Wednesday, June 11, 2025
Homeচতুর্থ স্তম্ভFourth Pillar | ইন্ডিয়া জোটের মুম্বই বৈঠক আদতে ঘোড়ার ডিম প্রসব করল

Fourth Pillar | ইন্ডিয়া জোটের মুম্বই বৈঠক আদতে ঘোড়ার ডিম প্রসব করল

Follow Us :

ঘোড়ার কি ডিম হয় আর ডিমের কি হয় ছানা? উত্তর আমাদের সব্বার জানা। আমার মতে ইন্ডিয়া জোটের মুম্বই বৈঠক ওই এক বৃহৎ অশ্বডিম্বই প্রসব করেছে। বহু চেষ্টা করে এই বৈঠকের দু’ একটা সদর্থক বিষয় নিয়ে হ্যাজ দেওয়া যেতেই পারে, কিন্তু আদত বিচারে মুম্বই বৈঠক বিরোধী শিবিরের কাছে কোন মেসেজ নিয়ে গেছে জানি না, লক্ষ কোটি মোদি সরকার বিরোধী, আরএসএস–বিজেপি বিরোধী মানুষজনকে হতাশ করেছে। পাটনায় বৈঠকে বসাটাই তো এক বিরাট ব্যাপার ছিল। সেই কবে নীতীশ কুমার কলকাতায় এলেন, আমরা সেই সাক্ষাৎকারের পরে শুনেছিলাম মমতার মুখে যে পাটনায় বৈঠক ডাকা হোক, বিরোধী নেতারা বৈঠকে বসুক। কাজেই সেই লক্ষ কোটি মানুষ যাঁরা গণতন্ত্র ফিরে পেতে চান, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ফিরে পেতে চায়, ইডি-সিবিআই রাজের পরিসমাপ্তি দেখতে চান, সংবিধানের শাসন চান, তাঁরা আশার আলো দেখলেন। পাটনাতে বিরোধীরা গিয়ে হাজির তো হলেন, হ্যাঁ, অন্তত বৈঠকে তো বসলেন। এবং পরবর্তী বৈঠক হবে তারও ঘোষণা হল। এরপর বেঙ্গালুরু, দরজায় দাঁড়িয়ে কংগ্রেসি নেতারা আপ নেতাদের স্বাগত জানালেন, তৃণমূল নেত্রীর সঙ্গে সহাস্য আলাপ কমরেড সীতারাম ইয়েচুরির। প্রায় নি-জার্ক রি-অ্যাকশন বিজেপির, তড়িঘড়ি করে স্মৃতির বাক্স থেকে তারাও সেদিন বের করল এনডিএ-কে। এদিকে বিরোধী জোটের নাম দেওয়া হল ইন্ডিয়া, মাস্টার স্ট্রোক। মিডিয়াতে চর্চা ইন্ডিয়া জোটের। এরপর মুম্বই অধিবেশন, আমরা মানে আবার ওই স্বাধীনতা হীনতায় গুমরে মরতে থাকা সাংবাদিকেরা, মূল্যবৃদ্ধির চাপে হাঁসফাঁস করতে থাকা মানুষজন ভেবেছিলাম, একজন কনভেনর হবে, একটা কমন মিনিমাম প্রোগ্রাম তৈরি করার টিম হবে, ২০২৪-কে মাথায় রেখে আসন বণ্টনের কিছু ফর্মুলা বের হবে, লোগো আসবে সামনে। কী হল? 

তারও আগে আলোচনা দরকার কী হত? কারণ ঠিক ঐদিনেই মোদি সরকারের সংসদীয় দফতরের মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশি ১৮ থেকে ২২ সংসদের বিশেষ অধিবেশন না ডাকলে আমার ধারণা কিছুই হত না। কারণ গুচ্ছ স্ববিরোধিতায় ভুগতে থাকা বিরোধী দলগুলোর আসল চেহারা সামনে আসা শুরু হয়ে গিয়েছিল। ওই বিশেষ অধিবেশনের ঘোষণা , এক দেশ এক নির্বাচনের প্রসঙ্গ ইত্যাদি আসার পরে এক্কেবারে কিছুই হবে না? তাই একটা গুরুত্বপূর্ণ কমিটি তৈরি হল, বাকি তিনটে এমন কমিটি যা কাজ শুরু করতে হলে যা দরকার তাই হাতে নেই। বলছি, বুঝিয়ে বলছি। একটা কমিটি তৈরি হল যার নাম কো-অর্ডিনেশন কমিটি। খেয়াল করুন, রাহুল গান্ধী নেই, মল্লিকার্জুন খাড়গেও নেই, আছেন কে সি বেণুগোপাল, ডিএমকে-র স্তালিনের নাম শোনা যাচ্ছিল, এখন শোনা যাচ্ছে সেখানে আছেন টি আর বালু। অরবিন্দ কেজরিওয়াল নেই, আছেন রাঘব চাড্ডা, তাতে নীতীশ কুমার নেই, আছেন লল্লন সিং, অখিলেশ যাদব নেই আছেন জাভেদ আলি খান, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নেই, আছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এটা নাকি সর্বোচ্চ কমিটি, হ্যাঁ, কমিটিতে আছেন বটে শরদ পাওয়ার, কিন্তু সেটাও কি মানানসই? তার মানে এই কমিটি সর্বোচ্চ কমিটি নয়, এর উপরেও থেকে গেলেন মমতা, নীতীশ, অখিলেশ, লালু, রাহুল, মল্লিকার্জুন খাড়গে এবং সোনিয়া গান্ধী। সিপিএম তো নামই দিল না। অন্য দুই কমিটিতে সিপিএম-এর প্রতিনিধি প্রাঞ্জল এবং অরুণ কুমার, শুনেছেন এঁদের নাম? কোনওদিনও শুনেছেন? আচ্ছা এই কমিটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেবে? সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত? 

আরও পড়ুন: Fourth Pillar | ১৮–২২ সেপ্টেম্বর সংসদের বিশেষ অধিবেশনে নির্ভেজাল বাওয়াল হবে 

বাকি তিনটে কমিটি হল প্রচার কমিটি, সোশ্যাল মিডিয়া প্রচার কমিটি, আর গবেষণা কমিটি। তো এসব কমিটি কাজ করবে কীসের ভিত্তিতে? মানে কী প্রচার করবে? সেটা কে ঠিক করবে? কখন ঠিক করবে? আসন সমঝোতা কি ওই কো-অর্ডিনেশন কমিটি করবে? না, সেখানে তো সিপিএম সাফ বলে দিয়েছে ওগুলো রাজ্যস্তরে ঠিক করা হবে, তাহলে? এই কমিটি কী করবে? কেউ জানে না। প্রচারের কোনও মেটিরিয়াল নেই, লোগো পর্যন্ত ঠিক করতে পারলেন না নেতারা, প্রচারটা কী দিয়ে হবে? প্রধানমন্ত্রী মুখ ছেড়েই দিলাম, জোটের নেতা কে জানা গেল না, জোটের সর্বোচ্চ কমিটিতে সেকেন্ড ইন কমান্ডদের রেখে ফার্স্ট ইন কমান্ডরা নিজেদের ম্যানুভারের জায়গা খোলা রাখলেন। যে কেউ, যখন খুশি ব্যাক করার জায়গা ছেড়ে রাখলেন, মোদি–শাহ, আরএসএস-বিজেপি বিরোধী জোটের সর্বোচ্চ রাজনৈতিক কমিটিতে সোনিয়া রাহুল, খাড়গে, মমতা, নীতীশ, লালু, ইয়েচুরি, অখিলেশ নেই, এটা কি ছ্যাবলামো নয়? মনে হচ্ছে কি যে এই জোটের নেতারা জোট নিয়ে সিরিয়াস? এবং এই জোটের সবথেকে বড় কথাটা কী? বলা হল যথা সম্ভব চেষ্টা করা হবে ৪০০-৪৫০ আসনে ওয়ান টু ওয়ান, মানে বিজেপির বিরুদ্ধে একজন প্রার্থী দাঁড় করানো হবে। আচ্ছা এটা নিয়ে তামিলনাড়ু, কর্নাটক, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ, অসম, বিহার, ঝাড়খণ্ডে কি কোনও সমস্যা আছে? সমস্যা তো এই বাংলায়, কেরলে, দিল্লি আর পঞ্জাবে, বিআরএস মানে কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের দল এলে তেলঙ্গানায়। এই তো। তো সেটা কবে হবে? আলোচনা তো দূরস্থান, অত্যন্ত অমনোযোগী গেঁতো ছাত্রের মতো পড়াশুনো ছেড়ে কেবল বইয়ের মলাট দেওয়া হচ্ছে, স্কুল ব্যাগ আর টিফিন বাক্স কেনা হচ্ছে, জ্যামিতি বাক্স থেকে পেন্সিল বার করে তাকে ছুঁচলো করা হচ্ছে, পড়তে বসা আর হচ্ছে না। 

কাদের জন্য? মূল বাধাটা কোন দিক থেকে আসছে। কংগ্রেস চায় পাঁচ রাজ্যের ভোট হয়ে যাক, তাদের আশা তেলঙ্গানা সমেত চার রাজ্যেই তাঁরা চমকে দেবার মতো রেজাল্ট আনবে, সেই রেজাল্ট হাতে পেলে তবে দরকষাকষি জমবে ভালো, কাজেই ধীরে চলো। অর্থাৎ আরএসএস–বিজেপি, আদর্শ ইত্যাদি নয়, আসল সেই নাম্বার গেম। অন্যদিকে সিপিএম, যারা ভারত জুড়েই টেকনিক্যালি সংসদীয় রাজনীতিতে বিজেপির সঙ্গে লড়াই করছে না, লড়ছে কংগ্রেসের সঙ্গে, আর তৃণমূলের সঙ্গে, আদর্শ ইত্যাদির বুকনির মধ্যে প্রায় বাধ্য হয়েই জোটে আছে বটে, কিন্তু এখন ছুঁচো গেলার অবস্থা, না পারছেন হজম করতে, না পারছেন ওগরাতে। সিপিএম-এর একজন পরিচিত মুখকেও জোটের কমিটিতেই রাখতে নারাজ দল, সাধারণ সম্পাদক তো ছেড়েই দিন। তিনি জোটের বৈঠকে গিয়ে ভয়ে ভয়ে থাকছেন, কখন মমতা বা অভিষেকের সঙ্গে ছবি উঠে যাবে, বাংলার কমরেডদের প্রতিবাদ ও সমালোচনার গর্জনের মুখে পড়তে হবে। সব মিলিয়ে মুম্বইয়ের দু’দিনের বৈঠক দিল কী? ওই যে আগেই বলেছি এক বিরাট অশ্বডিম্ব। পাগলেরা মাঝেমধ্যেই ভাবে, সমীকরণ এমনি এমনিই হয়ে যাবে, হয় না, হয় না। রাজনৈতিক সমীকরণ গড়ে তুলতে গেলে প্রথমেই দরকার রাজনৈতিক সদিচ্ছা, তা যদি না থাকে তাহলে কোনও সমীকরণ গড়ে তোলা যায় না, গড়ে উঠলেও কাজে দেয় না। সময় বেশি নেই, উল্টোদিকে প্রতিপক্ষ মোদি–শাহ, চমকে দেওয়ার মতো ক্ষিপ্র গতিতে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন, তাঁদের জবাবদিহি দেওয়ার কেউ নেই, আরএসএসও এখন ওই মোদিজির দিকেই তাকিয়ে। সেই তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে গেলে দরকার সিদ্ধান্ত নেওয়ার দক্ষতা, সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত। জোট ইত্যাদির পিছনে ২০০ পাতার আদর্শের কথা লেখাই যায়, দারুণ লোগো আর ট্যাগলাইন তৈরি করাই যায়, কিন্তু সংসদীয় গণতন্ত্রে রাজনৈতিক জোটের আসল বিষয় তো গরিষ্ঠাংশ আসন জেতা, সেটা নিয়ে কথা শুরুই হল না। আর সমস্যাটা আছে কোথায়? এই তো উপনির্বাচন হচ্ছে, ঝাড়খণ্ডে ইন্ডিয়া জোটের প্রার্থী করা হয়েছে, উত্তরপ্রদেশের ঘোষিতেও তাই। হয়নি কেরলে, সেখানে এমনকী উপনির্বাচনে কংগ্রেস নেতা ওমেন চণ্ডীর চিরটাকাল জিতে আসা আসন জেতার জন্য মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই ভিজয়ন ৭টা জনসভা করেছেন। গতকালও বলেছেন কংগ্রেসের সাম্প্রদায়িক চেহারার কথা, বলেছেন কংগ্রেস আসলে কি বিজেপিকে হারাতে চায়? এদিকে বাংলায় ধূপগুড়িতে বাম কংগ্রেসের প্রার্থী আছেন, না কোনওভাবেই জিতবেন না, কিন্তু ফ্যাক্টর হলেও হতেই পারেন। আজকের গণশক্তিতে লেখা হয়েছে, তৃণমূলকে পরাস্ত করে বিজেপিকে কোণঠাসা করুন, আগে বলা হত তৃণমূল, বিজেপি দু’জনকেই পরাস্ত করুন, এখন জোট হয়েছে, তাই উন্নততর স্লোগান, তৃণমূলকে পরাস্ত করে বিজেপিকে কোণঠাসা করুন। আচ্ছা এরপরে মানুষ বিশ্বাস করবে ওই জুড়েগা ভারত জিতেগা ইন্ডিয়াতে? ইতিহাসের এইসব মুহূর্তগুলো বারবার আসে, যখন স্বৈরাচারের জন্ম থেকে বেড়ে ওঠার পেছনে মধ্যপন্থা আর সমাজগণতন্ত্রীদের প্রত্যক্ষ ভূমিকা থাকে, আমাদের দেশ কি এখন সেই পর্যায়ে? একটা বিরাট সুযোগ সামনে এসেছিল, মোকাবিলা করাই যেত এই স্বৈরাচারের, আমরা কি সেটা হাত থেকে চলে যেতে দেব?

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
BJP | দ্বিধাবিভক্ত বিজেপি ২৬-র ভোটে কীরকম ফল করবে? জয়ন্ত ঘোষালের বিশ্লেষণ শুনুন
09:59:43
Video thumbnail
Volodymyr Zelenskyy | দেশ ছেড়ে পালাতে চলেছেন জেলেনস্কি? কেন? দেখুন স্পেশাল রিপোর্ট
11:23:27
Video thumbnail
বাংলা বলছে (Bangla Bolche) | দ্বিধাবিভক্ত বাংলায় ত্রিধাবিভক্ত বিজেপি
11:31:03
Video thumbnail
Sheikh Hasina | বাংলাদেশের ভোটে লড়বেন হাসিনা? দেশে কবে ফিরবেন? দেখুন স্পেশাল রিপোর্ট
03:52:00
Video thumbnail
Donald Trump | ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ রূপ নিল গ/ন্ডগো/লে, দেখুন কী অবস্থা
04:30
Video thumbnail
Donald Trump | ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ রূপ নিল গ/ন্ডগো/লে, দেখুন কী অবস্থা
00:00
Video thumbnail
Politics | মণিপুরে আরও একবার বিজেপি গড়বে সরকার?
02:51
Video thumbnail
Politics | বিজেপি না নীতীশকুমার কে ছড়ি ঘোরাবে এবার?
04:33
Video thumbnail
Politics | খাল কেটে কুমির আনেন নীতীশকুমার কী যে করেন!
04:10
Video thumbnail
Politics | বরাদ্দ ছেঁটেছে বাংলার মোদি সরকার বারবার
04:29