতরফা ফুটবল খেলল তখন ইস্ট বেঙ্গল। গোটা দ্বিতীয়ার্দ্ধে অরিন্দমকে একটা কঠিন বল ধরতে হয়নি। তা হলেই বোঝা যাবে ম্যাচের উপর ইস্ট বেঙ্গলের কী রকম আধিপত্য ছিল। গোল শোধ করলেন ড্যারেন সিডিওল। বক্সের ঠিক বাইরে ফ্রি কিক পেয়েছিল ইস্ট বেঙ্গল। সিডিওলের শট দেবজিৎ মজুমদার ঝাঁপিয়ে পড়েও বাঁচাতে পারেননি। ৬১ মিনিটের এই গোলটা আরও তাতিয়ে দেয় ইস্ট বেঙ্গলকে। মাঝ মাঠ থেকে একটার পর একটা আক্রমণ ঢেউয়ের মতো আছড়ে পড়তে থাকে চেন্নাই ডিফেন্সে। কিন্তু সেগুলোকে গোলে পরিণত করবার জন্য যে স্ট্রাইকিং এবিলিটি দরকার তা পাওয়া যায়নি মার্সেলো কিংবা পেরোসেভিচের মধ্যে। আবশেষে ৯১ মিনিটে দ্বিতীয় গোলটা করলেন পরিবর্ত প্লেয়ার নামতে। আঙ্গুর কর্নারে আলতো হেড করে তিনি এদিনের মতো মান বাঁচালেন ইস্ট বেঙ্গলের। পনেরো ম্যাচে ১০ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট টেবলে ইস্ট বেঙ্গল উঠে এল দশ নম্বরে। আর চোদ্দ ম্যাচে ১৯ পয়েন্ট নিয়ে চেন্নাই রইল ছয়ে।
ফ্রি কিক থেকে দুর্দান্ত গোল করার জন্য ম্যাচের সেরা হয়েছেন ডাচ মিডফিল্ডার সিডিওল। আর যে হীরা মণ্ডল এত দিন ধারাবাহিকভাবে ভাল খেলে আসছিলেন তিনিই এদিন ম্যাচের খলনায়ক। দু মিনিটের মাথায় একটা বল ক্লিয়ার করতে গিয়ে তিনি নিজের গোলেই ঢুকিয়ে দিলেন। আর পনেরো মিনিটে একটা বল ধরে করে ফেললেন মিস পাস। সেই বলটা ধরেই গোল করে এলেন নিমথই মিতাই। ইস্ট বেঙ্গল ডিফেন্সের তখন এতই ভগ্নদশা যে অন্তত কুড়ি মিটার বল নিয়ে দৌড়ে নিমথই গোল করলেন। তাঁকে বাঁধা দেওয়ার কাউকে পাওয়া গেল না। এর পর কিন্তু ইস্ট বেঙ্গল ডিফেন্স অনেক গুছিয়ে খেলেছে। চেন্নাইয়ের ভয়ঙ্কর স্ট্রাইকার নেরুসিস ভালকিন্সকে সেভাবে নড়তে দেননি আদিল শেখরা। চেন্নাই অধিনায়ক অনিরুদ্ধ থাপাও বেশ নিষ্প্রভ ছিলেন। আদিলের পাশে নির্ভরযোগ্য ছিলেন ফ্রানিও পার্সে। প্রথম দিকের ভুল সামলে বাকি সময়টা বিশ্বস্ত ছিলেন হীরা মণ্ডলও।
কিন্তু ম্যাচ জিততে গেলে তো গোল করতে হবে। শেষ পর্যন্ত ইস্ট বেঙ্গল দুটো গোল করল বটে। কিন্তু তাতে স্ট্রাইকারদের ভূমিকা কোথায়? নিজেদের ক্ষমতার শেষ বিন্দু দিয়ে লড়ে চার মিডফিল্ডার সিডিওল, সৌরভ দাস, আঙ্গু এবং নাওরেম মহেশ আপ্রাণ চেষ্টা করে গেছেন মার্সেলো এবং পেরোসেভিচকে বল সাপ্লাই দেওয়ার। চেন্নাই ডিফেন্সের ভুলে মার্সেলো একবার গোল করার সহজ সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু তাড়াহুড়ো করে বাইরে মারতে গিয়ে নষ্ট করেন সেটা। ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড বললে আমাদের চোখ যেমন চকচক করে মার্সেলো তার থেকে অনেক দূরে। তিনি বক্স স্ট্রাইকার নন। একটু পেছন থেকে খেলেন। কিন্তু তাঁর না আছে ড্রিবল, না আছে হেড, না আছে ভাল শট। ইস্ট বেঙ্গলেই আমরা এর চেয়ে অনেক ভাল ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড দেখেছি। জুনিয়র তো কিংবদন্তী হয়ে গেছেন। মনে পড়ে যায় এডমিলসনের কথাও যাঁর শটে এত জোর ছিল যে সংগ্রাম মুখার্জিরা অনেক সময় শটে হাত না দিয়ে গোল খেয়েছেন। তাতে হাত ভেঙে যাওয়ার হাত থেকে বেঁচেছেন। তাদের কথা মনে করলে এই মার্সেলোকে করুণার চোখে দেখতে হবে। এ সব কাদের রিক্রূট করছেন শ্রী সিমেন্টের কর্তারা। মার্সেলোর খেলায় কোনও শ্রী তো নেই-ই। আর এত নির্বিষ তাঁর আচরণ যে টিমে জায়গা সিমেন্ট দিয়ে বাঁধিয়ে রাখবেন তাও বলা যাচ্ছে না।
অপরজন আন্তোনিও পেরোসেভিচ। আদতে মিডফিল্ডার। কিন্ত মার্সেলোর চেয়ে ভাল। পায়ে ড্রিবল আছে। শটে জোর আছে এবং সেগুলো টার্গেটেও থাকে। এদিনও বেশ কয়েকটা শট গোলে নিয়েছিলেন। হয় সেগুলো দেবজিৎ বাঁচিয়ে দিয়েছেন, নয় বাইরে গেছে। যে প্রত্যাশা তাঁর কাছ থেকে করা হয়েছিল, আন্তোনিওর কাছ থেকে তা পাওয়া যায়নি। তার উপর পাঁচটা ম্যাচ তো সাসপেনশনে বাইরেই ছিলেন। পনেরোটা ম্যাচ হয়ে গেল ইস্ট বেঙ্গলের। বাকি রইল পাঁচটা ম্যাচ। সেখান থেকে যদি দু তিনটে জয় পাওয়া যায় তাহলে অন্তত কিছুটা সম্মান নিয়ে এবারের আই এস এল শেষ করতে পারবে ইস্ট বেঙ্গল। এদিন একটা পয়েন্ট এল বটে। কিন্তু যে লড়াইটা বিরতির পর ইস্ট বেঙ্গলের ছেলেরা করল তা যদি আগামি ম্যাচগুলোতে অক্ষত থাকে তাহলে মারিও রিভেরার কোচিংয়ে মুখ রক্ষা করার মতো ফল করতেই পারে ইস্ট বেঙ্গল। আর হ্যাঁ, কোচের পছন্দ করা মিডফিল্ডার ফ্রান সোতা এদিন মিনিট পনেরোর মতো মাঠে ছিলেন। তাঁকে সেভাবে নজরে পড়েনি। আর ওইটুকু সময়েই মাঠে থেকে একটা পয়েন্ট নিয়ে এলেন এবং হার বাঁচালেন হার না মানা নামতে।