মালবাজার: বাবাকে কাজের প্রলোভন দেখিয়ে তাঁর জমানো শেষ সঞ্চয়টুকু নিয়ে পালাল ছেলে। আর এই ভরা বর্ষায় অসহায় বাবার একমাত্র ঠিকানা এখন রাস্তার ধারে বাসের যাত্রী প্রতীক্ষালয়। গত একমাস ধরে এভাবেই রাস্তার ধারে পড়ে রয়েছেন তিনি। রোদে জলে বৃষ্টিতে ভিজে শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছেন। নিয়মিত খাবার না পাওয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বৃদ্ধ রামচন্দ্র কানু।
বুধবার অসহায় বৃদ্ধ কে দেখতে পায় ওদলাবাড়ির স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ন্যাশনাল অ্যাডভেঞ্চার সোসাইটির সদস্যেরা। দেখামাত্রই তাঁকে মাল ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে গিয়ে তাঁকে ভর্তি করেন তাঁরা।
ওই বৃদ্ধের বাড়ি মালবাজার মহাকুমার পোড়াবাড়ি ডিপো পাড়া এলাকায়। জানা গিয়েছে, সেখানে স্থানীয় একটি মিষ্টির দোকানে কারিগর এর কাজ করতেন বৃদ্ধ রামচন্দ্র। লকডাউনের সময় কাজটি হারাতে হয় তাঁকে। কাজ চলে যায় তার ছেলে বিনোদ কানুরও। আর্থিক অনটনের মন্ত্রী দিন কাটছিল তাঁদের।
এই পরিস্থিতিতে নতুন কাজের খোঁজে দিন কয়েক আগেই বাবাকে নিয়ে শিলিগুড়ি চলে যেতে তৎপর হয়ে ওঠে বিনোদ। ছেলের কথা মতো নিজের ভিটেবাড়ি টুকুও বিক্রি করে দেন বৃদ্ধ। তারপর অজানা ভবিষ্যতের উদ্দেশ্যে রওনা হন শিলিগুড়ির পথে।
এই পর্যন্ত সব ঠিকই ছিল। কিন্তু ঘোর কাটল তখন যখন বৃদ্ধ রামচন্দ্র বুঝতে পারলেন তাঁর ছেলে ও ছেলের বউ তাঁকে একলা ফেলে রেখে পালিয়ে গেছে। কিন্তু তিনি নিরুপায়। কিছুই করার ছিলনা। নিজের ছেলেকে খোঁজার সামর্থ্য টুকুও ছিল না বৃদ্ধ রামচন্দ্রের। তাই অগত্যা উপায় না দেখে রাস্তার ধারে যাত্রী প্রতীক্ষালয় কাটিয়ে দিলেন একটা গোটা মাস। নিজের ছেলের থেকে বিতাড়িত হওয়ার যন্ত্রনা বুকে চেপে দিনের পর দিন ভিজে চললেন রোদ-ঝড়-বৃষ্টিতে। এমনই এক অমানবিকতার এই চরম ঘটনার সাক্ষী থাকল ডুয়ার্সের ছোট্ট শহরে ওদলাবাড়ি।
যদিও এই মুহূর্তে মাল ব্লক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের চিকিৎসাধীন রয়েছেন বৃদ্ধ। অন্যদিকে, তাঁর ছেলে ও পরিবারের খোঁজ শুরু করেছে স্থানীয় বাসিন্দারা।