ইসলামাবাদ: তোষাখানা (Toshakhana) এবং তোষাখানাতে রাখা উপহার, এই নিয়েই এখন সরগরম পাকিস্তানের রাজনৈতিক মহল। পাক রাজনীতিতে এখন এটাই সর্বাধিক আলোচ্য ও বিতর্কিত বিষয় (Most Discussed and Controversial Matter)। আন্তর্জাতিক মহলেও এই নিয়ে চর্চা। তোষাখানাতে উপহার ও উপঢৌকন (Gifts) রাখা হয়, এটা সবাই জানতেন, কিন্তু সেখানে কী কী রয়েছে কিংবা এতদিন ধরে কী কী জমা পড়েছে, সে সম্পর্কে প্রায়ই কেউই জানতেন না। কিন্তু রবিবার সেই তথ্য প্রকাশ করেছে পাক সরকার। আন্তর্জাতিক মহলে একে পাক সরকারের ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত বলা হচ্ছে। পাক তোষাখানা অর্থাৎ পাকিস্তানের কোষাগার (Pakistan’s Treasury)। পাকিস্তানের সরকারি পদাধিকারী ব্যক্তি ও আধিকারিকরা যে উপহার পান, তা এখানে জমা দিতে হয়। পাকিস্তানের আইন অনুসারে এই নিয়মই কার্যকর রয়েছে।
আরও পড়ুন: Hera Pheri 3 | Sanjay Dutt | ‘হেরা ফেরি ৩’-তে থাকছেন সঞ্জুবাবা,জল্পনায় সুনীলের শীলমোহর
অভিযোগ রয়েছে, সেদেশের অনেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বিদেশি প্রতিনিধি ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের (Foreign Dignitaries and Representatives) দেওয়া দামি উপহার (Expensive Gifts) সামান্য অর্থ দিয়ে তোষাখানা থেকে বের করে নিয়ে গিয়েছেন এবং পরে তা চড়া দামে বিক্রি (Selling on Big Premium) করে দিয়েছেন খোলা বাজারে। এখানেই শেষ নয়, সেই লাভের টাকা সরকারের ঘরে জমা না দিয়ে, নিজেরাই আত্মসাৎ করে নিয়েছেন। এই তালিকায় নাম জড়িয়েছে পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের (Imran Khan, Former Pakistan Premier)।
কয়েকদিন আগে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খোয়াজা আসিফ (Khawaja Asif, Pakistan’s Defence Minister) বলেছিলেন, রাষ্ট্রীয় ভাণ্ডারের (State Repository) ভিতরকার তথ্য জনসমক্ষে প্রকাশ (Declassify) না করার বিষয়ে, সেদেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার (Federal Government) সম্মত হয়েছে।
পাক সরকার তরফে তোষাখানার উপহার সংক্রান্ত ৪৪৬ পাতার রেকর্ড প্রকাশ করা হয়েছে। তাতে ২০০২ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সমস্ত তথ্য রয়েছে। রাষ্ট্রপতি (Presidents), প্রধানমন্ত্রী (Prime Ministers) ও যুক্তরাষ্ট্রীয় মন্ত্রীরা (Federal Ministers) যে সমস্ত উপহার পেয়েছেন বিদেশি বিশিষ্ট ব্যক্তিদের থেকে, তা সবই উল্লেখ রয়েছে ওই তালিকায়। ২০২৩ সালে বর্তমান যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার (Coalition Government) বিভিন্ন দেশের থেকে ৫৯টি উপহার পেয়েছে।
সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০২২ সালে ২২৪টি উপহার এসেছে, ২০২১ সালে এসেছিল ১১৬টি উপহার এবং ২০১৮ সালে মোট ১৭৫টি উপহার পেয়েছিলেন পাক সরকারের কর্মকর্তারা। এছাড়া. ২০১৪ ও ২০১৫ সালে যথাক্রমে ৯১ ও ১৭৭টি উপহার জমা পড়েছিল তোষাখানায়।
ওই নথিতে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শওকত আজিজ (Shaukat Aziz), নওয়াজ শরিফ (Nawaz Sharif), ইউসুফ রেজা গিলানি (Yusuf Raza Gilani), ইমরান খান (Imran Khan) এবং রাজা পারভেজ আশরাফের (Raja Parvez Ashraf) পাশাপাশি প্রয়াত প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জেনারেল পারভেজ মোশাররফের (Late-Former President General Parvez Musharraf) উপহারের রেকর্ড রয়েছে।
রেকর্ড অনুসারে, ইমরান খান একটি হিরে ও সোনার ঘড়ির জন্য ৮৫ মিলিয়ন রুপি, এক জোড়া কাফলিঙ্কের জন্য ৫.৬৭ মিলিয়ন রুপি, পেনের জন্য ১.৫ মিলিয়ন রুপি এবং একটি আংটির জন্য ৮.৭ মিলিয়ন রুপি ব্যয় করেছেন। প্রাক্তন পাক প্রধানমন্ত্রী উপহার নিজের কাছে রাখার জন্য ২০ মিলিয়ন পার রুপি খরচ করেছিলেন। তথ্য বলছে, ৩.৮৮ মিলিয়ন রুপি মূল্যের ঘড়ির জন্য তিনি ৭,৫৪,০০০ পাক রুপি দিয়েছেন।
যাঁরা জানেন না, তাঁদের জন্য বলে রাখা, হঠাৎ করে পাক তোষাখানা কেন আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠল পাকিস্তানে। ইমরানের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তোষাখানা থেকে উপহার নিয়ে তিনি ও তাঁর স্ত্রী খোলা বাজারে তা চড়া দামে বিক্রি করে দিয়েছেন এবং ওই অর্থ নিজের ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করেছেন। এই মামলায় পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন তাঁকে পাক সংসদ (Pak Parliament) থেকে বরখাস্ত করেছে। পাক নির্বাচন কমিশন তার রায়ে বলেছে, তোষাখানার উপহার নিয়ে ইমরান মিথ্যে বিবৃতি ও ভুল ঘোষণা (False Statements and Incorrect Declaration) দিয়েছেন। ইলেকশন কমিশন অব পাকিস্তান (Election Commission of Pakistan) এই নিয়ে ডিস্ট্রিক্ট ও সেশন কোর্টে (Districts and Sessions Court) মামলা দায়ের করেছে। সেই মামলাতেই আদালতে উপস্তিত হতে বলা হয়েছিল ইমরানকে। কিন্তু তিনি হাজিরা দেননি। আদালত নির্দেশ দিয়েছিল, ইমরানকে গ্রেফতার করে আদালতে হাজির করতে। সেই গ্রেফতারিও কৌশলে এড়ান ইমরান।