সকাল ৮টা। রাজারহাট রোড-চিনার পার্ক মোড়। মাঝেমাঝে এরোপ্লেনের মতো শব্দ করে উড়ে যাচ্ছে বাইক। রাস্তার ধারে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে বিভিন্ন রুটের বাস। তবে জোড়াফুলের পতাকা লাগানো। বাসে তোলা হচ্ছে জলের বোতল। টিফিনের প্যাকেট। সাদা নতুন পাজামা-পাঞ্জাবি পরা আগমার্কা কংগ্রেসি পোশাকের কয়েকজন একধারে প্লাস্টিকের চেয়ারে বসে গল্পগুজব করছেন। তাঁদের পাশেই রাখা আছে বেশ কয়েকটি স্করপিও, বোলেরো ও ইনোভা গাড়ি। আর চিনার পার্ক মোড়ের চার কোণে তখন কাতারে কাতারে লোক এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত ছুটে চলেছেন একটা গাড়ি ধরার জন্য।
সকাল সাড়ে ৮টা। ভিআইপি রোড, জোড়ামন্দির বাসস্টপ। অন্তত জনা তিরিশেক পুরুষ-মহিলা এয়ারপোর্টের দিকে মুখ করে তাকিয়ে রয়েছেন, যদি একটা বাসও আসছে না। একের পর এক বাস যাচ্ছে। সেগুলির সামনের কাচে লেখা মুর্শিদাবাদ, জঙ্গিপুর, ধনেখালি, গুড়াপ, হিঙ্গলগঞ্জ, গোবরডাঙা। ভিতরে বসা পুরুষ-মহিলাদের চোখে এক অনন্ত বিস্ময়। দেখেই বোঝা গেল, অনেকেই প্রথমবার কলকাতায় আসছেন। বাসের মাথায় বাঁধা গ্যাস ওভেন, সিলিন্ডার, চালের বস্তা ছাড়াও সবজি-তেল-মশলার বস্তা ও রান্নার বাসন।
সকাল ৮টা ৫৫ মিনিট। সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ। শ্যামবাজারমুখী লেনের একধারে সার দিয়ে পার্কিং করা রয়েছে জেলা থেকে আসা গাড়িগুলি। প্রাইভেট কিছু গাড়ি এবং ড্যাশবোর্ডে তেরঙা ব্যাজ ও উত্তরীয় রাখা কালো অথবা সাদা রঙের কিছু গাড়ি ও বাইক ছাড়া পরিবহণের কোনও ব্যবস্থা নেই। দেখে মনেই হবে না, অন্যদিনে এই রাস্তায় যানজটের জেরে বাস নড়তেই পারে না। গিরিশ পার্কের মুখে কয়েকটা অটো যেরকম খুশি ভাড়া চাইছে, তাতেই মানুষ ধন্য হয়ে উঠে বসছে।
মহাজাতি সদনের উল্টোদিকে খানিকটা ফাঁকা জায়গায় প্লাস্টিকের চাদর বিছিয়ে চলছে কুমড়ো কাটা। কী রান্না হবে? প্রশ্নটা করতেই জবাব এল, কুমড়োর ঘ্যাঁট, ডাল আর ভাত। ডিম আনিসিলাম, কিন্তু রাস্তার যা হাল বেশিরভাগই ফ্যালাই দিসি। ওই দ্যাহেন। মিটিংয়ে যাবেন না! না, আমরা যাই নাই। ওরা গ্যাসে।
সকাল ৯টা। চিৎপুর বাটা মোড়। ট্রাম লাইনের উপর দিয়ে চলেছেন কয়েকশো মানুষ। সেখানেও রাস্তার ধারে চলছে রান্নাবান্না। একঝাঁক মহিলা সবেমাত্র গঙ্গাস্নান করে ভিজে চুলে তাঁদের রাখা বাস খুঁজে চলেছেন। কোথায় গিয়েছিলেন, স্বপ্না নামের নবাবহাট থেকে আসা এক আশাকর্মী বললেন, মা গঙ্গার কাছে। সকলেরই হাতে ঝুলছে গঙ্গাজলের জ্যারিকেন। উদ্বেগের সঙ্গে জানালেন বাস খুঁজে পাচ্ছি না। মসজিদের গায়েই তো লাগানো ছিল!
সামনে হাঁটছিল ৩টি অল্পবয়সি ছেলে। কোথায় চলেছ! মিটিংয়ে? না, না। মুর্শিদাবাদি উচ্চারণে বলল, আমরা লেবার-মিস্ত্রির কাজ করি। এসেছি কিন্তু যন্ত্রপাতি কিনব বলে। রাস্তার ধারের আতর, লুঙ্গি ও জুতোর দোকানগুলো তখনই খুলে গিয়েছে। অন্যদিন অবশ্য আরও দেরিতে খোলে।
মেট্রোর অবস্থা তো আরও সঙ্গীন। শুধু ধর্মতলাগামী নয়, কালীঘাট ও দক্ষিণেশ্বরমুখী মেট্রোতেও ঘাম মোছার জন্য রুমাল বের করার জায়গা নেই। দলে দলে চলেছেন পুণ্যার্জনে। শহীদ দিবসে কলকাতায় এসে সাক্ষাৎ মা কালী দর্শন কি মুখের কথা?