এটিকে মোহনবাগান–১ হায়দরাবাদ এফ সি–০
(রয় কৃষ্ণ)
(সেমিফাইনালের প্রথম পর্বে হায়দরাবাদ ৩-১ গোলে জিতেছিল। তাই দুই পর্ব মিলিয়ে তারা ৩-২ গোলে জিতে ফাইনালে)
ম্যাচটাকে অতিরিক্ত সময়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য এটিকে মোহনবাগানের দরকার ছিল কম করে দু গোলে জেতা। ইনজুরি টাইম ধরে একশো মিনিটে যা খেলা হয়েছে তাতে মোহনবাগানের অন্তত চার গোলে জেতা উচিত ছিল। একপেশে ফুটবল। একেবারে একপেশে। সারাক্ষণ মাঠে মোহনবাগানিদেরই দাপট। তাদের গোলকিপার অমরিন্দর সিংকে একটা কঠিন বলও ধরতে হয়নি। উল্টো দিকে মোহনবাগান আর গোলের মধ্যে বাধার পাহাড় হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন হায়দরাবাদ গোলকিপার লক্ষ্মীকান্ত কাট্টিমণি। একটার পর একটা নিশ্চিত গোল বাঁচিয়েছেন তিনি। একবার মাত্র পরাস্ত হয়েছেন। কিন্তু তাতে তাঁর বা তাঁর দলের ফাইনালে ওঠা আটকায়নি। তবে কাট্টিমণির প্রশংসা করার পাশাপাশি বলতে হবে মোহনবাগানিদের বার বার গোল মুখে ব্যর্থতার কথা। সামনে শুধু গোলকিপারকে পেয়ে হুগো বুমোর ফ্লিক বাইরে গেল। রয় কৃষ্ণও প্রবীর দাসের ক্রসে পা লাগাতে পারেননি। আর এক বার তাঁর হেড ডান হাতে পাঞ্চ করে বারের উপর দিয়ে তুলে দেন কাট্টিমণি। বলতে গেলে ফিরতি সেমিফাইনালে দল এক গোলে হারলেও তাদের ফাইনালে তুললেন এই গোয়ান গোলকিপার। তাঁকে ছাড়া আর অন্য কাউকে ম্যাচের সেরা বাছার উপায় ছিল না। দুই পর্ব মিলিয়ে ৩-২ গোলে জেতার জন্য এই প্রথম ফাইনালে উঠল হায়দরাবাদ এফ সি। রবিবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য তারা মাঠে নামবে কেরালা ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে। দক্ষিণের দুই দল কখনও ট্রফি পায়নি। এবারের আই এস এল নতুন চ্যাম্পিয়ন পেতে চলেছে।
জুয়ান ফেরান্দো জানতেন দু গোলের ব্যবধান মিটিয়ে ম্যাচটাকে অতিরিক্ত সময়ে নিয়ে যেতে হলে শুরু থেকেই অ্যাটাক করতে হবে। এবং করলেনও তাই। টিম গঠনে তিনি বিরাট সাহসিকতার পরিচয় দিলেন শুরু থেকেই কিয়ান নাসিরিকে খেলিয়ে। কিয়ানের খেলার আড় ভাঙেনি এখনও। এই ধরনের আই প্রোফাইল ম্যাচে তিনি ভীষণ বেমানান। তবে টিমের একটা উপকার করেছেন। প্রথমার্দ্ধের শেষ দিকে হায়দরাবাদের অনিকেত যাদবকে বক্সের মধ্যে ল্যাং মেরে নিশ্চিত গোল বাঁচিয়েছেন। রেফারি বা সহকারি রেফারির চোখ কীভাবে এড়িয়ে গেল তাই নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। কিন্তু কিয়ান যে নিশ্চিত গোল বাঁচিয়েছেন এটা মানতা হবে। ডিফেন্সে তিরি ছিলেন না। তাই সন্দেশ ঝিঙ্গনের পাশে প্রীতম কোটালকে নামিয়ে প্রবীর দাসকে রাইট ব্যাকে খেলালেন জুয়ান। আর ডান দিক দিয়ে একটার পর একটা বল নিয়ে উঠে হায়দরাবাদ ডিফেন্সের কাল ঘাম ছুটিয়ে দিলেন প্রবীর। তাঁর ক্রস কিংবা ব্যাক সেন্টারের ছোবলে গোল হতে পারত। যদি শেষ কাজটুকু করতে পারতেন হুগো বুমো কিংবা রয় কৃষ্ণরা। ডান দিকে প্রবীরের সঙ্গে মানানসই ছিলেন লিস্টন কোলাসো। দুরন্ত গতিতে বাঁ দিক দিয়ে বল নিয়ে গিয়ে তিনিও সেন্টার করেছেন। ৭৯ মিনিটে রয় কৃষ্ণের গোলটা তো লিস্টনের সাজিয়ে দেওয়া। বাঁ দিক দিয়ে ছুটে বক্সের মধ্যে ঢুকে তিনি একেবারে বলটা রাখলেন কৃষ্ণের জন্য। একটু ছুটে ডান পায়ের জ্যাবে গোল করলেন কৃষ্ণ।
তবে শুধু কাট্টিমণিই নন, প্রশংসা প্রাপ্য হায়দরাবাদ ডিফেন্সেরও। দুই সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার জোয়াও ভিক্টর এবং জুয়ানন জমিতে অথবা শূণ্যে একটার পর একটা বল বিপদ সীমানার বাইরে পাঠিয়েছেন। হায়দরাবাদ মিডফিল্ডও রিবাউন্ডগুলো ক্লিয়ার করেছে। তবে একটা ব্যাপার বোধগম্য হল না, কেন হায়দরাবাদ প্রথম থেকেই এত ডিফেন্সিভ খেলল। যে দলে বার্ট ওগবেচের মতো স্ট্রাইকার রয়েছেন তারা এত ডিফেন্সিভ খেলবে কেন। ওগবেচেকে এদিন পথহারা পথিকের মতো ঘুরে বেড়াতে দেখা গেল। ডিফেন্স করতে নেমে অযথা পা চালিয়ে দেখলেন হলুদ কার্ড। কোচ ম্যানুয়েল মার্কুয়েজের কপাল ভাল বলতে হবে। একে তো কাট্টিমণির ওই রকম দুর্দান্ত গোলকিপিং। আর সঙ্গে হুগো বুমোদের ব্যর্থতা। না হলে তাঁর দল হেরে ভুট্টা হয়ে যেত। কিন্তু কপালে জয় থাকলে কে আর আটকাবে। বুধ সন্ধ্যায় ভাগ্যও খানিকটা সাথ দিয়েছে হায়দরাবাদকে। এখন দেখার ফাইনালে তারা ভাগ্য দেবীর আনুকুল্য পায় কি না।