২০ বছরের ও বেশি সময় ধরে বলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করছেন ‘আনেদখি ‘ , ক্রিমিনাল জাস্টিস খ্যাত অভিনেতা দিব্যেন্দু ভট্টাচার্য। এই কুড়ি বছরে অনেকটাই বদলেছে ইন্ডাস্ট্রি এমনই মনে করেন অভিনেতা। তাঁর কথায়,” ২০০০ সালে মুম্বই চলে আসি। আগের থেকে অনেক কিছুই বদলেছে ইন্ডাস্ট্রি। আগে যেমন এই কাস্টিং ডিরেক্টর বলে কিছু ছিলোনা। নিজের কাজের কিছু রেফারেন্স থাকলে সোজাসুজি পরিচালকের সঙ্গেই দেখা করা যেতো। পছন্দ হলে পরিচালক নিজেই চরিত্র দিয়ে দিতো। তবে এখন কাস্টিং ডিরেক্টর এর মাধ্যমেই অভিনেতা ঠিক হয়। তাছাড়া ওটিটি মাধ্যম চলে আসাতে আমূল একটা পরিবর্তন আসে ইন্ডাস্ট্রিতে, বহু নতুন প্রতিভা উঠে আসছে। আর 20 বছর মানে তো দুই দশক , দুটো জেনারেশন প্রায়। এখন আমি যাদের সঙ্গে কাজ করছি তারা হয়তো মনসুন ওয়েডিং, দেব- ডি , ব্ল্যাক ফ্রাইডে দেখেনি, নতুন প্রজন্মের অনেকেই আমায় চেনে ‘ক্রিমিনাল জাস্টিস ‘ থেকে। আবার আগের প্রজন্মের কাছে আমার অভিনয়ের ভ্যালু ‘দেব-ডি’ থেকে। পরিবর্তন আর সেরকম কিছু হয়নি , তবে প্রজন্মের পর প্রজন্ম কাজটা করে যেতে হবে এটুকুই জানি।
ওটিটি আসাতে বহু অভিনেতা উঠে এসেছে, লুট লাপাটের অভিনেতা বলেন, শুধুমাত্র অভিনেতা নয় অনেক চিত্রনাট্যকার, পরিচালক যারা আগে ঘুরে বেড়াতো তাঁদের চিত্রনাট্য এখন প্রযোজকরা লুফে নিচ্ছে, তারাই বলছেন আহা দারুণ স্ক্রিপ্ট। কোথায় ছিলে এতোদিন, আসলে এরা সামনে থাকলেও কেউ গুরুত্ব দেয়নি। এখন এরা সুযোগ পাচ্ছেন। কারণ এখনতো ভারতীয় সিনেমাতে নবজাগরণ হচ্ছে। এখানে ভালো কাজ জানা পরিচালক, অভিনেতা, টেকনিশিয়ানরাই কাজ করছেন। এখানে কন্টেন্ট শেষ কথা , আসলে বাজারে চলেনা বলে আগে বহু এক ঘেয়ে কাজ চলতো, আসলে কেউই জানিনা কোনটা চলবে আর কোনটা চলবেনা। তাঁর মতে , ক্যারেকটর অ্যাকটর, হিরো আলাদা কিছু নয়। একটা হিরো তো নিজেও একটা চরিত্র, তা নালেই তার আশে পাশে পার্শ্ব চরিত্র রাখতে হবে যাদের সাহায্যে গল্প এগোবে। তবে এটা মানতেই হবে আজকের তারিখে চিত্রনাট্যই হিরো। আর ওটিটি হল ফিউচার অফ ইন্ডিয়ান সিনেমা।
হিন্দির পাশাপাশি হাতেগোনা কয়েকটি বাংলা প্রজেক্টে দেখা গেছে বাঙালি এই অভিনেতাকে, ‘ধানবাদ ব্লুজ’, লাল বাজার ও সম্প্রতি একটি বাংলা ক্রাইম থ্রিলার ছবির কাজ শেষ করেছেন।
অভিনেতা দিব্যেন্দুর মতে, বাংলাতে কন্টেন্ট এর উপর জোর দিতে হবে অনেক বেশি। আর কোন একটা কন্টেন্ট হিট হলেও তার মতোই যদি কপি করে সিরিজ হতে থাকে তাহলে সমস্যার। আর ওটিটিতে সেন্সর নেই বলে যা খুশি তাই দেখানোটাও ঠিক নয়। নতুন বিষয় , নতুন প্রেজেন্টেশন হলো ওটিটিতে সাফল্যের চাবিকাঠি। এখন দেখা যায়, সবাই ভাবছে একটা ‘গ্যাংস অফ ওয়াসিপুর’ বানাবো, এটাই ভুল হচ্ছে, কপি করলে সমস্যা। গল্পই আসল, গল্প নিজেই বলে দেবে স্টাইল কী হতে পারে।
‘ক্রিমিনাল জাস্টিস ‘, ‘আনদেখি’, লুট লাপাটে, ‘রকেট বয়েজ ‘ কোন চরিত্র করা বেশি কঠিন জানতে চাইলে অভিনেতা বলেন, প্রত্যেকটি চরিত্র আলাদা, তাই সব গুলো করতেই বেশ চ্যালেঞ্জিং মনে হয়েছে, আসলে চরিত্র নেগেটিভ হোক বা পজিটিভ দুটোই বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে হবে। আমার মধ্যেই রাম রাবন দুই আছে, যখন যেটা প্রয়োজন সেটাই পর্দায় তুলে ধরছি। ক্রিমিনাল জাস্টিস এ দর্শকদের ভয় পাওয়াতে না পারলেতো গল্পটাই দাঁড়াবেনা । তেমনই আবার ‘আনকাহিতে ‘ আমার চরিত্রটি হোরো, পর্দায় দেখা গেলেই দর্শকদের মনে আশা জাগছে এবার ভালো কিছু হবে।
বহুদিন ধরে বহু চরিত্রে দেখা গেলেও দিব্যেন্দু ভট্টাচার্যর অভিনয় প্রতিভার কতো অংশ ব্যবহার করতে পেরেছে ইন্ডাস্ট্রি।
এই প্রশ্নের উত্তর অভিনেতা বলেন, “প্রতিদিন শিখছি, রোজ সেট এ গিয়ে নতুন কিছু শিখি।এখনও কিছুই করতে পারিনি। আগামী দিনে অনেক কিছু দেওয়ার বাকি আছে, আগামী দিনে বেশ কিছু কাজ আসছে। এখনও কিছু বলা বারণ, তবে এটা বলতে পারি দর্শক নতুন ভাবে অভিনেতা দিব্যেন্দু কে পাবে ।
কথা প্রসঙ্গে অভিনেতা জানালেন, আগামী দিনে পরিচালনায় আসতে পারেন তিনি তবে এখনই কিছুই বলতে পারছেন না।এই মুহূর্তে ‘জামতারা ২’ এর শ্যুটিংয়ের কাজ শেষ, আসতে চলেছে ‘আনদেখি ২’ , গন গেম এর দ্বিতীয় সিজন।কলকাতায় বাংলা ছবি ‘বনবিবি’ র ও ‘গিরগিট’ ছবির শ্যুটিংয়ের কাজ শেষ।
ক্রিমিনাল জাস্টিস এর অভিনয়ের জন্য ট্রোলিং এর সম্মুখীন হতে হয়েছিল অভিনেতাকে। তাই তিনি মনে করেন এই স্যোশাল প্ল্যাটফর্মের ভালো খারাপ দুটো দিক রয়েছে, একদিকে যেমন, খুব সহজেই দর্শকদের রিয়্যাকশন পেয়ে যাই, অন্যদিকে আবার অনেক কমেন্ট থাকে যেগুলো না দেখা গেলেই ভালো ছিল। অনেকে আছে নিজে হয়তো কিছুই জানেন না তবে এমন সম মন্তব্য করে, যে সেটা নিয়েই হইহই পড়ে যায়, যেমন কেউ একজন লিখে দিলো শচিন আবার খেলতে পারে নাকি, সে হয়তো ব্যাটে বলে লাগাতে পারেনা। অপ্রাসঙ্গিক জিনিস ভরে থাকে এই স্যোশাল মিডিয়ায়, যে যা ইচ্ছে তাই বলতে পারে এখানে। তবে স্যোশাল মিডিয়ার মাধ্যমেই আবার ভালো কাজ উঠে আসছে।