জলপাইগুড়ি: হাতির (Elephant) হানায় জলপাইগুড়ির (Jalpaiguri) রাজগঞ্জের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর মৃত্যুর পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) নির্দেশে নড়ে চড়ে বসল প্রশাসন। শুক্রবার বন দফতর হাতি উপদ্রুত এলাকাগুলিতে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিল। পরীক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য গাড়ি এবং পাহারার ব্যবস্থা করা হয়েছে। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় হাতি উপদ্রুত এলাকায় দেখা গিয়েছে , বনকর্মীরা (Forest Department) কোথাও সাইকেলে কোথাও বিকে আবার কোথাও গাড়িতে করে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছে দিয়েছেন। আবার একই ভাবে ওই পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা শেষে বাড়িতে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
তবে প্রশাসনের এই উদ্যোগের কথা বিভিন্ন জেলার প্রত্যন্ত এলাকায় অনেক অভিভাবকের কানে পৌঁছয়নি। ফলে এদিনও তাঁরা ছেলে মেয়েদের নিয়ে বিপদের ঝুঁকি মাথায় করেই পরীক্ষাকেন্দ্রে রহনা হন। জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসন স্বীকার করে নেয় তাদের খামতির কথা। প্রশাসনের দাবি, আগামিকাল থেকে সামগ্রিক ব্যবস্থা মসৃণ হয়ে যাবে। জলপাইগুড়ি সহ উত্তরবঙ্গের যে সব জেলায় হাতি উপদ্রুত অঞ্চল রয়েছে, সেখানকার মানুষের অভিযোগ প্রশাসন নড়েচড়ে বসে না বলেই হাতির তান্ডব দিন দিন বাড়ছে। রাজগঞ্জের মানুষের অভিযোগ বৃহস্পতিবার বোন দফতর তথা স্থানীয় প্রশাসন আরও তৎপর হলে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী অর্জুন দাসের এই পরিণতি হত না। যদিও দেরিতে হলেও প্রশাসনের এই উদ্যোগে খুশি হাতি অধ্যুষিত এলাকার মানুষ।
বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী উত্তরবঙ্গে থাকাকালীনই রাজগঞ্জে হাতির তান্ডবে মৃত্যু হয় অর্জুনের। পরে মুখ্যমন্ত্রী এই ঘটনাটি দুঃখ প্রকাশ করেন এবং বন দফতরকে তৎপর হওয়ার নির্দেশ দেন। এদিকে অর্জুনের মা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে মুখ্যমন্ত্রী তাঁর হেলিকপ্টারটিও রেখে দেন। জেলা প্রশাসনকে তাঁর নির্দেশ ছিল, অর্জুনের মায়ের চিকিৎসার সমস্ত ব্যবস্থা করতে হবে। দরকার হলে তাঁর হেলিকপ্টারেই এয়ার লিফটিং করেই তাঁকে কলকাতায় নিয়ে আসতে হবে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই জেলাশাসক মৌমিতা গোদারাবসু অর্জুনের মায়ের চিকিৎসার যাবতীয় ব্যবস্থা করেন। জেলা হাসপাতাল থেকে মেডিক্যাল টিম যায় তাঁর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে।
গতকালই বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, এই ঘটনা আমাদের কাঁপিয়ে দিয়েছে। সে জন্য এক বিন্দুও সময় নষ্ট না করে কড়া পদক্ষেপ করা হয়েছে। পরীক্ষা দিতে যাওয়ার সময় জঙ্গল ও জঙ্গল অধ্যুষিত এলাকায় বনকর্মীরা গাড়ি নিয়ে প্রস্তুত থাকবেন। পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষার আগে ও পরে জঙ্গল পাড় করিয়ে দেওয়া হবে। সকাল আটটা থেকে বিকেল ছ’টা পর্যন্ত একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। পরীক্ষার্থীদের বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার পর রিপোর্ট করতে বলা হয়েছে। তবে শুধু মাধ্যমিক না, এখন থেকে সমস্ত বোর্ড পরীক্ষা, সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন চাকরিরি পরীক্ষার সময় হাতি উপদ্রুত এলাকায় পরীক্ষাথীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সমস্ত রকমের পদক্ষেপ করা হবে।
এদিকে, শুক্রবারেই জলপাইগুড়ি জেলাপ্রশাসনের তরফে অর্জুনের পরিবারের হাতে পাঁচ লক্ষ টাকার চেক তুলে দেন জেলা শাসক। তিনি জানান, জঙ্গলের ভিতর যে রাস্তায় গতকাল হাতির হামলা হয়েছিল, সেই রাস্তা আপাতত যাতায়াতের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এদিনই বাঁকুড়া থেকে পশ্চিমবর্ধমানে চলে যাওয়া একটি দলছুট দাঁতালকে ঘুমপাড়ানি গুলিতে কাবু করে বন দফতর। সেটিকে ঝাড়গ্রাম জেলার গভীর জঙ্গলে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।