অভিষেকের মৃত্যু যেন টলিপাড়ায় একটা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে দিয়েছে। এতদিন যা ছিল ফিসফাস, বন্ধ ঘরের পার্টিতে গসিপের বিষয়। একটা মৃত্যু যেন হটাৎ করে সেই সব গোপন সত্যিকে আমজনতার সামনে উলঙ্গ করে দিয়েছে। বিষয়টা আজকের কোনো আলোচ্য বিষয় নয়. গত ২০ বছর ধরে এই আলোচনাটা চলছে যে প্রসেনজিৎ এবং ঋতুপর্ণার জন্য অভিষেকের ক্যারিয়ার বরবাদ হয়েছে। এমনকি বুম্বাদা কলকাঠি নেড়েছে অভিষেককে বহু ছবি থেকে বাদ দেবার জন্য। এই নিয়ে অভিষেকের আক্ষেপ হতাশা কিছু কম ছিল না. বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে এই বিষয় উঠে এসেছে কিন্তু কোনোদিনই প্রকাশ্যে কেউ ‘আমিই ইন্ডাস্ট্রি’ র বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পেতেন না. অভিষেকের মৃত্যু যেন সেই আগলটা ভেঙে দিয়েছে।
তার মৃত্যুর পর থেকেই একের পর এক তারকা, চলচ্চিত্র পরিচালক রীতিমতো পরিস্কার করে আঙ্গুল তুলেছেন এই দুজনের দিকে। পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রসেনজিৎ নিজে কতটা শোকাহত তার সাফাই দিয়েছেন আর তার সোশ্যাল মিডিয়া টীম নেমে পড়েছেন আক্রমণ প্রতিহত করতে। ঋতুপর্ণা অন্যদিকে নিজের নামে খবরের কাগজে জানিয়েছেন যে তিনি কতটা ভেঙে পড়েছেন এবং এই শোকের সময়ে তিনি এই ধরণের কুৎসার দিকে মন দিতে রাজি নন. কিন্তু নিন্দুদের কে থামাবে? শ্রীলেখা মিত্র রীতিমতো ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছেন ইন্ডাস্ট্রির দাদা, দিদির দিকে।
সোজাসুজি অভিযোগ তুলেছেন যে প্রসেনজিৎ এবং ঋতুপর্ণা শুধু মাত্র অভিনেতার ক্যারিয়ার ধ্বংসই করেন নি. এই পাপের ফল ও তারা ভোগ করবেন। অন্যদিকে আর এক অভিনেত্রী আবার এদিক ওদিক বলে বেড়াচ্ছেন যে বুম্বাদাকে ব্যবহার করে বহু মানুষ গুছিয়ে নিয়েছেন এবং এখনো বুম্বাদার নাম ব্যবহার করেই কিছু মানুষ পাবলিসিটি পেতে চাইছেন।
সব মিলিয়ে বেশ জমে গেছেন অরুন চট্টোপাধ্যায় এর আমিই ইন্ডাস্ট্রির ভেতরের নাটক। কিন্তু কতগুলো প্রশ্ন কেমন যেন খোঁচা দিচ্ছে মনে মনে. প্রথম প্রশ্ন, অভিষেক বেঁচে থাকতে কেউ এতো কিছু জেনেও কেন মুখ খুললেন না? দ্বিতীয়ত, যদি সকলেই জেনে থাকেন যে প্রসেনজিৎ এবং ঋতুপর্ণা এতো অভিনেতার কেরিয়ার নষ্ট করেছেন তবে তারা কেন প্রতিবাদ করলেন না? বা ফেডারেশন এ অভিযোগ জানালেন না? তৃতীয়ত, এতো জন প্রসেনজিৎ এবং ঋতুপর্ণার বিরুদ্ধে ক্ষোভ তবে তাদের বিরুদ্ধে ছবি করবেন না বলে কেন জানালেন না কোনোদিন? চতুর্থত, ধরে নেওয়া হলো, প্রসেনজিৎ এবং ঋতুপর্ণা অভিষেককে বহু ছবি থেকে বাদ দিয়েছেন। কিন্তু সেই সব ছবির পরিচালকরা কেউ কেন স্বীকার করলেন না আজও যে প্রসেনজিৎ এর এদেশে অভিষেক কে বাদ দেওয়া হয়েছে। কোথায় সেই সব পরিচালকরা?
পঞ্চমত, এর থেকেও বড়ো একটা বিষয় আমজনতার মনে ঘুরপাক খাচ্ছে। তিনদিন ধরে একটা মানুষ অসুস্থ, পেটে ব্যাথা, বমি করছে এবং চিকিৎসক এখুনি হাসপাতালে ভর্তি হতে বলছেন। তবুও কেন তাকে হাসপাতালে নেওয়া হলো না? দ্বিতীয়ত, রোগী কখনোই হাসপাতালে যেতে চান না, তার পরিবার পরিজন রীতিমতো জোর করে রোগীকে ভর্তি করেন হাসপাতালে, এবং চিকিৎসকও মেডিকেল এথিক্স মেনে প্রেসক্রিপশনে পরিস্কার লিখে দেন যে এখুনি ভর্তি প্রয়োজন। সেটা কেন হলো না? এখনও কেন পরিস্কার করে মৃত্যুর কারণ জানা গেলো না? শেষমুহূর্তে কি অবহেলা হয়নি বা পরিস্থিতিতে খুব লঘু করে দেখা হয়নি? নাকি এটাও বুম্বাদা আর ঋতু কলকাঠি নেড়ে হাসপাতাল থেকে অভিষেককে বাদ দিয়ে দিয়েছিলো? উত্তর কিন্তু একদিন প্রকাশ্যে আসবেই।