নয়াদিল্লি: সিঙ্গুরে (Singur) পরিত্যক্ত ন্যানো কারখানার (Nano Factory) জন্য ক্ষতিপূরণ বাবদ রাজ্য সরকারকে ৭৬৬ কোটি টাকা দিতে হবে টাটা কর্তৃপক্ষকে (Tata Motors)। সঙ্গে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে ১১ শতাংশ হারে সুদ দিতে হবে। সোমবার তিন সদস্যের সালিশি আদালত বা আরবিট্রাল ট্রাউব্যুনাল এই রায় দিয়েছে। একেই নানা দুর্নীতির অভিযোগে রাজ্যের দুই প্রভাবশালী মন্ত্রী-সহ একাধিক বিধায়ক ও নেতা হয় জেলবন্দি, নয় ইডি (ED) হেফাজতে রয়েছেন। তা নিয়ে শাসকদল বেশ চাপে আছে। তার মধ্যেই সালিশি আদালতের এই রায় রাজ্য সরকারের পক্ষে বড় ধাক্কা। রাত পর্যন্ত এ ব্যাপারে রাজ্য সরকারের কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।
সোমবার টাটা মোটরস সালিশি আদালতের এই রায়ের কথা জানিয়েছে। রাজ্য শিল্প উন্নয়ন নিগমের বিরুদ্ধে টাটা মোটরস সালিশি আদালতে গিয়েছিল। ওই আদালত আরও জানিয়েছে, মামলার জন্য আরও এক কোটি টাকা রাজ্য সরকারকে দিতে হবে।
আরও পড়ুন: বিশ্বভারতী নিয়ে কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ চাইল মুখ্যমন্ত্রী
২০০৮ সালের অক্টোবর মাসে পুজোর ঠিক মুখেই তৃণমূলের আন্দোলনের চাপে টাটার কর্ণধার রতন টাটা সিঙ্গুরের ন্যানো কারখানা গুটিয়ে নেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। ওই কারখানার কাজ প্রায় ৮০ শতাংশ হয়ে গিয়েছিল। সিঙ্গুরের অনিচ্ছুক চাষীদের কাছ থেকে জোর করে তখনকার বামফ্রন্ট সরকার জমি কেড়ে নিয়েছিল টাটাদের কারখানার জন্য। এমনটাই অভিযোগ করে সেই সময়কার বিরোধী দল তৃণমূল। তুমুল আন্দোলন চলে। বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ধর্মতলায় অনশন করেন জমি নেওয়ার প্রতিবাদে। সিঙ্গুরে হাইওয়ে আটকে অবস্থান চলে। টাটার অফিসারদের মারধরও করা হয়। তবু রতন টাটা বলেছিলেন, বন্দুক দেখালেও সিঙ্গুরে ন্যানো কারখানা হবে। সেই রতন টাটাই ২০০৮ সালের অক্টোবর মাসে বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো বন্দুকের ট্রিগারটাই টিপে দিলেন। তাই আমরা কারখানা গুটিয়ে নিচ্ছি।
সিঙ্গুরের কারখানা নিয়ে বহু মামলা হয়েছে। জল গড়িয়েছে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত। শীর্ষ আদালত রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে রায় দেয়। সিঙ্গুরের জমি আন্দোলন ২০১১ সালে পালা বদলের পক্ষে একটা বড় অনুঘটকের কাজ করেছিল।
ক্ষমতায় আসার পর তৃণমূল সরকার টাটাদের বিকল্প জমি দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু টাটারা তা ফিরিয়ে দেন। তাঁরা ১৫৪ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়েছিলেন। সেই টাকা তাঁরা বামফ্রন্ট সরকারকে দিয়েছিল জমি অধিগ্রহণের জন্য। ২০১৬ সালে সুপ্রিম কোর্ট বলে, বামফ্রন্ট সরকারের জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া অবৈধ ছিল। পরবর্তীকালে টাটা কর্তৃপক্ষ সালিশি আদালতে যায়। সেই আদালতই অবশেষে এদিন ৭৬৬ কোটি টাকা টাটাদের দিতে বলেছে রাজ্য সরকারকে।