Placeholder canvas

Placeholder canvas
Homeচতুর্থ স্তম্ভFourth Pillar | নির্বাচনের বছর, বিজেপির প্রস্তুতি

Fourth Pillar | নির্বাচনের বছর, বিজেপির প্রস্তুতি

Follow Us :

মেঘালয়ের নির্বাচনের প্রচার যখন চলছিল, তখন দেখেছিলাম, একই দিনে দু’টো ছবি। প্রথমটা হল, অমিত শাহ তুরাতে প্রচারে গিয়েছেন,‌ উপজাতি মানুষজন ওনাকে মালা পরাচ্ছেন। দ্বিতীয় ছবি হল, ভাইবোনের খুনসুঁটির, বরফ নিয়ে খেলছেন রাহুল-প্রিয়াঙ্কা শ্রীনগরের কোথাও একটা। ত্রিপুরাতে রাহুল গান্ধী যাননি, মেঘালয়ে একবার, গিয়েও ভাষণ জুড়ে ছিল তৃণমূল। মল্লিকার্জুন খাড়গে ত্রিপুরাতে গিয়েছেন এক বার। যে নেতারা কদিন আগে রাহুলকে ঘিরে হাঁটছিলেন, ভারত জোড়ো পদযাত্রায় নেমেছিলেন, সেই নেতারা, কানহাইয়া কুমার বা জিগনেশ মেওয়ানি কোথায় ছিলেন? জানা নেই। মোদি মন্ত্রিসভার ১৩ জন মন্ত্রী, অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা, বাংলা থেকে শুভেন্দু, দিলীপ সমেত অন্য বিজেপি নেতারা তখন প্রতিটা কোণে ছড়িয়ে পড়েছেন। কতটা সিরিয়াস?

একটা পরিসংখ্যান দিই, স্বাধীনতার পর থেকে দেশের প্রত্যেক প্রধানমন্ত্রী মিলে যতবার দেশের এই উত্তর-পূর্বাঞ্চলে গিয়েছেন, একা নরেন্দ্র মোদি তার থেকে বেশিবার ওখানে গিয়েছেন, প্রকল্পের উদ্বোধনে, ঘোষণার জন্য, বৈঠকে এবং অবশ্যই নির্বাচনী প্রচারে। ফল হাতে নাতে। যে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বিজেপির একজনও এমএলএ ছিল না, আজ সেখানে ত্রিপুরাতে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায়, মেঘালয় ও নাগাল্যান্ডে জোট বেঁধে ক্ষমতায়। হ্যাঁ ট্রাইবালরা, উপজাতি মানুষজনের সংগঠনের হাতেই এখনও আছে ওখানকার রাজনৈতিক ক্ষমতার চাবিকাঠি, কিন্তু বিজেপি তার অস্তিত্ব প্রমাণ করতে তো পেরেছে। অন্যদিকে কংগ্রেস ক্রমশ তার ক্ষমতা হারাতে হারাতে এখন প্রান্তিক বললেও বেশি বলা হয়। বামেদের ভোট আসন দুই কমেছে। তৃণমূল এমন কিছু বিরাট একটা করে দেখাতে পারেনি, মেঘালয়ের ৫টা আসন, সে আর কতদিন? উপজাতিদের রাজনীতিতে ক্ষমতা শেষ কথা। 

নাগাল্যান্ডে জেডিইউ’র একজন বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছিল, ফল ঘোষণার পরেই সে পগার পার। শরদ পাওয়ারের এনসি নাগাল্যান্ডে ৭টা আসন পেয়েছিল, বিধানসভায় তারাই হতে পারতো বিরোধী দল। কিন্তু তারাও সাফ জানিয়েছে, এনডিপিপি-বিজেপির সরকারকে তারাও সমর্থন করছে, শরদ পাওয়ারকে তা মেনে নিতে হয়েছে, না হলে ওই ৭জনের প্রত্যেকেই চলে যেত হয় এনডিপপি’তে নাহলে বিজেপি’তে। শ্যাম রাখি, না কুল রাখির খেলাতে শরদ পাওয়ার কুল রেখেছেন, জাতীয় দলের মর্যাদা। ত্রিপুরাতে নিজদের অস্তিত্ব বাঁচিয়ে রাখতেই প্রদ্যোৎ বর্মনের তিপ্রা মথা এখন বিজেপি’র শরিক শুধু নয়, তাদের জন্য আরও কিছু উপঢৌকন হাজির হবে শিগগির। কাজেই খুব পরিস্কার ২০২৪-এ দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে তাদের আধিপত্য আরও বাড়ালো বিজেপি এবং তার জন্য বিজেপি এক ইঞ্চি জমিও ছাড়েনি, কারণ তারা জানে ২০২৪-এ তাদের কাছে সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ। কিছু জেতা আসন তারা হারাবে, কিন্তু তা অন্য জায়গা থেকে তুলে নিতেই হবে, তারা এটা জানে। কোথায় কোথায় তাদের আসন কমতে পারে? কীভাবে তারা সেটা ম্যানেজ করবে বা অন্তত ম্যানেজ করার চেষ্টা চালাচ্ছে? আসুন দেখে নেওয়া যাক। 

মহারাষ্ট্র, কসবা পেঠা’র বাই ইলেকশনের রেজাল্ট দেখলেই খুব পরিস্কার বোঝা যাচ্ছে যে শিবসেনা ভাঙার পরেও উদ্ধব ঠাকরের সঙ্গে যেটুকু সমর্থন আছে, তা বজায় থাকলে মহারাষ্ট্রে বিজেপি’র আগের ফলাফল তো বাদই দিলাম, কম করেও গোটা ১৫/১৬ আসন হারাবে। তাহলে? প্রস্তুতি কিন্তু শুরু হয়ে গিয়েছে। মাত্র দোলের দিনেই রাজ্যের উপমুখ্যমন্ত্রী বিজেপি নেতা দেবেন্দ্র ফড়নবিশ বললেন, ‘উদ্ধবজির সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ভাল, আমাদের দিশা একই অভিমুখে।’ মানে খুব পরিস্কার একটা মেসেজ পাঠানো হল উদ্ধব ঠাকরেকে। ফিরিয়ে নিন রাজপাট, কেবল মহারাষ্ট্র বিকাশ আগাড়ি ছেড়ে চলে আসুন। উদ্ধব আসবেন? আসতেই পারেন, রাজনীতিতে পার্মানেন্ট এনিমি বলে তো কিছুই হয় না। অমন আগমার্কা আদর্শবাদী কমিউনিস্টরা যদি কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেঁধে মাঠে নামতে পারেন, তাহলে উদ্ধব ঠাকরের ঘর ওয়াপসি কেন নয়? 

কিন্তু, একটা কিন্তু তো থেকেই যাচ্ছে, শিবসেনা ভাঙার অপমান এত তাড়াতাড়ি ভুলে যাবেন বালাসাহেবের পুত্র। তাহলে? প্ল্যান নম্বর টু। শরদ পাওয়ার। আজন্ম নাস্তিক এই চাণক্য কিন্তু খিলাড়ি নম্বর ওয়ান। যে অনায়াসে তিনি মমতার সঙ্গে বৈঠক করতে পারেন, সেই অনায়াসেই লালু যাদবের সঙ্গে এবং ততটাই অনায়াসে তিনি নরেন্দ্র মোদির সঙ্গেও ব্রেকফাস্টে বসে আলোচনা সেরে নিতে পারেন। কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেঁধে লড়ার পরে ফলাফল বের হল, শরদ পাওয়ার বিজেপি’কে সমর্থন করেছিলেন, এ রেকর্ড তো আছে। তো সেই তিনি নাগাল্যান্ডে এমএলএ’দের বিজেপি-এনডিপিপি সরকারের সমর্থনে সায় দিলেন, অবশ্য সায় না দিলে ৭ জনেই দল ছাড়ত। কিন্তু তার পরেও সায় তো দিলেন, দল থেকে না তাড়িয়ে সায় দিলেন, অমনি মুম্বইয়ে ভেসে উঠল আগামী নির্বাচনে শরদ পাওয়ারের শিবির বদলানোর প্রসঙ্গ। তাহলে কী? দাঁড়ান দাঁড়ান, এত তাড়াতাড়ি কনক্লুসনে আসবেন না, ওনার নাম শরদ পাওয়ার। এই খেলা নির্বাচনের আগের দিন পর্যন্তও চলতে পারে, নির্বাচনের পরেও হতে পারে। কিন্তু একটা কথা পরিস্কার, কোথাও তো একটা কথাবার্তা চালু হয়েছে এবং সেটা হয়েছে বিজেপি’র তরফেই। বিজেপি’র বিরাট অসুবিধে দিল্লি নিয়ে, গতবারের সাতে সাত হওয়া অসম্ভব, সাতে তিন কী, দুইও হতে পারে। তাই অপারেশন সিসোদিয়া। দিল্লির মানুষ ভাবছে, ভাবতে বাধ্য হচ্ছে আপও চোর?

নির্বাচন যত এগোবে, তত নতুন নতুন তথ্য বের হবে, ছবি দেখা যাবে। প্রস্তুতি সেখানেও চলছে, নির্বাচনের আগে এই দুর্নীতির ইস্যুতে আপ থেকে কয়েকজন বেরিয়ে গেলেও অবাক হবো না। চলুন কর্নাটকে। লিঙ্গায়েতদের সমর্থন ছাড়া কর্নাটকে জেতা সম্ভব নয়, আর বিধানসভায় হারলে লোকসভায় আসন কমবে। অতএব সেখানেও প্রস্তুতি চালু। ইয়েদুরিয়াপ্পা লিঙ্গায়েতদের ফেভারিট, কিন্তু তাঁকে সরিয়ে আরেক লিঙ্গায়েতকে মুখ্যমন্ত্রী করেছে বিজেপি, বাসব রাজ বোম্মাই। কিন্তু তিনি একবছর প্রাণপণে নিজেকে অপদার্থ প্রমাণ করার চেষ্টাই করে গিয়েছেন, এই প্রথম একটা রাজ্যে কংগ্রেস অ্যাডভানটেজ। ওদিকে মুখ্যমন্ত্রিত্ব হারিয়ে দলের শীর্ষ পদ পেয়েও খুশি নয় ইয়েদুরিয়াপ্পা। খুশি করতে নিজেই হাজির মোদিজি। বেঙ্গালুরুতে গিয়েই ইয়েদুরিয়াপ্পাকে জড়িয়ে ধরে স্টেজে উঠলেন মোদিজি, যিনি এর আগেরবারেও ইয়েদুরিয়াপ্পার দিকে তাকিয়ে কেবল নমস্কার বিনিময় করেছিলেন। ভোট বড় বালাই। কিন্তু দক্ষিণের নেতারা এসব জড়িয়ে ধরা ইত্যাদিতে তেমন বিশ্বাস করেন না, তাই শোনা যাচ্ছে, বিজয়েন্দ্রর কপাল খুললো বলে। কে এই বিজয়েন্দ্র? ইনি ইয়েদুরিয়াপ্পার পুত্র, আরেক লিঙ্গায়েত নেতা মাথার ওপর বাবার হাত, সবমিলিয়ে কিলিং কম্বিনেশন। কিন্তু সেটা হলে আবার বাসব রাজ বোম্মাই গোঁসা করবেন না তো? 

প্ল্যান টু খোলা রয়েছে, দেবেগৌড়ার সঙ্গে কথা চলছে, তিনি আবার আরেক ঝানু রাজনীতিবিদ, নির্বাচনের আগেই কথা দেবেন না, কিন্তু ফলাফল দেখে, সামান্য সমর্থন দরকার হলে, সমর্থন দিতেই পারেন, শর্ত ছেলের মুখ্যমন্ত্রিত্ব, অ্যাট লিস্ট উপমুখ্যমন্ত্রিত্ব। কিন্তু কথা চলছে, একদিকে নয়, দু-তিন দিক থেকে কথা চলছে, এর মধ্যেই খবর ডিকে শিবকুমার, কংগ্রেসের রাজ্যসভাপতির বিরোধী গোষ্ঠির কয়েকজনও নাকি কথা চালাচ্ছেন, সেরকম হলে নির্বাচনের আগেই আমরা কংগ্রেসের কয়েকটা উইকেট পড়তে দেখব। বিহারে আবার লালু, রাবড়ির দরজায় সিবিআই। সেখানেও নিয়োগ দুর্নীতি। কেবল তাই নয়, নীতীশের দল ভাঙানোর জন্য যা যা করতে হবে সব করতে রাজি বিজেপি, সে কাজ চালুও হয়ে গেছে। নির্বাচনের আগেই নীতীশের দল ভাঙবে, দুর্নীতিগ্রস্ত লালু-রাবড়ি-তেজস্বীর সঙ্গে কেন হাত মিলিয়েছে নেতাজি নীতীশ কুমার? এই প্রশ্ন নীতীশের দলে উঠতে শুরু করেছে। এই বিরাট আদর্শের বুকনির পিছনে কত কোটি টাকা ঢালা হয়েছে, তা জানাও যাবে না কোনও দিন। বাংলায় গতবার ১৮টা আসন, এবারে? মুখে তো ২৫/২৮/৩০, যা খুশি বলছেন। কিন্তু আসলে এই ১৮টা বেশ কষ্টকর। তাই আপাতত প্রতিদিন নিয়ম করে ইডি, সিবিআই, ভিজিল্যান্স হানা চলবে। রোজ নতুন নতুন তথ্য তুলে দেওয়া হবে শিরদাঁড়াহীন চোখে চোখ রাখনেওয়ালাদের কাছে। রোজ আপনি জানতে পারবেন, অনুব্রত জেলে পায়েস খাচ্ছে, নাকি মুর্গির ঝোল। চাকরি দুর্নীতিতে জড়িত নতুন নতুন লোকের নাম উঠে আসবে, আরও দু-একজন মন্ত্রী-সান্ত্রীকে গ্রেপ্তার করা হতেই পারে। মানে যাইহোক, জ্যান্ত রাখতে হবে এই দুর্নীতির ইস্যুকে। কিন্তু এই ইস্যু যদি বিরোধী ভোটারদের বামেদের দিকে ঠেলে দেয়? সে চিন্তাই এখন বিজেপি’র মাথা কুরে কুরে খাচ্ছে। তাই শাসকদলের ভেতরেই হাত বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছে। মানে খুব পরিস্কার, ২০২৪ চাই, ঘুস দিয়ে, টাকা দিয়ে, মন্ত্রিত্ব দিয়ে, ভয় দেখিয়ে, জেলে পুরে, দল ভাঙিয়ে। যেভাবে হোক বিজেপির এই যাবতীয় পরিকল্পনার আসল কথাটা হল, ২০২৪ চাই, সাম দান দণ্ড ভেদ, সব কটা অস্ত্র নিয়ে নেমেছে বিজেপি। গত তিন চার মাস ধরে বিজেপি যা করছে, প্রধানমন্ত্রী যেখানেই যাচ্ছেন, যা বলছেন এবং আগামী দিনগুলোতে যা বলবেন বা করবেন, সবটাই আসলে ওই নির্বাচনী প্রচার, নির্বাচনী তিকড়মবাজি, নির্বাচনের প্যাঁচ পয়জার।

RELATED ARTICLES

Most Popular