মেদিনীপুর: কোনও সমস্যা হলে পুলিস-প্রশাসনকে নয়, জানাতে হবে গ্রাম কমিটিকে৷ এমনই লিফলেট ছড়িয়ে পড়েছে মহিষাদলের চকদ্বারিবেরিয়া গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে৷ লিফলেট দেখে চোখ কপালে গ্রামের মানুষদের৷ তাতে বলা হয়েছে, বাড়িতে মাঙ্গলিক কাজ কিংবা শ্রাদ্ধানুষ্ঠান করার আগে গ্রাম কমিটির সঙ্গে কথা বলতে হবে৷ চকদ্বারিবেরিয়ায় এমন লিফলেটকে ঘিরে শোরগোল পড়ে গিয়েছে গ্রামে৷ গ্রাম কমিটির নির্দেশাবলীকে ‘ফতোয়া’ বলে তোপ দেগেছেন তাঁরা৷ সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, স্বাধীন দেশের নাগরিক হয়ে এই ‘ফতোয়া’ তাঁরা কিছুতেই মানবেন না৷ গ্রাম কমিটি তাঁদের মৌলিক অধিকারে হস্তক্ষেপ করছে৷ এদিকে ওই লিফলেটে এটাও লেখা আছে, গ্রামে থাকতে গেলে এই নির্দেশ মানতে হবে৷
গোটা ঘটনায় লেগে গিয়েছে রাজনৈতিক রং৷ বিজেপির অভিযোগ, ২৩-এ পঞ্চায়েত ভোট আছে৷ তার আগে এই সব ফতোয়া জারি করে গ্রামবাসীদের ভয় দেখাতে চাইছে তৃণমূল৷ পঞ্চায়েত সদস্য স্বপন কুমার দাস বলেন, ‘লিফলেটে যা লেখা হয়েছে তা পুরোটাই আইনবিরুদ্ধ৷ এটা তো ফতোয়া জারি৷ গ্রাম কমিটির অনুমতি নিয়ে বিয়ে বা শ্রাদ্ধানুষ্ঠান হবে কেন? এটা তো প্রত্যেকের ব্যক্তিগত ব্যাপার৷ পুরোটাই রাজনৈতিক চক্রান্ত৷ ২৩-এ ভোট রয়েছে৷ মানুষকে কী করে দমিয়ে রাখা যায় সেই পরিকল্পনা করেছে তৃণমূল৷’

একই বক্তব্য গ্রামবাসীদের৷ বুদ্ধদেব মণ্ডল, সরস্বতী দাস, মৌমিতা দাস জানিয়েছেন, ‘কারও বাড়িতে বিয়ে হোক, পুজো হোক আগে গ্রাম কমিটিকে জানাতে হবে৷ নিমন্ত্রণ করার হলে নিশ্চয়ই জানাব৷ কিন্তু গ্রাম কমিটির অনুমতি নিয়ে অনুষ্ঠান করতে যাব কেন? ভারতবর্ষ স্বাধীন দেশ৷ এই গ্রাম ভারত থেকে আলাদা নয়৷ গ্রাম যা বলবে কেন শুনব? কেন এই নির্দেশ মানব? এটা তো নাগরিকদের মৌলিক অধিকারে হস্তক্ষেপের শামিল৷ এই নিয়ম বাতিল করতে হবে৷’ গ্রাম কমিটির কাজকে একেবারেই অনুমোদন করেন না মহিষাদলের তৃণমূল বিধায়ক তিলক কুমার চক্রবর্তী৷ বিস্ময়ের সুরে বলেন, ‘কোন যুগে বসবাস করছি? এসব কি এখন চলে? কে পুজো করবে, কে শ্রাদ্ধ করবে তা গ্রাম কমিটিকে জানাতে হবে কেন? এ জিনিস চলতে পারে না৷ কারা জড়িত খোঁজ খবর নিচ্ছি৷ ফতোয়া তুলে দিতে হবে৷’ বিজেপির অভিযোগ উড়িয়ে তিনি বলেন, ‘বিজেপি কী বলল তাতে কিছু যায় আসে না৷ বরং জ্বালানির দামবৃদ্ধির প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে দেখাক৷’