রিয়াল মাদ্রিদ–৩ ম্যাঞ্চেস্টার সিটি–১
(রডরিগো–২, করিম বেঞ্জামা-পেনাল্টি) (রিয়াধ মাহরেজ)
(প্রথম পর্বে ম্যাঞ্চেস্টার সিটি জিতেছিল ৪-৩ গোলে। দুই পর্ব মিলিয়ে রিয়াল মাদ্রিদ জিতল ৬-৫ গোলে।)
কথায় বলে, চায়ের কাপ আর ঠোঁটের মধ্যে মাঝে মাঝে বিস্তর ফারাক থেকে যায়। সেটা যে কত বড় ফারাক হতে পারে তা বুধবার রাতে হাড়ে হাড়ে টের পেল ম্যাঞ্চেস্টার সিটি। উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে উঠতে তাদের দরকার ছিল মিনিট কয়েক কাটিয়ে দেওয়া। কারণ প্রথম লেগে তারা জিতেছিল ৪-৩ গোলে। নিজেদের মাঠে সেই জয়ের পর দ্বিতীয় লেগে রিয়াল মাদ্রিদের মাঠে গিয়ে তারা রিয়াধ মাহরেজের ৭৩ মিনিটের গোলে এগিয়ে গেল। ম্যাচের সার্বিক ফল তখন ৫-৩। খেলা শেষের দিকে। এবং এই সময়টায় দুর্দান্তভাবে ম্যাচে ফিরল রিয়াল মাদ্রিদ। ৯০ এবং ৯১ মিনিটে পর পর দুটি গোল করলেন সুপারসাব ব্রাজিলের রডরিগো। ম্যাচ গড়াল অতিরিক্ত সময়ে। এবং ৯৫ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল করে রিয়ালকে ফাইনালে তুললেন তাদের অধিনায়ক করিম বেঞ্জামা। ২০১৮ সালে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদ। সেবার ফাইনালে যাদের তারা হারিয়েছিল সেই লিভারপুলই এবার ফাইনালে তাদের সামনে। ২৮ মে সেই ফাইনাল হবে প্যারিসের সাঁ দেনি স্টেডিয়ামে।
রিয়াল কোচ কার্লোস আনসোলত্তির সময়টা ভাল যাচ্ছে। কদিন আগে তিনি রিয়ালকে লা লিগা চ্যাম্পিয়ন করেছেন। এবার আবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে তুললেন। লিভারপুলকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হলে তিনি এক বিরল কৃতিত্বের অধিকারী হবেন। এর আগে তিন বার কোচ হিসেবে তিনি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেছেন। দুবার এ সি মিলানের হয়ে। আর একবার রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে। উল্টো দিকে ম্যাঞ্চেস্টার সিটির এ বারেও চ্যাম্পিয়ন্স লিগে সেরা হওয়া হল না। গত বার তারা ফাইনালে হেরেছিল চেলসির কাছে। আর এবার তো ফাইনালেই উঠতে পারল না।
অথচ বুধবার তারা যা ফুটবল খেলেছিল তাতে তাদেরই ফাইনালে যাওয়ার কথা। বিরতিতে খেলা ছিল গোল শূণ্য। কিন্তু বেশ কয়েকবার ম্যান সিটি গোলের দরজা প্রায় খুলে ফেলেছিল। কিন্তু কখনও রিয়াল লেফট ব্যাক মেন্ডি কখনও বা তাদের গোলকিপার থিওবা কুর্তোয়া সিটিকে গোল করতে দেননি। শেষ পর্যন্ত সিটিই ম্যাচের প্রথম গোলটা করল। বের্নাদো সিলভার পাস থেকে দুর্দান্ত শটে গোল করে গেলেন আলজিরিয়ান ফরোয়ার্ড রিয়াধ মাহরেজ। এর একটু আগে লুকা মদ্রিচের বদলে রডরিগোকে নামিয়েছেন আনসোলত্তি। কিন্তু ৬৮ মিনিটে রডৃইগো মাঠে নামার পাঁচ মিনিটের মধ্যেই তো গোল করে ফেলল সিটি। কিন্তু ব্রাজিলের একুশ বছরের ছেলেটার মাথায় ছিল অন্য কিছু। তাঁর টিম দু গোলে পিছিয়ে গেছে এটা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে তিনি গোল করার জন্য ঘুরঘুর করতে থাকেন। এবং কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌছে যান ৯০ মিনিটে। করম বেঞ্জামার পাস থেকে গোল করে তিনি দলকে ম্যাচে ফিরে আসতে সাহায্য করেন। মিনিট খানেক যেতে না যেতেই আবার গোল করলেন রডরিগো। এবার ড্যানি কার্বাজালের সেন্টারে হেড করে। একটু পরেই হ্যাটট্রিক মিস করলেন সহজ সুযোগ বাইরে মেরে।
দুই পর্ব মিলিয়ে ম্যাচের ফল তখন ৫-৫। ম্যাচ গড়াল অতিরিক্ত সময়ে। এবার গোল করতে বেশি সময় নেয়নি রিয়াল। বক্সের মধ্যে বেঞ্জামাকে ফাউল করলেন রুবেন ডায়াস। বেঞ্জামার শট আটকাতে পারেননি সিটির গোলকিপার এডেরসন। এবারের চ্যাম্পিয়ন্স লিগে বেঞ্জামার এটি ১৫ নম্বর গোল। এর আগে তেরো বার চ্যাম্পিয়ন্স লিগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। লিভারপুল ছয় বার। তবে যেভাবে শেষ মুহূর্তে বার বার গোল করে ম্যাচ জিতছে রিয়াল তাতে ভাগ্যদেবী মনে হচ্ছে এবারের ট্রফিটাও তাদের জন্য লিখে রেখেছে।