যুদ্ধের এ এক অন্য কাহিনি

মুখে কাদা দিয়ে আঁকা মুখোশ, একেবারে চোখ পর্যন্ত টানা। উড়ে আসা বুলেট থেকে মাথাকে রক্ষা করতে মাথায় হেলমেট। চলছে বাস্তবসম্মত প্রশিক্ষণ। শুধু যুদ্ধক্ষেত্রে গেলেই হল না, জানতে হবে কি করে বাঁচতে আর বাঁচাতে হয়! কারণ যুদ্ধক্ষেত্রে যখন-তখন যে কেউ আহত হয়ে যেতে পারেন। তাঁকে প্রাথমিক শুশ্রূষা দিতে হবে আরেক সেনাকেই। শেখানো হচ্ছে, যুদ্ধের নানান আদব-কায়দা। আর সেটা হচ্ছে ব্রিটেনের মাটিতে। প্রশিক্ষণ নিতে যাওয়া স্বেচ্ছাসেবীরা হলেন ইউক্রেনের খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ। অপারেশন অর্বিটাল। ২০১৫ সাল থেকে বন্ধু দেশ ইউক্রেনের সেনাদের ব্রিটিশরা যে প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছে, সেই ছকেই ইউক্রেনীয় সাধারণ নাগরিকদের করে তোলা হচ্ছে চৌখস সেনা। সামরিক কোর্স, কিন্তু ফিল্মি স্টাইলে। আছে টান উত্তেজনা এবং টুইস্ট, সঙ্গে বাস্তবতার মিশেল।
সেই ফেব্রুয়ারি থেকে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ চলছে। রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে দেশকে রক্ষা করতে ইউক্রেনের সাধারণ নাগরিকরাও যুদ্ধে যোগ দিচ্ছেন। কিন্তু যুদ্ধে গেলেই তো আর হলো না, তার জন্য দরকার প্রশিক্ষণ। সেই দায়িত্ব হাতে তুলে নিয়েছে ব্রিটিশ সেনা, আম ইউক্রেনীয়দের যুদ্ধ প্রশিক্ষণ দিয়ে সাহায্য করছে, শেখাচ্ছে যুদ্ধক্ষেত্রের গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা। জুলাই মাসে প্রথম গ্রুপে স্বেচ্ছায় যোগ দেওয়া ৫,৭০০ জন ইউক্রেনীয় এই সামরিক কোর্স সম্পূর্ণ করেছেন। সব মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত ১৯ হাজার ইউক্রেনীয় নাগরিককে প্রশিক্ষণ দিয়ে সাহায্য করেছে ব্রিটিশ সেনা।
বাস্তবসম্মত প্রশিক্ষণ অনুশীলনের মধ্যে রয়েছে কি করে বিস্ফোরক অস্ত্র এবং সামরিক গাড়ি ওড়াতে হয় এবং তা থেকে বাঁচতে হয়। নকল যুদ্ধক্ষেত্রে আহত সৈনিকের অভিনয় করছেন পেশাদার অভিনেতা, তাঁকে বাঁচাতে তুলে নিয়ে ছুটছেন প্রশিক্ষণ নেওয়া ইউক্রেনীয়রা, শিখে নিচ্ছেন বাস্তব পরিস্থিতিতে আহত সৈনিকের জীবন বাঁচাতে ফার্স্ট এইড দিতে হবে ব্যান্ডেজ আর ওষুধের সাহায্যে। মাত্র পাঁচ সপ্তাহের ব্রিটিশ সেনার উচ্চ-স্তরের সামরিক প্রশিক্ষণে পোক্ত হয়ে উঠেছে একটি গ্রুপ।  
রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য ইউক্রেনীয় নাগরিকদের দু’টি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস শেখাচ্ছে ব্রিটিশ সেনা। প্রথমটা হলো যুদ্ধক্ষেত্রে কিভাবে বাঁচতে হয় এবং দ্বিতীয়টা হলো সম্মুখ সমরে কিভাবে যতটা সম্ভব প্রাণঘাতী হামলা চালাতে হয়। যুদ্ধে যাওয়ার জন্য তৈরি করতে ইউক্রেনীয়দের আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে মার্কসম্যানশিপ, অস্ত্র পরিচালনা, শহুরে ও পরিখা যুদ্ধ, যুদ্ধক্ষেত্রে প্রাথমিক সুশ্রূষা এবং সশস্ত্র সংঘর্ষ সহ ব্যাপক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শেখানো হচ্ছে। দিনের বেলায় প্রশিক্ষণের সময় দেখা হচ্ছে গোলা-গুলির লড়াইতে তারা কিভাবে নিজেদের সামলাচ্ছেন এবং প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে শত্রুপক্ষ সামনে হাজির হলে কিভাবে তাদের নিশানা করতে হবে। তবে সবটাই অভিনয়, কিন্তু পুরোটাই বাস্তব।