২৬ নভেম্বর (26/11)৷ সকালে পৌঁছয়ই মুম্বই৷ প্রথম যাই তাজ৷ তার পর ওবেরয় (Oberoi Under Attack)৷ ওখানে অ্যাটাক (Terror Attack) হচ্ছে৷ জঙ্গিরা টপ ফ্লোরে বম্বিং করছে, আগুন জ্বালাচ্ছে৷ এদিকে নিচ থেকে এনএসজি-র দল গুলি করছে৷ মানে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি৷ কন্সস্ট্যান্ট গুলি চলছে৷ সব কভার করতে করতে সন্ধে হয়ে গেল৷ ওবেরয়তে কভারেজ করছি৷ অফিস থেকে ফোন আসছে৷ আমি এখান থেকে ফিড পাঠাচ্ছি৷ খাওয়া-দাওয়া, ঘুম সব কিছু ভুলে কাজ করছি৷ আসলে মৃত্যুর ভয়কে ভুলে এত বড় কাজ উপভোগ করার যে আনন্দ সেটা উপলব্ধি করতে চেয়েছিলাম৷ একটু বাদে চিফ মিনিস্টার (Chief Minister) এলেন৷ সবার সঙ্গে কথা বললেন৷ আমাদের জন্য জল-খাবারের ব্যবস্থা করলেন৷ সারা বিশ্ব থেকে সাংবাদিকরা (Journalist) আসছেন৷ হঠাৎ জানতে পারলাম ন্যাশনাল সিকিউরিটির গার্ডের (NSG) একটি টিম ওবেরয়ের ভিতর ঢুকবে৷ রাত ১১টা নাগাদ একটা বড় গাড়ি এল৷ ভিতর থেকে ৬ ফুট সাড়ে ৬ ফুট লম্বা কালো পোশাক পরা ১০-১২ জন জওয়ানরা নামলেন৷ চেহারা দেখলে গায়ের লোম খাড়া হয়ে যাবে৷ ওখানে যত পাবলিক ছিল সবাই এদের নামে জয়ধ্বনি দিতে লাগল৷ এ এক অন্যরকম অনুভূতি৷ এনএসজি ওবেরয়ের ভিতর ঢুকল৷ পাঁচ মিনিট পর তীব্র গুলির আওয়াজ৷ কিছুক্ষণ পর অপারেশন শেষ করে এনএসজি টিম বেরিয়ে এল৷
আরও পড়ুন: Civic Polls: কাকে দেওয়া হবে পুরভোটের টিকিট? ঠিক করতে কালীঘাটে জরুরি বৈঠকে মমতা
পরেরদিন নরিম্যান হাউজ৷ এনএসজি অপারেশনে নামবে৷ আমরা যে যার পজিশন নিলাম৷ সারাদিন ধরে কভারেজ করছি৷ পুরো মুম্বই শ্মশান৷ দোকানপাট বন্ধ৷ রাস্তায় গাড়ি চলছে না৷ একটাও লোক নেই৷ শুধু সাংবাদিক, পুলিশ এবং এনএসজি৷ বিকেল থেকে শুরু হল এনএসজি টিমের অপারেশন৷ আধঘণ্টা পয়তাল্লিশ মিনিট পর গুলির আওয়াজ বন্ধ৷ রাতেই এনএসজি নরিম্যান হাউজে মিশন শেষ করল৷ তাজ বেঙ্গলে তখনও কিছু হয়নি৷ ওই টুকটাক গুলি চলছে৷ পুলিশ বাইরে দিয়ে ঘিরে রেখেছে৷ আমি মাঝে মধ্যে যাচ্ছি৷ ছবি করছি৷

নরিম্যান হাউজ শেষ করে গেলাম হোটেলে৷ ভাবলাম খাওয়া-দাওয়া করে স্পটে যাব৷ রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ হোটেলে পৌঁছলাম৷ হঠাৎ অন্য এক ক্যামেরাম্যানের ফোন পেলাম৷ ফোনে কথা বলব কী? মোবাইলটা কানে দিয়ে শুনছি, মনে হচ্ছে কালীপুজোর রাত, যেন কন্সস্ট্যান্ট বাজি ফাটছে৷ ননস্টপ ফেটেই যাচ্ছে ফেটেই যাচ্ছে৷ কান ঝালাপালা হয়ে গেল৷ সব ফেলে চলে গেলাম তাজে৷ গিয়ে দেখি চর্তুদিক দিয়ে গুলি ছোড়া হচ্ছে৷ দু’পক্ষ গুলি চালাচ্ছে৷ আমাদের চোখের সামনেই দু-তিন জন পুলিশ কর্মী মারা গেল৷ অলরেডি এনএসজি-র ওই টিমটা ভিতরে ঢুকে গিয়েছে৷ সারা রাত ধরে চলে অপারেশন৷ ভোরবেলায় গুলির শব্দ শোনা যায়৷ তার পর দুপুর গড়িয়ে বিকেল নামল৷ ঠিক ৫টার পর একটু আওয়াজ কমল৷ পুলিশ কুকুর ভিতরে নিয়ে যাওয়া হল৷ এর কিছুক্ষণ পর এনএসজি জানিয়ে দিল, মিশন কমপ্লিট৷ আতঙ্ক কেটে সবার মুখে হাসি ফিরল৷ এ যেন যুদ্ধের জয়ের আনন্দ৷
আরও পড়ুন: যাদবপুর, সোনারপুরের ত্রাস কে এই শেখ বিনোদ?
১৮ দিন মুম্বইয়ে ছিলাম৷ তার পরেও অনেক স্টোরি কভারেজ করেছি৷ মুম্বই হামলায় যাঁরা মারা গিয়েছিলেন তাঁদের প্রত্যেকের বাড়ি যাই৷ জঙ্গি হামলার কভারেজ করার অনুভূতি আলাদা৷ কিন্তু নিহতদের পরিবারদের সঙ্গে কথা বলাটা খুব যন্ত্রণাদায়ক৷ মৃত্যু বড় ভয়ঙ্কর৷ সাংবাদিকদের তাদের কাজটা তো করতে হবে৷ তাঁরা এ কাজটা করতে বাধ্য৷ সাংবাদিকদেরও ওই ধরনের প্রশ্ন করতে কষ্ট হয়৷ তাঁদেরও চোখে জল আসে৷ কিন্তু এটা তাঁর ডিউটি৷ কারণ, এর পিছনে বড় সাকসেস আছে৷ কোনও ঘটনা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে কিন্তু মিডিয়া মারফত পৌঁছয়৷ ঘটনাস্থলের খবরটা কানে কানে পৌঁছয় না৷ কী ঘটেছিল সেটা মিডিয়া মারফত যায়৷ আমরা কোথাও না কোথাও মানুষের সেবা করে করি৷
অনুলিখন: পল্লবী দত্ত৷