Sunday, June 15, 2025
HomeবিনোদনThe Eken Ruddhaswas Rajasthan | ধুলোর সঙ্গে ওড়ে রহস্য, মাটিতে কান...

The Eken Ruddhaswas Rajasthan | ধুলোর সঙ্গে ওড়ে রহস্য, মাটিতে কান পাতলে শোনা যায় বিভীষিকাময় গোঙানি

Follow Us :

‘কালো’ হোক বা ‘কাচ্চে ধাগে’, বা ‘এজেন্ট বিনোদ’ কিংবা ‘বাচ্চা পাণ্ডে’, শুটিং লোকেশন নিয়ে খুব একটা মাথাব্যথা নেই আমপাবলিকের। জমজমাট অ্যাকশনে মজে অন্ধকার হলে সিটি পড়ে বিস্তর। তবে রাজস্থান মানেই কেল্লা, বালি, স্যানডিউন আর কেল্লার আনাচে কানাচে ইতিহাস ফিসফিস করে কথা বলে। অত্যাচারী রাজা-রাজড়ার পীড়ন, অকথিত প্রেমকাহিনি কেল্লার রংচটা দেওয়ালে ধাক্কা খেয়ে ফিরে ফিরে আসে। একাধিক হিন্দি সিনেমার (Hindi Cinema) সেট পড়েছে রাজস্থানের সেই গ্রামে। যে গ্রামের দমবন্ধ বাতাসে এখনও গুমরে মরে সালিম সিংয়ের (অনেকেই বলেন জালিম, মানে নিষ্ঠুর) অত্যাচারের না-বলা কাহিনি। গ্রামের মজবুড়োরা আড়ালে আবডালে মুখ খোলেন বটে, পাগড়ি মাথায়, ভেঙে যাওয়া গালের পাশে ফোকলা দাঁতের ফাঁক দিয়ে স্মৃতির পাতা উঁকি দিয়ে যায় বটে, কিন্তু গোধূলির ছায়া দীর্ঘ হতে শুরু করলে, সব্বাই চুপ। তখন কেউ কোত্থাও নেই। মরার মতো পড়ে থাকে আস্ত একটা গ্রাম, তেতে ওঠা বালির বুকে হঠাৎ ঠান্ডা নামে, সূর্য পাটে বসলে, নিশাচর জীবনের গোড়াপত্তনে ভয় ভয় রাত্তিরের করুণ সুর বেজে ওঠে। কেউ কোত্থাও নেই, অথচ ওই দূর থেকে ভেসে আসে মন কেমন করা বাঁশির সুর। কে বাজায় বাঁশি? না, সে সন্ধানে গিয়ে লাভ হয় না। নিমেষে উধাও হয়ে যায় পদচিহ্ন, আতঙ্কের চোরাবালিতে হুশ করে ডুবে যায় শরীরী উপস্থিতি, অশরীরীরা ঘুরে বেড়ায়, জরিপ করে আধুনিক জীবনের আদ্যোপান্ত, জ্যান্ত গ্রামের মড়াকান্নায় ছ্যাঁৎ করে ওঠে বুক।

  এই সময়ের ডেয়ারডেভিল এবং জনপ্রিয় চরিত্র একেনবাবু। সেই একেনবাবুর (Eken Babu) নয়া অ্যাডভেঞ্চার ‘দ্য একেন রুদ্ধশ্বাস রাজস্থান’(The Eken Ruddhaswas Rajasthan) -এর সেট পড়েছিল রাজস্থানের এই পরিত্যক্ত গ্রামে। এই প্রথম কোনও বাংলা ছবির শুটিং হয়েছে এই গ্রামে। কুলধারা। যে গ্রামের নাম শুনলেই পিলে চমকে ওঠে। পা টিপে টিপে রাতের অন্ধকারে কান পেতেছিলাম সেই গ্রামের মাটিতে। অভ্যেসের বশে। আসলে পুরুলিয়ার বেগুনকোদরে প্যারানর্মাল সোসাইটির সঙ্গে রাত কাটিয়েছি, ভূত দেখেছি বলব না, তবে দেখতেই তো গিয়েছিলাম, ভূতের সঙ্গে মোলাকাত হয়নি বটে, তবে আজব সব অনুভব ঝুলিতে ভরে ফিরেছি। তেনারা পাশে বসে তাস খেলেননি বটে, কিংবা তেল দিয়ে মুড়ি-মাখার সঙ্গে পেঁয়াজি বা লঙ্কায় কামড় দেননি বটে, তবে কানে ফিসফিসিয়েছে। শিরদাঁড়া দিয়ে ঠান্ডা স্রোত নেমে গেছে। বেগুনকোদর থেকে একঝুড়ি অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরে আসা। তারপর রাত জেগে কুলধারা নিয়ে বিস্তর পড়াশোনা আর কখন যেন রাতের অন্ধকারে নিমেষে রাজস্থানের সেই অজ গাঁয়ে পৌঁছে যাওয়া।

আরও পড়ুন:WhatsApp | Android | বড় বদলের পথে হোয়াটসঅ্যাপ, অ্যান্ড্রয়েড প্ল্যাটফর্মে লক্ষ্যণীয় পরিবর্তন

২০১০ সালে দিল্লির প্যারানরম্যাল সোসাইটির একটি দল এই গ্রামে এক রাত কাটিয়েছিল। তাঁদের একাধিক ভৌতিক অভিজ্ঞতা হয়েছে বলেও দাবি করেছিলেন ওই দলের সদস্যরা। আর এই সব ঘটনা মিলিয়েই পাকাপাকিভাবে অভিশপ্ত গ্রামের তকমা লেগে গেছে কুলধারা গ্রামের গায়ে। 
           

সময়টা উনবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিক। সে সময় এই গ্রামে পালিওয়াল ব্রাহ্মণদের বসবাস ছিল। থর মরুভূমির কোলে এই গ্রামের পত্তন হয়েছিল ত্রয়োদশ শতকে। সে সময় স্থানীয় এক মন্ত্রীর কুনজর পড়ে ওই গ্রামের এক তরুণীর ওপর। এরপর রাতারাতি জনশূন্য হয়ে গিয়েছিল গোটা গ্রাম। পরদিন সকালে গ্রামের কুলদেবতা বিষ্ণুর মন্দিরে ঘণ্টাধ্বনি শোনা যায়নি আর। কোনও ঘরে দেখা যায়নি উনুনের ধোঁয়া। কোথাও শোনা যায়নি ফিসফিসিয়ে কথা বলার আওয়াজটুকুও। ওই মেয়ের সম্মান বাঁচাতে গোটা গ্রাম রাতের অন্ধকারে চম্পট দেয়। কোথায় যায় কেউই জানে না। তারপর থেকে অভিশপ্ত গ্রাম বলেই সকলে চেনেন রাজস্থানের জয়সলমির থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরের কুলধারা গ্রামকে। এ গ্রামে তারপর থেকে কেউ কখনও থাকতে পারেননি। কোন এক অজানা কারণে জলের আকাল পড়েছিল গ্রামে, অনেকে ভয়াবহ ভূমিকম্পের দোহাই দেন, অনেকের মুখে জয়সলমির রাজ্যের মন্ত্রী সালিম সিংয়ের নৃশংসতা। 
                 

জয়সলমির শহর থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিম। এক দেবীর মন্দিরকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা জনপদ। তিনটে সরু রাস্তা, আরও সরু গলি, তস্য গলি পেরিয়ে কুলধারা। জয়সলমিরের পূর্ব দিকে কাকনী নদী। শুষ্ক-নদীর তলদেশের মুখোমুখি, পশ্চিম দিকটা মানবসৃষ্ট কাঠামোর পিছনে শক্তিশালী দেওয়ালে সুরক্ষিত। তাওয়ারিখ-ই-জয়সলমির, লক্ষ্মী চাঁদের লেখা ১৮৯৯ সালের ইতিহাস বই বলছে, কধান নামে একজন পালিওয়াল ব্রাহ্মণ কুলধারা গ্রামে বসতি স্থাপনকারী প্রথম ব্যক্তি। তিনি গ্রামে উধনসার নামে একটি পুকুর খুঁড়েছিলেন। গ্রামের ধ্বংসাবশেষে চোখ পাতলে আজও দেখা যায় ৩টে শ্মশান, যেখানে বেশ কয়েকটি দেবালী (স্মৃতি পাথর বা সোনোটাফ) রয়েছে। দুটি দেবালী শিলালিপি দ্বারা নির্দেশিত গ্রাম। এই শিলালিপি থেকে জানা যায় ১২৩৫ এবং ১২৩৮  খ্রিস্টাব্দে দুই বাসিন্দার মৃত্যু হয়। লক্ষ্মী চাঁদের তাওয়ারিখ-ই-জয়সলমিরে পালিওয়াল জনসংখ্যা এবং বেশ কয়েকটি গ্রামের পরিবারের পরিসংখ্যান আছে। ১৮৯০ সাল নাগাদ গ্রামের জনসংখ্যা ৩৭-এ নেমে আসে। দেবালী শিলালিপিতে এই গ্রামের বাসিন্দাদের বর্ণ “কুলধর” বা “কালধর” হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। কুলধারা ছিল পালিওয়াল ব্রাহ্মণদের মধ্যে একটি বর্ণ গোষ্ঠী এবং এই বর্ণের নামেই গ্রামের নামকরণ। কিছু শিলালিপিতে বাসিন্দাদের জাতি এবং গোত্র উল্লেখ আছে। শিলালিপিতে উল্লিখিত বিভিন্ন জাতির মধ্যে রয়েছে হরজাল, হারজালু, হারজালুনি, মুদগল, জিসুতিয়া, লোহারথি, লাহথি, লাখর, সাহারান, জাগ, কালসার এবং মহাজালার। গোত্রগুলির মধ্যে অসমর, সুতধন, গার্গবী এবং গগো। পালিওয়াল ব্রাহ্মণ ছাড়াও, শিলালিপিতে ধানমগ এবং সুজো গোপালনা নামে দুই সূত্রধরের (স্থপতি) উল্লেখ আছে। শিলালিপিগুলি ইঙ্গিত করে যে ব্রাহ্মণ বাসিন্দারা ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের মধ্যে বিয়ে করেন।  গ্রামের বাসিন্দারা ছিলেন বৈষ্ণব। গ্রামের প্রধান মন্দিরে বিষ্ণু ও মহিষাসুর মর্দিনীর ভাস্কর্য ছিল। বেশিরভাগ শিলালিপি গণেশের আমন্ত্রণ দিয়ে শুরু হয়। গ্রামবাসীরা ষাঁড় এবং স্থানীয় ঘোড়ার দেবতারও পুজো করত। কুলধারার পুরুষরা কোমারবন্দ সহ মোগল-শৈলীর পাগড়ি এবং জামা পরত। তাঁরা সাধারণত দাড়ি রাখতেন, গলায় মালা পরতেন এবং খঞ্জর থাকত সঙ্গে।  মহিলারা টিউনিক বা লেহেঙ্গা পরতেন এবং তাদের কেউ কেউ গলায় মালা পরতেন। গ্রামবাসীরা বেশিরভাগই ছিলেন চাষি। কৃষিকাজের জন্য গ্রামবাসীরা কাকনি নদী এবং বেশ কয়েকটি কুয়ো ব্যবহার করত। কাকনি নদী কুলধারার কাছে দুটি স্রোতে প্রবাহিত হয়েছে। প্রথম শাখাটিকে “মাসুরদী নদী” বলা হয়। উনিশ শতকের মধ্যে গ্রামটি জনশূন্য হয়ে পড়ে জলের অভাব এবং দিওয়ান সালিম সিংয়ের নৃশংসতার কারণে। ১৮১৫ সালের মধ্যে, গ্রামের বেশিরভাগ কুয়োও শুকিয়ে যায়। ১৯৯০-এ যখন এস এ এন রেজাভি গ্রামটি জরিপ করেন, তখন সেখানে অবশিষ্ট ছিল শুকনো নদীর তলদেশের কিছু অংশে স্থির জল। পরিত্যক্ত কুলধারায় কান পাতলে আজও শোনা যায়, কুৎসিত মন্ত্রী সালিম সিং গ্রামের একটি সুন্দরী মেয়ের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন। তিনি রক্ষীদের পাঠিয়ে গ্রামবাসীদের কাছ থেকে জোর করে মেয়েটিকে তুলে আনতে বলেন। গ্রামবাসীরা রক্ষীদের পরদিন সকালে আসতে বলে এবং রাতারাতি গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র চলে যায়। এর পর এলাকার অন্যান্য ৮৩টি গ্রামও রাতারাতি পরিত্যক্ত হয়ে যায়। পালিওয়াল ব্রাহ্মণদের অভিশাপ। তবে অনেকে বলেন, বেশ কয়েকটি গ্রাম, যেমন খাবা ভূমিকম্পের কারণে ধ্বংস হয়ে যায়। ধসে পড়া ছাদ, পতিত জোয়েস্ট, লিন্টেল এবং পিলার দেখে ভূতাত্ত্বিকরা দাবি করেন, ক্রমাগত বদলাতে থাকা আবহাওয়া এবং ক্ষয়ের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার কারণেই বাড়িগুলির এই দশা। অনেকে তো সাম্প্রতিক টেকটোনিক কার্যকলাপের প্রমাণও দেন।  কুলধারা গ্রাম ছাড়ার আগে পালিওয়াল ব্রাহ্মণরা অভিশাপ দিয়ে গিয়েছিলেন, যে কেউ গ্রামটি পুনরায় দখল করতে পারবে না। যারা গ্রামে পুনরায় জনবসতি গড়ে তোলার চেষ্টা করেছিল তারা অশরীরীর উপস্থিতি টের পায়, অলৌকিক সব কাণ্ডকারখানার সামনে পড়ে। সেই থেকে কুলধারা জনবসতিহীন। ধীরে ধীরে ভুতুড়ে গ্রামের তকমা জোটে। 

 ২০১০-এ ইন্ডিয়ান প্যারানরমাল সোসাইটির ১৮ সদস্যের একটি দল কুলধারায় রাত কাটায়। পরে তাদের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। তাঁদের দাবি, চলন্ত ছায়া, ভুতুড়ে ভয়েস, ফিসফিসানি ছাড়াও নানা অলৌকিক কার্যকলাপের সাক্ষী হয়েছেন তাঁরা। ২০০৬ সালে ভারত সরকার একটি জুরাসিক ক্যাকটাস পার্ক তৈরি করে। ২০১১ সালে ‘এজেন্ট বিনোদ’ ছবির কিছু দৃশ্য এবং ২০১৭ সালে তামিল ছবি ‘থেরান আধিগারম ওন্দ্রু’র ক্লাইম্যাক্স দৃশ্যগুলি এই গ্রামেই শুট করা হয়। সেটের জন্য নতুন কাঠামো তৈরি করা হয়। শুটিংয়ের প্রয়োজনীয়তার জন্য তালিবান চিহ্ন এবং উর্দু শব্দ দিয়ে ধ্বংসপ্রাপ্ত দেয়াল আঁকে। গ্রাম্য চেহারা পেতে তারা গোবর দিয়ে কিছু দেয়াল ঢেকে দেয়। বহু পর্যটক হেরিটেজ সম্পত্তি নষ্ট করার অভিযোগ আনে এবং পরবর্তীকালে রাজস্থান সরকার শুটিং বন্ধ করে দেয়। পরে কোর্ট-কাছারি সহ নানা ঝঞ্ঝাটের পর ফের শুটিং হয় বেশ কয়েকটি হিন্দি ছবির। অবশেষে কুলধারায় পড়ে প্রথম বাংলা ছবির সেট। দ্য একেন রুদ্ধশ্বাস রাজস্থান।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Ali Khamenei | চ‍্যালেঞ্জের মুখে ইরাক-আমেরিকার সৈন্যঘাঁটি, খামেনির হুঁশিয়ারি ট্রাম্প-ম‍্যাঁক্রোকে
00:00
Video thumbnail
Iran-Israel | ইরানের কাউন্টার অ‍্যা/টা/কে ছারখার তেল আভিভ, ইজরায়েলে শুধুই সাইরেনের শব্দ
00:00
Video thumbnail
Iran | Trump | ইরানের মা/রে মাটিতে আমেরিকার F35 যু/দ্ধবিমান, চিন্তার ভাঁজ ট্রাম্পের কপালে
00:00
Video thumbnail
Abhijit Ganguly | অসুস্থ, হাসপাতালে ভর্তি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়, কী হয়েছে? এখন কেমন আছেন?
00:00
Video thumbnail
Iran-Israel | Netanyahu | যু/দ্ধের মাঝেই প্লেনে চেপে পালাচ্ছেন নেতানিয়াহু? দেখুন চাঞ্চল্যকর ভিডিও
00:00
Video thumbnail
Iran-Israel | ইরানের ৬৫ মিনিটের অ‍্যা/টাক, খেলা শেষ ইজরায়েলের? দেশ ছাড়ল কে কে?
04:40:49
Video thumbnail
Ali Khamenei | চ‍্যালেঞ্জের মুখে ইরাক-আমেরিকার সৈন্যঘাঁটি, খামেনির হুঁশিয়ারি ট্রাম্প-ম‍্যাঁক্রোকে
02:59
Video thumbnail
Iran-Israel | ইরানের কাউন্টার অ‍্যা/টা/কে ছারখার তেল আভিভ, ইজরায়েলে শুধুই সাইরেনের শব্দ
03:36
Video thumbnail
Iran | Trump | ইরানের মা/রে মাটিতে আমেরিকার F35 যু/দ্ধবিমান, চিন্তার ভাঁজ ট্রাম্পের কপালে
06:00
Video thumbnail
আমার শহর (Amar Sahar) | উলুবেড়িয়ার এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের আশা পূরণ, প্রসূতিদের জন্য নয়া ব্যবস্থা
02:15