মুম্বই: প্রয়াত বর্ষীয়ান অভিনেত্রী – নৃত্যশিল্পী বেলা বোস। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৯। বর্ষীয়ান অভিনেত্রীর মৃত্যুতে শিল্প জগতে শোকের ছায়া নেমে আসে। প্রায় ২০০টি হিন্দি এবং আঞ্চলিক ছবিতে অভিনয় করেন বেলা বোস। ১৯৫০ থেকে ৮০-র দশকে বড় পর্দায় দাপিয়ে অভিনয় করেন এই অভিনেত্রী। শিকার, জিনে কি রাহা, জয় সন্তোষী মা-র মত একাধিক ব্লকবাস্টার ছবিতে অভিনয় করেন বেলা বোস। কেরিয়ারের মাঝ পথে অভিনেতা, পরিচালক আশিষ কুমারকে বিয়ে করেন বেলা বোস।
টেলিফোনের ওপারে নয়, লাইট সাউন্ড ক্যামেরার পিছনে থাকা এই বেলা বসু সব কিছুকে ছাপিয়ে বলিউডে বাজিমাত করেছিলেন নিজের নৃত্যশৈলিতে। ষাটের দশকে টিনসেল টাউন জয় করা এই বঙ্গললনা এখন হারিয়ে গিয়েছেন বিস্মৃতির অতলে।
কলকাতায় এক সম্পন্ন পরিবারে বেলার জন্ম ১৮ এপ্রিল, ১৯৪১। আর্থিক সঙ্কটে পড়ে তাঁর বাবা অমূল্যরতন বসু কলকাতা ছেড়ে বম্বে (আজকের মুম্বই) পাড়ি দেন ১৯৫১ সালে। সেখানে তিনি কাপড়ের ব্যবসা করতেন। নতুন শহরে কিছু দিন চলার পরেই ছন্দ পতন। ১৯৫৩ সালে পথ দুর্ঘটনায় মারা গেলেন বেলার বাবা। শক্ত হাতে সংসারের হাল ধরেন বেলার মা, লীলাবতীদেবী। তিনি ছিলেন গৃহবধূ। পরে নার্সিংয়ের প্রশিক্ষণ নিয়ে একটি হাসপাতালে যোগ দেন নার্স হিসেবে। এই পরিস্থিতিতে, স্কুলের পাঠ শেষ হতেই মায়ের পাশে দাঁড়ালেন বেলা। সঙ্কটের সময়ে কাজে লাগল বেলার নৃত্যশিক্ষা। মুম্বই গিয়ে বেলা কত্থক, কথাকলি-সহ বিভিন্ন ধরনের নাচের প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন।
এরপর স্কুলে পড়তে পড়তেই গ্রুপ ডান্সার হিসেবে তাঁর হাতেখড়ি হয় হিন্দি ছবিতে। মুম্বইয়ে বেলা থাকতেন অন্ধেরীতে। মাঝে মাঝেই স্কুলফেরত বান্ধবীদের সঙ্গে পৌঁছে যেতেন স্টুডিয়োর দরজায়। শুটিংয়ের পরিবেশের সঙ্গে কিছুটা পরিচিতি ছিল সেই সূত্রেই। তবে স্বাভাবিক ভারতীয় কিশোরীদের তুলনায় বেলা ছিলেন অনেকটাই লম্বা এবং রোগা। ফলে প্রায়ই বাদ পড়তেন নাচ থেকে। কারণ বাকিদের সঙ্গে তাঁর উচ্চতায় সাদৃশ্য থাকত না।
তবে পঞ্চাশের দশকের শেষ থেকে বেলা বসু হয়ে উঠলেন বলিউডের এক জন একক নৃত্যশিল্পী বা সোলো ডান্সার। তাঁর প্রথম বড় ব্রেক এসেছিল ‘ম্যাঁয় নশে মেঁ হুঁ’ ছবিতে। ১৯৫৯-এ মুক্তি পাওয়া এই ছবিতে নায়ক নায়িকা ছিলেন রাজ কপূর এবং মালা সিনহা। কঠোর পরিশ্রমে নৃত্যশিল্পী হিসেবে বলিউডে নিজের পায়ের নীচে জমি মজবুত করেন বেলা। হয়ে ওঠেন হেলেন-আশা পারেখ-মুমতাজের যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী। শাস্ত্রীয় নৃত্য থেকে বলিউডি নাচ—বেলা বসুর বিচরণক্ষেত্র ছিল অবাধ।
নায়িকা হিসেবে বেলাকে প্রথম দেখা গিয়েছিল ‘নাগিন অউর সপেরা’ ছবিতে। ১৯৬৬ তে মুক্তিপ্রাপ্ত এই ছবিতে বেলার বিপরীতে নায়ক ছিলেন মনোহর দেশাই। এর পাশাপাশি তাঁর ফিল্মোগ্রাফিতে উল্লেখযোগ্য বাকি ছবি হল ‘বন্দিনী’, ‘প্রফেসর’, ‘আম্রপালী’, ‘শিকার’, ‘প্রেমপত্র’, ‘জিদ্দি’, ‘চিত্রলেখা’, ‘পুনম কে রাত’, ‘বক্সার’, ‘অভিনেত্রী’ এবং ‘জয় সন্তোষী মা’। এর পর দুই সন্তানের মা হওয়ার পরে তিনি অভিনয় পুরোপুরি ছেড়ে দেন। বেলার মেয়ে মঞ্জুশ্রী এক জন প্রতিষ্ঠিত চিকিৎসক। ছেলে, অভিজিৎ একটি আর্থিক সংস্থার উচ্চপদস্থ কর্মী।