বলাগড়: নিয়োগ দুর্নীতিতে (Recruitment Scam) হুগলির যুব তৃণমূল নেতা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Shantanu Banerjee) গ্রেফতারের পরই মুখ খুলতে শুরু করেছে জিরাটের মানুষ। এত কম সময়ে এত প্রতিপত্তি কীভাবে, তার খোলসা করছেন বলাগড়ের শান্তনুর এলাকার মানুষ। তাঁদের মতে, ধাবা, হোম স্টে-র পাশাপাশি বলাগড়ের চাদরা বটতলা অঞ্চলে গঙ্গার পারে বিশাল একটি রিসর্ট আছে শান্তনুর। রিসর্টের পাশাপাশি বেশ কিছু জমিও বেনামে কিনেছেন শান্তনু বলে দাবি এলাকাবাসীর।
স্থানীয়রা আরও জানিয়েছেন, মাঝেমধ্যেই ওই রিসর্টে বাইরে থেকে বেশকিছু গাড়ি আসত। চলত ঘণ্টার পর ঘণ্টা মিটিং। কে বা কারা সেখানে আসত, তা নিয়ে অবশ্য কিছু জানেন না স্থানীয়রা। সবাই যে স্বেচ্ছায় জমি দিয়েছেন তাও না। জমি দেওয়ার জন্য রীতিমতো চাপ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। শান্তনুর জিরাটের বাড়ির কাছে বারুইপাড়া এলাকায় রয়েছে ‘দ্য স্পুন’ নামে একটি আধুনিক রেস্তরাঁ ও ধাবা। ২০২১ সালে এই ধাবা তৈরি হয়। এসটিকেকে রোডের পাশে যেখানে এই ধাবা তৈরি হয়েছে, সেখানে চারটি পরিবারের বসবাস ছিল। সেই পরিবারগুলিকে ধাবার পিছনে জমি কিনে পুনর্বাসন দেওয়া হয়। তবে যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, তা মানা হয়নি বলে অভিযোগ ওই পরিবারগুলির। ধাবার বিপরীত দিকে রয়েছে ‘ইচ্ছে ডানা’ নামে একটি হোম স্টে। সেটিরও মালিক শান্তনু।
আরও পড়ুন: Tejashwi Yadav CBI | জমির বিনিময়ে চাকরি কাণ্ডে তেজস্বী যাদবকে ফের তলব সিবিআইয়ের
বলাগড় বিজেপি যুব মোর্চার কনভেনর চিরঞ্জিত রায়ের অভিযোগ, নিয়োগ দূর্নীতির কোটি কোটি টাকা শান্তনুর কাছে এসেছে। সেই টাকা দিয়ে ধাবা, রিসর্ট, হোটেল, হোম স্টে, একাধিক ফ্ল্যাট এবং প্রচুর জমি কেনা হয়েছে বেনামে।
শুক্রবার সকাল থেকে টানা জিজ্ঞাসাবাদের পর সন্ধ্যায় ইডি গ্রেফতার করে হুগলির দাপুটে নেতা শান্তনুকে। ইডির তলব পেয়ে এদিন সকালে সিজিও কমপ্লেক্সে হাজির হয়েছিলেন হুগলির জেলা পরিষদের কর্মাধক্ষ্য শান্তনু। সাত ঘণ্টা ধরে ম্যারাথন জিজ্ঞাসাবাদ চলে শান্তনুকে। সূত্রের খবর, এদিন তাঁর সম্পত্তি সংক্রান্ত নানা তথ্য চেয়ে পাঠায় ইডি। এর আগেও তাঁকে ইডি দফতরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। কুন্তল ঘোষের বাড়িতে তল্লাশির দিনই শান্তনুর হুগলির বাড়িতেও তল্লাশি চালান ইডি আধিকারিকরা।
ইডি সূত্রের খবর, জিজ্ঞাসাবাদে শান্তনুর কাছ থেকে বেশ কিছু তথ্য পাওয়া যায়। শান্তনুর বাড়ি থেকে যে ৩০০ জন চাকরিপ্রার্থীর তালিকা পাওয়া গিয়েছিল, তার থেকে সাতজন নিয়োগপত্র পেয়েছেন। এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে মনে করছে ইডি। চাকরিপ্রার্থীদের নামের তালিকা কেমন করে শান্তনুর কাছে এল, তা জানতে চায় ইডি। সেই তালিকা থেকে কেমন করে চাকরি দেওয়া হল, তাও জানার চেষ্টা করছে ইডি। পাশাপাশি বিভিন্ন স্কুলে চাকরি পাওয়া প্রার্থীদের নাম কেনই বা শান্তনুর বাড়িতে রয়েছে, তাও জানতে চান ইডি আধিকারিকরা।
ইডি সূত্রের খবর, শান্তনুর বয়ানে একাধিক অসংগতি পাওয়া গিয়েছে। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার দাবি, শাসকদলের এই যুবনেতা বহু তথ্য গোপন করে যাচ্ছেন। শান্তনুর দেওয়া বয়ান দিল্লির সদর দফতরে পাঠানো হয়। দিল্লি থেকে সবুজ সংকেত মিলতেই সন্ধ্যায় শান্তনুকে গ্রেফতার করে ইডি। তাঁর বিরুদ্ধে তদন্তের অসহযোগিতার অভিযোগ আনা হয়েছে।